sotti premer golpo// ভালবাসা বা প্রেম, শব্দটা শুনলেই আমাদের মনে বিপরীত লিঙ্গের একজন মানুষের কথা মনে পরে যায়, কিন্তু এখানেই কি প্রেমের চরিত্রের সমাপ্তি? উহু তা কিন্তু নয়- প্রেমের বিকাশ, আরও বহুদূর! কি যা তা বলছি, কিছুই বুঝছেন না তো! বুঝবেন বুঝবেন সব বুঝবেন, তার জন্য একটু গল্পটা পড়তে হবে।।

sotti premer golpo:- “ভালবাসার সূক্ষ্ম অনুভূতি”

মধুর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় পার্ক স্ট্রিটের ওই মোড়ে। প্রথম দেখায় ভালো লেগে যাওয়া এরপর প্রেমের সাগরে দুইজনে মিলে সাঁতার কেটেছি পাঁচ বছর। কিন্তু জানিনা হঠাৎ করেই ওর কি হল, সব কিছুতেই আমাকে কেমন যেন সন্দেহ করতে লাগল। এই প্রেম যে আর বেশিদিন টিকবে না তা আমি বেশ বুঝে গিয়েছিলাম। সেই ভগ্ন প্রায় প্রেম কে আবার আগের দশায় ফিরিয়ে আনতেই আজ আমি এই ভ্যালেন্টাইনস সপ্তাহে তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।

আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে মা বেশ ভালো জানতেন। বাড়ি থেকে আসার সময় মা আমার হাতে এই টিফিনের বাক্স টা দিয়ে বলেছিলেন- “তোর আর মধুর প্রিয় খাবার রেধে দিয়েছি আমি। দুইজনে মিলে আড্ডা দিতে দিতে খাবি।“

রুম থেকে বাইক বের করে স্টার্ট দিতে যাব, এমন সময় বাবা এসে আমার হাতে দুই হাজার টাকার একটা নোট দিয়ে বললেন- “কাল রাতে তোকে খুব বকেছি। তার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে, তুই যেন কিছু মনে না করিস সেই দিকটা মাথায় রেখে এই দুই হাজার টাকা টা তোকে ঘুষ দিলাম, হা হা হা।“

sotti premer golpo
sotti premer golpo

বোন ছাদ থেকে চেঁচিয়ে বলল- “দাদা সাবধানে যাবি, আর আসার সময় আমার জন্য একটা গোলাপি রঙের লিপস্টিক নিয়ে আসবি।“

লাল বাগের পার্কে পৌঁছে দেখি মধু আগে থেকেই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি জানি এবার সে আমাকে কথা শোনাবে। কারন অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়েছি ওকে।

আমি কাছে যেতেই সে বলল- “অন্তত আজকের দিনটা তো তাড়াতাড়ি আসতে পারতে!” আমি জবাব দিলাম- ‘প্লিজ রাগ কর না, এরকম আর হবে না।‘ মধু মুখ ভেংচে বলল- “এরকম আর হবে না হবে না করে তো গোটা পাঁচটা বছর কাটিয়ে দিলে।“

আমি আর কিছু বললাম না, সোজা মধুর পাশে গিয়ে বসলাম। সে আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল- “সত্যি তোমার কাছে আমাকে দেওয়ার মত কোন সময় নেই, তাই না!”

-কে বলেছে! এই যে তোমার সাথেই তো আছি।

-আমি দিন দিন দেখছি, তুমি কেমন যেন ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছ।

আমি কিছু বলতে যাব, আমাকে থামিয়ে দিয়ে সে আবার বলতে শুরু করল- “তোমার জীবনে হয়ত এই মধু ছাড়াও অন্য কোন মৌচাকের মধুর সন্ধান এসেছে! তাই তুমি ব্যস্ততা দেখাচ্ছ।“

-এই সব তুমি কি বলছ মধুমিতা! তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে। প্লিজ অন্তত আজকের দিনে একটু ভালো ভাবে কথা বল।

এরপর কথার মোর অন্যদিকে চলে যায়। সে বলে- “ওই যে শিশু সেবা আশ্রমের মেয়েটা, কি যেন নাম… তুমি তো এখন তার উপরেই দিওয়ানা! তুমি তাকে টাকা দাও, সেই খবরও আছে আমার কাছে। হুম যেমন বাপ তেমন ছেলে। তোমার মা বাবার চরিত্রই আসলে ঠিক নয়, নাহলে কি এরকম ছেলের জন্ম দেয়, যে অনেক নারীতে আসক্ত!”

মধুর কথা গুলি আমার আর সহ্য হল না। বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়িয়ে তার গালে সপাৎ সপাৎ করে দুইটা চর কসালাম। আর বললাম- “আমার ভালোবাসা, আমার প্রেম বোঝার মত ক্ষমতা তোমার নেই। অনেক দিন থেকেই দেখছি তুমি এরকম আচরণ করছ। আমাকে ছেড়ে এবার তুমি আমার বাবা-মায়ের নামে…! ছিঃ…! সত্যি মধু তুমি আজ আমাকে বুঝলে না, বুঝলে না, তোমার প্রতি আমি কতটা দুর্বল, অনেক সহ্য করেছি আর নয়…”

এরপর আর সেখানে থাকতে পারি নি আমি। অশ্রু ভরা জলকে কোন মতে চেপে চোখে কালো সান গ্লাসটা লাগিয়ে বেরিয়ে পরলাম সেখান থেকে। যে মেয়ে আমার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারে না, সামান্য কথা তেই ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়, অহেতুক সন্দেহ করে, সে কক্ষনো ভালো জীবন সঙ্গিনী হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।

সত্যি কেউই ভালবাসে না আমায়…! আমার ভালবাসা কেউই বুঝতে চায় না।

সত্যি কারের ভালবাসা
সত্যি কারের ভালোবাসা

কিছুদুর এসে দেখি, মায়ের দেওয়া সেই খাবারের ব্যাগটা আমার কাছে নেই। মনে পরল পার্কের বেঞ্চেই ফেলে এসেছি। আবার ছুটলাম পার্কের দিকে। পার্কে গিয়ে দেখি ব্যাগটা বেঞ্চের উপরেই আছে। ব্যাগটা নিয়ে ফেরার সময়, পার্কের ওই ছাউনি দেওয়া ঘরটার দিকে নজর গেল। মধুর মতনই একটা মেয়ে। আর ছেলেটা কে! ইসস কি বাজে ভাবে…। হেলমেট পরে অনেকটা কাছে গিয়ে দেখি, হ্যাঁ মধুই তো!

আমি ভেবেছিলাম, সে হয়ত পার্কের বেঞ্চে বসে আমার এভাবে ছেড়ে চলে যাওয়ার শোচনা করছে! কেউ একজন হয়ত ঠিকই বলেছিল- “নারী কখনই এক পুরুষে আসক্ত হতে পারে না…।“

এরপর আমি ঠিক করি, মায়ের দেওয়া খাবার গুলি অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের সাথে ভাগ করে খাব। আমি যতবারই অনাথ আশ্রমে যাই, ততবারই বাচ্চা দের জন্য কিছু নিয়ে যাই। বাবার দেওয়া টাকাটা দিয়ে মধুর জন্য কিছু গিফট কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাড়াহুড়োর মাঝখানে ভুলেই যাই, টাকাটা দিয়ে বাচ্চা দের জন্য ক্যাটবেরি কিনে রওনা দিলাম আশ্রমের উদ্দেশ্যে।

বাচ্চারা আমাকে দেখে ভীষণ খুশি। আমি সবাইকে একে একে ক্যাটবেরি দিতে লাগলাম। আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল, এই আশ্রমের দায়িত্বে থাকা বাবা মা হারা মেয়ে মীনাক্ষী। সে অনেকটা আমার সমবয়সী। আর মধুর সন্দেহ মীনাক্ষী কে নিয়েই, আমি নাকি মীনাক্ষীর প্রতি দুর্বল! যাক গে সেই সব ফালতু কথা…

আমার যখন মন খারাপ হয় আমি এই আশ্রমে এসে সময় কাটাই। এই আশ্রমে আমি অর্থ সাহায্য করি, সব মিলিয়ে আশ্রমের সবার কাছেই আমি এক চেনা এবং প্রিয় মুখ।

বাচ্চা দের ভিড় ঠেলে, একটি ছোট্ট বাচ্চা আমার দিকে এসে একটি গোলাপ ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বলল- “হ্যাপি রোজ ডে, দাদা।“ আর সে চেঁচিয়ে বলল- “আই লাভ ইউ দাদা” নিজের অজান্তেই মনটা কেঁপে উঠেছিল। এই ছোট্ট বাচ্চা টি হয়ত সেই ‘so called’ ভালোবাসা কি জিনিস সেটা বোঝে না, সে বোঝে শুধু অন্তরের সাথে অন্তরের ভালোবাসা, অন্তরের সাথে সাথে অন্তরের মেল বন্ধন, সে বোঝে শুধু যার প্রতি মন যাই সেটাই ভালবাসা।

পড়ুনঃ- বিরহের গল্প- good bye 

কই আমার প্রেমিকা মধু তো আমাকে কোন দিন এভাবে ‘আই লাভ ইউ’ বলেনি! শুধু আগা গোঁড়া আমাকে রাগ দেখিয়েই যেত।

আমি আর থেমে থাকতে পারলাম না, বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- বলতো আই লাভ ইউ মানে কি? বাচ্চাটি জবাব দিল- “তুমি আমার খুব প্রিয় ও কাছের।“

আই লাভ ইউ শব্দটার এরকম অর্থ আমি কোনদিন শুনিনি! আমি জবাব দিলাম- “আই লাভ ইউ টু, মাই ডিয়ার” এরপর মায়ের দেওয়া খাবার গুলি সবাই মিলে বেশ জমিয়ে খেলাম, ক্ষণে ক্ষণে মনে পরে যাচ্ছিল, মধুর কথা। আমি চাইলেও এত তাড়াতাড়ি তাকে ভুলে যেতে পারছি না…।

এরপর আশ্রমের টাকাটা মীনাক্ষী এর হাতে দিয়ে, তার ব্যক্তিগত খরচের জন্যও কিছু অর্থ দিলাম। কারন ও সব বাচ্চাদের খেয়াল রাখলেও, ওকে খেয়াল রাখে এরকম কেউ নেই যে ওর! টাকাটা মীনাক্ষী এর হাতে দেওয়ার পরই লক্ষ্য করলাম, ওর চোখ বেয়ে জল নেমে আসছে। বুঝলাম ওর চোখ হয়ত কিছু বলতে চাইছে, কিছু বোঝাতে চাইছে যা আমি কোন দিন বুঝব না।

আশ্রম থেকে বিদায় নিয়ে বোনের জন্য শুধু গোলাপি লিপস্টিক নয়, বরং পুরো লিপস্টিকের বক্স টাই নিয়ে নিলাম। আর মা- বাবার জন্য তাদের প্রিয় মিষ্টি।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেছে। দেখি মা আর বোনের রুমে তখনও আলো জ্বলছে অর্থাৎ তখনও আমার জন্য অপেক্ষা করছে ওরা। ফ্রেশ হওয়ার পর মায়ের হাতে তার প্রিয় মিষ্টি দিয়ে এলাম। বোনের রুমে গিয়ে তাকে লিপস্টিকের বক্সটা দিতেই সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে, আমাকে জড়িয়ে ধরে, গালে একটা কিসি দিয়ে বলল- “আই লাভ ইউ দাদা, আই লাভ ইউ sooooooooo much you are the best dada in the world,”

পরিবারের ভালবাসা
পরিবারের ভালবাসা
<

আবার মধুর কথা মনে পরে গেল, আমি তাকে কত কিছু কিনে দিয়েছি, তার কাছে বোনের এই সামান্য লিপস্টিকের বক্স টা কিছুই নয়। কই সে তো কোন দিন বোনের মত আনন্দে আমাকে জড়িয়ে ধরে আই লাভ ইউ বলে নি! বরঞ্চ এটা নিলে ভাল হত, ওটা বেশি সুন্দর ছিল”, বলেই কাটিয়ে দিয়েছে।

বাবা ঘুমিয়ে পরেছেন, তাই বাবার মিষ্টি টা মাকে তুলে রেখে দিতে বলে, খাবার খেয়ে নিজের রুমে এসে নিজের মাথায় নিজেই চাটা মেরে বললাম- “আমার আশে পাশেই এত্ত এত্ত ভালোবাসার মানুষ, অথচ আমি কোন অজানা এক মধুর লোভে মৌচাকে হাত দিতে গেছি…! আর মৌচাকে হাত দিয়েছি যখন, হূল তো খাবই। হাঁ হাঁ হাঁ…”  

এই গল্প গুলি আপনি হয়ত মিস করেছেন- 
ব্রেক-আপ হওয়ার গল্প

শারীরিক প্রেম- মডার্ন প্রেমিকার সন্ধানে!  
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

sotti premer golpo. bengali real love story. সত্যি কারের ভালোবাসা। পরিবারের ভালবাসা

Spread the love

Leave a Reply