একজন দিদি তার প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার গল্প, আমার সাথে ভাগ করে নিয়েছিল, আর সেই কথোপকথনেরই নির্যাস হল এই ইমোশনাল লাভ স্টোরি টি।

ইমোশনাল লাভ স্টোরিঃ- “শেষ-কথা”

আমার মধ্যে থাকা খারাপ অভ্যাস গুলির মধ্যে অন্যতম হল অচেনা অজানা মানুষের সাথে দুম করে মিশে যাওয়া। আমার এই অভ্যাসটিকে খারাপ বলার কারন হল, অনেকের কাছে এই অভ্যাসটি গ্রহণযোগ্য নয়। যাকগে সে সব কথা।

যেদিন থেকে ইউনিভার্সিটি যাওয়া শুরু করেছি, সেদিন থেকেই শিলিগুড়ি জংশনের ওই ছোট্ট গলিটা দিয়ে আমাকে প্রায়ই যাওয়া আসা করতে হয়। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, শিলিগুড়ি জংশন খুব বড় একটা স্টেশন কিন্তু নয়! ছোট্ট একটা স্টেশন, সব ট্রেন এখানে দাঁড়ায় না।

আমি কয়েক মাস ধরেই লক্ষ্য করছি আমার দিদির মত বয়সী একজন মেয়ে রোজ স্টেশনে বসে থাকে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ আসবে হয়ত, টাই অপেক্ষা করছে! কিন্তু প্রতিদিন বসে থাকার পেছনে নিশ্চয় কোন কারন আছে! দিদিটা দেখতে দারুণ, ফর্সা চেহারা কাজল কালো টানা চোখ, কোমর পর্যন্ত চুল। তবে মুখে কেমন যেন একটা নিরাশার ভাব, যেন কোন কিছু তাকে বারংবার চিন্তায় ফেলছে…!

ইমোশনাল লাভ স্টোরি
ইমোশনাল লাভ স্টোরি

আমি ঠিক করলাম, তার সঙ্গে যেভাবেই হোক পরিচিত হতেই হবে। তার সঙ্গে তো রোজ দেখা হয়, কি জানি সে আমাকে দেখে কি না! সেই দিদির মুখের ছবিটা আমার কাছে এতটাই পরিচিত ছিল যে, মাঝে মধ্যে তাকে ওই বেঞ্চে না দেখলে আমার চোখ যেন তাকেই খোঁজে, নিজের অজান্তেই চলার গতি কমে যায়।

তবে দিদিটা সুন্দর বলেই আমি তাকে দেখছি, বা তার সাথে ফ্লাট করব এরকম মনোভাবাপন্ন কিন্তু আমি নয়। আসলে আমার মনের মধ্যে উদয় হচ্ছে বিভিন্ন প্রশ্নের।

একদিন সাহস করে দিদিটার সামনে থেমে গেলাম, কাছে গিয়ে বললাম- “দিদি তোমার নাম কি?” আচমকা এরকম প্রশ্নের জন্য সে হয়ত প্রস্তুত ছিল না, মুখটা উঠিয়ে আমার দিকে কেমন যেন বিজ্ঞের মত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। হয়ত আমার এরকম প্রশ্নের পিছনে থাকা কারণ গুলি অনুসন্ধান করতেই তার মন ব্যস্ত।

দিদি মুখটা আমার দিকে ঘোরাতেই আমি লক্ষ্য করলাম, তার চোখ যেন ছলছল করছে, যেন অনেক বেদনা জমে আছে তার হৃদয়ে কিন্তু সেই বেদনা তার একান্ত।

পড়ুনঃ- অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী 

সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রুমাল দিয়ে চোখ মুছে আমাকে জিজ্ঞাসা করল- “কেন বলোতো!”

বাঃ দিদির রূপের মত তার গলাটাও অসাধারণ। কিছুক্ষণের জন্যও আমার মনে হয়েছিল তার গলার আওয়াজ থেকে যেন সুন্দর ঝর্নার বারিধারা বর্ষিত হচ্ছে। কিন্তু সেই বারিধারায় মিশে আছে অনেক যন্ত্রণা, যেন কথা বলতে তার খুবই কষ্ট হচ্ছে, যেন এক প্রকাণ্ড ভারী পাথরে তাকে কেউ চাপা দিয়ে রেখেছে। 

আমি বললাম- “তোমাকে রোজ দেখি তো, তাই এমনি জিজ্ঞাসা করলাম।“

আমার হাত ঘড়ি জানান দিচ্ছে, এখানে আর থাকা চলবে না। আমি বললাম- “আজ তবে আসি, পথে হল অনেক দেড়ি। আবার কাল কথা বলব।“

পরের দিন গিয়ে দেখি, দিদি আসেনি। অনেকটাই নিরাশ হলাম। আমার মনের মধ্যে জমাট বাঁধা প্রশ্ন গুলি যেন সুদে আসলে দিন দিন বেড়েই চলছে! যে ভাবেই হোক আমার মনে থাকা প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর আমাকে পেতেই হবে।

এরপর আর বেশ কয়েকদিন দিদিকে দেখিনি। নিজের অজান্তেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।

প্রায় দিন দশেক পর হঠাৎ করেই দিদির দেখা হয়। আমি দিদির কাছে গিয়েই জিজ্ঞাসা করলাম- “এই কয়েকদিন তুমি কোথায় ছিলে দিদি।“

bengali emotional love story
bengali emotional love story

সে জবাব দিল- “ একটু শরীর খারাপ হয়েছিল”

আমি এবার সোজা তাকে বললাম- “আমি কি তোমার পাশে বসতে পারি!“

সে কিছুক্ষণ চুপ থাকল, তারপর বলল- “হুম দিদি বলে সম্বোধন করেছ যখন বসতেই পারো।“

তার প্রতিটি কথায় যেন বেদনার ছাপ। 

আমি তাকে বললাম- “ আচ্ছা দিদি তুমি কেন রোজ এখানে আসো বলো তো!”

-কিছু কথা সবাইকে বলা যায় না, ভাই।

– প্লিজ দিদি প্লিজ এরকম করো না, বলো না তুমি কেন এখানে আস!

– তোমার বয়স এখনও অনেক কম। এইসব কথা না শোনাই ভাল হবে।

-কে বলেছে আমার বয়স অনেক কম, আমি একজন ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট। হি হি হি।

-বাঃ দেখে তো বোঝাই যায় না।

-প্লিজ দিদি প্লিজ…

পড়ুনঃ- ব্রেকআপ লাভ স্টোরি 

-শুনবে আমার সেই বেদনার কথা, সেই যন্ত্রণার কথা কি তোমাকে বলা ঠিক হবে! আমি কারও সামনে আজ পর্যন্ত বলিনি আমি কেন এখানে আসি। কেউ জানার ইচ্ছে প্রকাশও করেনি। আমার বাড়িতে তো আমাকে বদ্ধ পাগল ভাবে সবাই।

-আমি অত কিছু জানি না, অন্যরা তোমাকে কে কি ভাবল তাতে আমার কি, আমি তো তোমাকে একজন ভালো মনের মানুষই ভাবি। অন্তত নিজের ভাই ভেবে তোমার এখানে আসার গোপন কারণটি আমাকে বলতে পারো। আমি কাউকেই বলব না। তুমি যদি না বল আমিও কিন্তু এখান থেকে উঠব না বলে দিলুম।

-শুনতে চাও, আমার সেই কষ্টের কাহিনী শোনো তবে-

” আমার সঙ্গে রাজের প্রথম দেখা হয়েছিল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে ইংরেজি ক্লাসে। সেইই যেচে বন্ধুত্ব করতে এসেছিল। আমি আবার ছেলেদের এই স্বভাবটা মোটেও পছন্দ করতাম না। আজ বন্ধুত্ব করতে চাইছে, কাল প্রেম করতে চাইবে! প্রথম প্রথম এই সব পাত্তা না দিলেও, নিজের অজান্তেই রাজের জন্য কেমন যেন একটা ভালো লাগা আমার মনে সৃষ্টি হয়। হঠাৎ করেই আমার মন বলে উঠে, বন্ধুত্ব করলেই বা ক্ষতি কি! মেয়েদের তো ছেলে বন্ধু থাকতেই পারে!

সময়ের সাথে সাথে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক রূপান্তরিত হল প্রেমের সম্পর্কে। যে ভয়টা আমার ছিল সেই ভয়টাই বাস্তবে রূপ পেল। যতই আমার মনে হত এই সব ভালো নয়, সম্পর্কে ইতি টানা উচিত, ততই যেন আমি এই ভালোবাসা নামক জিনিসটায় ডুবে যাচ্ছিলাম।

এদিকে আমাদের ব্যাপারে বাড়িতেও জানাজানি হয়ে গেল। আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল। আর এদিকে রাজের সাথে দেখা করাটাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। বাবার ফোনে লুকিয়ে লুকিয়ে তার সাথে কথা বলতাম। এভাবেই কেটেছে কয়েকটা বছর।

অবশেষে আমি রাজ কে বিয়ের প্রস্তাব দিই, কিন্তু সে বলে ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে সে কিসের একটা ট্রেনিং করবে, সেই ট্রেনিং শেষ করলেই নাকি ও চাকরিটা পেয়ে যাবে। আর চাকরি পেয়েই সে আমাকে নিয়ে যাবে সেখানে।

আমাদের শেষ দেখা এই স্টেশনেই। যাবার আগে সে আমাকে বলে যায়, সে যত তাড়াতাড়ি পারে ফিরবে। কিন্তু আজ ছয় বছর হয়ে গেল সে আর ফিরল না। যে মোবাইল নাম্বারটা সে দিয়ে গিয়েছিল সেটিও সুইচ অফ। কিন্তু আমার মন বলছে সে আবার এই স্টেশনে নামবে আর আমার হাত ধরে নিয়ে যাবে তার সাথে। তার ফেরার আশায় আমি আজও অপেক্ষা করছি। বলা তো যায় না, সে কোন দিন আমাকে নিতে আসে, তাই রোজ এখানে এসে বসে থাকি, একজন ‘ফিরব’ বলে কথা দিয়ে গিয়েছিল যে!”

দিদির কথা শেষ হতেই তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, চোখের জলের সাথে কাজল মিশে কালো রঙের অশ্রু ধারা প্রবাহিত হয়ে চলেছে গাল বেয়ে। এই অশ্রু ধারায় লুকিয়ে আছে, অনেক আশা, অনেক যন্ত্রণা, অনেক অনুভূতি। হয়ত রাজ আর ফিরবে না। সে হয়ত ব্যাঙ্গালোরে দিব্যি সেটেল হয়ে বিন্দাসে আছে। কিন্তু দিদিকে দেওয়া কথা সে রাখতে পারে নি, হয়ত দিদির থেকেও ভালো কাউকে পেয়ে গেছে সে!

প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার গল্প
প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার গল্প
<

আবেগ কে সাথে নিয়ে দিদির এই অপেক্ষা, তাকে সান্তনা দেওয়ার মত ক্ষমতা আমার নেই। শুধু বারংবার একটি কথাই মনে আসছে, দিদির এই চোখের জলের মুল্য সেই ছলনা কারী প্রেমিক বুঝবে কি ভাবে!

আমার চিন্তা জাল ছিন্ন হল, ট্রেনের হর্নের শব্দে। দিদির দিকে তাকিয়ে দেখি তার দুই অশ্রু সজল নয়ন অনেক কিছুই বলছে, অনেক কিছুর সাক্ষী তার এই দুই চোখ কিন্তু তার বেদনা তার গহীনতা বোঝার মত ক্ষমতা কারুর নেই…।   

 গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 

কলেজ জীবনের প্রেম কাহিনী- পরিসমাপ্তি 

ব্রেক আপ হওয়ার গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

ইমোশনাল লাভ স্টোরি। প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার গল্প। 1 bengali emotional love story

Spread the love

Leave a Reply