অজুহাত জিনিসটা বড্ড বাজে সেটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে হোক বা অন্য যে কোন ক্ষেত্রে। আজ এক ব্যর্থ প্রেমিকার গল্পতে শুনব তার বিষাক্ত প্রেম স্মৃতি।

ব্যর্থ প্রেমিকার গল্পঃ- “অজুহাত”

ইনস্টিটিউট থেকে বেরোতেই মেঘা, সোনার হাত টা ধরে হ্যাঁচকা টান দিল। আর বোধয় এক সেকেন্ডের দেরি হলে সোনার ওপর দিয়ে ওই বারো চাকার গাড়িটা নিমেষে পেরিয়ে যেত।

একটা জোর ধমক দিয়ে মেঘা বললো , ” হয়েছে টা কি তোর ? মরবার শখ জেগেছে নাকি!

সোনা কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উত্তর দিল, কি হয়েছে ! কি হয়েছে ! এমন চিৎকার করছিস কেন?

মেঘা বুঝতে বাকি রইলো না , সোনা এতক্ষন কল্পনার জগতে অবস্থান করছিল তাই এতক্ষন ধরে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনায় তার মগজাস্ত হয়নি।

সোনাকে হাত ধরে রোড ক্রস করানোর পর মেঘা সামনের রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো । সেখানে বসে শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলো ” কি হয়েছে তোর ? কেউ কি কিছু বলেছে ?”

ব্যর্থ প্রেমিকার গল্প
ব্যর্থ প্রেমিকার গল্প

সোনা প্রথমে ইতঃস্তত বোধ করলেও কিছুক্ষন পর্ বললো , মেঘা আমি ভালো নেই । আমার বারবার মনে হচ্ছে আমি ওকে হারিয়ে ফেলবো।

মেঘা নিশ্চুপ ভাবে সোনার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন , এরপর তাচ্ছিল্য ভরা একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো , ” এমন কাকে পেয়েছিস যাকে হারানোর ভয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলছিস!

টেবিলের দুই দিকে বসে থাকে সোনা আর মেঘা কিছুক্ষন নিস্তব্দ থাকার পর। পুনরায় মেঘা বলতে শুরু করলো-

আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগের কথা , তখন আমি সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছি। নতুন নতুন ফোন কিনেছি আর সেই ফোনে ফেসবুক থেকে শুরু করে টুইটার অব্দি কোনোটাই খুলতে বাকি রাখিনি। সারাদিন খালি নোটিফিকেশন এর পর নোটিফিকেশন আর নতুন নতুন হাজারো বন্ধু। সব কিছুর মাঝে তখন ধরা কে সরা জ্ঞান এ নিজেকে বিরাট কিছু ভাবতে শুরু করেছিলাম। ঠিক সেই সময় আমার জীবনে আসে এমন একটা মানুষ যার জন্য আমি সব কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে শুধুমাত্র তাকেই নিজের জীবনের সবটুকু দেওয়ার চেষ্টায় ব্রতী হই।

পড়ুনঃ- ভুতুড়ে গল্প- তান্ত্রিক 

প্রথম প্রথম সব ঠিকঠাক চলছিল , একে অপরকে মানিয়ে নেওয়ার পর্ব থেকে শুরু করে বুঝার পর্ব সবটাই । তবে সেই বুঝার মাঝে কোথাও যেন একটা খামতি রয়েই গেছিলো , সেটা প্রথমে না বুঝলেও মাস ছয় পেরোনোর পর সুস্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারলাম আমি।

সে তো কথায় কথায় বলতো আমায় ছাড়া নাকি সে বাঁচবেই না । আমাকে পাওয়াই তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো পাওয়া কিন্তু জানিস কথা গুলো সব সেদিন মিথ্যা হয়েগেলো যেদিন একটা সামান্য ঝগড়া কে কেন্দ্র করে সে একটা বড়ো ম্যাসেজ দিয়ে বললো ” তোর জন্য আমার পড়াশুনা হচ্ছেনা , কোনো কাজ হচ্ছে না । সারাক্ষণ শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া , তাই এসবের মাঝে আমি জীবনের আসল লক্ষ্য টাকেই ভূলতে বসেছি । ক্ষমা করে দিস আমায় ,আমার জীবনে পড়াশোনা আগে তারপরে বাকি সব , তাই আর তোকে সময় দিতে পারবো না । ভালো থাকিস ….. গুড বাই ।”

ব্যর্থ-প্রেমের-গল্প-
ব্যর্থ-প্রেমের-গল্প-2

এই ম্যাসেজ টা দেওয়ার পর্ সবদিক থেকে সে আমায় ব্লক করে দিয়েছিল। আমি হাজার চেষ্টা করেও আর তার কাছ অব্দি পৌঁছাতে পারিনি। সে আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা ছিল, আর তাই তাকে হারানোর কষ্টটা ভুলতে আমার প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল। সবকিছু থেকে বিদায় নিয়ে অন্ধকার ঘর আর চোখের জলের আশ্রয়ে নিজেকে ধীরে ধীরে যখন সামলে তুলেছি তখন আমার জীবনে এলো ভিকি, তবে আমি সহজে তাকে বিশ্বাস করতে পারিনি। সে নিজে আশ্বাস দিয়ে কাছে টেনে নিলেও আজ অব্দি আমি তার ওপর পুরো ভরসা করি না। যদিও সেই আমার দুঃসময়ে ভরসার হাত বাড়িয়ে পুনরায় বাঁচতে শিখিয়েছে তাও আমি এটা মানতে রাজি যে ভিকিকে আমি তার মতো করে কখনো ভালোবাসতে পারবো না।

সবটা শুনার পর সোনা কম্পন মিশ্রিত গলায় জিজ্ঞাসা করলো , “ছেলেটার নাম কি ?”

মেঘা উত্তর দিলো , “অনুরাগ বসু । আর তার বাড়ি তোর বাড়ির কাছেই। তাই তুই যখন প্রথম অ্যাডমিশন নিয়েছিলি তখন থেকে আমি তোর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করতাম । কিন্তু পরে বুঝলাম তুই ঠিক কতটা অসহায়।”

পড়ুনঃ- কলেজ জীবনের ব্যর্থ প্রেম কাহিনী- অসমাপ্ত 

সোনার মুখে ভেসে উঠলো আতঙ্কের ছাপ। সে একগ্লাস জল নিমেষে শেষ করে , ফোনের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে , আর মেঘার দিকে তাকিয়ে চোখ মেলাতে পারলো না। ব্যাগ টা নিয়ে টেবিল ছেড়ে এক দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো ।

মেঘা অবাক হয়ে সোনার দিকে তাকিয়ে রইলো। সেও বুঝতে পারছেনা , সোনার এরূপ আচরণের কারণ কি।

দুই চোখ দিয়ে সোনার অশ্রু ধারা নির্মম ভাবে বয়েই চলেছে। তার মন তাকে প্রশ্নর পর প্রশ্ন করে চলেছে ” মেঘার অনুরাগ আর তার অনুরাগ কি একটাই মানুষ ! নাকি আলাদা ? কিন্তু অনুরাগ তো তাকে বলেছিল যে , সে যাকে ভালোবাসতো সেই মেয়েটা তাকে ধোঁকা দিয়ে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে তাই সোনাকে তার সঙ্গী হিসেবে একান্তই প্রয়োজন। তাই তো সোনা তার সবটুকু দিয়ে অনুরাগকে আপন করে নিয়েছিল । আর সেই অনুরাগ এই তার জীবনের প্রথম ভালোবাসা।

কিন্তু মেঘাকে যে অজুহাত দিয়ে অনুরাগ ছেড়ে গেছিলো সেই অজুহাতের সম্মুখীন তো আজ সোনাও। তাকেও তার অনুরাগ আজ পড়াশোনার অজুহাত দিয়ে পিছুটান থেকে মুক্ত হতে চাইছে । সেও সোনাকে জানিয়েছে তার পক্ষে আর এই সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয় কারণ সোনার জন্য তার পড়াশোনা হচ্ছে না । সে সোনার জন্যই নাকি লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্চে ।

নানান প্রশ্নের জোয়ার আজ সোনার মন কে ভেঙে ছারখার করে দিচ্ছে। সবদিক মিলিয়ে তার মন এটাই বলছে , অনুরাগ সত্যিই মিথ্যুক একটা ছেলে। আর সে একি ভাবে প্রতিটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা করে , নিজের আশা মেটানোর পর তার কাছে প্রতিটা মেয়েই হয়ে ওঠে তার লক্ষ্যের ভ্রষ্টকারি। কারণ তার লক্ষ্যই তো এক সম্পর্কে নিজের চাহিদা মেটানোর পর পুনরায় অন্য সম্পর্কে জড়ানো । তাই প্রাক্তন তার কাছে নাম্বার এর সমতুল্য ।

ছ্যাকা খাওয়ার গল্প
ছ্যাকা খাওয়ার গল্প
<

তবে এসব কথা মাথায় এলেও সোনার ফোনের দিকে তাকাতেই অনুরাগের ছবি ওয়ালপেপার এ দেখে আবারও মনে হয় , সে হয়তো ভুল , মেঘাও হয়তো ভুল , অনুরাগ এই ঠিক । কিন্তু সোনা কেন মনে করছে দুই জনের জীবনের অনুরাগ একটাই মানুষ …! আলাদাও তো হতে পারে । একই নামের কতো মানুষ রয়েছে এই পৃথিবীতে , হয়তো এখানেও ঘটছে তাই।

কিছুক্ষন পর রেল স্টেশন যাওয়ার জন্য সোনা অটো ধরলে হঠাৎ করে তার ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসে । আর সেটা দেখার পর সোনার চিৎকার করে বলে ওঠে-
তবে কি মেঘার অনুরাগ আর আমার অনুরাগ একটাই মানুষ ! এই প্রশ্ন মনে নিয়ে সে পাগলের মত হো হো করে হাসতে হাসতে ওই রেল স্টেশন এর ভিড়ের মাঝে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।

আর বোধয় চাইলেও সেই সোনাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের সুচারু ভাবনায়-

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
পড়ুনঃ- 
অভিমানী ভালোবাসার গল্প 

একটি সত্যি প্রেমের গল্প- বিশ্বস্ত হস্ত 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র () 

ব্যর্থ প্রেমিকার গল্প। ব্যর্থ প্রেমের গল্প। ছ্যাকা খাওয়ার গল্প। 1 new bengali sad emotional love story

Spread the love

Leave a Reply