তিনটি নতুন বাংলা গল্প নিয়ে আজকের এই লেখাটি। প্রথম গল্পটিতে যেমন একটু প্রেমের স্বাদ খুঁজে পাবেন, ঠিক তেমনি দ্বিতীয় ছোট গল্পটিতেও তার ব্যাতিক্রম হবে না। তবে তৃতীয় গল্পটির স্বাদ একটু আলাদা। সেটি পাঠক না হয় পড়েই উপভোগ করুন। ও হ্যাঁ, এই বাংলা ছোট গল্প তিনটি যার কলমের কালিতে লেখা হয়েছে, তিনি হলেন ছাড়পত্রের একজন নিয়মিত লেখক- মানব মণ্ডললেখকের লেখা ভালো লাগলে, আপনাদের ভালবাসা তার কাছে পৌঁছে দিতে পশ্চাদগামী হবেন না যেন!

বাংলা গল্প – মধুচন্দ্রিমাঃ-

আমি খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে রিয়া। আজ আমার অষ্টম মঙ্গলা। মনটা আমার বেশ খুশি খুশি এটা কখনোই বলতে পারবো না। না, আপনারা যা ভাবছেন ভুল। আপনারা বলবেন বিয়েটা তো আমি নিজেই নিজের ইচ্ছেয় করেছি তাহলে আপত্তিটা কোথায়?

যেটুক খুশি আমায় দেখছেন সেটা আমি বাপের বাড়ি যাচ্ছি বলে শুধু মনটা খুশি। কিন্তু আগামী পরশু আমি আর আমার বর বাবাজীবন যাচ্ছি প্রথমবার একসাথে ঘুরতে থুড়ি মধুচন্দ্রিমা যাপনে। তাই এতো চিন্তা। আসলে অভি আমার ফোনে কথা বলছে না ঠিক মতো সেই বিয়ে দিন থেকে। অথচ ওর কথা বিয়েটা আমি করলাম।

ও হ্যাঁ ভুলেই গেছি, আপনাদের সাথে তো আমার বরের এখনো পরিচয় করাইনি। আমার বর বুবাই দা। আমাদের পরিচয় প্রায় সাত বছর হতে চলল। সেই যখন ক্লাস নাইন আমি যাচ্ছিলাম ঝড়ের বেগে সাইকেল চালিয়ে টিউশন পড়তে। তখন আমি সাইকেল চালানোতে ছেলেদেরও হার মানাই। তো সেই ঝড়ের বেগের সাইকেল এ ধাক্কা লাগলো এক শান্ত সৌম্য নিরীহ ছেলের। সেই ছেলেটিই এই আমার পতিদেব মিস্টার মানব মন্ডল। বিদেশে চাকরি করে কিছু পয়সা-করি করে আজ আমাকে বিয়ে করে জীবনে সবচেয়ে বড় কিছু পাওয়া হয়ে গেছে বলে দাবি করছে।

আজকাল বুবাই হাসতে হাসতে বলে “ধাক্কাটা সেদিন শরীরে লেগেছিল না হৃদয়ে কে জানে”। যাক গে ওর কথা বাদ দিন। তো সেই ঘটনার পর অনেক ওঠানামা আর ভুল বোঝাবুঝি ঠিক বোঝাবুঝির পর আজ আমাদের অষ্টম মঙ্গলা। সে গল্প না হয় আর এক দিন করব। ফিরে আসি আজকের দিনে। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল যে আমি অভি সাথে হানিমুন যাবো পাহাড়ে। আমার এই ‘আপাত শান্ত মনের দুরন্ত’ বর কে নিয়ে একটু ঘুরতে যাবো।

কিন্তু অভি ফোন ধরছে না কেন? ও বলেছিলো দার্জিলিং যে হোটেলটা ও বুকিং করেছে সেটা ওর বিশেষ জানাশোনা। বুবাই এর গল্পটি ওখানে শেষ করে আমি ওর সম্পত্তিতে রাজ করবো। আমি রাজি হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু এখন মনটা মানছে না। একটা মানুষের জীবন শেষ করে দেবো, লোকটা তো আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।

বাংলা গল্প বাংলা ছোট গল্প
বাংলা গল্প বাংলা ছোট গল্প

যাক বাঁচা গেলো আজ আমার জন্মদিন। সারপ্রাইজ হিসেবে একটা দলিল উপহার দিয়েছেন বুবাই আমাকে। লাটাগুড়িতে একটা কটেজ কিনেছেন উনি আমার জন্য হানিমুনে যাবো আমরা ওখানেই। সারাদিন বেশ ভালো কাটলো কিন্তু মন খারাপ হলো বিকাল বেলায়।

আমার আর উনার মামাতো বোন অয়ন্তিকার জন্মদিন এক দিনে বিকালে একটা সারপ্রাইজ পার্টি আয়োজন করা হয়েছিল। আর সেখানেই আমার জন্য ছিলো আরো একটা সারপ্রাইজ। অভি আর অয়ন্তিকার এঙ্গেজমেন্ট। অথচ আমাদের বিয়েতেই ওদের আলাপ। শিল্পপতির মেয়ে বলে বোধহয় অতো তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে অভি।

বাড়ি ফিরে মনটা কিছুতেই ভালো করতে পারলাম না। শুয়ে পরলাম। উনি বললেন “তোমার মোবাইলটা দেবে একটু একটা গেমস খেলবো। দিয়ে দিলাম।” কি ধরণের মানুষ এই লোকটি কে জানে! কি ধাতুর তৈরি কে জানে? আজ উনি অভি আর আমার ঝগড়াটা দেখেছেন। অভি স্পষ্ট বলেছে, আমি বুবাইকে ঠকিয়েছি তাই ও আমাকে ঠকিয়ে কোনো ভুল করেনি।

সকাল বেলায় উঠে আরো একটা সারপ্রাইজ। অভি আয়ন্তিকাও আসলো আমাদের সাথে। দিনটা ভালো কাটলো। মানে আমি চেষ্টা করলাম সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করতে। অভি বোধহয় আমাকে কোনদিন ভালোবাসে নি। ও বেশ নির্লিপ্ত। অয়ন্তিকাকে খুশি করতে ব্যাস্ত। আয়ন্তিকা হঠাৎ ঠিক করলো বাইক রেসিং করবে। আমি আপত্তি করলাম ঠিকই কিন্তু বুবাই এর ওপর জোর খাটানোর অধিকার বোধহয় আমার হয়নি এখনো। তাই বেশি জোর ফলাতে চাইলাম না। তবে মনে মনে চাইলাম একটা দিনের জন্যে হিরো হোক সবার চোখে।

কিন্তু রেসিং কোন ফল এলোনা। কারণ অভি এক্সিডেন্ট করলো। সন্ধ্যায় অয়ন্তিকা এলো সাথে এলো চাকর ভাবলারাম। জানতে পারলাম ভ্যাবলারাম আসলে অয়ন্তিকার বন্ধু রাজীব সিনহা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। অভির মোবাইল থেকে, আমার ছাড়াও আরো ছয় সাতটি মেয়ের আপত্তিকর ভিডিও , ছবি ডিলিট করা হয়েছে। যাদেরকে ও নিয়মিত ব্লাকমেইল করতো। অভি হয়তো বাঁচবে না। বেঁচে গেলেও আইনের হাত থেকে ওর রক্ষা নেই, কারণ ওর ব্লেকমেইলের ভয়ে আত্মাহত্যা করছে অয়ন্তিকার বান্ধবি সোনালী। ওর চলে যেতেই বুবাই একটা গোলাপ ফুল নিয়ে আমাকে উপহার দিলো। আর বললো গোলাপটা তুলতে গিয়ে সে নাকি অনেক গুলো কাটার আঘাত পেয়েছেন। সেটা দেখালো। আমি জিজ্ঞেস করলাম “আপনি আমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসেন”

ও বললো ” তোমার জন্য আমি জীবন দিতে পারি ,আবার নিতেও পারি।”

আমার চোখে জল এসে গেলো।

More from the Author:- 

বউ নাকি গোয়েন্দা

বাংলা গল্প- দোলনাঃ-

মনে আছে তোর , আমাদের বাড়িতে একটা ‌দড়ির দোলনা ছিলো। তোকে ওটাতে বসতে দিতে চাইলো না‌ , সেদিন নতুন কাকিমা মানে ছোটো কাকিমা। তুই কেন, আমাকেও বসতে দিতে চাইছিলো না। পুচুকটার জন্য সাবধানে থাকতে হয়েছিল বোধহয়। অসুখ হবে তাই। আসলে আমরা পাড়া গাঁয়ের মানুষেরা সবাই সবার জিনিস, সবাই ব্যবহার করি। কাকিমার সেটা ভালো লাগতো না।

তোকে বটের ঝুড়ি দিয়ে, ঝোলাঝুলি করতে দেখে একটা টায়ারের যোগাড় করলাম কত কাঠ খড় পুড়িয়ে। ঐ টায়ারকে স্নানের ঘাটের কাছে বট গাছের ডালে,দড়ির সাথে শক্তভাবে বেঁধে,  ঝুলানোর উপযোগী করে,  নিজের হাতে দোলনা বানালাম তোর জন্য।একবার দোল দেয়ার পর ওটা পেন্ডুলাম ঘড়ির মতো অনবরত সামনে-পেছনে দুলতে থাকলো তোকে নিয়ে। প্রথমে তুই ভয় পাচ্ছিলি। পরে বুঝতে পেরেছিলাম, ওটা তোর অজুহাত। তুই আমাকে নিয়ে দোল খেতে চেয়েছিলি। তোর সাথে দোলাতে বসে, নিজেদের মনে হয়েছিল রাধাকৃষ্ণ।

রাধাকৃষ্ণ এর কথা বলতে মনে পড়লো দোলনা ওপর প্রেমটা কতো পুরাতন। দ্বাপর যুগেও দোলনাই দুলতো রাধাকৃষ্ণ। ঝুলনে আমাদের বাড়িতে এখনো দোলাতে বাসানো হয় রাধা কৃষ্ণকে। যদিও মথুরা-বৃন্দাবনের মতোই বাংলার ঝুলন উৎসবের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। শুধুমাত্র রাধাকৃষ্ণের যুগলবিগ্রহ দোলনায় স্থাপন করে হরেক আচার অনুষ্ঠান উৎসব নয় শুধু এটা, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য। শ্রাবণের শুক্লা একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে এই উৎসব।

এই উৎসব হয় মূলত বনেদিবাড়ি এবং মঠ-মন্দিরে। তবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছোটদের ঝুলন সাজানোর আকর্ষণ হারিয়ে যাচ্ছে আজকাল। আগে বাচ্চা ছেলেমেয়েরা সারা বছর ধরে, সংগ্রহ করতো ছোট ছোট খেলনা, তৈরি করতো শহর গ্রাম, পাহাড় নদী। হারিয়ে যাচ্ছে বোধহয় সেই দিন গুলো। তবে আজও অমলিন হয়ে আছে,নানা ধরনের মাটির পুতুল, কাঠের দোলনা আর গাছপালা দিয়ে ঝুলন সাজানোর আকর্ষণ। কোলকাতা শহরের কিছু বনদী বাড়ির ঝুলন উৎসব হয় এখনো।

তবে জানিস এই ঝুলন উৎসবের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। শাস্ত্রীয়, ভৌগোলিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। এই অনুষ্ঠানে দোলনাটি দোলানো হয় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে। সূর্যের উদয় অস্ত ও অবস্থানের দিক নির্দিষ্ট করেই তা করা হয়। সূর্য হচ্ছে পৃথিবীতে সর্ব প্রকার শক্তির উৎস। আর পৃথিবীর গতি হচ্ছে-দু’টো, আহ্নিকগতি ও বার্ষিক গতি। দুই গতিধারায় বছরে দু-বার কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখায় গিয়ে অবস্থান করে। তখন ঘটে সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন অবস্থান। সেই কারণেই শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা অনুষ্ঠানে দোলনাটিকে ঝোলানো হয় উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে।

শ্রাবন মাসে ঝুলন উৎসব হয়। বোধহয় শ্রাবন মাসে ঈশ্বর ও রোমান্টিক হয়ে যায়। সকালে বিকালে দুপুরে কতো দোলা দুলেছি। ঐ দোলনাতে ঘুমিয়ে পড়েছি দুই জনে। পড়ার চাপ কিছুদিন আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। তারমধ্যে তুই হঠাৎ করে বড়ো হয়ে গেলি। দুই একদিনের মধ্যেই শহর যেতে হবে । শহরের কলেজ ভর্তি হয়েছি যে। বললাম ” চল দোলনা খেয়ে আসি। অনেক দিন দোলনা খায়নি।”

BENGALI STORY BANGLA GOLPO
BENGALI STORY BANGLA GOLPO বাংলা গল্প

তুই বললি ” আমরা আর ছোট নেই।”
যাবার সময় একটা চিরকুটে লিখে গেলি দুপুরে এসো। ওসময় ওদিকে কেউ যায় না। ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে । আগে কখনো হয়নি এমনটা কিংবা হয়তো ভাবিনি তুই বড়ো হয়ে গেছিস। শাড়ির ফাঁক দিয়ে তোর উঁকি মারা পেট, আর মসৃন কোমরটা যেনো হাল্কা আলোটাও ছুঁতে চাইছে, তোর আধ ভেজা শরীর , ফুটে উঠেছে তোর ভেজা শাড়ির মধ্যে, অন্য ভাবে আমাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।

ইচ্ছে করেই তোর কোমর হাত দিয়ে দোলনা তে তুললাম তোকে। তুই বোঝালি আজকাল আমার ছোঁয়া তোকে অন্য অনুভূতি দেয়। সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো হঠাৎ তুমল বৃষ্টি। বৃষ্টি তোকে ভিজিয়ে বলে দিলো, তুই এখন পুরোপুরি একটা মেয়ে হয়ে গেছিস। তোর ভেজা ঠোটের আমন্ত্রণ আমি অস্বীকার করতে পারলাম না। তুই তো আমার কাছে নিজেকে সঁপে দিতে এসেছিলি আজ বুঝলাম। কোনো বাধা দিলি না বরং আদরে আদরে ভরিয়ে দিলি আমায়। পাগল করা একটা নেশা এই প্রেম ভালোবাসা। তবে আমি ও বড়ো হয়েছি। দাড়ি কমা কোথায় দিতে হয় আমি জানি।

তুই চাইছিলি সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে আমার করতে। তোকে বোঝাতে পারলাম সবকিছু ‌হওয়া মানেই সম্পর্ক টিকে থাকবে এমন নয়। সেক্স বা  যৌনতা তো সাময়িক উত্তেজনা। কিন্তু দুইজনের মধ্যে জন্মানো অনুভূতি স্মৃতি গুলোই আসল। তাই অন্তিম মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়েছি কারণ এখনো ক্যরিয়ার গড়তে অনেক বাকি। কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি আমি।
তোর শুধু এক কথা  “জানি তুমি আমাকে বিয়ে করবে না” সেই থেকে দোলনা টার মতো ঝুলে দুলতে থাকলো আমাদের সম্পর্কটা।

“দোল দোল দুলুনি, রাঙা মাথায় চিরুনি…” মা-ঠাম্মার কোলে শুয়ে সেই চিরন্তন ঘুম পাড়ানি গান ভুলে যাবেন এমন বাঙালি বোধহয় নেই। বৃষ্টিস্নাত বিকেল হোক কিংবা পূর্ণিমার রাত, দোলনায় দুলে কফির মগে চুমুক দিয়ে আলতো আড়মোড়া ভাঙার আমেজটাই আলাদা! কেমন যেন রাজা মহারাজা বোধ হয় নিজেকে, তাই না? দোলনায় দুলে কী অবলীলায় ফিরে যাওয়া যায় শৈশবের সেই দিনগুলিতে। আমি আমার শহরে বাড়িতেও দোলনা লাগিয়েছি । ছাদে, বসার ঘরে। একটা বেতের একটা, দড়ির। বাড়ির রূপটাই বদলে দিয়েছে দোলনা।

এ বাড়ির বাগানেও একটা লাগিয়েছি। তোর মেয়ে একটা দোলনা চেয়েছে আমার কাছে। আমি দোলনা উপহার দিতে খুব খুশি। ও আবার ইংরেজি বলে। একটা হামি দিয়ে বলল ” I love you মামু।”তুই দেখলে খুব খুশি হতিস। কিন্তু কি করা যাবে তুই নেই, আমি আমাদের সেই টায়ার দিয়ে তৈরি করা দোলনা তে দুলতে দুলতে সেই দিনের কথা গুলো ই ভাবছি।

বাংলা গল্প বাংলা ছোট গল্প
বাংলা গল্প বাংলা ছোট গল্প bangla golpo
<

“সেই চিরসবুজ ঘাস,
আজ ফেলছে দীর্ঘ শ্বাস।
দোলনায় দোল খাওয়ার দিনগুলো
আজ স্মৃতির পাতায় ঠাই পেলো,

বিকেল এ বটের ডালে
দোল খেলে রোদ্দুর ছায়া আপন তালে
পড়ন্ত ছায়ায় আপন মনে দোল খেতে খেতে
ঘুম নেমে আসতো চোখে,
যেনো মাথা তখন মায়ের বুকে।
খেলার সাথীর ইশারা পেলে
চুপি চুপি বাহির হতাম ঘর থেকে

সাথীদের দিকে
যেতাম মর্মর শুকনো পাতার উপরে হেটে হেটে,
এখন আর খেলতে কেউ ডাকে না
তবু শৈশবের দিন গুলো মুছা যায় না
হৃদয় থেকে, এখনো তোকে
মনে পরে এই দোলনা টা দেখে।”

More from Manab Mondal:- 

বিরহের গল্প ব্যর্থ প্রেমের গল্প

গোলাপের কাঁটা-প্রেমের গল্প

বাংলা গল্প -প্রিয় বান্ধবীঃ-

তিন্নির ওপর আজকাল খুব রাগ হয় রাইএর। বিয়ে বাড়ি থেকে অবশ্য ওভাবে ওকে বকাঝকা করে নিয়ে বেরিয়ে আসা ঠিক হয়নি ওর। তনু বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে ওর বন্ধুর মতো মিশতে হবে ওকে। রাই তনুর সব কথাই শোনে শোনার চেষ্টা করে। তনু শুধুই ওর বান্ধবী বা প্রিয় বান্ধবী নয়, তারচেয়ে বেশি কিছু। এখন ওর একমাত্র কাছের মানুষ। কিন্তু রাই তনুকে বলতে পারলো কেন আজ ওরকম করলো। লোকজন ভাবলো রাই এভাবে চলে এলো কারণ ও চাইতো তনুর বিয়েটা হোক ওর  দাদার সাথে।

চাইবে না কেন রাই সেটা। তনু কি শুধুমাত্র ওর প্রিয় বান্ধবী ! তারচেয়ে আরো বেশি কিছু তনু রাইএর কাছে। শুভদ্বীপ যখন মারা গেলো তখন ওর ননদের কাছে কথা শুনতে শুনতে ওর জীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে ছিলো। যদিও রাজা ওকে তখন বিয়ে করতে চেয়েছিলো। কিন্তু রাই  তিন্নি আর শুভদ্বীপের চাকুরীটার জন্য বিয়েটা করলো না। সেইদিন ওর সিদ্ধান্ত ঠিক ও নিয়েছিলো। আজ ও একা হলেও স্বাধীন।

কিন্তু ওর অসময়ে ওর পাশে ছিলো ওর প্রিয় বান্ধবী তনু। রাইএরে ওর বাবা মায়ের কাছে যাবার পথ ছিলো না প্রথম দিকে। কারণ ঐ পরিবারে বিয়ে দিতে আপত্তি ছিলো ওর দাদা বাবা মা সবার। শেষে ও পালিয়ে বিয়ে করে নেয়। এক পাড়াতে শ্বশুর বাড়ি হলেও , শুভদ্বীপের মৃত্যুর পর ও বাড়ি থেকে কেউ আসেনি সে দিন।

কিন্তু এই কঠিন সময় ওর পাশে ছিলো তনু। তনু ওকে নিজের বাড়ির নিচের তলাটায় থাকতে দিলো। এ সময় তনুর সাথে ওর দাদার সম্পর্কটা ভেঙে গেলো। যদিও তনু বলে ” না না তেমন কিছু না তোর দাদা বিদেশে চাকরি ছাড়বে না। তাই আমি ওকে ছেড়ে দিলাম।”

তনু শুভদ্বীপের স্কুলেই চাকুরী করে। ওর তৎপরতায় চাকুরীটা হলো তাড়াতাড়ি রাইয়ের। তিন্নি বড় দুষ্টু। রাই এ পাড়ার মেয়ে এ পাড়ার বৌও তবু লোকজনের সাথে মেলামেশা করে না। কিন্তু তিন্নি শুধু সুধা দিকে জ্বালায় না। সারা পাড়ায় সব বাড়ি চষে বাড়ায় রাইয়ের অনুপস্থিতিতে।  না না তিন্নি স্কুলে যায় পড়াশোনা করে ভালোই। তনু ওকে পড়াশুনা করায়। এক থেকে দশের মধ্যে থাকে। তিন্নির ওপর তনুর অনেকটা অধিকার আছে তাই রাই ওকে শাসন করে না বা সুযোগ পায় না হয়তো। কারণ চাকুরীতে পদোন্নতি করার জন্য ও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। তিন্নির কোনকিছু দেখার সময় নেই। তনু এখন ওর সব কিছু।

তিন্নির জন্যই এতো বছর পরে ও ওর দাদা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারলো। পাড়ার সব বাড়িতেই ছোট্ট তিন্নির আসা যাওয়া । পাড়ার সবাই দুষ্টু তিন্নিকে ভালোবাসে। তাই তিন্নির জন্যই আজ ওদের সম্পর্কটা ঠিক হয়ে গেছে। যদিও ওর দাদা কাকে বিয়ে করছে সেটা ওর জানার সুযোগ হয়নি। ও আর পাঁচটা অতিথির মতো নিমন্ত্রণ খেতেই গেছে । কিন্তু বিয়েতে সে কেন থাকলো না সেটা একমাত্র ও জানে।

কারণটা ওর একসময়ের প্রিয় বান্ধবী তানিয়া। তানিয়া খুব সুন্দরী ছিলো মুম্বাই ওর আলাপ ইমরানের  সাথে। কিন্তু ইমরান বিধর্মী ছিলো বলে বাড়ির লোকজন এর আপত্তি থাকলেও পরে ইমরানকে মেনে নেয় ওর বাড়ির লোকজন। কিন্তু ইমরানের আরো দুটো বৌ আছে এটা জানতে পেরে তানিয়া মানসিক ভারসাম্য হারায়। শুভদ্বীপ ওর দুরসম্পর্কের দাদা হিসেবে তখন ওর পাশে ছিলো।  প্রতিবারের মতো রাই আবারও মৃত সন্তানকে জন্ম দিলো। কিন্তু তানিয়াকে বাবা মা  বললো  ও মৃত সন্তানকে জন্ম দিয়েছে। কিন্তু তানিয়া তো জানতো ওর মেয়ে হয়েছিল।

BANGLA GOLPO বাংলা গল্প
BANGLA GOLPO বাংলা গল্প

কিন্তু তানিয়া হয়তো সেইদিন চুপ করে গিয়েছিল কারণ পিতৃপরিচয়হীন একটি মেয়ে মানুষ করা হয়তো ওর পক্ষে কঠিন হবে। কিন্তু আজতো ওর দিন বদলেছে। ওর দাদা অনেক উদার আর প্রগতিশীল মানুষ। যখন বাড়ির কেউ ওর সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইতো না তখনো রাই এর মানসিকতাকেই সমর্থন করতো ওর দাদা। ওর দাদা তানিয়ার সবকিছু জেনে বিয়ে করেছে। তিন্নি যে তানিয়ার সন্তান সেটাও ও জানে। তাই আজ এক সময়ের প্রিয় বান্ধবী তানিয়া আজ ওর সবচেয়ে বড়ো শত্রুতে পরিনত হয়েছে।

ও যে ভয় পাচ্ছিলো সেটাই হলো। তানিয়া এসে হাজির হলো সকাল বেলায়। তানিয়ার আসতে তনু বেশ খুশি। রাইতো খুশি হতে পারলো না। তানিয়া বললো ” কি করে প্রিয় বান্ধবীকে দেখে খুশি না হয়ে ভয় পেয়ে গলি যে। আমি আজো তোর প্রিয় বান্ধবী তোর থেকে কিছু কেড়ে নেবো না। তাছাড়া তনুকে আমি আর বেশি কষ্ট দিতে পারবোনা। “
তনু বললো ” ছোট বেলায় তুই তোর প্রিয় পুতুল টা আমাকে দিয়েছিলি। সে হিসাবে না হয় বুবাইকে নিয়েছিস ওতে আমার কোন কষ্ট নেই। তবে তিন্নিকে ভালোবাসতে পারিস কিন্তু কেড়ে নিস না কখনো ,  এই টুকু অনুরোধ প্রিয় বান্ধবী হিসেবে।”

গল্প প্রেরকঃ- মানব মণ্ডল facebook

বাংলা গল্প-bangla golpo- bengali story- বাংলা ছোট গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য- ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- ছাড়পত্র অফিশিয়াল

WhatsApp- ছাড়পত্র 2.0

“বাংলা গল্প। bangla golpo. bengali story. বাংলা ছোট গল্প”

Spread the love

Leave a Reply