NOTUN CHOTO GOLPO/নতুন ছোট গল্প। বাংলা ছোট গল্প- ভুতের গল্প
NOTUN CHOTOT GOLPO. নতুন ছোট গল্প- আনিসাঃ-
একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে বোধহয়। আসলে জানেন, একটা ছেলে যত রাত হোক বাড়ি একা ফিরলে অসুবিধা নেই কিন্তু একটা মেয়ে একা ফেরা কখনো নিরাপদ নয়। তাই পড়া শেষ হতে দেরি হওয়ায় রোকেয়াকে দিয়ে এলাম বাড়িতে। মাস্টার মশাই এমনিতেই বেশি কেয়ার করে ওকে। পুরো সাতবছর পর ও একটা মেয়ে যে ওদের গ্রামে থেকে উচ্চমাধ্যমিক দেবে। আসলে এখানে ছেলেরাই এখনও চাকরি পায় না। তাই মেয়েরা অতো পড়াশোনা করে কি করবে! দুঃখ লাগে এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মহিলা, দেশের রাষ্ট্রপতি মহিলা।তবু মেয়েদের এই সমাজে এখন অপ্রয়োজনীয় বিষয় বলে ধরা হয় কেন?
কিন্তু এখন আমার ভয় করছে একা এই রাস্তায় হেঁটে বাড়ি ফিরতে। না না ভুতের ভয় আমি পাই না। এইরাস্তা জুট কলে যাওয়ার রাস্তা ছিল। বছর পাঁচেক আগে কল বন্ধ হয়ে গেছে এই রাস্তায় কেউ আসে না তেমন। তোমাদের শহরের মতো গ্রামের রাস্তায় অত স্ট্রীট লাইট থাকে না ফলে রাস্তাটা অন্ধকার। গ্রামের বেশির ভাগ ছেলেরা পেটের ভাত জোগাড় করতে রাজ্যের বাইরে গিয়ে চাকর-বাকর, জন মজুর, সাফাই কর্মী হিসেবে কাজ করে। কিন্তু যে সব ছেলে পুলে গ্রামে পরে আছে তাদের কিছু অংশ কাজ কর্ম করা চেষ্টা করে এখন বেপথে চলে গেছে। এই রাস্তায় ওরা এসে নেশা ভান করে। চুরি চামারি, ছিনতাই করে। আমার কাছে কিছুই নেই কিন্তু মোবাইল , কিংবা সাইকেলটা যদি নিয়ে নেয় সেটা ভয় হচ্ছিল।
কিছুদূর আসার পর আনিশাকে দেখলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে জোনাকি ধরেছে। প্রায় মাসখানেক থেকে ছোট্ট অনিসাক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ও এই জনমানুষ শুন্য জায়গায় এলো কি করে? একটা ছয় সাত বছরের বাচ্চা মেয়ে একা কিভাবে আসবে এখানে?
আমি সাইকেল থেকে নেমে ওর কাছে যেতেই ও একটা চওড়া হাসি হেসে বলল ” বুবাই দাদা তোমাকে কি তোমার কৃষ্ণ ঠাকুর আমাকে নিতে পাঠিয়েছে? আমি মুসলমান বলে তোমার ঠাকুর তোমাকে এতো দেড়িতে পাঠালো তাই না! কিন্তু আমি তো আর যেতে পারবো না গো আম্মু আব্বু কাছে! আচ্ছা তুমি তো বলেছিলে আল্লাহ আর তোমাদের ঠাকুর এক। মানুষরা তাকে নানা নামে ডাকে যেমন, আম্মু আমাকে আনিসা বলে তোমার মা আমাকে খুকি বলে ডাকে। নানী বলে ‘এই মেয়ে’। তাহলে আমাদের আল্লাহ তোমাদের ঠাকুর তোমাকে এতো দেড়িতে পাঠালো কেন? “
আমি ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না। শুধু জিজ্ঞেস করলাম ” তুই একা কিভাবে এলি এখানে?”
ও বললো ” জানোতো আমি মেয়ে বলে নানীর আমাকে পছন্দ নয়। আমার আগেও পাঁচ দিদি আছে কিন্তু নানীর একটা ভাই চাই। মসজিদের দাড়ি ওয়ালা দাদু নানীকে বলেছিল আমাকে গহনা গাটি পরিয়ে দুলহান সাজিয়ে এখানে মাটির নিচে পুঁতে দিতে তাহলে ফেরেস্তা আমাকে নিয়ে গিয়ে একটা ভাই দিয়ে দেবে আম্মু আব্বুকে। কিন্তু জানো ফেরেস্তা এলো না। ঐ দাড়িওয়ালা দাদুটা এলো। আর আমার গায়ে থেকে গয়না গুলো খুলে নিলো। আমাকে নিয়ে গেলো না।
আমি বুঝতে পারলাম ফেরেস্তা আসবে না আর। আমি আল্লাহর ইবাদত করলাম। কিন্তু ভাবলাম মেয়ে বলে বোধহয় আমাকে উনিও চান না। তোমাদের মা কালি নিজে তো মেয়ে তাই আমি তাকে ডাকলাম। কিন্তু কেউ এলো না। আমি তারপর নিজেই এই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারলাম। আম্মুর আব্বুর কাছে যেতে ইচ্ছা করছিল ভীষন ভাবে। অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই যেতে পারিনা বেশি দূর। তুমি যখন এসেছো। আমি তোমাকে যেতে দেবোনা। আমি তুমি এখানে থাকবো, আমার খেলার সাথি হবে তুমি।”
কথা শেষ হতেই, ওর দেহটা স্থির থাকলো কিন্তু মাথা ঘুরতে লাগলো লাট্টু মতো। আমি জ্ঞান হারালাম। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি বাড়িতে। আমার দেড়ি হচ্ছে দেখে বাড়ির লোকজন আমাকে খুঁজতে এসে আমাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে নিয়ে গিয়েছিল বাড়িতে।
আমি সবাইকে আনিসার কথা গুলো বললাম। গ্রামের লোকজন দিঘির পাড়ে গর্ত থেকে ওর পঁচা গলা ছোট লাসটা খুঁজে পেলো। আমিনা বেগম , আর ইমম্মা সাহেবকে পুলিশে গ্রেফতার করলো। কিন্তু প্রমানের অভাবে ওরা ছাড়া পেয়ে গেলো। কারণ ভুতুড়ে গল্প তো কেউ বিশ্বাস করে না। বরং আমি যেহেতু গল্পটা বলেছি আমাকে খুনি বলে প্রমান করতে চাইলো ওদের উকিল। পরে তাই কেসটা চাপা পড়ে গেলো। আনিসার গল্পটা হারিয়ে গেলো আনিসার মতই।
গল্পের ভাবনায়-
লেখকের আরও কিছু বিশেষে লেখনীঃ- কয়েকটি বাছাই করা ছোট গল্প ছোট গল্প- মজাদার প্রেমের গল্প- সারপ্রাইজ
এক ক্লিকেই আমাদের সাথে যুক্ত হন- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২) বিদ্রঃ- WhatsApp গ্রুপটি শুধুমাত্র পাঠক এবং লেখকদের জন্য।
“কন্যা সন্তান নিয়ে গল্প। নতুন ছোট গল্প। NOTUN CHOTO GOLPO।”
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।