দুটি নতুন অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প থাকছে আজ। এই শিক্ষা মূলক ছোট গল্প দুটিতে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে।
অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্পঃ-
শিক্ষা মূলক ছোট গল্পঃ- ০১
অনেক সময় আগের কথা। একটি সুবিশাল জঙ্গল। আর সেই জঙ্গলেই অসংখ্য গাছের বেড়ে ওঠা। এই সুবিশাল জঙ্গলে রয়েছে নানা প্রজাতির নানান গাছ। এই জঙ্গলেই একটি গাছ ছিল, যে অনেকটা বাঁকানো। সেই গাছটি শুধু বাঁকানোই নয় বরং তার ডাল পালা গুলিও অনেক বাঁকা। সোজা কোথায় বলতে গেলে গাছটি দেখতে মোটেই সুন্দর নয়।
নিজের এই রূপের জন্য গাছটি সর্বদা মনমরা হয়ে থাকে। কারণ তার আশেপাশে থাকা বাকি গাছ গুলি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই সুন্দর তাদের ডাল পালা। সেই গাছ গুলি কোনো বাঁকা নয় একদম সোজা এবং বেশ সুদর্শন। নিজের এই কুৎসিত রূপের জন্য সেই গাছটি সর্বদা ঈশ্বরকে দোষারোপ করতে থাকে- “জানিনা কি পাপের জন্য ঈশ্বর আমাকে এরকম রূপ প্রদান করেছেন, এর থেকে ভালো হত ঈশ্বর যদি আমাকে জন্মই না দিতেন! আমার বন্ধুরা দেখতে এত্ত সুন্দর অথচ আমাকে দেখতে একদম অধ্মের মত।
যেমন বাঁকা আমার কাণ্ড, তেমনই উল্টো পাল্টা আমার ডালপালা গুলি, এই জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছে আমার আর মোটেই নেই। এরকম জীবন রেখেই বা লাভ কি, যেখানে সবাই এত সুন্দর আর আমি কোন খড়ের কুটো!
এভাবেই তার দিন কাটে। এরকমই এক দিন জঙ্গলে কিছু লোক আসে। তারা এসে সেই জঙ্গলের গাছ গুলিকে কাটতে থাকে। সেই বাঁকা গাছটির চোখের সামনেই একে একে তার বন্ধুদের মৃত্যু দেখে নিজেও শিউড়ে উঠে। আজই হয়ত তার শেষ দিন। মৃত্যুকে নিজের চোখের সামনে দেখে সেই গাছটির মুখ ফ্যাঁকাসে হয়ে যায়।
গাছটি দেখল একজন লোক কড়াত নিয়ে তার কাছে এসে দাঁড়িয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে, মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখে সে সব কিছু মেনে নিতে প্রস্তুত হতে লাগল। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে উপস্থিত লোকটি বলতে লাগল- “এ আবার কেমন গাছ্ রে বাবা! দেখতে এক্কেবারে ভূতের চুলের মত ডাল, এর কাণ্ড এত্ত বাঁকা এই কাণ্ড দিয়ে কোনো কাজই হবে না। ফালতু ফালতু এখানে কসরত করে লাভ নেই।“
এরপর লোকটি সেখান থেকে অন্য আরেকটি গাছের সামনে গিয়ে সেই গাছটিকে কাটতে থাকে।
ইতিমধ্যে গাছটির খেয়াল হল, লোকগুলি সেই সমস্ত গাছ গুলিকেই কাটছে যেগুলি দেখতে অনেক টা সুন্দর বা ভালো। তাই গাছটির অন্যান্য সুদর্শন বন্ধুরা একে একে মৃত্যুকে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে।
আর সে দেখতে অনেক খারাপ বলে লোকগুলি তাকে পছন্দ করে নি, আর তাই সে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছে। যেই গাছটি এতদিন নিজের কুৎসিত রূপের জন্য মনমরা হয়ে থাকত, ঈশ্বরকে সর্বদা দোষারোপ করত, সেই গাছটিই আজ ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে তাকে এরকম রূপ প্রদান করার জন্য। কারণ ঈশ্বর যদি তাকে এমন রূপ প্রদান না করতেন, আজ হয়ত সে আর জীবিত থাকত না।
আমাদের জীবনেও ঠিক এরকম ঘটে থাকে। আমরা সুদর্শন তথা আমাদের চেয়ে উন্নত কাউকে দেখলেই আমাদের মনে ভাবনা চলতে থাকে- “আমি ওর মত সুন্দর কেন নয়, ঈশ্বর আমাকে এত কুৎসিত দেখতে কেন বানিয়েছেন! আমি ওরমত কেন নয়! ঈশ সে কত সুন্দর! আমিও যদি তার মত সুন্দর হতাম ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমরা এটি বুঝি না যে, ঈশ্বর আমাদের কে যেমনটি বানিয়েছেন অনেক ভেবে চিন্তেই তিনি বানিয়েছেন, তার দেওয়া এই রূপ নিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত।
কেননা, বলা তো যায় না, আপনার রূপটি হয়ত আপনার কাছে কুৎসিত, কিন্তু আপনার কাছে কুৎসিত মনে হওয়া সেই রূপটিই হয়ত গল্পের গাছটির মত আপনাকে অনেক সহযোগিতা করবে। তাই নিজের রূপ নিয়ে মনমরা হয়ে না থেকে, ঈশ্বর সৃষ্ট এই রূপের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। কারণ ঈশ্বর তার সন্তানের যত্ন ভালো মতই নিতে জানেন।
পড়ুনঃ- শিক্ষণীয় ছোট গল্প সাহসিকতার গল্প- ধৈর্য শক্তি মহাশক্তি
শিক্ষা মূলক ছোট গল্পঃ- ০২
অনেক দিন আগের কথা। এক শিয়াল আর এক উটের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। একসাথে খাওয়া বেড়াতে যাওয়া, ঘুমানো সবকিছুই। বছরের পর বছর এভাবেই চলতে থাকে। একদিন খাবারের খোঁজে দুই বন্ধু ঘুরছে, হঠাৎ তাদের নজর পড়ল একটি তরমুজের বাগানের দিকে। তারা দেখল সেখানে চাষি পাহারায় রয়েছেন, তাই এখন সেখানে যাওয়া যাবে না।
তারা সেই তরমুজ বাগানের পাশের জঙ্গলটাতে লুকিয়ে থাকল, এবং রাতের অপেক্ষা করতে লাগল। এদিকে রাত গড়িয়ে আসতেই, চাষি তার বাড়ির দিকে পা বাড়াল। দুই বন্ধু দেখল চাষির বাড়ি ক্ষেতের খুব কাছেই, তাই তারা যা করবে তাদের বেশ সাবধানতার সাথে করতে হবে।
দুই বন্ধু চুপিচুপি তরমুজ ক্ষেতের মধ্যে প্রবেশ করল। প্রবেশ করেই তার পরম আনন্দে তরমুজ খাওয়া শুরু করে দিল। ইচ্ছে আছে আরও খাওয়ার, কিন্তু পেট যে জানান দিচ্ছে আর জায়গা নেই!
এই অবস্থায় শেয়ালের মাথায় একটি দুষ্টু বুদ্ধি চলে এল, সে চিৎকার করে উঠল- হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া। শেয়ালের এই আকস্মিক চিৎকারে উট শিয়াল কে বলল- “আরে আরে বন্ধু করছ টা কি! চাষি যে জেগে যাবে, আর জেগে গেলেই আমাদের যে জগা খিচুড়ি বানিয়ে ফেলবে।“
শিয়ালটি হেঁসে বলল- “তুমি মিছেই চিন্তা করছ বন্ধু, চাষি ব্যাটা সারাদিনের কাজে ক্লান্ত হয়ে দেদার ঘুম দিচ্ছে। আমার এক নতুন বেরাম হয়েছে জানো তো! এই বেরামে খাবার খাওয়ার পর হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া গান না করলে খাবার হজম হয় না।“ এই বলে শিয়ালটি আবার চিৎকার করতে লাগল।
এদিকে শিয়ালের এই চিৎকারে চাষির ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে লাঠি নিয়ে তাদের দিকে তেড়ে আসতে লাগল। শিয়াল তো মনে মনে এটাই চেয়েছিল। তার ছোট্ট শরীর, বেড়ার ফাঁক দিয়ে সে দিল এক ছোঁ দৌড়। আর উট তার বড় শরীর নিয়ে পালাতে পারল না। চাষি উটকে ধরে বেজায় উত্তম-মধ্যম দিলেন।
খোঁড়াতে খোঁড়াতে সে নিজের আস্তানায় যেতেই শিয়াল তাকে দেখে বলতে শুরু করল- “ঈশ বন্ধু আমার নতুন বেমারিটার জন্য তুমি শুধু শুধু মার খেলে। ইত্যাদি ইত্যাদি …
এদিকে উট শিয়ালের এই চালাকি ধরে ফেলেছে। সেও সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। একদিন বেশ গরম পরেছে। চারিদিকে হাঁসফাঁশ অবস্থা। উট শিয়ালকে বলল- “বন্ধু চলো, এই গরমে ওই নদীর সুন্দর শীতল গভীর জলে নিজেদের শরীর একটি এলিয়ে নিই। বেশ মজা হবে।“
শিয়াল এক কথাতেই রাজী হয়ে গেল। সে বলল- “কিন্তু বন্ধু আমি তো ভালো মত সাঁতার পারি না।“ উট জবাব দিল- “তাতে কি হয়েছে বন্ধু, তুমি আমার পীঠে উঠে বসবে, আমি তোমাকে শীতল জলের মজা উপভোগ করতে সাহায্য করব।“
এরপর দুই বন্ধু নদীর জলে নামে। কথা মত শিয়াল উটের পীঠে চেপে বসে। এদিকে উট নদীর গভীর জলে চলে আসে। এটি দেখে শিয়াল বলে- “আরে বন্ধু একি করছ তুমি, আমি যে ডুবে যাব, কম জলে চলো।“ উট জবাব দিল- “আসলে আমার একটা নতুন বেমারি হয়েছে জানো তো বন্ধু, আমি আবার আজকাল গভীর জলে ডুবকি না দিলে থাকতে পারি না, তাই আমাকে ডুবকি লাগাতেই হবে।“
এরপর যখন দুই বন্ধু ডাঙ্গায় উঠল, তখন বেলা বেশ গড়িয়ে গেছে, আর ওদিকে সেই চতুর শিয়ালের অবস্থা এক্কেবারে আধমরার মত হয়ে গেছে। এরপর সে আর কোনো দিনও উটের সাথে মজা করার কথা ভাবেনি। আর এভাবেই উট শিয়ালের কাছে বদলা নিয়ে ছিল।
আপনি কি গল্প লিখতে ভালোবাসেন? কে কি বলবে, সেই ভেবে আপনার গল্প গুলিকে ডায়রি বন্দী করে রেখেছেন? উঁহু আপনার গল্প আর ডায়রি বন্দী নয়, আপনার লেখা সেই অসাধারণ গল্পটি আমাদের পাঠিয়ে দিন সরাসরি WhatsApp এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। আপনার লেখা বিবেচনা করে দেখার পর সেটিতে যদি কোনো পরিবর্তন করার দরকার হয়, আমরা সেটি আপনাকে জানিয়ে দেব। এরপর আপনার লেখা প্রকাশিত হবে ছাড়পত্র-তে। আপনার গল্পটি আমাদের E-mail ও করতে পারেন- charpatrablog@gmail.com এই ঠিকানায়। আমাদের হাত ধরে আপনার সেই সেই ডায়রি বন্দী গল্পটি ছাড়পত্র প্রাপ্তি করুক।
পড়ুনঃ- বাবাকে নিয়ে অসাধারণ একটি শিক্ষণীয় গল্প সেরা দুটি প্রেরণা মূলক গল্প
আমাদের সমস্ত আপডেট পাবেন যেখানে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প। শিক্ষা মূলক ছোট গল্প। 2 new best bengali motivational story ever
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।