কথায় আছে যেমন কর্ম তেমন ফল। এই প্রবাদ বাক্যটির উপর ভিত্তি করেই আজকের শিক্ষণীয় রূপকথার গল্পটি নিয়ে আসা হয়েছে। এই মজার রূপকথার গল্প সম্পর্কিত আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না যেন।

শিক্ষণীয় রূপকথার গল্প। যেমন কর্ম তেমন ফল। জীবনের গল্প।

সাত ভাই, বাড়ি বাদামপুর গ্রামে। জন্ম থেকেই দারিদ্র তাদের নিত্যসঙ্গী। ওদের বাবা রোগে ভুগতে ভুগতে হঠাৎ একদিন মারা গেল। জমিদারের হাতে পায়ে ধরে ওরা একটা গাছ কাটার অনুমতি পেল। তারপর গাছ কেটে নিয়ে এসে শ্মশানে ওদের বাপকে দাহ করে এল। বাপকে দাহ করে এসে সাত ভাই বাড়ীর দাওয়ায় মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল। মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগল। ভাবনার শেষ নেই।

এমন সময় এলাকার সুদখোর মহাজন পটল পোদ্দার এসে বললে— “গালে হাত দিয়ে ভাবলে কি হবে তোর বাবাটা তো মরে বেঁচে গেছে। তোর বাবার ধারের টাকা শোধ না করলে এ বাড়ী জমিদারের পাইক নিয়ে এসে দখল করে নেব।“

বড় ভাই বললে—“বাবা যে টাকা নিয়েছে তার প্রমাণ?”

পটল পোদ্দার বললে– “প্রমাণ আমার খাতা-পত্রে আছে। মেজভাই বললে— “তা বাবা বেঁচে থাকতে একদিনও তাগাদায় আসনি কেন?” পটল পোদ্দার রেগে বলে উঠল- “ইচ্ছে হয়নি, আসিনি। তোদের কাছে অত কৈফিয়ত দিতে পারব না। আমার টাকা না দিলে জমিদারের কাছে নালিশ ঠুকে দেব।“ ছোট ভাই উঠে দাঁড়িয়ে বললে—“মহাজন, আমি তোমার টাকা শোধ করব। আমাকে কয়েক দিন সময় দাও।“

শিক্ষণীয় রূপকথার গল্প মজার রূপকথার গল্প জীবনের গল্প ভালো রূপকথার গল্প rupkothar golpo bangla
শিক্ষণীয় রূপকথার গল্প মজার রূপকথার গল্প

পটল পোদ্দার ছোট ভাইয়ের কথা শুনে সন্তুষ্ট হয়ে চলে গেল। অন্যান্য ভাইয়েরা ছোট ভাইয়ের মাথায় চাঁটি মারতে লাগল। মহাজনকে কোত্থেকে টাকা ফেরত দিবি? বাপ মরে গেছে টাকা ধার করে, আমরা কেন শোধ করতে যাব? আমরা কেউ এক পয়সাও দেবো না—তুইই শোধ করবি। হতভাগা। ছোট ভাই কাঁদতে কাঁদতে বললে–আচ্ছা। ঘরে চাল নেই, ডাল নেই। ওরা সাতজন না খেয়ে শুয়ে পড়ল। ছোট ভাই পেটপুরে জল খেয়ে শুয়ে পড়ল। শুয়ে পড়েই ঘুমুতে লাগল। ভোররাতে ছ’ভাই ছোট ভাইকে একা ফেলে চম্পট দিল।

বড় ভাই ঘরের বাইরে এসে অন্যান্য ভাইদের বললে–ছোটটা ঘুমিয়ে থাকুক চল আমরা কেটে পড়ি। যেমন ক্যাবলা, তেমন শাস্তি ভোগ করুক। এ বাড়ীর জন্যে আর মায়া করে কি হবে? চালে খড় নেই, দরজা জানলা নেই। এদিকে আবার মহাজনদের ধার। টাকা না দিতে পারলে মহাজন জমিদারকে বলে কারাগারে পুরে দেবে। ছোট ভাইটা না পারে খাটতে না আছে ওর বুদ্ধি, অতএব ওকে সঙ্গে নিলে অনেক ঝামেলা ভোগ করতে হবে। অতএব ছ’ভাই ছোট ভাইকে ঘরে রেখে বাইরে থেকে শেকল টেনে দিয়ে চলে
গেল।

ছোট ভাই ঘুম থেকে উঠে দেখল কেউ নেই, ভাইরা তাকে ফেলে চলে গেছে। ছোট ভাই মনের দুঃখে কাদতে লাগল। সেই কান্না শুনে একজন পথিক ছুটে এল। তারপর শেকল খুলে দিল। ছোট ভাই বাইরে বেরিয়ে এসে এদিক ওদিক তাকাল। কিন্তু ভাইদের কাউকে দেখতে পেল না। পথিক বললে—তুমি একলা ঘরে কেন?

ছোট ভাই বললে—আমার ভাইরা আমাকে ফেলে চলে গেছে। পথিক বললে–দুঃখ করো না, ভাইরা ফিরে আসবে। ছোট ভাই তবু শুনল না, বনের পথ ধরে চলতে লাগল। চলতে চলতে একটা পোড়ো বাড়ীর সামনে এল। পোড়ো বাড়ীর ভেতর থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। ছোট ভাই ভাবল, নিশ্চয়ই এখানে লোক আছে। ছোট ভাই সাহসে ভর করে ভেতরে ঢুকে গেল। ভেতরে গিয়ে দেখল, ওর ছ’ভাই রান্নাবান্না করছে। ছোট ভাই চুপে চুপে গিয়ে ওদের কাছে দাঁড়াল।

ভাইদের জিজ্ঞেস করলে তোমরা চাল ডাল পেলে কোথায়? বড় ভাই বললে—চুরি করে এনেছি জমিদারের গোলাবাড়ী থেকে। ছোট ভাই বললে—চুরি করা পাপ। না খেয়ে মরাও ভাল, তবু চুরি করা উচিত নয়। এমন সময় জমিদারের লোকেরা হৈ হৈ করতে করতে এল।। ছ’ভাই পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল।

জমিদারের লোকেরা ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে গেল। জমিদারের কাছে এসে ছোট ভাই বললে—আমি তো চুরি করিনি আমার ভাইরা করেছে। ছোট ভাইয়ের মুখে সব কথা শুনে জমিদার লোক পাঠিয়ে তন্ন তন্ন খুঁজে হয় ভাইকে ধরে নিয়ে এল।

পড়ুনঃ- রাজপুত্রের গল্প। রাক্ষসীর গল্প

রূপকথার গল্প

ছয় ভাই বললে—আমরা চুরি করিনি।

জমিদার বললেন–তোমাদের ছোট ভাই বললে তোমরা চুরি করেছ অতএব তোমাদের শাস্তি পেতে হবে। ছ’ভাই ছোট ভাইয়ের দিকে কটমটিয়ে তাকিয়ে রইল। ছ’ভাইয়ের ছ’মাসের জন্য কারাবাস হল।

দেখতে দেখতে ছ’মাস কেটে গেল। ছ’ভাই কয়েদখানা থেকে বেরিয়ে দূরদেশে চলে গেল। ছোট ভাই জমিদারের বাড়ীতে চাকরের কাজ করত। দিনরাত খাটত। যা মাইনে পেত জমিয়ে রাখত, মহাজনের ধার শোধ করতে হবে তো! একদিন কয়েদখানায় গিয়ে জানল, তার ছ’ভাই মুক্তি পেয়ে অনেক দূর চলে গেছে।

ছোট ভাইও সেই পথ ধরে চলতে লাগল। চলার শেষ নেই। রাত্রিবেলা গাছের ওপর কাটাত, দিনের বেলা পথ চলত। শেষে একদিন এসে এক নগরে উপস্থিত হল। ভাইদের খোঁজে এদিক ওদিক ঘুরতে লাগল। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে এক বাড়ীর বারান্দায় শুয়ে পড়ল। সকাল বেলা দরজা খুলে একটা লোক কর্কশ কণ্ঠে বললে—এখানে শুয়ে কে রে?

লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে ছোট ভাই চিনতে পারলে আরে এ যে বড় ভাই! ছোট ভাই বললে—দাদা, আমায় চিনতে পারছ না? আমি তোমার ছোট ভাই। বড় ভাই মুখ বিকৃত করে বললে ভাগ এখান থেকে। আমার কোন ছোট ভাই নেই। ছোট ভাই চলে গেল। আবার বিকেল বেলা এসে সেই বাড়ীর কড়া নাড়ল।

দরজা খুলে মেজ ভাই বেরিয়ে এল। মেজ ভাইকে বললে— আমি তোমার ছোট ভাই। দু’দিন কিছু খাইনি, বড়
খিদে লেগেছে। মেজ ভাই বলল বললে যা, যা, আমাদের কোনো ছোট ভাই নেই। জমিদারের কাছে আমাদের চোর বলে ধরিয়ে দিয়েছিলি কেন?  বলেই, ছোট ভাইয়ের মুখের উপর দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিল। ছোট ভাই এসে রাতের বেলা আবার কড়া নাড়ল। সেজ ভাই দরজা খুলে বেরিয়ে এল।

ছোট ভাই বললে—সেজদা আমায় চিনতে পারছ না? আমি তোমাদের ছোট ভাই। সেজ ভাই লোকটা ভালো ছিল। বললে, চিনতে পারব না কেন? তা তুই এখানে? ছোট ভাই বললে–জমিদারের বাড়ীতে চাকরের কাজ করতুম। ওরা খুব খাটাতো—তাই কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছি। তা তোমরা এই পেল্লায় দালান বাড়ী কি করে দখল করলে?

সেজ ভাই ছোট ভাইয়ের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললে—এ বাড়ীর মালিকের ছেলেপুলে ছিল না, আমরা একদিন গভীর রাতে এ বাড়ীর মালিককে খুন করে বাড়ীটা দখল করে নিয়েছি। একথা যেন কেউ টের পায় না। টের পেলে আর রাজার লোকেরা রক্ষে রাখবে না।

এমন সময় বড় ভাই আর মেজ ভাই ছুটে এল। ছোট ভাইকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিল। ওর ট্যাকের পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে তাড়িয়ে দিল। ছোট ভাই কাঁদতে কাঁদতে আবার সেই পৈতৃক বাড়ীতে ফিরে এল। পরদিন সকালে পটল পোদ্দার এল। ছোট ভাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল। ছোট ভাই চোখ কচলে উঠে বসল।

পটল পোদ্দার বললে—আমার পাওনা টাকা শোধ দেওয়ার কি ব্যবস্থা করলে? সাত ভাই মিলে তো টাকা ফাঁকি দিয়ে চম্পট দিয়েছিলে? এবার তোমাকে বাগে পেয়েছি—আর ছাড়ছি না। আমার ক্ষেতে বেগার খেটে দিতে হবে।

কি আর করে সে? ছোট ভাই বেগার খাটতে রাজী হয়ে গেল। রোজ পটল পোদ্দারের ক্ষেতে বেগার খেটে দিয়ে আসে। তারপর বনের শাক-পাতা সেদ্ধ করে কোনরকমে আধপেটা খেয়ে শুয়ে পড়ে। এমন করেই দিন যায়। অনাহারে অর্ধাহারে দেহ তার কঙ্কালসার। একদিন ছোট ভাইয়ের খুব অসুখ হল, বেগার খাটতে যেতে পারল না। পরদিন পটল পোদ্দারের লোকেরা বেত মারতে মারতে ছোট ভাইকে ক্ষেতে টেনে নিয়ে গেল।

খাবার দিতে এসে পটল পোদ্দারের মেয়ে মল্লিকা গায়ে হাত দিয়ে বললে—আহা। জ্বরে যে গা পুড়ে যাচ্ছে।

শিক্ষণীয় রূপকথার গল্প rupkothar golpo জীবনের গল্প
শিক্ষণীয় রূপকথার গল্প rupkothar golpo জীবনের গল্প

পটল পোদ্দারের মেয়ের নাম মল্লিকা। ফুলের মতই সুন্দর। বাবা সুদখোর হলেও মেয়ে কিন্তু দয়াবতী। বাবার কাছে অনেক মিনতি করে ওকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিলে—তুমি বাড়ীতে গিয়ে শুয়ে থাক, তোমার হয়ে আমি বেগার খাটব। মল্লিকা আর সাত ভাইয়ের ছোট ভাই অমর প্রায় সমবয়েসী। মল্লিকা রাতের বেলা সুবোধের (ছোট ভাইয়ের নাম) মাথার কাছে সাবু বার্লি রেখে গেল। বাড়ীতে এসে পটল পোদ্দারকে বললে–বাবা, ওর খুব অসুখ। ওকে আর বেগার খাটতে ডেকো না। ওর হয়ে আমিই বেগার খেটে দেব।

পটল পোদ্দার বললেন–থাক, তোকে আর পাকামি করতে হবে না—সে আমি দেখব।

রাত্রি বেলা ছোট ভাই স্বপ্ন দেখল মাথার কাছে দাঁড়িয়ে ওর বাবা। বাবাকে বললে, ভাইরা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তুমি যে পটল পোদ্দারের কাছে টাকা ধার নিয়েছিলে–সে শোধ করার জন্য আমাকে ওর ক্ষেতে বেগার খাটতে হচ্ছে। বেগার খাটতে আর পাচ্ছি না।

স্বপ্নের মধ্যেই ওর বাবা বললেন—সুবোধ, তোর বিপদের দিন ঘুচল। খাটের নীচের মাটি খুঁড়ে দুটো ঘড়া পাবি, ঘড়াভর্তি সোনার মোহর। আমি জমিদারবাড়ী থেকে চুরি করে ওখানে লুকিয়ে রেখেছিলাম। প্রথম ঘড়া থেকে দশটা মোহর বের করে নিয়ে পটল পোদ্দারের দেনা শোধ করবি। আর বাদ বাকী দিয়ে সাত মহল বাড়ী করে থাকবি, ভাইরা যদি ফিরে আসে নীচের মহলে থাকতে দিবি, ওপরে থাকবি তুই।

ভোর রাতের দিকে স্বপ্নটা ভেঙে গেল। ছোট ভাই তাড়াতাড়ি উঠে হাতমুখ ধুয়ে নিলো। তারপর আগের রাতের দেখা স্বপ্ন দিয়ে ভাবতে লাগল। আচ্ছা না হয় মাটি খুঁড়েই দেখা যাক না। তারপর খাটের নীচের মাটি খুঁড়ল। কিছুটা মাটি খুঁড়তেই দুটো ঘড়া দেখতে পেল। একটা ঘড়ার ঢাকনা খুলে দেখল ঘড়া ভর্তি মোহর।

ছোট ভাই দুটো ঘড়া দু’কাঁধে তুলে একেবারে জমিদার বাড়ীতে চলে এল। জমিদার বাইরে বসে গড়গড়া টানছিলেন ওকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন— তুই কে রে? ছোটো  ভাই বললে– আমি সাত ভাইয়ের ছোট ভাই সুবোধ। জমিদার বললে তোর কাঁধে কি রে?

—ঘড়া। ঘড়া ভর্তি মোহর আছে।

জমিদার চোখ বড় বড় করে চাইলেন।

সুবোধ  বলল—এই মোহরভর্তি ঘড়া দুটো আপনাদেরই, তাই ফেরত দিতে এলুম। বাবা কাল আমাকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেছিলেন—মাটির নীচ থেকে ঘড়া বের করে ভোগ করতে। কিন্তু এ ঘড়া বাবা আপনাদের ভাণ্ডার থেকেই চুরি করেছিলেন। সেই আপনাদের ঘড়া আপনাদের ফেরত দিয়ে এলাম। চুরি করা জিনিস আমি ভোগ করতে চাই না।

জমিদার খুশী হয়ে সুবোধকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন—এ ঘড়া পাওয়ার কোন আশাই ছিল না। একটা আমি নিলাম একটা তোমায় দিলাম। অমর একটা ঘড়া মাথায় করে আবার কুঁড়ে ঘরে ফিরে এল। ঘড়ার মধ্যে থেকে দশটা মোহর বের করে পটল পোদ্দারের ধার শোধ করে দিলে। সুবোধের কাছ থেকে দশটা মোহর একসঙ্গে পেয়ে পটল পোদ্দার চমকে উঠল। মোহর পেলে কোথায়?

আরও পড়ুনঃ-সবুজ ভাই বোনের গল্প

সুবোধ খুশীর হাসি হেসে বললে–শুধু দশটা কেন, আমার কাছে এক ঘড়া মোহর আছে। —আমাকে তোমার ঘড়া থেকে বিশটা মোহর ধার দেবে? আমায় রাজার খাজনা শোধ করতে হবে–কালকের মধ্যে। নইলে গর্দান যাবে।

পটল পোদ্দার সুবোধের পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কাঁদতে লাগল। সুবোধ বললে–পোদ্দার, তোমাকে বিশটা মোহর দিতে পারি—যদি তুমি তোমার মেয়ে মল্লিকার সঙ্গে আমার বিয়ে দাও। পটল পোদ্দার এক কথায় রাজী হয়ে গেল। একটা শুভদিনে বিয়ে হয়ে গেল। কুঁড়ে ঘরের জায়গায় সাতমহল বাড়ী উঠল।

মল্লিকা একদিন স্বামীকে বললে আমার বাবা বড় কৃপণ, রাজার খাজনার নাম করে তোমাকে ঠকিয়ে বিশটা মোহর আদায় করে নিয়েছে। বাবার ঘরের পালঙ্কের নীচে এখনও একঘড়া মোহর পোঁতা আছে।

পটল পোদ্দার একদিন সাপে কাটার ফলে মারা গেল। ওঝা বদ্যি কেউ বাঁচাতে পারল না। পালঙ্কের নীচে এক ঘড়া মোহর পাওয়া গেল। সুবোধ আর মল্লিকা  তা নিয়ে এল। দরিদ্র ও ব্রাহ্মণদের দান করলে। সকলেই খুশী হয়ে ওদের আশীর্বাদ করল।

মল্লিকা একদিন স্বামীকে বললে— বাড়ির সামনে একটি পুকুর বানিয়ে দেওয়ার কথা। সুবোধ বলল- বাড়ীর সামনে পুকুর কেন, আমি দীঘি কাটিয়ে দিচ্ছি।

ভালো রূপকথার গল্প rupkothar golpo bangla
ভালো রূপকথার গল্প rupkothar golpo bangla image
<

পুকুর কাটাবার জন্য ছয়জন লোক, ছয় বউ নিয়ে এল। পুকুরের পাড়ে ওরা চালাঘর করে থাকে। দিনে পুকুর কাটে। রাতে চালাঘরে ঘুমোয়। একদিন সুবোধ জানালা দিয়ে ওদের দেখতে পেলো। ছ’ভাইকেও চিনতে পারল।

মল্লিকাকে কিছু বললে না, ছ’ভাইকেও কিছু বললে না। শুধু সদর দরজার দারোয়ানকে বললে—ওরা যদি কেউ জিজ্ঞেস করে—এই সাতমহলা বাড়ী কার? তুমি বলবে—সাই ভাইয়ের ছোট ভাই সুবোধের। একদিন বড় ভাই সদর দরজার দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলে—এই সাতমহলা বাড়ী কার? দারোয়ান বললে–সাতভাইয়ের ছোট ভাই সুবোধের।

বড় ভাই ও অন্যান্য ভাইয়েরা অবাক হয়ে গেল। তাইতো, এখানেই তো তাদের পৈতৃক কুঁড়েঘর ছিল। তবে তাদের ভাই সুবোধই এই সাতমহলা বাড়ী তুলেছে। ওদের খুব হিংসে হল। পরদিন সকালবেলা ছ’ভাই সুবোধের  কাছে এগিয়ে এল।

সুবোধ বললে—কী ব্যাপার?

ওরা বললে—আমরা তোমার বড় ভাই, আমরা আমাদের বাড়িতে থাকতে চাই।

 আমাদের পৈতৃক বাড়ী ভেঙে ফেলেছি কুঁড়েঘর তো আর নেই।

বড় ভাই রেগে গিয়ে বললে—তা বললে আমরা শুনব কেন? আমাদের ওই রকম একখানা কুঁড়েঘর চাই।

সুবোধ বুঝতে পারল, ছ’ভাই যুক্তি করে শয়তানি করছে। চালাকি করে ওরা সর্বস্ব বাগাতে চায়। সুবোধ বললে—পাশের ফাঁকা জায়গায় আমি কালই ওইরকম একখানা কুঁড়েঘর তুলে দিচ্ছি।

মেজ ভাই বললে—ওই জায়গায় কুঁড়েঘর তুলে দিলে হবে না, যে জায়গায় আমাদের কুঁড়েঘর ছিল, ঠিক সে জায়গায় তুলে দিতে হবে। আমরা অন্য কোন কথা শুনতে চাই না।

সুবোধ বললে—তা কি করে সম্ভব। ওখানে যে আমি সাতমহলা তুলেছি। বড় ভাই চোখ রাঙিয়ে বললে—তা যদি সম্ভব না হয়, তুমি আর তোমার বউ সাতমহলা ছেড়ে দিয়ে এক্ষুনি বেরিয়ে যাও—আমরা ভোগ দখল করি।

ছ’ভাইয়ের বউরাও ঝাঁটা নিয়ে ছুটে এল—হ্যাঁ, এক্ষুণি তোমরা সাতমহলা ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে যাও। সুবোধ ছ’ভাইয়ের মুখে দিকে একবার তাকাল। বড় ভাই চোখ লাল করে বললে—পৈতৃক ভিটা ভাঙলে কার হুকুমে? এখন বোঝো ঠেলা। সাত মহলা ছেড়ে দিয়ে পথে পথে ভিক্ষে কর।

গণ্ডগোল শুনে ছোট বউ মল্লিকা নেমে এল। বললে–পৈতৃক বাড়ীতে আপনাদের কোন অধিকার নেই। আপনারা কেউ বাপের ঋণ শোধ করেন নি।

ছ’ভাই বললে—বাপের ঋণ শোধ দিই—না দিই পৈতৃক বাড়ী আমাদের।

রূপকথার গল্প জীবনের গল্প ভালো রূপকথার গল্প rupkothar golpo bangla
মজার রূপকথার গল্প জীবনের গল্প

সেখানে কার হুকুমে ও ঘর তুলতে গেল। এমন সময় রাস্তা দিয়ে রাজার সৈন্যরা যাচ্ছিল, গণ্ডগোল শুনে বাড়ীর ভেতরে এসে ওরা জিজ্ঞেস করলে— কী ব্যাপার? ছোট ভাই রাজসৈন্যদের কাছে সব কথা খুলে বললে।

রাজার সৈন্যরা ছ’ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল—আরে, এরা যে খুনী আসামী এদের ধরবার জন্যেই তো আমরা রাজধানী থেকে এসেছি। রাজধানীর এক সওদাগরকে খুন করে এরা বাড়ী দখল করে বসেছিল। নগর কোতোয়াল যখন ধরতে গেল, এরা নগর কোতোয়ালকে মেরে পালিয়েছে।

সৈন্যরা ছ’ভাইয়ের কোমরে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে বললে–এদের কাল শুলে চড়ানো হবে। মল্লিকা বললে–যেমন কর্ম তেমন ফল। সৈন্যরা ছ’ভাইকে ধরে রাজধানীতে নিয়ে গেল। মল্লিকা আর সুবোধ সাতমহলে সুখে দিন কাটাতে লাগল।

শিক্ষণীয় রূপকথার গল্প মজার রূপকথার গল্প জীবনের গল্প ভালো রূপকথার গল্প rupkothar golpo bangla

Spread the love

Leave a Reply