আরেকটি নতুন সেরা রূপকথার গল্প নিয়ে আবারও হাজির আমরা। এই নতুন রূপকথার গল্পটি একটু বড়, তবে এই রূপকথার গল্প টি বেশ মজাদার। আশা করছি একটু ধৈর্য সহকারে পুরোটা পড়বেন।
সেরা রূপকথার গল্প। নতুন রূপকথার গল্প।
যদুপাড়ার যদু পণ্ডিত সেদিন সন্ধ্যের পর ভুবনডাঙার মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলো। সন্ধ্যের পর কেউ সাধারণত ভুবনডাঙার মাঠ দিয়ে যায় না। ভূতপ্রেতের ভয়, ডাকাতের ভয়। যদু পণ্ডিতের সাহস অপরিসীম। ভয় কাকে বলে উনি জানেন না।
ভুবনডাঙার মাঠের মাঝখান দিয়ে হন্ হন্ করে যদু পণ্ডিত ছুটে চলেছেন। এদিক ওদিক কোনদিকে খেয়াল নেই। তার উপর আজ আবার গিন্নীর সঙ্গে ঝগড়া হওয়াতে মনটা চটে গেছে। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন ডাকল-“শুনুন।” যদু পণ্ডিত কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে পেছন দিকে তাকালো—না কেউ তো নেই। পেছনে তাকালো—কেউ নেই। যদু পণ্ডিত এবার সাংঘাতিক ঘাবড়ে গেল—এ যে দেখছি অদৃশ্য ভূত। মাঠের মাঝখানে শুধু একটা বিরাট বটগাছের পাতাগুলো হাওয়ায় ঝরঝর করে উঠল। যদু পণ্ডিত পৈতে বার করে গায়ত্রী মন্ত্র জপতে লাগলেন।
আবার কয়েক পা এগিয়ে গেলেন। পেছন থেকে আবার সেই এক রকম ডাক—”শুনুন।” যদু পণ্ডিত থমকে দাঁড়িয়ে বললেন—”ভূত, প্রেত, দৈত্য, দানব যেই হও, সামনে এসে কথা কও।”
পেছন থেকে আবার নাকিসুরে ডাক শোনা গেলো—”আসছি, আপনি একটু দাঁড়ান।” অতবড় সাহসী যদু পণ্ডিতও ভয়ে ঠকঠক্ করে কাঁপতে লাগলেন। চোখ বুজে দাঁড়িয়ে রইলেন। চোখ মেলবার সাহস হল না যদু পণ্ডিতের। হঠাৎ মনে হল, কে যেন যদু পণ্ডিতের সামনে এসে দাঁড়াল। বললে—”আমি এসেছি, চোখ খুলুন পণ্ডিতমশাই।” ভূতটা তাহলে নেহাৎ পরিচিত। তা না হলে পণ্ডিত মশায় বলে ডাকল কি করে?
যদু পণ্ডিত ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তাকালেন। আর সামনে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেলেন।
আরে এ কে, ন্যাপলা ঠাকুর যে! ন্যাপলা ঠাকুর আবার কবে ভূত হলো। ন্যাপলা ঠাকুর যদু পণ্ডিতের কাছে দশ টাকা পেতো। যদু পণ্ডিত সে টাকা দিতে পারেনি। ওজর-আপত্তি দেখিয়ে বারবার শুধু ঘুরিয়েছে। এখন ভূত হয়ে ঘাড় মটকে দেবে না তো!
যদুপাড়ায় যদু পণ্ডিত অতো সাহসী হয়েও ভয়ে ঠক্ ঠক্ করে কাঁপতে লাগলেন। ন্যাপলা ঠাকুর বলে উঠলেন- “কি ঠাকুর, আমায় দেখে অতো ঠক্ ঠক্ করে কাঁপছো কেন?”

যদু পণ্ডিত বললেন—”কাঁপছি কি আর সাধে? জীবিতকালে তোমার পাওনা দশটা টাকা দিতে পারি নি। সেই রাগে যদি আমার ঘাড় মটকে দাও। তুমি ভূত হয়েছ জানলে,এ পথ দিয়ে কিছুতেই আসতুম না।”
ন্যাপলা ঠাকুর চটে গিয়ে বললে—”কি বললে আমি ভূত? আমি আবার ভূত হলুম কবে? এই দেখো আমি নিজেই রাম নাম করছি।”
ন্যাপলা ঠাকুর রাম নাম করতে লাগলো। যদু পণ্ডিত ভাবলে, ন্যাপলা ঠাকুর ভূত হয়ে কি করে রাম নাম নিচ্ছে? সবই আশ্চর্য। ঘোর কলিকাল। ন্যাপলা ঠাকুর বললে—”হাঁ করে তাকিয়ে দেখছ কি? সত্যি আমি ভূত নই।”
যদু পণ্ডিত বড় বড় চোখ করে ন্যাপলা ঠাকুরের দিকে চেয়ে রইল। ন্যাপলা ঠাকুর বললে—”হাঁ করে তাকিয়ে দেখছ কি? সত্যি আমি ভূত নই। মরিই নি, ভূত হব কি করে? তবে শশ্মানে এসেছিলুম—এ কথা ঠিক। তাহলে শোনো। ভাল করেই শোনো। গাছের নীচে বসে পড়। আমিও বসি।”
দু’জনেই গাছের নীচে বসে পড়ল। ন্যাপলা ঠাকুর তার কাহিনী শুরু করলে—”তুমি তো জানো আমি বিয়ে-থা করিনি। আমার সম্পত্তিও কম নয়। আমি বেঁচে-বর্তে থাকতে ভাইপোগুলো যতোই বেয়াড়া হোক লুটেপুটে খেতে পারবে না। তাই আমাকে মারতে চেয়েছিলো। কবে মরব? কবে ওরা আমার কাছ থেকে সিন্দুকের চাবি হাতাবে, এই ওদের একমাত্র চিন্তা!
তারপর আমি একদিন অসুখে পড়লুম। অবস্য সিন্দুকের চাবি ট্যাকে গুঁজেই শুয়ে পড়লুম। একদিন রাতে হঠাৎ আচমকা আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। যণ্ডামার্কা বড় ভাইপোটা দেখলুম, আমার ট্যাকে হাত দিয়ে চাবি খুঁজছে।
আমি বললুম–কিরে ভোলা না মরতেই ট্যাক ফাঁক করবার চেষ্টা। দু’দিনেই সিন্দুক ফাঁক করে দিবি। আমিও সহসা মরছি না।
মরে গেলে ভোলা লজ্জায় ট্যাক থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললে – কি যে বলছ কাকু, আমি তো তোমার পেটে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলুম। কিছুক্ষণ আগে পেটের যন্ত্রণায় গোঁ গোঁ করছিলে যে!
আমি- যন্ত্রণা আমার মাথায়। আর ট্যাঁকে সিন্দুকের চাবি। আমার পেটে যন্ত্রণা হোলে—আমি টের পেতুম না। তুই কি করে টের পেলিরে?
ভাইপোরা বললে—কবরেজের চিকিচ্ছেয় চলবে না। পাশের ঘরের বসে ওরা যুক্তি করতে লাগল। আমি বিছানায় থেকে উঠে পা টিপে পাশের ঘরের ফোঁকরে কান আর চোখ রাখলুম। ভোলা নিধুকে বলছে—কবরেজের চিকিচ্ছেয় কাকু ক্রমশই ভাল হয়ে উঠছে। কিছুতেই মরছে না। অতএব হাতুড়ে পটলবাবুকে পটানো খুবই সোজা। ওষুধের সঙ্গে এমন কড়া বিষ মিশিয়ে দেবে যে, কাকু একদিনেই গয়া চলে যাবেন। নিধু বললে–ঠিক আছে, কাল পটলৰাবুকেই ডাকব।
আমাকে নিয়ে ষঢ়যন্ত্র চলছে—এটা আমি বুঝতে পারলুম। আমি ট্যাঁক থেকে চাবি সরিয়ে একটা গুপ্তস্থানে রাখলুম। যাতে আমি মরে গেলেও ওরা সহসা চাবি না খুঁজে পায়। তারপর দিন ভাইপোরা হাতুড়ে পটলবাবুকে ডেকে আনল। পটলবাবু আমাকে নানা রকম ভাবে পরীক্ষা করে পাশের ঘরে গেলেন। পাশের ঘরে ভাইপো-দের সঙ্গে অনেকক্ষণ যুক্তি পরামর্শ চলল। আমি আবার পাশের ঘরের দরজায় কান পাতলুম।
ভোলা পটলবাবুকে বললে – কি রকম দেখলেন, রোগীকে? পটলবাবু বললেন— কিছু ভাবনা নেই ভোলাবাবু, আজ সন্ধ্যের সময় একটা লাল জলের মতো ওষুধ পাঠিয়ে দেবো। ওটা খেলেই আপনার কাকা ন্যাপলা ঠাকুর আজ রাতের মধ্যেই পটল তুলবেন।
ভোলা এসে সন্ধেবেলা আমার ঘরে একটা লাল রঙের ওষুধ রেখে গেলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললে একটু পরেই এই লাল ওষুধটা খেতে হবে। তাহলেই আপনার অসুখ সেরে যাবে।
আমি বললুম—হুম্ ।
মনে মনে ভাইপোদের ওপর বিষম চটে গেলুম। বুড়ো হয়ে গেছি, মরবো তো বটেই তবে আর কিছুদিন ওরা কি অপেক্ষা করতে পারত না? ভোলা লাল ওষুধটা আমার ঘরে রেখে চলে গেলো। আমি আস্তে আস্তে উঠে লাল জলের মতো ওষুধটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলুম।
আঙুল কেটে কিছুটা রক্ত আর জল মিশিয়ে পাত্রটায় ভরে রাখলুম। তারপর বিছানায় এসে চাদর ঢাকা দিয়ে শুয়ে পড়লুম। জানালার কাছে পটলবাবুর দেওয়া লাল ওষুধের কিছুটা পড়ে ছিলো। আমার কালো হ্যাংলা বিড়ালটা ওই লাল ওষুধ চাটল। তারপর কিছুক্ষণ পর মিউ মিউ করতে করতে মরে গেলো। আমি শিউরে উঠলুম। সাংঘাতিক কড়া বিষের ওষুধ তো! পটলবাবু আমার পটল তোলার ব্যবস্থা একেবারে পাকাপাকি করেই রেখেছেন। ভোলা আর নিধু এসে আমাকে একরকম জোর করেই লাল ওষুধটা খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো।




আমি মরার ভান করে পড়ে রইলুম। কিছুক্ষণ পর ভোলা আর নিধু এসে আমায় টানাটানি ডাকাডাকি করতে লাগল। নিশ্চল হয়ে পড়ে রইলুম। অতো টানাটানি আর ডাকাডাকিতে আসল মরা হলেও উঠে বসত। আমি নকল মরা। তাই মরার অভিনয় করে পড়ে রইলুম।
ভোলা আর নিধু আমার সর্বশরীরে চাদর চাপা দিয়ে ডুকরে কাঁদতে লাগল। মায়া কান্না যে ওই রকম কেউ ডুকরে কাঁদতে পারে আগে আমার এ-রকম ধারণা ছিল না। ভোলা আর নিধু এদিক-ওদিক তাকিয়ে আমার ট্যাকে হাত দিয়ে চাবি খুঁজতে লাগল।
দুজনে দুজনের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো। কি আর করবে? ভোলা বলল, তোতে আর আমাতে পরে বোঝাপড়া হবে— আগে মড়াকে শ্মশানে পাঠিয়ে দি।
ভাড়াটে শববাহীরা আরও চালাক। ওঁরা আমাকে কষ্ট করে পোড়াতে রাজী হোল না। ওদের মধ্যে একজন বললে অতো কাঠখড় পুড়িয়ে কি হবে? বুড়ো হাবাড়াটাকে শেয়ালে টেনে নিয়ে যাবে, রাতের মধ্যে সাবাড় করে দেবে, কেউ টেরও পাবে না। কাঠগুলো বাজারে গিয়ে বেচে দেবো। আর ভোলাবাবু আর নিধুবাবুকে গিয়ে বলব—এইমাত্র পুড়িয়ে ফেললুম। ওরা আমাকে ভুবনডাঙার মাঠে একা ফেলে চলে গেলো।
এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলুম। চারিদিকে কেউ নেই। ভয়ে গাটা ছম্ ছম্ করতে লাগল। প্রাণ ভয়ে ছুটে এসে বটগাছের ওপর উঠে পড়লুম। সারাদিন এই বটগাছেই কাটালুম। খিদেয় পেট জ্বলে যাচ্ছে। সন্ধ্যেবেলা দেখলুম তুমি এই পথ দিয়েই যাচ্ছো—তাই সাথী পেয়ে নেমে পড়লুম। সত্যি বিশ্বাস কর যদু ভাই—আমি মরিও নি। ভূতও হইনি।
যদু পণ্ডিত বললে—ন্যাপলা ঠাকুর তা তুমি এখন কি করতে চাও? ন্যাপলা ঠাকুর বললে—–কি আর করব, তোমার সঙ্গে গ্রামে ফিরে যাব। যদু পণ্ডিত বললে—তোমায় দেখে তো ওরা সাংঘাতিক ভয় পেয়ে যাবে। ভোলা নিধু ও হাতুড়ে পটল তোমায় দেখে ভয় পেয়ে আঁৎকে উঠবে।
“ওখানেই মজা। ওরা ভাববে আমি মরে ভূত হয়ে গেছি” ন্যাপলা ঠাকুর বললে। “আমাকে দেখে ভয়ে আঁৎকে উঠবে। এমনিতে ওরা আমায় মোটেই ভয় করত না, এবার যদি ভয় করে। যদু পণ্ডিত, তোমার কাছে যে দশ টাকা পেতুম, তা মাপ করে দিলুম; কিন্তু তুমি গ্রামের কাউকে বলো না যে আমি মরিনি।”
যদুপাড়ার যদু পণ্ডিত বললেন– “তুমি যখন আমার দশ টাকা একেবারে মাপ করে দিলে—তখন একথা আমি কাউকেই বলব না।” তারপর দু’জনে ভুবনডাঙার মাঠ পেরিয়ে একেবারে কোতলপুর গ্রামের সীমানায় চলে এলো। রাত তখন দেড়টা।
ন্যাপলা ঠাকুর যদু পণ্ডিতের কানে ফিসফিসিয়ে বললে—”এবার তুমি তোমার পথে যাও, আমি আমার পথে যাব। দুজনকে একসঙ্গে দেখলে গাঁয়ের লোকেরা সন্দেহ করবে।”
ন্যাপলা ঠাকুর যে পথে এলো, সে পথে প্রথমেই পড়ে হাতুড়ে পটল বৈদ্যির বাড়ী। রাত দুটোয় ন্যাপলা ঠাকুর হাতুড়ে পটল বৈদ্যির বাড়ীর দরজায় কড়া নাড়ল। অতো রাত্রে হাতুড়ে পটল বৈদ্যির বাড়ীর দরজায় তো কেউ কড়া নাড়ে না। পটল বৈদ্যির কি রকম জানি সন্দেহ হোল।
ভেতর থেকেই কাঁপা গলায় বললে–কে?
পড়ুনঃ- শিক্ষণীয় রূপকথার গল্প
ন্যাপলা বললে—আমি তোর বাপ, দরজা খুলবি কিনা বল? নইলে এক্ষুণি দরজা ভেঙ্গে ঢুকব। ন্যাপলা ঠাকুর নাকিসুরেই কথাগুলো বলল, শব্দের ব্যবহারে চন্দ্রবিন্দুর প্রয়োগ বেশী। হাতুড়ে পটল কাঁপতে কাঁপতে দরজা খুলে বললে—এতো রাতে আমায় ডাকে কে?
ন্যাপলা ঠাকুর নাকিসুরে বললে—আমায় চিনতে পাচ্ছিস না—আঁমি ন্যাপলা ঠাকুর, কাঁল যে লাল বিষ দিয়ে আঁমায় মেরে এলি!
হাতুড়ে পটল দরজা খুলে ন্যাপলা ঠাকুরকে দেখে চীৎকার করে উঠলো ওরে বাপরে, ভূতরে! চোখ কপালে তুলে হাতুড়ে পটল বললে আমার কোনো দোষ নেই, ওরা আমাকে অনেক টাকা দেবে বলেছিল, তাই আমি বিষ দিয়েছিলুম। তা সে টাকা এখনও দিতে পারেনি। সিন্দুকই খুলতে পারেনি অতো টাকা দেবে কোত্থেকে? ন্যাপলা ঠাকুর নাকিসুরে বললে টাকার লোভে তুই পরকে বিষ দিবি?হঁতভাগা পাজী বেল্লিক, ছুঁচো কোথাকার? হাতুড়ে পটল চোখ কপালে তুলে বললে—আর জীবনে কখনও টাকার লোভে কাউকে বিষ দেবো না।
ন্যাপলা ঠাকুর নাকিসুরে বললে এবার ন্যাকা কথায় আমি ভুলছি না। দে এক্ষুণি একটা কাগজে লিখে দে, ন্যাপলা ঠাকুরকে বিষ দিয়ে মেরেছিলুম। দে লিখে সে–নইলে এখুনি তোর ঘাড় মটকে দেবো। শুধু তুই কেন, তোর বংশ ধ্বংস করে দেবো।
ন্যাপলা ঠাকুরের কথামতো হাতুড়ে পটল একটা সাদা কাগজে লিখে দিল। ন্যাপলা ঠাকুর কাগজটা তুলে নিয়ে বললে—যা খুব বেঁচে গেলি নইলে ঘাড় মটকে দিতুম। হাতুড়ে পটল বললে এবার আমি যাব?
ন্যাপলা ঠাকুর নাকিসুরে মুখ ভেংচে বললে–কোথায় যাবি? দাঁড়া আমার আরো কাজ বাকী আছে। তোর সব ওষুধপত্র তছনছ করি—তারপর বুঝবি ঠেলা। ন্যাপলা ঠাকুর কিছুটা এগিয়ে যেতেই— পটল বদ্যি অজ্ঞান হয়ে থপাস করে পড়ে গেলো।




পটল বদ্যির ওষুধপত্র তছনছ করে, ন্যাপলা ঠাকুর রাত আড়াইটার সময় বাড়ীতে এলো। সদর দরজায় জোরে লাথি মারতেই সদর দরজাটা কড়াৎ করে ভেঙ্গে পড়ল।
ভোলা আর নিধু তখন ঝগড়ায় ব্যস্ত, সদর দরজা ভাঙ্গার শব্দ পায়নি। ভোলা আর নিধু যে ঘরে ঝগড়া করছিল-ন্যাপলাঠাকুর সে ঘরের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।
ভোলা আর নিধুতে তখন হাতাহাতি চলছিলো। ভোলা নিধুকে বলছে—তুই কাকুর ট্যাক থেকে সিন্দুকের চাবি সরিয়েছিলি। না হলে ট্যাকের চাবি মরে গেলেও ট্যাকেই থাকত। ট্যাক ছাড়া হোতো না। তোর পেটে কুবুদ্ধি–সিন্দুকের ভেতরকার মালপত্র সরিয়ে একদিন রাতারাতি চম্পট দিবি। আমি সে হতে দিচ্ছি নে–সিন্দুক আমি দিনরাত পাহারা দেব।
নিধু বললে—নিজে অন্যায় করে, কেন আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছিস। তুই চাবি সরিয়ে রেখে আমার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে রাতারাতি সিন্দুকের মাল নিয়ে কেটে পড়তে চাস? ওটি হচ্ছে না, বাছাধন। এই আমি সিন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে রইলুম।
হঠাৎ বাইরে থেকে একটা গলার আওয়াজ পেয়ে ওরা চমকে উঠল—রাঁত দুটোর সময় তোঁরা দুটো মোঁষের মতো ঝগড়া করছিস কেন রে?
ভোলা আর নিধু ঝগড়া থামিয়ে এ-ওর দিকে বড় বড় চোখ বার করে চাইল। নিধু বললে কাকার গলার স্বরের মতোই মনে হচ্ছে।
তারপর আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ। ভোলা আর নিধু জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো—কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দূরে প্যাচার কর্কশ ডাক। নিধু ভোলাকে বললে–—তখনই তোকে পই পই করে বারণ করেছিলুম কাকাকে বিষ খাইয়ে মারিস নে। এমনিই তো বুড়ো হয়েছিল আর কয়টা দিন অপেক্ষা করলে এমন কি ক্ষতি হোত?
ভোলা বললে—তুই রামেরও মা, তুই শ্যামেরও মা, রাত্রি বেলা মদ খেয়ে এসে বললি—কাকাটাকে সাবাড়ে ফেল। বড় যন্ত্রণা দিচ্ছে। তাইতো আমি হাতুড়ে পটলাকে ডেকে বিষ খাইয়ে দিলুম। এখন বোজো ঠেলা। নিধু বললে–দোষ তোমারও, আমারও। দুজনেরই দোষ। আবার বাইরে থেকে গলার স্বর পাওয়া গেল—তোঁদের দুটোকেই আঁমি ঘাঁড় মটকে দেবো। আমাকে ষড়যন্ত্র করে বিষ খাইয়ে মাঁরা? ভোলা ও নিধু জানলার দিকে তাকিয়ে ন্যাপলা ঠাকুরকে দেখে, ভয়ে ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগল।
ন্যাপলা ঠাকুর নাকি সুরে বললেন—এখন ভয়ে ঠক্ ঠক্ করে কাঁপলে হবে কি? ষড়যন্ত্র করে বিষ খাওয়াতে মনে ছিলো না। আমি অপঘাতে মরে এখন বেহ্মদত্যি হয়ে গেছি। তোরা দুটো আগে বাইরে বেরো—তারপর দু’টোর ঘাড় মটকে দিয়ে ওই বটগাছে চলে যাবো।
পড়ুনঃ- রাজপুত্রের গল্প। রাক্ষসীর গল্প
ভোলা আর নিধু একসঙ্গে চীৎকার করে উঠল–ওরে বাপরে! তারপর কিছুক্ষণ চুপ্চাপ–দু’তরফের কারো মুখেই কোন কথা নেই।
ভোলা নিধুর কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললে–চাবি যদি নিয়ে থাকিস – এখনো বল। সিন্দুকের মাল দুজনে ভাগাভাগি করে কেটে পড়ি। এ বাড়ীতে আর থাকা যাবে না, কাকা বেহ্মদৈত্যি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
নিধু বললে—সত্যি বিশ্বাস কর। মাইরি বলছি—চাবি আমার কাছে নেই। আবার জানালার কাছে ন্যাপলা ঠাকুরের মুখ ভেসে উঠল। ন্যাপলা ঠাকুর মুখ বিকৃত করে নাকি সুরে বললে–তোরা কেন মিছিমিছি—এই রাতের বেলা ঝগড়া করছিস? চাবি কোথায় আছে, শুধু আমি জানি। তোরা সাতজন্ম খুঁজলেও খুঁজে পাবি না।
ন্যাপলা ঠাকুরের কথা শুনে আর জানালার কাছে ওই রমক বিকৃত মুখভঙ্গী দেখে—ভোলা আর নিধু দু’ভাই জড়িয়ে ধরল। নিধু বলল, ওরে দাদারে! ভোলা বলল, ওরে ভাইরে! তারপর দু’জনে অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল। ন্যাপলা ঠাকুর জানালার কাছে দাঁড়িয়ে খিল খিল করে হেসে উঠলো। সকালবেলা হাতুড়ে পটলের ডাকাডাকিতে ভোলা আর নিধুর চৈতন্য ফিরে এলো। ওরা মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল, তারপর আবার ওখানেই জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ভয়ে কেউ আর রাতের বেলা ঘরের বাইরে বেরোয় নি। হাতুড়ে পটলের ডাকাডাকিতে ওরা দু’জনে চোখ কচলাতে কচলাতে বাইরেবেরিয়ে এলো। ভোলা বললে – কি খবর, পটলবাবু?
হাতুড়ে পটল বললে কি আর খবর? কাল রাতে তোমার কাকা ন্যাপলা ঠাকুর ভূত হয়ে আমার বাড়ীতে হানা দিয়েছিল। আর একটু হলেই ঘাড় মটকে দিতো। ওরে বাবা সেকি ভীষণ চেহারা। আগে ভূত বলে কিছু আছে তা’ বিশ্বাস করতুম না। জীবনে এই প্রথম ভূত দেখলুম।
নিধু বললে—তা হাতুড়ে পটলবাবু, সকালবেলা ইদিক কি মনে করে?
হাতুড়ে পটল বললে—এরি মধ্যে ভুলে গেলে আমার পয়সা এখনও পাইনি। তোমার কাকাকে বিষ দিয়ে রেছি এইজন্যে তোমার কাকা ভূত হয়ে আমার ঘাড় মটকাবার জন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি এখন হাতে কিছু মোটা টাকা পেলে— এই গ্রাম ছেড়ে পালাব। ভাই আমার টাকাটা দিয়ে দাও।
ভোলা বললে—মানুষ মেরে টাকা চাইতে তোমার লজ্জা করে না। ছি! ছি! ছি! হাতুড়ে পটল বললে–কাজ হাসিল করে এখন টাকা দিতে চাইছো না, আমি তোমাদের কীর্তিকলাপ গাঁয়ের সব্বাইকে বলে দেবো। ভোলা বললে—ওপর দিকে থুথু ফেলো না, হাতুড়ে পটল—তা’হলে তোমার মুখেই পড়বে। আমরাও লোককে বলব তুমি আমার কাকাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছো। এ গাঁয়ের কেউ তোমাকে আর কক্ষণো ডাকবে না। হাতুড়ে পটল বললে–পয়সা না হয় নাই দিলে, ওরকম করে ভাতে মেরো না ছেলেপুলে নিয়ে না খেতে পেয়ে মরব।
নিধু বললে–পয়সা আমরা তোমাকে কিছু দেবো, তোমার সঙ্গে একেবারে বেইমানী করব না। কিন্তু মুশকিল কি জানো আমাদের কারো কাছে কিচ্ছু নেই, ওরকম পেল্লায় সিন্দুক খোলাও খুব কষ্টকর। এদিকে আবার কাল রাতে কাকা ভূত হয়ে আমাদের বাড়ীতে হানা দিয়েছিল। কাকা ব্যাটা সাংঘাতিক হারামজাদা। মরে ভূত হয়েও সিন্দুকের চাবি আগলে বসে আছে।
ওপাশের ঘর থেকে নাকিসুরে আওয়াজ ভেসে উঠল—হারামজাদা বললি কে রে? তার এখুনি আমি গলা মটকে দেবোরে। ওপাশের ঘর থেকে নাকিসুরের আওয়াজ পেয়ে; ওদের তিনজনের পিলে চমকে উঠল। ভোলা বললে—তাইতো কাকার গলা, ভূত হয়ে পাশের ঘরেই আস্তানা নিয়েছে। এ বাড়ীতে আর থাকা যাবে না দেখছি।
নিধু বললে –এ বাড়ীতে থাকা যখন নিরাপদ নয়, চল আমরা তিনজনে সিন্দুক নিয়ে কেটে পড়ি। তারপর কামার বাড়ী গিয়ে সিন্দুকটা ভাঙ্গলেই চলবে। নিধুর যুক্তি অন্যান্য দু’জন মেলে নিলো। কিন্তু তিনজনে মিলেও সিন্দুক তুলতে পারলো না।
ভোলা বললে—যা পেল্লায় ভারী! এ সিন্দুক তুলে নিয়ে যাওয়া আমাদের কম্মো নয়।
নিধু বললে—এ বাড়ীতে রাত কাটানো মুশকিল। দিনের বেলাতেই গা ছম ছম করছে! গয়ায় পিণ্ডি না দিলে আর এ বাড়ীতে থাকার কোন উপায় নেই। তা এক কাজ করি, আমি হাতুড়ে পটল না হয়, কামার ডাকতে যাচ্ছি। ভোলা তুই এখানে দাঁড়িয়ে সিন্দুক পাহারা দে। আজ দিনের বেলাতেই যা কাজ হাসিল করার করে ফেলতে হবে। আজ রাতে এবাড়ীতে আর থাকা চলবে না। তারপর গয়ায় পিণ্ডি দিয়ে তবে এ বাড়ীতে থাকতে হবে।
ভোলা বললে–হোক দিনের বেলা। পাশের ঘরে কাকা ভূত হয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে। আমাকে একা পেলেই ঘাড় মটকে দেবে। তা হচ্ছে না বাবা আমিও তোমাদের সঙ্গে কামার বাড়ী যাবো।
হাতুড়ে পটল বললে—কামার বাড়ী তো এক ক্রোশের মত—তার মধ্যে যদি কোন চোর আসে?
ভোলা বললে—মোট কথা আমি এ বাড়িতে একা থাকতে কিছুতেই রাজী নই।
পড়ুনঃ- রাজপুত্রের গল্প। শিক্ষণীয় গল্প।
অতএব কি আর করা যায়? ওরা তিনজনে ঘরে কুলুপ এঁটে দিয়ে একসঙ্গে বেরিয়ে পড়ল। সদর দরজার কাছে এসে ভোলা চমকে উঠল—কাল তো ঝড় হয়নি—সদর দরজা ভাঙ্গলো কে রে?
নিধু চোখ কপালে তুলে বললে–ভাঙ্গবে আর কে? ন্যাপলা কাকা ভূত হয়েএসে সদর দরজাটা ভেঙ্গে ফেলেছে রে!
হঠাৎ হাতুড়ে পটল পেছন দিকে তাকিয়ে চীৎকার করে উঠল— দেখুন পাশের একটা বন্ধ ঘরের জানলা দিয়ে আপনার কাকা আমাদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছে।




ওরে বাপরে! বলে তিনজনে কামারবাড়ীর দিকে উদ্ধশ্বাসে ছুটল।
ওরা তিনজন কামারবাড়ী চলে গেলে ন্যাপলা ঠাকুর পাশের ঘর থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন। কামারবাড়ী থেকে কামারকে ডেকে আনতে ওদের কম করেও আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে। ন্যাপলা ঠাকুর আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে নিলেন—দেখল কেউ কোথাও নেই। তারপর কুলুপ ভেঙ্গে–যে ঘরে সিন্দুক ছিলো সে ঘরে ঢুকে পড়লেন। আবার রান্নাঘরে গিয়ে বড় দেখে একটা খালি পেতলের হাঁড়ি নিয়ে এলেন। তারপর গুপ্তস্থান থেকে চাবিটা বের করে সিন্দুকটা খুলে ফেললেন।
হাঁড়ির মধ্যে সিন্দুকের যতো টাকা পয়সা, সোনা-দানা সব ভরে নিলেন। তারপর সিন্দুক যেমন ছিলো, তেমন বন্ধ করে– কুলুপ এঁটে দিয়ে পাশের ঘরে চলে এলেন। পাশের চৌকির নীচে গোল করে কুড়ুল দিয়ে একটা গর্ত করলেন— তারপর পেতলের হাঁড়ির মুখটা ভালো করে ঢেকে সেই গর্তের মধ্যে রেখে মাটি চাপা দিলেন। মাটিটা আবার ভালো করে পিটিয়ে সমান করে রাখলেন। তারপর বাইরে বেরিয়ে এলেন।
ন্যাপলা ঠাকুরের খিদেও লেগেছে খুব, দুদিন ধরে পেটে কিছু পড়েনি। রান্নাঘরে গিয়ে দেখল খাবার মতো কিছু নেই। বেরিয়ে আবার ভাঁড়ার ঘরে গেলেন, খানিকটা শুকনো চাল চিবিয়ে একঘটি জল খেয়ে নিলেন।
কিন্তু শুকনো চাল খেয়ে কি আর পেট ভরে? তাইতো গরুর তো দুধ দোয়া হয়নি? ভোলা-নিধু আজ সকালে গরুর দুধ না দুইয়েই চলে গেছে। রান্নাঘর থেকে একটা বালতি নিয়ে এসে ন্যাপলা ঠাকুর গরুটার এক বালতি দুধ দুয়ে এক বালতি কাঁচা দুধই খেয়ে ফেললেন।
তারপর বালতিটা ধরে আবার রান্নাঘরে রেখে বারান্দায় এসে বসলেন। ভোলা নিধুর আসতে এখনও অনেক দেরী। কি আর করা যায় বারান্দায় বসে ন্যাপলা ঠাকুর গড়গড়া টানতে লাগলেন। এমন সময় দরজায় পাশের গ্রামের হারাধন চক্কোত্তির ডাক শোনা গেল- “ন্যাপলা ঠাকুর বাড়ী আছ নাকি হে?”
ন্যাপলা ঠাকুর এবার স্বাভাবিক স্বরেই উত্তর দিলেন—”হ্যাঁ, বাড়ী আছি। ভেতরে এস।”
পাশের গ্রামের হারাধন চক্কোত্তি ন্যাপলা ঠাকুরের মৃত্যুর খবর জানতো না। অতএব ভেতরে ঢুকে দাওয়ায় বসল। ন্যাপলা ঠাকুর গড়গড়াটা হারাধন চক্কোত্তির দিকে এগিয়ে দিলেন। হারাধন চক্কোত্তি মনের সুখে গড়গড়া টানতে লাগলো।
ন্যাপলা ঠাকুর বললেন—তা অনেকদিন পর ইদিকে কি মনে করে চক্কোত্তি?
হারাধন বললে–মেয়ের বাড়ী যাব। মেয়েটার অসুখ করেছে, তাই দেখতে এসেছি। বুড়ো বয়সে হাঁটতি পারি না। এখনও যেতে হবে আরও দু’ক্রোশ–সেই কামার বাড়ীর পাশে। ভাবলুম, তুমি যদি থাকো এক ছিলিম তামাক টেনে যাব। ন্যাপলা ঠাকুর খুশীর হাসি হেসে বললেন- “তা বেশ করেছ এয়েছ, বসে বসে তামাক খাও।”
কতক্ষণ পর গড়গড়ার নলটা ফিরিয়ে দিয়ে হারাধন চক্কোত্তি উঠে পড়ল- “আর বসবার সময় নেই, চললুম।”
হারাধন চক্কোত্তি বেরিয়ে যাবার পর ন্যাপলা ঠাকুর পাশের ঘরে গিয়ে খিল বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন। এমন জায়গায় শুলেন যে জানালা দিয়ে দেখে কেউ টের পারে না যে কোথায় আছে? এদিকে ভোলা, নিধু ও পটল কামারকে নিয়ে কামার বাড়ীর ওদিক থেকে ফিরছিল—এমন সময় হারাধন চক্কোত্তির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
হারাধন চক্কোত্তি বললে—ভোলা, নিধু, তোমরা কামারকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? ভোলা বললে—আর বলো না হারাধন খুড়ো, দুদিন ধরে যে হাঙ্গামা পোয়াচ্ছি—তা ভাগবানই জানেন। হারাধন চক্কোত্তি বললে–তোমার ন্যাপলা কাকা বেঁচে থাকতে তোমাদের আবার কি হাঙ্গামা?
ভোলা বললে ন্যাপলা কাকা তো পরশু রাতে মারা গেছে। হারাধন চক্কোত্তি চোখ কপালে তুলে বললে- “কি বললে?”
-ন্যাপলা কাকা পরশু রাতে মারা গেছে।
হারাধন চক্কোত্তি বললে আমি এতক্ষণ যে তোমার ন্যাপলা কাকার সঙ্গে কথা বলে এলুম, তারপর তাঁর কাছে চেয়ে গড়গড়া টেনে এলুম—তবে কি? হাতুড়ে পটল বললে—এতক্ষণ আপনি ভূতের সঙ্গেই কথা বলছিলেন।




—তাই নাকি?
চোখ কপালে তুলে হারাধন চক্কোত্তি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। ওরা পাশের পুকুর থেকে জল এনে ছিটিয়ে হারাধন চক্কোত্তির জ্ঞান ফিরিয়ে আনল। তারপর মেয়ের বাড়ী পাঠিয়ে দিল।
ওরা তিনজন কামারকে নিয়ে ফিরে এসে দেখলে, সিন্দুক ঘরের দরজায় কুলুপ ভাঙ্গা। যাই হোক, ভেতর ঢুকে দেখল, সিন্দুকটা ঠিক আছে।
অনেকক্ষণ যন্ত্রপাতি নিয়ে কসরৎ করার পর সন্ধ্যের কিছুক্ষণ আগে কামার সিন্দুকটা খুলে ফেলল।
ওরা সবাই ওৎ পেতে তাকাল। দেখল— সিন্দুকের ভেতরে কিছুই নেই। কোনো তাকেই কিছু নেই।
ওরা তিনজন আর কামার মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। কতক্ষণ পর ভোলা বললে—মাথায় হাত দিয়ে বসে ভাবলে কি হবে? টাকা-পয়সা কিছু নেই। বাড়ীতে কাকা ভূত হয়ে বসে আছে, একজন ওঝা ডেকে ভূত না তাড়ালে এ বাড়ীতেও থাকা যাবে না।
অতএব নিধু চটপট গিয়ে ওঝা ডেকে আনল। আশে পাশের লোকেরা ভূতের খবর পেয়ে বাড়ীতে ভীড় বাড়াল।
বন্ধ ঘরের দরজায় ঝাঁটা মারতে মারতে ওঝা বললে- “ভূত, প্রেত, দৈত্যি, দানব, যেই তুমি হও, বাইরে আমার সামনে এসে কথা সব কও।”
দড়াম করে দরজা খুলে ন্যাপলা ঠাকুর বেরিয়ে এলেন। সাক্ষাৎ ভূতকে দেখে ওঝাই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। —”এই তো বেরুলুম, কি করবি রে ওঝার পো! আমি মরেছি, না ভূত হয়েছি? আমার ভাইপোরা আর হাতুড়ে পটল আমায় বিষ দিয়ে মারতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। ঐ যদুপাড়ার যদু পণ্ডিতকেই জিজ্ঞাসা কর না, ওকে আমি সব কথা খুলে বলেছি।” যদুপাড়ার যদু পণ্ডিত ভীড়ের মধ্যে ছিল। যদু পণ্ডিত সকলের কাছে প্রথম থেকে শেষ সব ঘটনা খুলে বলল। রাজার লোকেরা ভোলা, নিধু আর হাতুড়ে পটলকে ধরে নিলে। কোতোয়াল বললে, কাল এদের সব কটাকে শূলে চড়াব।
ন্যাপলা ঠাকুর বললেন—তা শূলেই চড়িয়ে দাও, অমন ভাইপোদের আমার দরকার নেই। আমি মরে গেলে আমার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি গো-ব্রাহ্মণের সেবায় দান করে যাব।
“সেরা রূপকথার গল্প। নতুন রূপকথার গল্প। new Rupkothar golpo 2022”




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।