দুটি সেরা শিক্ষণীয় ঘটনা থাকছে আজ। এই অনুপ্রেরণা মূলক গল্প দুটি কোনো মন গড়া কাহিনী নয়। এগুলি হল সত্যিকারের শিক্ষণীয় কাহিনী। শিক্ষণীয় ঘটনা।
সেরা শিক্ষণীয় ঘটনাঃ-
শিক্ষণীয় ঘটনাঃ- ০১
আমাদের পাড়ার ছেলে সুনন্দ। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় তার তেমন মনযোগ নেই। তার ইচ্ছে সে একজন বড় মাপের খেলোয়াড় হবে। তবে তার সবথেকে বেশি পছন্দের হল দৌড় প্রতিযোগিতা। সারা বছর সে যেন অপেক্ষা করে থাকত, কবে স্কুলের খেলা অনুষ্ঠিত হবে, আর সে অংশগ্রহণ করবে। তবে খেলায় অংশগ্রহণ করাটাই তার শুধু নেশা নয়, সে প্রতিবছর বিজয়ী হবেই হবে।
সময়ের সাথে সাথে যতই সুনন্দ বড় হতে থাকে, ততই বড় হতে থাকে তার স্বপ্ন। তার ইচ্ছে সে ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু তার সমস্যা সে সে বেশিদূর পর্যন্ত দৌড়াতে পাড়ে না, পেশিতে টান ধরে যায়। এর আগেও সে বেশ কয়েকবার জেলার ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেছে, কিন্তু জেতা তো দূরের কথা, সে ফিনিসিং লাইন পর্যন্তও যেতে পারেনি একবারও।
যে ছেলেটা প্রতিবছর স্কুলের মাঠ কাঁপাত, যার ভয়ে অন্যান্য দৌড় প্রতিযোগীরা মাঠে নামার আগেই মন থেকে হেরে যেত, আজ সেই সুনন্দই ম্যারাথনে ফিনিসিং লাইন ক্রস করতে ব্যর্থ হচ্ছে বারংবার। সুনন্দের নিজেরও অনেক খারাপ লাগে।
এদিকে জেলার ম্যারাথন দৌড়ের বাকি আর মাত্র কয়েকটা সপ্তাহ। সুনন্দ ঠিক করে নেয়, যেভাবেই হোক তাকে ফিনিসিং লাইন পর্যন্ত যেতেই হবে। দেখতে দেখতে সেই দিনটিও চলে এল। দৌড় শুরু হল। সুনন্দ এক দৌড়েই অনেকটা এগিয়ে গেল, কিন্তু সে আর বেশি জোড়ে দৌড়াতে পাড়ল না। কারণ তার পেশিতে টান শুরু হয়ে গেছে।
তার প্রতিজ্ঞার কথা মনে হয় যে, তাকে যেভাবেই হোক ফিনিসিং লাইন পর্যন্ত যেতেই হবে। কিন্তু সে কিছুতেই আর দৌড়াতে পাড়ছে না, একজন প্রতিযোগী তাকে পাশ কাঁটিয়ে চলে গেল, সে এখনও দ্বিতীয় নাম্বারে আছে, কিন্তু তার পায়ের পেশিতে যে বড্ড যন্ত্রণা হচ্ছে! সে ঠিক করল, দৌড়াতে না পাড়ি অন্তত হাঁটতে তো পাড়ব। বর্তমানে আমার লক্ষ্য এই ম্যারাথন জেতা নয়, যেভাবেই হোক ফিনিসিং লাইন পর্যন্ত গিয়ে নিজের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করা।
কিন্তু সে যেন আর হাঁটতেও পাড়ছে না। দেখতে দেখতেই সুনন্দ এখন ষষ্ঠ স্থানে চলে এসেছে। একটা সময় পর তার আর হাঁটার মত শক্তিও রইল না। সে পড়ে গেল। রিলিফ টিম তাকে ধরাধরি করে নিয়ে যেতে আসলে, সে বাঁধা দিয়ে বলে যেভাবেই হোক তাকে দৌড় শেষ করতেই হবে। রিলিফ টিমও কোনো জবরদস্তি করল না, তাকে সেইভাবেই ছেড়ে দিল।
সুনন্দ উঠে দাঁড়াল। সে ভাবতে লাগল, কিভাবে স্কুলে সে বুক ফুলিয়ে প্রতিটি প্রতিযোগিতা জিতেছে। কিভাবে সে পড়াশোনায় ভালো না হয়েও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পছন্দের পাত্র হয়ে উঠেছে। সে মনে শক্তি সঞ্চার করে আবার চলতে লাগল।
হ্যাঁ সে পেড়েছে, সে পেড়েছে ফিনিসিং লাইন ক্রস করতে। সে তাকিয়ে দেখল তার পায়ের পেশি অনেকটা ফুলে গেছে। কিন্তু পায়ের যন্ত্রণা ভুলে, তার মুখে ফুটে উঠল এক নবীন হাঁসি। সে হয়ত ম্যারাথন জিততে পারেনি ঠিকই, কিন্তু নিজের অপারগতার কাছে আজ সে জিতে গেছে। জয় হয়েছে তার চরম ইচ্ছা শক্তির। আর তার কাছে এই জয় ম্যারাথন জেতার আনন্দের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি শান্তি প্রদান কারী।
“আমাদের পেশি শক্তির বাইরেও আরেকটি শক্তি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে, আর সেটা হল মনের শক্তি। পেশি শক্তি যখন হার মেনে নেয়, যখন দুমড়ে পড়ে যায়, তখন অবশিষ্ট থাকে মনের শক্তি। আর এটি এমন একটি শক্তি যেটাকে সহজে সঞ্চার করা যায় না, কিন্তু একবার সঞ্চার হলে কোনো বাহ্যিক শক্তির সামর্থ্য নেই তাকে হার মানায়।
কথায় আছে- “মন হল মহাশয়” তাই আমি যেটি মনে ঠিক করে নিয়েছি, সেটা অর্জন না করা পর্যন্ত, কারও সাধ্য নেই আমাকে আটকাবে। শুধু দরকার- “আমি করব মানে করবই” এই মানসিকতার।
সফলতা কখনো দুম করে চলে আসেনা। ধীরে ধীরে গুটি গুটি পায়ে সে আসে। তাই শুধু বিশ্বাস রাখুন আর এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। সফলতা আসছে না দেখে থেমে থাকবেন না বা হাল ছেড়ে দিবেন না। হতেও তো পাড়ে, আপনি একদম সফলতার দোরগোড়ায় এসে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন!
পড়ুনঃ- সফলদের প্রেরণামূলক জীবনকাহিনী
শিক্ষণীয় কাহিনীঃ- ০২
কয়েক বছর আগের কথা। একজন বিশিষ্ট লেখক, সমাজসেবী এবং সাহিত্যপ্রেমী ব্যক্তি ভারতের কোনো এক জায়গায় বক্তিতা দিতে মঞ্চে উঠলেন। একের পর এক সুন্দর কথার ঝর্ণা তিনি বইয়ে দিলেন। কিন্তু কোন মানুষ কিভাবে সেগুলি কাজে লাগাবে সেটি তার অজানা। বক্তিতা শেষে যখন তিনি মঞ্চ থেকে নীচে নামলেন, বিশাল জনতার ভিড় তাকে ঘিরে ধরল।
সবাই তার অটোগ্রাফ চায়। তিনিও বেশ হাঁসি-খুশি মনে সবাইকে অটোগ্রাফ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ভিড়ের মধ্য থেকে একজন যুবকের দিকে বরাবরই তার নজর যাচ্ছিল। যুবকটি খুবই ইতস্তত বোধ করছিলেন। যুবকটি হয়ত সেই বিশিষ্ট ব্যক্তিটিকে কিছু বলতে চাচ্ছিলেন কিন্তু অন্তঃদ্বিধা তাকে যে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
ভিড় কিছুটা ফাঁকা হলে সেই যুবক, বিশিষ্ট ব্যক্তিটির দিকে এগিয়ে এসে কাঁচুমাচু হয়ে বললেন- “মহাশয় আমি আপনার অনেক বড় ভক্ত। আপনার লেখার মধ্যে এক অনবদ্য মাধুর্যতা লুকিয়ে থাকে। আমি আপনার প্রতিটি লেখার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকি। আপনি আমার কাছে দেবতার মত। আজ ভাগ্যক্রমে আপনার দেখা পেলাম।
তাই ভাবলাম আপনার দেখা যখন পেয়েই গেলাম, আপনার কাছে থেকে কিছু উপদেশ না নিয়ে আমি যাচ্ছি না। আপনি যখন বক্তিতা দিচ্ছিলেন অবাক বিস্ময় হয়ে আপনার কথা গুলি শুনছিলাম, ভাবছিলাম একজন মানুষ কিভাবে এত্ত সুন্দর ভাবে কথা বলতে পাড়ে! আপনার মুখ নিঃসৃত প্রতিটি শব্দ আমার কাছে যেন অমৃত সমান। অন্যদের মত আমিও আপনার অটোগ্রাফ প্রার্থী।
আপনি একটু দয়া করে আমাকে কিছু উপদেশ দিন যে, আমি কিভাবে আপনার মত একজন মানুষ হতে পাড়ি। প্লিজ আমাকে বলুন, কিভাবে আমি আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন আমার মধ্যে ঘটাতে পাড়ি।“
এই বলে সেই যুবকটি একটি কাগজ সেই বিশিষ্ট ব্যক্তির হাঁতে দিলেন অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য। সেই বিশিষ্ট ব্যক্তিটি কি যেন লিখলেন কাগজটিতে, তারপর সেই কাগজটি যুবকটি হাঁতে দিয়ে বললেন- “বাড়িতে গিয়ে প্রথমে ফ্রেস হবে এরপর, একা নিভৃতে এই কাগজটা খুলে দেখবে।“
সেই যুবকটি বাড়িতে ফিরে তার রুমে গিয়ে কাগজটা খুলে দেখল। তাতে লিখা আছে- “তোমার নিজেকে চেনার পেছনে সময় দেওয়া উচিত। আগে নিজেকে ভালো মত চিনতে শিখ।“
কোনো অন্য মানুষের অটোগ্রাফ দিয়ে আপনার কিচ্ছু হবে না। সেই অটোগ্রাফ দিয়ে আপনার নিজের পরিচয়ও প্রকাশ পাবে না। তাই আপনাকে এমন একটা জায়গায় পৌঁছাতে হবে, যাতে মানুষ আপনার অটোগ্রাফের জন্য ভিড় জমায়।
দুটি মানুষের ব্যক্তিত্ব কখনোই এক হতে পাড়ে না। অপরের সফলতা দেখে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেই ব্যক্তিটির সফলতার রাস্তায় চোখ বন্ধ করে পাড়ি জমানো নিছক মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশীরভাগ ব্যক্তিই সেটি করেন, আর অবশেষে কোথায় যাবেন কি করবেন কিছুই ভেবে পান না। মনে রাখতে হবে জীবনটা আপনার, তাই আপনার নিজের পরিচয় নিজেকেই ঠিক করতে হবে।
আমি দেখেছি, অনেক নতুন ইউটিউবার যে বিষয়ে বেশি বেশি ভিউ আসছে, সেই বিষয়েই ভিডিও তৈরি করেন, সেই বিষয়ে তার কোনো আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও।
তাই সবার উচিত প্রথমে নিজেকে চেনা। জানতে হবে, আপনার আগ্রহ কোন দিকে নিছক অন্যকে অনুসরণ করার চেষ্টা করলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।
তাই অন্যকে অনুসরণ করার চেয়ে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করার পেছনে সময় ব্যয় করুন। অন্যকে অনুসরণ করে চলা মানেই অন্যের ছত্রছায়ায় থাকা। মনে রাখতে হবে আমরা সবাই এলন মাস্ককে মনে রেখেছি, তার কোম্পানির কোনো কর্মীকে নয়। অর্থাৎ যিনি লিডার তিনিই সর্বদা মানুষের মনে গেঁথে থাকেন। তাই নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করার জন্য আপনাকেও লিডার হতে হবে, কারণ অধীনে কর্মচারী নয়।
এখন আপনি লিডার হতে চান, নাকি কর্মচারী সিদ্ধান্ত আপনার হাঁতে।
Create your unique identity instead of following others
পড়ুনঃ- ব্যর্থ মানুষের সফলতার গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবেঃ- WhatsApp Group- ছাড়পত্র ২ ফেসবুক- ছাড়পত্র ফেসবুক গ্রুপ- গল্প- Junction Telegram-CharpatraOfficial
“অনুপ্রেরণা মূলক গল্প। Bengali motivational story. শিক্ষণীয় ঘটনা”
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।