আজ তিনটি অসাধারন শিক্ষনীয় গল্প আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি। এই সুন্দর শিক্ষণীয় গল্প তিনটিই পৃথক পৃথক শিক্ষা প্রদান করবে। জীবন তরী চালাতে চালাতে এমন কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আমাদের হতে হয়, যেগুলি আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়ে যায়। এই নতুন শিক্ষণীয় গল্প গুলি সম্পর্কিত আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

অসাধারন শিক্ষনীয় গল্প। নতুন শিক্ষণীয় গল্পঃ-

অসাধারন শিক্ষনীয় গল্প- 01

আমাদের পাড়ার মোড়ে রয়েছে একটি কামারের দোকান। কামার সারাদিন কাজ করে, আর তার ছোট্ট ছেলে সারাদিন তার পাশে থেকে বাবার মুখে নানান গল্প শোনে। খেলাধুলা করার চেয়ে, বাবার মুখে গল্প শোনাটাই তার বেশি পছন্দের।

এরকমই একদিন সেই ছোট্ট বাচ্চাটি তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করল- “এই পৃথিবীতে তো সবকিছুরই মূল্য আছে, তাহলে মানুষের মূল্য কত?”

এত ছোট একটা বাচ্চার মুখে এরকম প্রশ্ন শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না সেই কামার। কিছুটা থমকে গিয়ে তিনি উত্তর দিলেন- “বাবা মানুষের মূল্য নির্ধারণ করা যায় না, একজন মানুষের মূল্য নির্ধারণ করা খুবই কঠিন কাজ।“

বাচ্চা ছেলেটি- “পৃথিবীতে তো অনেক রকম মানুষ আছ, তাহলে কারও মূল্যই কি তাহলে নির্ধারণ করা যাবে না?”

পিতা- “না, সম্ভব নয়।“

বাচ্চাটি কিছুই বুঝল না। সে আবার তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করল- “মানুষের যদি মূল্যই না থাকে, তাহলে এই পৃথিবীতে কেন কেউ ধনী, কেউ গরীব? কেন কেউ বেশি সম্মান পায়, আর কেন কেউ কম সম্মান পায়?”

অসাধারন শিক্ষনীয় গল্প নতুন শিক্ষণীয় গল্প
অসাধারন শিক্ষনীয় গল্প নতুন শিক্ষণীয় গল্প

বাবা ভাবলেন ছেলেকে বলে বোঝালে যাবে না। তাই তাকে উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে হবে। বাবা বললেন- “ওই যে, হাপরের ওখানে যে লোহার রডটা পড়ে রয়েছে সেটা নিয়ে এসো।“

বাচ্চাটি গিয়ে লোহার রডটা নিয়ে আসতেই, বাবা প্রশ্ন করলেন- “বলতো এই রডটার দাম কত হতে পাড়ে?”

ছেলে- “ঊম্ম, আজ সকালে তো তুমি এটাকে ১০০ টাকা দিয়ে বিক্রি করেছো। সুতরাং এটার দাম ১০০ টাকা।“

বাবা- “আমি যদি এই রডটা থেকে ৫ টা কাস্তে বানিয়ে দিই, তাহলে এর থেকে আমি কত টাকা পাব।“

ছেলে- “ঊম্মম, একটা কাস্তের দাম ৫০ টাকা, তাহলে ৫ টা কাস্তের দাম ২৫০ টাকা।“

বাবা-“ হূম, এবার যদি রডটা থেকে আমি, নানান মেশিনারি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস বানিয়ে ফেলি, তাহলে কি হবে?”

ছেলে- “তাহলে তো এটা থেকে আরও অনেক টাকা পাওয়া যাবে, কারণ মেশিনারি জিনিসের দাম অনেক বেশি।“

এরপর বাবা ছেলেকে বোঝালেন- “যেভাবে লোহার রডটির পরিবর্তনের সাথে সাথে তার মূল্যেরও পরিবর্তন হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই মানুষের মূল্যও নির্ধারণ হয়। একজন মানুষ বর্তমানে কি অবস্থায় আছেন, এবং ভবিষ্যতে তিনি নিজেকে কোন জায়গায় তুলবেন, তার উপরেই সেই মানুষটির মূল্য নির্ধারিত হয়।“

ছেলে- “হুম,তার মানে কোনো মানুষের মূল্য কেমন হবে, তা নির্ধারণ করবে সে নিজেই। তাই মানুষভেদে গরীব ধনী দেখা যায়।“

বাবা- “বাঃ, এই তো বেশ ভালোই বুঝেছ।“

পড়ুনঃ- অনুপ্রেরণার ছোট গল্প। অনুপ্রেরণা মূলক ছোট গল্প।

অসাধারন শিক্ষনীয় গল্প-02

একজন ভদ্রলোক NJP ষ্টেশনে নেমে, ষ্টেশনের বাইরে এসে ট্যাক্সির খোঁজ করতে লাগলেন। একজন ব্যক্তি ট্যাক্সি নিয়ে এগিয়ে এলেন।

লোকটি- “আমি শিলিগুড়ি যাব। কত ভাঁড়া লাগবে?”

ট্যাক্সি ড্রাইভার- “অনেকটা পথ যেতে হবে দাদা, ৫০০ টাকা ভাঁড়া লাগবে।“

লোকটি- “তোমরা এরকমই, এই টুকু রাস্তা ৫০০ টাকা ভাঁড়া চাইছ। ভাবছ আমি কিছুই জানি না! যাও যাও তোমার মত ট্যাক্সির দরকার নেই। আমি আমার রাস্তায় একাই হেঁটে চলে যাব।“

এরপর লোকটি নিজের ব্যাগ হাঁতে ঝুলিয়ে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। সেই ব্যক্তিটি ব্যাগ নিয়ে কিছুদূর পর্যন্ত এগোলেন। মাথার উপড়ে গ্রীষ্মের গনগনে রোদে তিনি শীঘ্রই নাজেহাল হয়ে পড়লেন। মনে মনে আবার তিনি ট্যাক্সির খোঁজ করতে লাগলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর আবার পুনরায় সেই ট্যাক্সিটিকেই দেখলেন। এরপর সেই ব্যক্তিটি আর কোনো  উপায় না পেয়ে ট্যাক্সিটিকে দাড় করালেন।

শিক্ষণীয় ছোট্ট গল্প pdf. সুন্দর শিক্ষনীয় গল্প
শিক্ষণীয় ছোট্ট গল্প pdf. সুন্দর শিক্ষনীয় গল্প

লোকটি- “আরে ভাই, আমি তো এবার প্রায় অর্ধেকটা রাস্তা চলেই এসেছি, তাহলে এবার কত টাকা লাগবে?”

ড্রাইভার- “এবার ৭৫০ টাকা লাগবে।“

লোকটি- “তোমরা তাজ্জব লোক। দেখছ যে, আমি আর পাড়ছি না, তাই দাম বাড়িয়ে দিলে। আমি তো অর্ধেকটা রাস্তা চলেই এসেছি! হিসেব মত ২৫০ টাকা হওয়ার কথা।“

ড্রাইভার- “দাদা, এতক্ষণ ধরে আপনি যে রাস্তায় হাঁটছিলেন, সেটা শিলিগুড়ির উল্টো দিকের রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকলে আপনি শিলিগুড়ি নয়, জলপাইগুড়ি পৌঁছে যাবেন। তাই আপনি অর্ধেকটা রাস্তা উল্টোদিকে বেশি চলে এসেছেন। একারণেই আমি আগের থেকে ২৫০ টাকা বেশি চেয়েছি।“

এরপর সেই লোকটি আর কোনো মন্তব্য না করে ট্যাক্সিতে উঠে পড়লেন।

শিক্ষণীয় নৈতিক কথা-

আমরাও আমাদের জীবনে, কোনো কাজ পেলেই, কোনো ভাবনা চিন্তা না করে হঠাৎ করেই কাজটি শুরু করে দিই। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া কাজটি করায় আমরা ভুল পথে এগোতে থাকি। আর এভাবেই আমরা আর কিছু উপায় না পেয়ে কাজটি অর্ধেক রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে সময় এবং অর্থ নষ্ট করি। তাই কোনো কাজ করার আগে ঠিকমত পরিকল্পনা করুন এবং একটি লক্ষ্য ঠিক করুন। যদি আপনি পরিকল্পনা এবং লক্ষ্য ছাড়াই কাজ করা শুরু করেন, তাহলে আপনারও অবস্থা গল্পের সেই লোকটির মতে হতে পাড়ে।

পড়ুনঃ- মজার শিক্ষণীয় গল্প

অসাধারন শিক্ষনীয় গল্প- 03

অনেক কষ্টে রাহুল সদ্য একটি চাকুরী পেয়েছে। সে চাকরী পেয়েছে একটি বড় নামকরা আইটি কোম্পানিতে। আইটি কোম্পানিতে যেমন থাকে আরকি, প্রত্যেকজনের জন্য আলাদা আলাদা কেবিন। সেইরকমই রাহুলকেও একটি কেবিন দেওয়া হয়েছিল।

প্রথমদিন অফিসে গিয়ে রাহুল নিজের কেবিন দেখে নিজেই হতবাক। এত সুন্দর একটি কেবিন। এরকম সুন্দর তো তার বাড়ির বেডরুমও নয়। উফফ এটাই জীবন। কিছুক্ষণ সে দাঁড়িয়ে ক্যাবিনের প্রতিটি জিনিস ভালোমত দেখতে থাকে।

কিছুক্ষণ পর একজন বয়স্ক ব্যক্তি দরজায় এসে বললেন- “বাবু ভিতরে আসব?”

রাহুল- “এখন একটু কাজ করছি, আধাঘণ্টা পড়ে এসো।“ অথচ সে কিছুই করছিল না। ব্যস্ততা দেখিয়ে সেই ব্যক্তিটিকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলল। প্রায় আধাঘণ্টা পড়ে সেই ব্যক্তিটি আবার দরজায় আসলেন। এটি দেখে রাহুল টেলিফোনটা নিয়ে এমন ভান করতে লাগল যেন সে ফোনে কারও সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। লোকটি ডাকলেও সে এমন ভান করতে লাগল যেন সে কিছুই শুনতে পায়নি।

সে ফোনে বলতে লাগল- “হ্যাঁ ভালো একটা চাকরী পেয়ে গেছি, মাস গেলে বেশ মোটা একটা মাইনে পাব। হ্যাঁ আমি তো ভাবছি এবার একটা দামী বাইক কিনেই ফেলি। আজ অফিস শেষে যাব একবার bmw-bike showroom –এ।“ এভাবে প্রায় ২০ মিনিট সে ফোনে কথা বলার ভান করতে লাগল।

এবার সে লোকটিকে ভিতরে আসতে বলল,- “হ্যাঁ বলুন, আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পাড়ি?”

সেই ব্যক্তিটি- “ বাবু, আমাকে কাল বলা হয়েছিল, আপনার ক্যবিনের টেলিফোনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই আমি এসেছি ফোনটা ঠিক করতে। আমাকে অফিস থেকে বলেছে এই টেলিফোনটা নাকি গত ৫ দিন থেকে খারাপ হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু আপনাকে তো দেখলাম সেটাতে কথা বলতে। আমাকে বলেছে যখন খারাপ হয়েছে, তাহলে একবার চেক করে নিই।“ এরপর লোকটা রাহুলের সামনেই টেলিফোনটা খুলতে থাকে। সে বলল- “ফোনটা তো খারাপ।“

সুন্দর শিক্ষনীয় গল্প। bengali new motivational story
সুন্দর শিক্ষনীয় গল্প। bengali new motivational story image
<

রাহুল এবার লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সে আর সেখানে থাকতে পাড়ল না। সে তার ক্যাবিন ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে গেল।   

শিক্ষণীয় নৈতিক কথা-

যখন আমরা জীবনের এমন একটা জায়গায় পৌঁছে যাই, আমাদের চাওয়া- পাওয়া গুলি যখন পূরণ হতে থাকে, তখন আমরা নিজেদের প্রতি খুব গর্বিত হই। আর এটাই স্বাভাবিক। ধীরে ধীরে সেই গর্ব আমাদের মধ্যে অভিমানের জন্ম দেয়। পরবর্তীতে সেই অভিমান অহংকারে পরিণত হয়। এরপরই আমরা অপরের সামনে নিজেকে বিশাল দেখানোর চেষ্টা করি।

নিজেকে বিশাল বড় দেখাতে গিয়ে আমরা ঠিক ভুলের বিচার ভুলে যাই। আমরা এমন কিছু দেখানোর চেষ্টা করি, যার অস্তিত্ব আদতে নেই। আর এটাই হল আমাদের মধ্যবিত্তদের বিরাট বড় ভুল। নিজেকে বিশাল দেখানোর তাগিদে ঠিক-ভুলের বিচার ভুলে যাই। আর অযথা পরবর্তীতে আমাদের পস্তাতে হয়।  

Facebook:- গল্প আর গল্প

Join with us on Telegram:- CharpatraOFFICIAL

“অসাধারন শিক্ষনীয় গল্প। নতুন শিক্ষণীয় গল্প। শিক্ষণীয় ছোট্ট গল্প pdf. সুন্দর শিক্ষনীয় গল্প”

Spread the love

Leave a Reply