আজকের ভুতুড়ে গল্প টির কেন্দ্রে রয়েছে একটি লাশ। উহু সাধারণ মানুষের লাশ নয়, একজন তান্ত্রিকের। তন্ত্র সাধনায় মগ্ন সেই তান্ত্রিকের গল্পই থাকছে আজ।

ভুতুড়ে গল্পঃ- “তারক তান্ত্রিক এর লাশ”

তারক তান্ত্রিক এর নিথর দেহটা আমরা যখন অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামাচ্ছিলাম তখন কাটায় কাটায় রাত দুটো। তারক তান্ত্রিক এলাকার সবথেকে নামকরা তান্ত্রিক। নিজের তন্ত্র মন্ত্র এর বলে নানান অসাধ্য কাজ করিয়ে দেখিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই তারক তান্ত্রিক এর কাছে টাকাই ছিল সবথেকে আগে, টাকার জন্য সে ভালো মানুষের খারাপ করতেও ছাড়ে নি।

ইচ্ছে না থাকলেও আমাদেরই তার সৎ গতির কাজে হাত লাগাতে হল। সংসারে স্ত্রী ছাড়া তার আর কেউই নেই। আবার প্রায় দুই মাস ধরে তার স্ত্রী শয্যাশায়ী। কোন এক বেমারি ধরেছে, তার নাম কেউই জানে না।

সে যাই হোক, সব কিছু রেডি করতে করতে রাত পৌনে তিনটা। আবার বাসি মরার তকমা এড়াতে সেদিনই নাকি সৎ গতির ব্যবস্থা করতে হবে। সে যাই হোক আমরা চারজন ছেলে মিলে তারক তান্ত্রিক এর দেহটা যে খাটিয়ায় রাখা ছিল সেটা তুলে নিয়ে শ্মশান এর দিকে রওনা হলাম।

ভুতুড়ে গল্প
ভুতুড়ে গল্প

এরকম একটা বদ মানুষকে কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছি জেনে বারবার মনে রাগ জেগে উঠছিল, আবার কখনো কখনো মনে হচ্ছিল, ওর তো কেউ নেই, ওর ব্যবহার ওর কাছে। ওর একটা বিহিত করে দিলেই বাঁচি।

এই তারক তান্ত্রিক লোকটা যেমন অদ্ভুত তেমনই তার মৃত্যুও হয়েছে অদ্ভুত ভাবে। সকাল থেকেই আকাশের গতিক ভালো ছিল না, এই ঝড় বাদলা মাথায় নিয়েই কোন এক কাজে নাকি তিনি রওনা দিয়েছিলেন পাশের গ্রামে।

একদিন পর পুব পাড়ার তেমাথার দিকে যে বিশাল খাল টা আর ওর ধারে যে বিশাল বিশাল আম গাছ গুলো সেখানেই অর্ধেক জলে আর অর্ধেক ডাঙ্গায় তার শরীর মিলেছে। যখন তার শরীর কে তুলতে গেল পুলিশ তখন দেখল তার নাকি একটি হাড় আর অবশিষ্ট নেই। সাধারণত মৃত ব্যক্তির শরীর কঠিন হয়, কিন্তু তারক তান্ত্রিকের দেহ নাকি, লতার মতো নেতিয়ে যাচ্ছিল।

সেই খালের দিকে তার দেহটা পরে ছিল অনেকটা স্বস্তিক চিহ্নের মত করে, কান দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়া রক্ত খালের জলে গেছে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হল, সেই রক্ত খালের জলে মিশে যায় নি, রক্ত খালের জলেই জমাট বেঁধে ছিল। আমার যতদূর মনে হয় এই তারক তান্ত্রিক কে কেউ খুন করেছে। এমন একজন অসৎ মানুষের শত্রুর কোন অভাব নেই, সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

পড়ুনঃ- ভুতুড়ে গল্প- অভিশপ্ত পুতুল 

এই সব সাত পাঁচ ভাবনার জাল যখন ছিন্ন হল, তখন দেখি আমরা গ্রাম ছেড়ে ভুবন ডাঙ্গার মাঠ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। ইসস এই মাঠেই তো তারক তান্ত্রিক রাতে কালরাত্রি দেবীর পূজা করতো। কত লোক রাতের বেলা এই মাঠ পেরোতে গিয়ে নানান ভয়ানক জীব দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে, যদি আমরাও এরকম কিছু দেখি কি হবে!

ধুর কি সব ফালতু ভাবনা ভাবছি! শ্মশান তো আর বেশিদুর নেই, সেখানে গিয়ে লাশটার একটা বিহিত করে দিলেই বেঁচে যাই।

ভুবন ডাঙ্গার মাঠের কোন থেকে বারবার শেয়ালের ডাক, আর মাঝে মাঝে পেঁচার আওয়াজ বারবার শরীর কে শিহরিত করছে।

সামনে চলছিল বিশু আর নিশু দুই ভাই আর পিছনে আমি আর নিলু।

তান্ত্রিকের গল্প
তান্ত্রিকের গল্প

নিলু আমাকে এক হাত দিয়ে ধরে ফিশফিশ করে বলল, কিছু বুঝছিস ভাই!

আমি বললাম, কিছু বুঝছিস মানে!

নিলু বলল, আমার মনে হচ্ছে, তারকু এর লাশটা নড়ছে।

-তুই খেপেছিস নাকি, লাশটা নড়ছে! আরে আমরা হেঁটে যাচ্ছি তাই লাশেও ঝাকি লাগছে আর লাশটাও এদিক ওদিক করছে।

-না রে ভাই, সত্যি আমার মনে হচ্ছে তারকু এর লাশ নড়ছে।

আমি নিলুর কথার কোন উত্তর দিলাম না, তাই নিলুও চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর সামনে থেকে বিশু চেঁচিয়ে বলল- হ্যাঁরে এই তারক কাকা কি মরে নাই নাকি রে! কেমন যেন মনে হচ্ছে খাটিয়া টা দুলছে।

আমি আবার বললাম যে, হেঁটে যাওয়ার ঝাকুনির জন্য লাশটা নড়ছে তাই এরকম হচ্ছে।

বিশু আবার বলল- না না তুই একটু ধ্যান দে, মনে হচ্ছে একটু বেশি বেশিই নড়ছে লাশটা।

বিশুর কথাটা শেষ হতে না হতেই নিলু ভয়ে কেঁদে উঠে কাঁপা গলায় বলল, কেউ আমার হাত স্পর্শ করছে।

পড়ুনঃ- সত্যি ভুতের গল্প- জঙ্গলের ভুত  

-চুপ তো! কিসব ভাবছিস! মরা লোকে তোর হাত স্পর্শ করবে কিভাবে! সব তোর আজগুবি ভাবনা। হয়ত কাপড়টা একটু ঝুলে গেছে সেটাই তোর হাতে স্পর্শ হচ্ছে। উফফফ তোরা সত্যি একেকজন পারিশ বটে!

কেউ কোন উত্তর দিল না। শ্মশান আর বেশি দূরে নেই, এসেই গেছি প্রায়। কিন্তু কই আমাদের পিছনে যারা আসছিল তাদের দেখা যাচ্ছে না কেন! তাদের কাছেই তো বাকি সব জিনিস। জ্যোৎস্নার আলোয় ওদের কাউকেই নজরে আসছে না।

নিলু চেঁচিয়ে ভয়ে আঁতকে উঠে বলল- ভা ই ই ই, লা দাঁড়ি পা। আমি কিছুই বুঝলাম না। নিলুর মুখের দিকে দেখতে গিয়ে আমার নজর গেলো জ্যোৎস্নার আলোয় সৃষ্টি হওয়া আমাদের ছায়ার দিকে। ছায়ায় আমি পরিষ্কার দেখলাম যে,

খাটিয়ায় কেউ বসে আছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য দৃশ্যটা আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত একটা শিহরন দিয়ে গেলো। আমি কাঁপা গলার বললাম, বিশু নিশু ডানে তাকা। তারা যেই ওদিকে দেখেছে, অমনি ‘মা গো…!’ বলে নিশু জ্ঞান হারাল। আর এরকম ভাবে সে পড়ে যাওয়ার ফলে একটা হ্যাঁচকা টানে খাটিয়া টা একদিকে হেলে গেলো, আর তারক তান্ত্রিক এর লাশ টা ওইদিক দিয়ে সোজা মাটিতে পড়ে বসে রইলো।

tantrik er golpo
tantrik er golpo
<

এই রাতে এই ভয়াবহ দৃশের মুখে দাঁড়িয়ে আমাদের অবস্থা এমন যে, পালানোর শক্তিটুকুও আর নেই আমাদের। যেন মনে হচ্ছে পা দুটো কেউ মাটির মধ্যে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে দিয়েছে।

দেখতে দেখতেই নিলু একটা বিকট ভয়াবহ চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আমি আর বিশু খাটিয়ে ফেলে পালানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু আমাদের পা জমি থেকে কিছুতেই সরছিল না, আর মাথার মধ্যে যেন কেউ চেপে ধরেছে এরকম বোধ হতে লাগল।

এরকম ভাবে কতক্ষণ ছিলাম জানিনা, আমাদের পা মুক্তি পেলো, তখনই যখন আমাদের পিছনে যারা আসছিল তারা এলো। সব কিছু জানার পর তারাও ভয় পেয়ে গেলো। অগত্যা সবাই যে যার মত করে দে ছুট।

পড়ুনঃ- আসল কয়েকটি ভুতুড়ে জায়গা নিয়ে জানুন 

আমি নিলুকে আর বিশু নিশুকে কাঁধে উঠিয়ে দৌড় লাগালাম।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন! আমরা পরের দিন সূর্যের আলোয় পুরো গ্রাম মিলে সেই জায়গায় গেছি, তন্ন তন্ন করে খুজেছি তারক তান্ত্রিকের লাশ, কিন্তু তার লাশের আর দেখা পাই নি আমরা। সত্যি এই বিষয়টা আমাদের মধ্যে একটা বড় প্রশ্ন চিহ্ন তুলে ধরেছে। হাজার হলেও লাশটাকে যদি কোন শেয়াল কুকুরেও খেত, অন্তত অবশেষটা কোথাও না কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত, কিন্তু সেটারও খোঁজ মেলেনি।

লাশটা তো আর দৌড়ে দৌড়ে কোথাও পালায়নি, অথবা হাওয়াতেও উড়ে যায় নি, তাহলে লাশটা গেলো কোথায়!  

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
এক ভুতুড়ে বাড়িতে রাত কাটানোর ভয়ানক অভিজ্ঞতা 

ভালোবাসার গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শিক্ষণীয় গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র () 

ভুতুড়ে গল্প। তান্ত্রিকের গল্প। tantrik er golpo. 1 refined bengali horror story.

Spread the love

Leave a Reply