আজকের গল্প দুটির মধ্যে প্রথম টি শিক্ষনীয় কষ্টের গল্প কেননা গল্পটি শেষ হয়েছে ইমোশনাল দৃশ্য দিয়ে। আর দ্বিতীয় গল্পটি একটু নতুন ছোট হাসির গল্প। গল্প দুটি যদিও দুই মেরুর কিন্তু গল্প দুটি যে বেশ জমজমাটি তা পাঠক গল্প পড়ার পরেই অনুধাবন করতে পারবেন।

শিক্ষনীয় কষ্টের গল্পঃ- “ভোগ”

রামচন্দ্রপুর গ্রামে গোপাল চন্দ্র বেরা নামে এক চাষী তার পনেরো বছর বয়ষী মেয়ে রূপা ও স্ত্রী কাকলী কে নিয়ে ছোট্ট একটি মাটির ঘরে বাস করতো। জায়গা জমি না থাকায় সারাবছর ভাগ চাষ করে যা পায়, তাতেই টেনে টুনে সংসার চলে যায়।গোপাল চাষীর একটা বড়ো ইচ্ছে ছিল ঘরে খড়ের চালটা পরিবর্তন করে টালির চাল করা।

কারণ বৃষ্টির দিন হলে গোটা পরিবার কে বেশ বেগ পেতে হয়। এর থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সে যতবারই টাকা জমিয়েছে প্রতেকবারেই কোন না কোন কারনে খরচা হয়ে যায়। একদিন চাষী বিকেল বেলায় মাঠের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে, সৌভাগ্যবসত রাস্তায় একটা মানিব্যাগ কুঁড়িয়ে পায়। আর সেই মানিব্যাগের মধ্যে ছিল কড়কড়ে পাঁচ হাজার টাকার নোট। টাকা পেয়ে চাষী তো আনন্দে আত্মহারা। এবং মনে- মনে স্থীর করলো, এই টাকার ব্যাপারে সে ঘরে কাউকে কিছু জানাবে না। কারণ ঘরে জানলে আজ না হোক কাল তাকে না চাইতেও বাধ্য হয়ে টাকা গুলো খরচা করতে হবে।

যেইভাবে হোক চালটা পরিবর্তন করতেই হবে। এই ভেবে গোপাল চাষী বাজার থেকে চুপিচুপি একটা লক্ষীভান্ডার কিনে এনে তাতে টাকা গুলো ভরে, ঘরের মধ্যে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখলো। এক দুদিন পর সে ভাবল, পাঁচ হাজার টাকার সঙে যদি সে আর কিছু টাকা জমিয়ে রাখতে শুরু করে, তাহলে হয়তো টালির চালের জায়গায় অ্যাজব্যাসটর চাল লাগাতে পারবে।যেমন ভাবনা তেমন কাজ, একটু একটু করে চাষী টাকা জমানো শুরু করলো।

শিক্ষনীয় কষ্টের গল্প
শিক্ষনীয় কষ্টের গল্প

এখন প্রায় কুঁড়ি হাজার টাকা জমিয়ে ফেলেছে দেখে, নিজের উপর কেমন যেনো তার গর্ববোধ হলো। সেইসময় তার আবার মনে হতে লাগলো, কুড়িহাজার টাকার সঙ্গে যদি সে আরো কিছু টাকা জমিয়ে রাখে, তাহলে আরো বেশি টাকা জমবে, আর সেটা দিয়ে সে বড়ো না হোক ছোটখাটো একটা পাকার ঘরতো বানাতে পারবে তার মেয়ে ও স্ত্রীর জন্য। একসময়ের পরে তার জমানো টাকার পরিমাণ হয়ে দাঁড়ালো পঞ্চাশ হাজার টাকার থেকেও বেশি।

কিন্তু তার কয়েক দিনের মধ্যে গোপাল চাষী জমিতে কাজ করার সময় হঠাৎই সাপের কামড়ে মারা যায়। একদিকে তার সেই জমানো টাকার ভান্ডার অক্ষত অবস্থায় মাটির নীচে গুপ্তধন রূপে রয়ে গেলো। অপরদিকে পাকার ঘর তো দূরের কথা খড়ের চালটাও পর্যন্ত যেমনকে তেমনই পড়ে রইলো।এ জন্মে তার আর ভোগ করা হলো না।

bengali educational story
bengali educational story

মানুষের স্বপ্ন কোন অংশে কম নয়, আমাদের উচ্চাকাঙ্খা আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ ধারন করতে দেয় না। সবাই বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে জীবনকে নতুন রূপে সাজানোর স্বপ্ন দেখে কিন্তু সবাই একবারেই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সমর্থক। ধীরে ধীরে স্বপ্ন পূরণের পথে খুব কম মানুষই হাটে। কিন্তু কেউই বোঝে না যে ভবিষ্যৎ এর জন্য বাঁচতে গেলে বর্তমান কে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই চাষি যদি তার সেই জমানো অর্থ দিয়েই প্রথমে টিনের চালা দিত তাহলে তার অর্থ নষ্ট হত না। কিন্তু আজ তার অনুপস্থিতিতে সেই মাটির নীচে জমানো টাকা তার কোন কাজেই আসে নি, আর অব্যবহৃত সম্পদ মূল্যহীন। কাজেই যা করার বর্তমান কে গুরুত্ব দিয়েই করুন।

পড়ুনঃ- অদ্ভুত ১০ টি বিয়ের নিয়ম 

নতুন ছোট হাসির গল্পঃ- “গল্পের আসর”

প্রত্যেক দিনের মতো এবারেও টিউশানে পড়তে বসে লতা, ফুলা, বল্টু, আকাশ, তনুরা নিজেদের মধ্যে দুনিয়ার যত রকমের আজগুবি গল্পের আসর পাতিয়ে বসেছে। ইতিমধ্যে বাড়ির ভেতর থেকে জয়দেব মাস্টার বেশ কয়েকবার বকাঝকা করেছে, তাতেও এদের গল্প করা থামেনি। কিছুক্ষণ বাদে জয়দেব মাষ্টার কে আসতে দেখে, সবাই চুপচাপ হয়ে এমন ভাব করে পড়তে শুরু করলো, যেনো এরা খুব মন দিয়ে এতক্ষণ পড়চ্ছিলো। এমন সময় জয়দেব মাস্টার হঠাৎ বলে উঠলো। “তিনদিন পর তোদের সবার গনিত পরীক্ষা নেবো।” যাহঃ। পরীক্ষার কথা শুনে তো সবার চোখ কপালে উঠলো,একে অপরের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়।

“তবে তবে, এবারে পঞ্চাশ নাম্বারে পরিক্ষায় যে চল্লিশের উপরে নাম্বার পাবে, তার জন্য রয়েছে একটা পুরষ্কার।” পুরষ্কার এর কথা উঠতেই সবাই লাফিয়ে উঠলো। “কি পুরষ্কার দেবেন স্যার?” বল্টু জিঙ্গাসা করলো। ” জন্তু দেখাবো।” লতা বলল, “কি জন্তু স্যার?”, “ওটা এখন বলবো না,আগে তোরা পরীক্ষা দে, ভালো নাম্বার পেয়ে দেখা তারপর—” ইতিমধ্যে মাষ্টার কাকে জন্তু দেখাবে, এই নিয়ে নিজেদের ভেতরেই রেশারেশি শুরু হয়ে যায়।

নতুন ছোট হাসির গল্প
নতুন ছোট হাসির গল্প
<

যথারীতি নির্ধারিত দিনে সবার পরীক্ষা নেওয়া শেষ হলো। এরপর রেজাল্ট বেরনোর দিন। সন্ধ্যাবেলায় জয়দেব মাষ্টার খাটের উপর বসে ব্যাগের ভেতর থেকে খাতার বান্ডিল বের করছে, এদিকে লতা, বল্টু, ফুলারা সবাই খাতার দিকে চক্ষু স্থীর করে তাকিয়ে রয়েছে। খাতা বের করে জয়দেব মাষ্টার ঘোষণা করলো, এবারের পরীক্ষা একমাত্র লতাই চল্লিশের উপরে নাম্বার পেয়েছে, আর বাকিরা সবাই কুড়ির ভেতরে থেকে গেছে। লতা চল্লিশের উপর নাম্বার পেয়েছে শুনে ফুলা, আকাশ ও বল্টুর মন শুকনো হয়ে যায়।

“স্যার আপনি জন্তু দেখাবেন বলেছিলেন ?” লতা বললো। “নিশ্চয়ই, বলেছি যখন তখন দেখাবো,দাঁড়া;আগে একটু বাড়ির ভেতর থেকে আসি এই বলে জয়দেব মাষ্টার উঠে গেলে পরে লতা ফুলাদের কে দেখিয়ে দেখিয়ে বিভিন্নরকমের অঙ্গভঙ্গি করে ভেংচি কাটতে থাকে, এবং বলতে থাকে যে মাস্টার শুধুমাত্র তাকে একাকে জন্তু দেখাবে। এটা শুনে ফুলা, আকাশ,বল্টু সবাই লতার উপর রেগে যায়।

পড়ুনঃ- ভুতুড়ে গল্প- তান্ত্রিকের লাশ 

ক্ষনিকক্ষন বাদে জয়দেব মাষ্টার এসে লতাকে বললো, “জন্তু দেখবি তো, এই দেখ- বল্টুর দিকে নির্দেশ করে বলল,” এই হচ্ছে আস্ত একটা দু-পা ওয়ালা গাধা। দুই আর দুই যোগ করলে শূন্য হয়। তারপর ফুলার দিকে নির্দেশ করে, ” এ হচ্ছে মস্ত বড়ো একটা বাঁদর। গুন করতে বললে ভাগ করে।” একই ভাবে আকাশে দিকে নির্দেশ করে, ” এ হলো মস্তো বড়ো হনু।” তারপর শেষে তনুর দিকে নির্দেশ করে,”আর এ একটা শেয়াল। বলেছিলাম জন্তু দেখাবো, তোর পাশেই তো এক-একটা জন্তু বসে আছে। লতা বাদে বাকিরা কালকে তোদের বাবা মা কে সঙ্গে করে টিউশনে নিয়ে আসবি, পড়তে বসলে তোদের যতরকমের গল্পের আসর পাতা হয়।”

মানিক বাসুলী

গল্পের কলমে-

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।

পড়ুনঃ- 
হাসির গল্প- লাল মোহন 

বড় হাসির গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র () 

শিক্ষনীয় কষ্টের গল্প। নতুন ছোট হাসির গল্প. bengali educational story

Spread the love

Leave a Reply