আজ আমরা একটি ভূতের সত্য ঘটনা জানব। এই ভয়ানক হাড়হিম করা ভূতের গল্পটি ভারতের উত্তরপ্রদেশের একটি জঙ্গলের। পৃথিবীর এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে নাকি এখনও ভূত-প্রেতের আনাগোনা রয়েছে। আবার এমনও কিছু জায়গা রয়েছে যেগুলি জনসাধারণের জন্য বন্ধ।

ভূতের সত্য ঘটনা।জঙ্গলের আত্মা

সময়টা ছিল ১৯৫২-১৯৫৩ সাল। পাঁচ জন শিকারি মধ্যপ্রদেশের এক জঙ্গলে শিকারের জন্য যায়। জঙ্গলেই তাদের রাত হয়ে যায়। তাই তারা জঙ্গলেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু থাকার জন্য ভালো একটি জায়গা তারা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কেয়ার টেকার তাদের বলে যে জঙ্গলের ভিতরে একটি পুরানো ধ্বংসপ্রায় ডাকবাংলো পড়ে রয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় সব কিছু এখনও মোটামুটি আছে। আপনারা যদি চান তাহলে পরিষ্কার করে থাকতে পাড়েন।

অন্ধকার দ্রুত ঘনিয়ে আসছিল, তাই তারা দ্রুত সেই ডাকবাংলোর খোঁজ করতে থাকে। অবশেষে তারা সেটি খুঁজে পায়। মাকড়শার জালে ভর্তি হয়ে রয়েছে ঘড় গুলি। এরপর তারা একটি রুম পরিষ্কার করে। মেঝেতেই বিছানা বিছিয়ে দিয়ে তাদের বন্দুক গুলি দেওয়ালে ঠেস দিয়ে লাগিয়ে রাখে তারা। এরপর তারা সময় কাটানোর জন্য তাস খেলতে শুরু করে দেয়। রাত অনেক হতে থাকে। এরপর তারা তাদের শিকার করা জন্তু গুলি দিয়ে খাবার বানিয়ে খেয়ে ঘুমোতে যায়।

এদের মধ্যে একজনের কিছুতেই এই কালিঝুলি মাখা নতুন ভূতুড়ে জায়গাটিতে ঘুম আসছিল না। তাই সে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে, এবং একটি সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। চোখে ঘুম ঘুম ভাব কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছে না। এরপর সে ঝাপসা চোখে দেখে যে তার সামনের খোলা জানালা দিয়ে একটি হাত তার দিকে এগিয়ে আসছে। সে ভয়ে চিৎকার করে উঠে। তার চিৎকার শুনে বাকিরাও ঘুম থেকে জেগে উঠে। কিন্তু ততক্ষণে হাতটির কোনো চিহ্ন ছিল না। হাতটি মুহূর্তের মধ্যে মিশিয়ে গেল।

ভূতের সত্য ঘটনা ভয়ানক হাত
ভূতের সত্য ঘটনা ভয়ানক হাত

এরপর বাকিদের সে ঘটনাটি বলতেই বাকিরা তাকে বলে, তোমার হয়ত ভ্রম হয়েছে। সারাদিন জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করে শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই তুমি হয়ত কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছ। জানালা রয়েছে কতদূরে। অতদুর থেকে একটি হাত এতদূর কিভাবে আসতে পাড়ে? নতুন জায়গা তো তাই এমন মনে হচ্ছে। এবার ঘুমিয়ে পড়।

সেই লোকটি তাদের বারবার বলছিল যে সে যা দেখেছে ঠিক দেখেছে কোনো ভ্রম হয়নি। কিন্তু বাকিরা তার কথায় কান না দিয়েই শুয়ে পড়ে। সেও ঘুমানোর চেষ্টা করে, কিন্তু কিছুতেই সে ঘুমাতে পাড়ছিল না। দেখতে দেখতেই সকাল হয়ে যায়। সকালের খাবার খাওয়া তারা আবার শিকারের উদ্দেশ্যে চলে যান। কিন্তু সেদিন তারা কয়েকটি বনমুরগী ছাড়া আর কিছুই পেল না। রাত হতে না হতেই তারা আবার সেই ডাকবাংলো-তে চলে আসে। সেই বনমুরগী গুলিকেই তারা সেই রাতে খেয়ে-দেয়ে তাস খেলতে শুরু করে।

পড়ুনঃ- ষ্টেশনের ভুতের গল্প

চোখে ঘুম ঘুম ভাব, কিন্তু তারা তাস খেলেই যাচ্ছে। হঠাৎ পায়ের নুপুরের শব্দ ভেসে এল। যেন কেউ জঙ্গলে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু এত রাতে এত গভীর জঙ্গলে কোনো মহিলা কিভাবে আসবে। তারা ভাবল তারা হয়ত ভুল কিছু শুনেছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য জানালা দিয়ে তারা বাইরে দেখল, কিন্তু কিছুই তারা দেখতে পেল না। এরপর তারা ঘুমিয়ে পড়ে।

আগের দিন যে লোকটির ঘুম আসছিল না, সেদিনও সেই লোকটির ঘুম আসছিল না। সে বসে বসে চোখ বন্ধ করে গত কালের সেই লম্বা হাতটির ব্যাপারে ভাবছিল। তার মনে হল তার সামনে যেন কোনো কিছু আসছে। সে চোখ খুলে দেখতেই তার অজ্ঞান হবার পরিস্থিতি হয়ে যায়। সে দেখে একটি হাত তার গলা পর্যন্ত চলে এসেছে। আর জানালায় একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে কদাকার দাঁত বেড় করে আছে। সেই লোকটি কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে জোড়ে চিৎকার করে উঠল।

ভয়ানক ভূতের গল্প
ভয়ানক ভূতের গল্প vuter golpo

তার বাকি বন্ধুরা লাফিয়ে উঠল। সেই লোকটি তাদের বলে, আমি না চিৎকার করলে আমার গলা টিপে আজ আমাকে মেরেই ফেলত সেই ডাইনিটা। সে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির কথা তাদের বলতেই বাকিরা দৌড়ে জানালার কাছে গেল, তারা কোমর পর্যন্ত চুল ওয়ালা একটি মেয়েকে অস্পষ্টভাবে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখল। তারা আবার পায়ের নুপুরের মত শব্দ শুনতে পান। এরপর তারা সিদ্ধান্তে আসেন যে, কিছু না কিছু একটা গোলমাল রয়েছে এখানে।

এরপর তারা আর বিশেষ কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন ঠিক একইভাবে সকালে কিছু হালকা খাবার খেয়ে তারা আবার শিকারের জন্য বেড়িয়ে পড়ল। তারা রাস্তায় কিছু আদাবাসীর দেখা পেল। সেই আদিবাসীরা তাদের বলল আপনারা কোথায় যাচ্ছেন? তারা বলেন এখানে সিংহের শিকার করতে এসেছিলাম, কিন্তু সিংহ পেলাম না তাই দেখি হরিণ শিকার করতে পাড়ি কি না! এরপর আদিবাসীরা জিজ্ঞাসা করল- আপনারা এখানে কি কোথাও তাঁবু টানিয়ে থাকছেন নাকি?

এরপর শিকারিরা জানায় তারা একটি পুরানো ডাকবাংলোতে দুই দিন ধরে রাত কাটাচ্ছেন। এরপর আদিবাসীরা অবাক হয়ে বললেন- দুই দিন ধরে আছেন সেখানে, আর আপনারা এখনও বেঁচে আছেন?

জঙ্গলের আত্মার গল্প scary horror story
জঙ্গলের আত্মার গল্প scary horror story image
<

‘বেঁচে আছেন’ মানেটা কি?

সাহেব ওই বাংলোটি ভুত বাংলো। সেখানে একটি মেয়ের অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায়। এর আগে যেই সেখানে রাত্রিবাসের চেষ্টা করেছে তাকেই সে গলা টিপে মেরে ফেলেছে।

আত্মা? কিসের আত্মা?

সেই মেয়েটি একজন কেয়ার টেকারের মেয়ে ছিল। কেয়ার টেকারের অসুখ হয়েছিল। সেই সময় সেখানে কয়েকজন শিকারি কয়েকদিনের জন্য থাকছিলেন। কেয়ার টেকার অসুস্থ হওয়ায়, তার মেয়েটিই সেই শিকারিদের জন্য খাবার তৈরি করে দিয়ে আসত। এরকমই একদিন মেয়েটি খাবার দিতে গেলে শিকারিরা মেয়েটিকে টেনে ধরে এবং তার উপর অত্যাচার চালায়। এরপর মেয়েটির সাথে হওয়া খারাপ আচরণ যেন প্রকাশ না পায় তারজন্য সেই শিকারিরা মেয়টিকে হত্যা করে।

পড়ুনঃ- পৃথিবীর ভয়ানক জায়গা

এরপর থেকেই সেই মেয়েটির আত্মা সেই ডাকবাংলোতে ঘুরছে। কেউ ভুলেও যদি সেখানে রাত কাঁটাতে যায়, তাকেই সে মেরে ফেলে। সেই অভিশপ্ত বাংলো থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালিয়ে যান। আপনাদেরই মঙ্গল হবে। আর যদি থাকতে চান তাহলে জঙ্গল থেকে কিছু দুরেই একটি গ্রাম আছে, সেখানে থাকতে পাড়েন। আপনাদের ভালোর জন্যই বলছি সাহেব, এখন আপনারা শিক্ষিত মানুষ আমাদের কথায় বিশ্বাস করবেন কি না জানিনা।

ভূতের সত্য ঘটনা। ভয়ানক ভূতের গল্প।
ভূতের সত্য ঘটনা। ভয়ানক ভূতের গল্প

কিন্তু সেই শিকারিরা এরপর হরিণের খোঁজে জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে রাত করে ফেলে, কোনো উপায় না পেয়ে তারা আবার সেই বাংলোটিতে যায়। সেদিন কেউই ভয়ে ঘুমায়নি। তাদের সাথে থাকা জিনিসপত্র প্যাকিং করে তারা এই ভূতুড়ে বাংলোর কথা ভাবছিল। হঠাৎ তারা দেখে যে জানালার পাশে সেই ভয়ংকর দাঁত যুক্ত ডাইনি রুপী মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। সেই মেয়েটি বলে তোদের সাথে থাকা দেবতার ছবির জন্য তোদের মৃত্যুর স্বাদ আমার নেওয়া হল না। এরপর সে চলে যায়। পরের দিন ভোর হতে না হতেই তারা সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে তারা আর কোথাও রাত কাটানোর চেষ্টা না করে সোজাসুজি বাড়ি ফিরে আসেন।

এই ভূতের সত্য ঘটনা। ভয়ানক ভূতের গল্প সম্পর্কিত আপনার মতামত আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে ভুলবেন না।

আপনিও যদি আমাদের, আপনার লেখা গল্প পাঠাতে চান, তাহলে যোগাযোগ করতে পাড়েন আমাদের ফেসবুক পেজ গল্প আর গল্প তে অথবা এই পেজের একটু নীচে আপনার লেখা প্রকাশ করুন নামে যে বোতাম রয়েছে সেখানে ক্লিক করেও আমাদের লেখা পাঠাতে পাড়েন।  

Spread the love

Leave a Reply