সাহসিকতার গল্প। ধৈর্যের গল্প। শিক্ষণীয় গল্পঃ-

চঞ্চলতা যেমন মনুষ্য জাতির স্বভাব, তেমনই ধৈর্য শক্তি মানবজাতির এক মহাশক্তি। বিপদে নিজেকে শান্ত রেখে নিজের ধৈর্যের গল্প তথা সাহসিকতার গল্প সবার সামনে তুলে ধরার সৌভাগ্য শুধু একজন শান্ত স্বভাবের মানুষের কাছেই থাকতে পাড়ে।

সাহসিকতার গল্প- “ধৈর্য শক্তি মহা শক্তি”

সচরাচর এই দিকে কাজ থাকে না তবে মাঝে-মধ্যে এই বিশাল জঙ্গলের মাঝ দিয়েই আমাকে যেতে হয়। পেশায় আমি একজন পরিচালক বলতে পাড়েন। উঁহু সিনেমা পরিচালক আমি নই, আমি চা-বাগানের পরিচালকের কাজ করি। ঠিকা শ্রমিকদের দেওয়া কাজ তারা কেমন সম্পন্ন করেছে তা দেখার জন্যই আজ এইদিকে আসা। তাদের কাজ ভাল ভাবে পরীক্ষণ করার পর আমাকে এবার অন্যত্র ঠিক একি কাজে যেতে হবে।

সঙ্গে কোনো শ্রমিক না নিয়ে একা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে শর্টকাট রাস্তা ধরলাম। অনেকটা পথ এসে অনুভব করলাম জীবন্ত কিছু একটার উপর পা দিয়ে ফেলেছি, বুঝলাম যেটার উপর পা পড়েছে সেটা অনেকটা ঠাণ্ডা। পা সরানোর সাহস পর্যন্ত উধাও হয়ে গেছে, আতঙ্কভঁরা চোখ দিয়ে নিচে দেখলাম, মস্ত বড় এক বিষাক্ত সাপের উপর পা দিয়েছি, মাথা ঠাণ্ডা রেখে ভাবতে লাগলাম এখন কি করা যায়?

পা টা অল্প সড়াতেই সাপটি সজোরে আমাকে ছোবল মারল, অনেক বেশি ব্যাথা অনুভব করতে লাগলাম, মনে হতে লাগল চোখ যেন অন্ধকার হয়ে আসছে, ঘড়িতে সময় দেখলাম, সকাল ১১:৩০, পকেট থেকে ছুড়িটা বের করে কোমরের তাগাটা কেটে ক্ষত স্থান এর উপরে টাইট করে একটা বাঁধন দিয়ে দিলাম।

এই অবস্থায় বেশি আতঙ্কিত হলে হবে না, যেভাবেই হোক জঙ্গল থেকে বেড় হতেই হবে। জঙ্গল থেকে তাড়াতাড়ি বেরোতে রাস্তার পাশে রাখা আমার বাইকের দিকে পা বাড়ালাম। মোবাইল দিয়ে নিকটবর্তী হসপিটালে খবর করতে লাগলাম যে সাপের অন্টিডোজ আছে কি না? এতক্ষণে আমার বাইক এর কাছে এসে গেছি, স্টার্ট দিয়ে লোকালয়ের দিকে রওনা হলাম। মোবাইল সহযোগে জানতে পারলাম শিলচর মেডিকেল ছাড়া আর কোথাও অ্যান্টিভেনোম নেই এবং এই ইনজেকশন আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই দিতে হবে নাহলে আমার বাচার উপায় নাই বললেই চলে। আমি জানতাম অতদুরে এই অবস্থায় আমার পক্ষে বাইকে যাওয়া অসম্ভব তাই সরকারি অ্যাম্বুলেন্স কে আগেই খবর দিয়েছি।

সাহসিকতার গল্প ধৈর্যের গল্প
সাহসিকতার গল্প ধৈর্যের গল্প প্রতীকী ছবি

মেইন রোড এসে দেখি অ্যাম্বুলেন্স আমার জন্য অপেক্ষা করছে। বাইক এক নিদ্রিষ্ট জায়গায় রেখে অ্যাম্বুলেন্স উঠলাম, কর্মরত লোকজনদের খবর দিই নি কারন ওদের ভিড় আর কলরবে আমার যেতে আরো দেরি হতে পারে, অ্যাম্বুলেন্স এর ড্রাইভার ও সহকর্মীকে বললাম – “দাদা আপনাদের হাতে আমার জীবন মরণ, আমাকে সাপে ছোবল দিয়েছে এবং আড়াই ঘণ্টার মধ্যে হসপিটালে না পৌঁছালে আমার জীবন শেষ! আধা ঘণ্টার বেশি এখানেই শেষ, দুই ঘণ্টা থেকে এক সেকেন্ড দেরি হলে হয়ত আমাকে সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করবে।

ওরা আমাকে বাঁচার আশ্বাস দিয়ে সাইরেন বাজিয়ে দ্রুত গতিতে অ্যাম্বুলেন্স হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে মা, বাবা, ভাই বোন, বউ এর হাসিমাখা মুখখানি বার বার দেখতে পাচ্ছি, আমার ২ মাসের মেয়েটার মিষ্টি মুখ আর মিষ্টি হাসিটা বারংবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে কোনো এক অজানা আতঙ্কে।

গাড়ি কখন যে শ্রীকোনো এসে গেছে বুঝতেই পারি নি, চোখ বন্ধ হয়ে আসছে, আমার বুকে ও পায়ে তীব্র যন্ত্রণা আর ব্যাথা অনুভব করছি, মাথা তুলে দেখলাম দংশন করা পা টা অনেক বেশি ফুলে গেছে, ঘড়ি দেখলাম সময় ১:৫৪ মিনিট না মনে হয় বাঁচবো! হাতে ১৫ মিনিট সময় এখন আছে। বরাবরই আমি ঈশ্বরের ভক্ত আজও সমস্ত রাস্তা জুড়ে ডেকে আসছি তাঁকে, চোখ বন্ধ খুলে দেখার আর শক্তি নেই, তবুও কানে আসছে সব শব্দ, শব্দতেই অনুভব করছি কোথায় আছি তার।

অ্যাম্বুলেন্স এর গতি মন্থর হলো লোকের কোলাহল শুনতে পেলাম, হ্যাঁ, পৌঁছে গেছি মেডিকেলে, গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হলো, আপ্রাণ চেষ্টা করেও চোখ খুলতে পারছি না, বলতে ও পারছি না যে তাড়াতাড়ি আমাকে অ্যান্টিভেনোম ইনজেকশন দিন, শুধু এইটুকু বুঝতে পাড়ছি যে, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, তার সহকর্মী আরো অনেক লোক আমাকে ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে। না এবার চোখ খুলতেই হবে, আবার চেষ্টা করলাম, হে, এইতো দেখতে পাচ্ছি নার্স ইঞ্জেকশন রেডী করছে পাশে ডাক্তার। কোনোরকমে বললাম, ” অ্যান্টিভানাম দিন, আমি সৌরভ দাস প্রায় আড়াই ঘণ্টা আগে ফোন করে বলেছিলাম রোগী নিয়ে আসছি, আমিই রোগী।”
ইঞ্জেকশনদেওয়া হলো সঙ্গে সেলাইনও।

তারপর..!!!

তারপর আর কি? মরিনি। বেঁচে আছি।
না হলে এই গল্পটা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পাড়তাম না।

ধৈর্যের গল্প শিক্ষণীয় গল্প
ধৈর্যের গল্প শিক্ষণীয় গল্প

আমার ধৈর্য এবং বিপদেও মনোবল শক্ত রাখাই হয়তো সেদিন আমাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল।
ডাক্তারদের মতে আমার আসতে আরো ৫ – ১০ মিনিট দেরি হলে আমার মৃত্যু হতে পারত বা দংশন করা পা টা প্যারালাইসিস হতে পারত। কোটি কোটি প্রণাম ঈশ্বরকে আমাকে মৃত্যুর কোল থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য। সেই সঙ্গে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব এম্বুলেন্স এর দাদা, ডাক্তার, নার্স আর মেডিকেল কর্মীদের প্রতি।

অবশেষে বলব, বিপদ যত বড়ই হোক না কেন, নিজের মনোবল এবং ধৈর্য শক্তি যে কোনো বিপদকে পাশ-কাঁটিয়ে ফেলে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।

অভিজ্ঞতার কলমে- সৌরভ দাস (facebook)

পড়ুনঃ- গল্প থেকে জ্ঞান। গল্প থেকে শিক্ষা

স্যার আইজ্যাক নিউটনের মর্মস্পর্শী সফলতার গল্প 

শিক্ষণীয় গল্প- ০২

অনেক কষ্টে রাহুল সদ্য একটি চাকুরী পেয়েছে। সে চাকরী পেয়েছে একটি বড় নামকরা আইটি কোম্পানিতে। আইটি কোম্পানিতে যেমন থাকে আরকি, প্রত্যেকজনের জন্য আলাদা আলাদা কেবিন। সেইরকমই রাহুলকেও একটি কেবিন দেওয়া হয়েছিল।

প্রথমদিন অফিসে গিয়ে রাহুল নিজের কেবিন দেখে নিজেই হতবাক। এত সুন্দর একটি কেবিন। এরকম সুন্দর তো তার বাড়ির বেডরুমও নয়। উফফ এটাই জীবন। কিছুক্ষণ সে দাঁড়িয়ে ক্যাবিনের প্রতিটি জিনিস ভালোমত দেখতে থাকে।

কিছুক্ষণ পর একজন বয়স্ক ব্যক্তি দরজায় এসে বললেন- “বাবু ভিতরে আসব?”

রাহুল- “এখন একটু কাজ করছি, আধাঘণ্টা পড়ে এসো।“ অথচ সে কিছুই করছিল না। ব্যস্ততা দেখিয়ে সেই ব্যক্তিটিকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলল। প্রায় আধাঘণ্টা পড়ে সেই ব্যক্তিটি আবার দরজায় আসলেন। এটি দেখে রাহুল টেলিফোনটা নিয়ে এমন ভান করতে লাগল যেন সে ফোনে কারও সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। লোকটি ডাকলেও সে এমন ভান করতে লাগল যেন সে কিছুই শুনতে পায়নি।

সে ফোনে বলতে লাগল- “হ্যাঁ ভালো একটা চাকরী পেয়ে গেছি, মাস গেলে বেশ মোটা একটা মাইনে পাব। হ্যাঁ আমি তো ভাবছি এবার একটা দামী বাইক কিনেই ফেলি। আজ অফিস শেষে যাব একবার bmw-bike showroom –এ।“ এভাবে প্রায় ২০ মিনিট সে ফোনে কথা বলার ভান করতে লাগল।

এবার সে লোকটিকে ভিতরে আসতে বলল,- “হ্যাঁ বলুন, আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পাড়ি?”

সেই ব্যক্তিটি- “বাবু, আমাকে কাল বলা হয়েছিল, আপনার ক্যবিনের টেলিফোনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই আমি এসেছি ফোনটা ঠিক করতে। আমাকে অফিস থেকে বলেছে এই টেলিফোনটা নাকি গত ৫ দিন থেকে খারাপ হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু আপনাকে তো দেখলাম সেটাতে কথা বলতে। আমাকে বলেছে যখন খারাপ হয়েছে, তাহলে একবার চেক করে নিই।“ এরপর লোকটা রাহুলের সামনেই টেলিফোনটা খুলতে থাকে। সে বলল- “ফোনটা তো খারাপ।“

রাহুল এবার লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সে আর সেখানে থাকতে পাড়ল না। সে তার ক্যাবিন ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে গেল।   

অসাধারন-শিক্ষনীয়-গল্প-নতুন-শিক্ষণীয়-গল্প
অসাধারন-শিক্ষনীয়-গল্প-নতুন-শিক্ষণীয়-গল্প
<

শিক্ষণীয় নৈতিক কথা-

যখন আমরা জীবনের এমন একটা জায়গায় পৌঁছে যাই, আমাদের চাওয়া- পাওয়া গুলি যখন পূরণ হতে থাকে, তখন আমরা নিজেদের প্রতি খুব গর্বিত হই। আর এটাই স্বাভাবিক। ধীরে ধীরে সেই গর্ব আমাদের মধ্যে অভিমানের জন্ম দেয়। পরবর্তীতে সেই অভিমান অহংকারে পরিণত হয়। এরপরই আমরা অপরের সামনে নিজেকে বিশাল দেখানোর চেষ্টা করি।

নিজেকে বিশাল বড় দেখাতে গিয়ে আমরা ঠিক ভুলের বিচার ভুলে যাই। আমরা এমন কিছু দেখানোর চেষ্টা করি, যার অস্তিত্ব আদতে নেই। আর এটাই হল আমাদের মধ্যবিত্তদের বিরাট বড় ভুল। নিজেকে বিশাল দেখানোর তাগিদে ঠিক-ভুলের বিচার ভুলে যাই। আর অযথা পরবর্তীতে আমাদের পস্তাতে হয়।  

“সাহসিকতার গল্প। ধৈর্যের গল্প। শিক্ষণীয় গল্প। story of courage”

for facebook updates:- গল্প আর গল্প
Spread the love

Leave a Reply