হঠাৎ করেই অজানা এক ছেলের সাথে পরিচয় এক জনশূন্য এলাকায়। এরপর নিজের বেদনাময় কাহিনী শুনিয়ে সে উধাও হয়ে যায়। কি তার কাহিনী জানব এই রহস্যময় প্রেমের গল্প টিতে। গল্পটিকে রহস্যময় বলার মূল কারণ হল… না থাক, গল্প পড়েই বুঝে যাবেন বিষয়টা, হি হি হি…।।

রহস্যময় প্রেমের গল্পঃ- “অপেক্ষা কেন্দ্র”

ওর সাথে আমার পরিচয়টা হয়েছিল খুব অদ্ভুত ভাবে জানেন! কেমন যেন , দমকা হাওয়ার মতো এসে সবটা উলোট পালোট করে নিমেষে চলে গিয়েছিল সে। তবে আমিও হাল ছাড়িনি। এখনো অব্দি অপেক্ষা করে চলেছি । জানিনা কবে সেই অপেক্ষার অবসান হবে , রহস্যের পর্দার কবে উন্মোচন ঘটবে , তবে আমি তার অপেক্ষায় এভাবেই দিন গুনব…

আজ থেকে বছর পাঁচ আগে , তখন আমি সবে মাত্র উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে এক বন্ধুর বাড়ি যাব বলে , সব বাগিয়ে গুছিয়ে ক্যাব বুক করে রওনা দিলাম । প্রথমে ক্যাব তারপর ট্রেন , তারপর বন্ধুর দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে সরাসরি চমকে দেব এই ছিল আমার পরিকল্পনা।

কিন্তু ওই যে ভাগ্য নামের বাবাজি সাথ না দিলে যা হয় , আমার সাথেও ঠিক তাই হলো । মাঝ রাস্তায় ক্যাবটা টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেল। বেচারা ড্রাইভার কাকু ঐরকম শুনশান জায়গায় , আমাকে নিয়ে বেশ বিপদে পরল। শেষমেশ গাড়ি থেকে নেমে একটি সামনের অপেক্ষা কেন্দ্র তে গিয়ে বসে পড়লাম । ড্রাইভার কাকুও বারেবারে আমায় আশ্বস্ত করে বললো ” ম্যাম একটু অপেক্ষা করুন ,এখুনি আপনার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি ” ।

রহস্যময় প্রেমের গল্প
রহস্যময় প্রেমের গল্প

নিশ্চিত ভাবছেন , আমি নিজেই কেন আরেকটা গাড়ি ডেকে নিচ্ছি না ! কিন্তু বিষয় টা একটু গোলমেলে , সেটা নিজে বুঝলাম । যখন লোকেশন শেয়ার করে আসতে বললাম, কোনো ক্যাবেই আসতে রাজি হলো না।

বেশ মুস্কিলে পড়লাম , এদিকে ড্রাইভার কাকুও গাড়ি রেখে কোথায় যেন নিখোঁজ হয়ে গেল। হয়তো সে কোনো ব্যবস্থা করতে গেছে ভেবে , মনকে সান্তনা দিলাম ।

এদিকে চ্যাটচ্যাটে গরম আর প্রখর রোদ্রের তাপে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত। ঠিক সেই সময় একটি ছেলে কোথা থেকে , আলাদিনের জিনের মতো প্রকট হলো । ঠান্ডা একটা জলের বোতল আগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো ” আপনি কোথায় যাবেন ?”

একেই মাথাটা পরিস্থিতির চাপে গরম ছিল তার ওপর আবার উটকো একটা ঝামেলার আগমন দেখে , কড়া গলায় জবাব দিলাম ” কেনো মশায়, আপনার কি , আমি জাহান্নামে যাবো । আপনি কি যাবেন আমার সাথে ?”

পড়ুনঃ- ভালবাসার ছোট্ট গল্প- এক পশলা বৃষ্টি 

হে হে করে হেসে ছেলেটা জবাব দিলো , “সে তো আমি অনেক আগেই চলে গেছি , আপনি নতুন করে আর কি নিয়ে যাবেন ?”
না, এ ছেলে বেশ সুবিধার নয় ভেবে , সেখান থেকে উঠে সামনের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করলাম । কিন্তু ওই দুপুরের রোদ্রে জীবন যায় যায় অবস্থা। ধীরে ধীরে চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে এলো , চারদিক অন্ধকার দেখতে দেখতে , রাস্তার মাঝেই লুটিয়ে পড়লাম।

ঠান্ডা জলের ঝাপটাতে যখন জ্ঞান ফিরলো , সামনে দেখলাম সেই অপেক্ষা কেন্দ্রের ছেলেটিকে। সে বেশ যত্ন করে তার কোলে আমার মাথা নামিয়ে , একটা তালপাতার পাখায় করে বাতাস করে যাচ্ছে ।
সবটা বুঝে উঠা মাত্রই চটপট তার কোল থেকে মাথা সরিয়ে উঠে দাড়ালাম । কিন্তু লো প্রেসারের ভুক্ত ভুগি হওয়ায় , শরীর সায় দিল না।

ছেলেটা আমার হাতটা ধরে , এক ঝটকায় টেনে ওর পাশে বসিয়ে দিলো। আস্তে আস্তে বেশ সুন্দর করে কপালে ম্যাসাজ করতে শুরু করলো। অনেকটাই আরাম বোধ হচ্ছিল তাই আর ঝাঁসির রানী সেজে রণমূর্তি ধারণ করলাম না।

অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী
অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী

সে মৃদু গলায় জিজ্ঞাসা করলো ” কোনোদিন ছ্যাকা খেয়েছেন ?”
আমি কিছু বলার আগেই , বলে উঠলো ” গরম তাপের ছ্যাকা নয় , প্রেমের ছ্যাকা কথা বলছি “
আমিও শান্ত গলায় বললাম ” কেন ? আপনি খেয়েছেন বুঝি “
-“হ্যাঁ সে খেয়েছি বৈকি ! নইলে আজ এখানে থাকতাম কেন ?”
ছেলেটা যে বিশ্বাস যোগ্য তার প্রমান আগেই পেয়ে গেছি। তাই ইয়ার্কি ছলে জিজ্ঞাসা করলাম ” তাই নাকি ! তা বলছি কেমন খেতে , মিষ্টি না তেতো? “

কাপা গলায় উত্তর দিলো ” হৃদয়বিদারক ” । একদিন আপনিও বুঝবেন।
ছেলেটা বেশ সিরিয়াস হয়ে গেছে দেখে , পরিস্থিতি সামাল দিতে জিজ্ঞাসা করলাম ” কি হয়েছে আপনার?”
অনর্গল ভাবে সে সবটা আমায় নির্দ্বিধায় বলতে লাগলো-

” তখন সময় টা ছিল ২০১৩ , আমি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। স্যারদের প্রিয় ছাত্র হওয়ার সাথে সাথে , স্টুডেন্ট ইউনিয়ন এও বেশ নামডাক ছিল । মেয়েদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম বলে , সবার কাছে আরো বেশি চিত্রাকর্ষক ছিলাম । সব মিলিয়ে আমার জীবন বেশ আনন্দে ভরপুর ছিল ।

এরপর শুরু হলো কলেজে নিউ অ্যাডমিশন । আমার মত বেরসিক মানুষেরও মন গললো , একটি ইকোনোমিক্স এর প্রথম বর্ষের ছাত্রীর রূপে । অপরূপ সৌন্দর্য আর চরিত্রে , পড়ে গেলাম তার প্রেমে । সেও আমায় সরল ভাবেই গ্রহণ করলো। মনে হলো যেন নতুন করে ডানা গজিয়েছে। দুজন মিলে কলেজ বাঙ্ক করে এদিক সেদিক ঘুরতে যাওয়া, একে অপরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে অজস্র কথা দেওয়া। আরো কত কি …!

পড়ুনঃ- সত্যি ভালবাসার গল্প- ভালবাসার সূক্ষ্ম অনুভূতি 

কিন্তু সব কিছুর মাঝে ওকে পেয়েও যেন বারেবারে মনে হতো আমি ওকে পাইনি।
তারপর হঠাৎ করে ওর কলেজ আসা বন্ধ হয়ে গেলো। ফোন নাম্বার টাও ব্লক করে দিয়েছিল। বাড়ি গিয়ে খোঁজও নিয়েছিলাম কিন্তু তারাও কিছু জানতো না। শত চেষ্টা করেও ওর কোনো খোঁজ আমি পাইনি।

এক মাস পর খবরের কাগজ থেকে জানতে পারলাম একটি পরধর্মের ছেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করার পর , সেই সমাজের মানুষ তাদের দু জন কেই কুপিয়ে খুন করেছে। স্পষ্ট দেখলাম তার ছবি সমেত নাম টা। বুকের ভেতর টা সেদিন ছ্যাত করে উঠেছিল । সেদিনই বুঝেছিলাম প্রেমের ছ্যাকাটা আগুনের থেকেও কতখানি ভয়ংকর।

জানো ও আমায় কথা দিয়েছিল ” সারাজীবন পাশে থাকবে ” কিন্তু কথা দিয়েও কথা রাখেনি।”
সবটা শুনে চোখ থেকে টপ টপ করে জল বেরিয়ে এলো ছেলেটির। মৃদু স্বরে বললাম ” কোনো কথা খারাপ লেগে থাকলে ক্ষমা করবেন” ।

সে হাসতে হাসতে আমার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললো ” আজ অনেকটা শান্তি পেলাম জানেন ।” অনেকদিন পর কেউ আমার কথা মন দিয়ে শুনল।”
কথাটা শুনে , কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তার আগেই সে আমায় থামিয়ে দিয়ে বললো ” শেষমেশ তাহলে আপনিই আমায় মুক্তি দিলেন। তবে শুনুন জায়গাটা খুব একটা সুবিধার নয় । ভাগ্য ভালো তাই রেহাই পেলেন । যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরিয়ে যান” এই বলেই সে চলে গেল….!

পড়ুনঃ- কয়েক লাইনের প্রেমের গল্প 

বারবার ডাকলাম কিন্তু একবারও ফিরে তাকালো না ।
কিছুক্ষন পর ড্রাইভার কাকু দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বললো ” ম্যাম আপনি ঠিক আছেন তো? পাশের গ্রামের লোকের মুখে শুনলাম জায়গাটা মোটেও সুবিধার নয়।”
দুজনের মুখে একই কথা শুনে , উৎকন্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ” কেন ? সুবিধার নয় কেন?”

ড্রাইভার বললো ” কোনো এক ইউনিয়ন লিডার একসময় এই অপেক্ষা কেন্দ্র টা বানিয়েছিল । সে তার প্রেমিকাকে খুব ভালোবাসত । কিন্তু সেই মেয়ে অন্য কারুর সাথে পালিয়ে বিয়ে করার পর মারা গিয়েছিল। তারপর সেই ইউনিয়ন এর ছেলেটিও এই স্থানে এসে গলায় দড়ি নিয়ে আত্মহত্যা করেছিল । তারপর থেকে এখানে কোনো কম বয়সী মেয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করলে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফেরে না । সবাই বলে এখানে নাকি ওই প্রেমিকের আত্মা আজও বর্তমান। কিন্তু আপনাকে সুস্থ দেখে সত্যি অনেকটা স্বস্তি বোধ করছি।

unsuccessful love story
unsuccessful love story
<

সবটা কেমন যেন আমার কাছে উলোট পালোট হয়ে গেলো । কিছুতেই মেলাতে পারলাম না, সে কি বাস্তব না আমার কল্পনা!

জানেন তো, এরপর অনেকবার সেখানে গেছি , তার জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোনোবারই তার দেখা পায়নি। আশেপাশের মানুষ দের জিজ্ঞাসা করে , এটুকু জানতে পেরেছি , আর সেখানে নতুন করে আর কোনো মৃত্যুর ঘটনা হয়নি। কেউ কেউ বলে প্রেমিকটির আত্মা নাকি শান্তি পেয়ে গেছে ! তাই সে আর কখনো ফিরবে না ! তবুও আমি অপেক্ষারত , কারণ আজও আমার বিশ্বাস হয়না , সে আত্মা ছিল।।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের প্লটে-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও  বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
অভিমানী ভালবাসার গল্প- সমাপ্তি 

পরিবেশ নিয়ে ছোট গল্প- পথিক জনের ছাতা 
ছাড়পত্র কে পাবেন যেখানে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

রহস্যময় প্রেমের গল্প। অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী unsuccessful love story bengali

Spread the love

Leave a Reply