আজকের মৃত্যুর করুন কাহিনী টিতে খুঁজে পাবেন, সব আত্মীয় স্বজন, ভালবাসার মানুষ পাশে থাকলে তাদের ছেড়ে যেতে মন চায়না। কিন্তু মৃত্যু এমন এক কঠিন বাস্তব যা আমাদের মেনে নিতেই হয়। মৃত্যু এক কঠিন সত্য, যা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন।

মৃত্যুর করুন কাহিনীঃ-

অনেক দিন পর আমি আর তানিশা আজ পার্কে গেছি। পার্ক থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। আচমকা দেখি, একটি ডাম্পার গাড়ি আমাদের দিকে তিব্র গতিতে ছুটে আসছে…

হঠাৎ করেই মনে পরে গেল, আমার সঙ্গে তানিশার যখন দেখা হয়েছিল তখন আমি কলেজে। কলেজের প্রথম দিন ছিল। এখনও পরিষ্কার মনে আছে, তানিশা একটি ক্লাসের পর এসেছিল। প্রথম দিনেই দেড়িতে আসায় ম্যাম তাকে খুব বকেছিল। তানিশা অনেকটা হাবাগোবা টাইপের মেয়ে ছিল। এমনকি কেউ যদি তার গালে একটি থাপ্পড় মেরে দেয় তবুও সে তার কোন প্রতিবাদ করবে না।

জানিনা কিভাবে আমি তার প্রতি আকর্ষিত হয়েছি! হয়ত তার সাধারণতাই আমাকে তার প্রতি টেনেছিল। যেচে গিয়ে কথা বলেছিলাম তার সঙ্গে। এরপর টুকটাক কথা হত, ফেয়ারওয়েলের দিন আমি তাকে সবার অগোচরে প্রপোজ করি। আমি ভেবেছিলাম সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে। কিন্তু সে আমার ভালবাসা স্বীকার করেছিল।

মৃত্যুর করুন কাহিনী
মৃত্যুর করুন কাহিনী

এরপর আমি ইউনিভার্সিটি পেরিয়ে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করি। তানিশার বাড়ি থেকে আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে রাজী ছিল না। তার বাবার কথায়- “মেয়ে মানুষের আবার অত পড়াশোনা কিসের শুনি!” বাধ্য হয়েই তানিশাকে ঘরের কোণ বেছে নিতে হয়েছিল।

তানিশার বাবার কাছে আমি যখন আমাদের ভালবাসার কথা বলি, তানিশার বাবা আমাকে অপমান করে শাসানী দিয়েছিল- “আমার মেয়ের দিকে দেখলে তোর চোখ আমি উপড়ে নিব, হতচ্ছাড়া!” বিষাদ মনেই বাড়িতে ফিরেছিলাম।

এই ঘটনার কয়েকদিন পর আবার তানিশার সাথে দেখা, এবার সে আমাকে আর কিছুতেই ছাড়তে রাজী ছিল না, আমার বাবা- মা কে না জানিয়েই দুইজনেই পালিয়ে গিয়েছিলাম।

এরপর ঘটে গেছে অনেক ঘটনা, ততদিনে চাকরির যে পরীক্ষাটা দিয়েছিলাম সেটিরও ফলাফল বেড়িয়ে গেছে। আর ভাগ্য যে আমার সাথে ছিল সেটিই প্রমাণিত হয়েছিল। আমি সরকারি জব পেয়ে যাই। এরপর চাকরি পাওয়ার সুখবর আর সঙ্গে তানিশার হাত ধরে দুরুদুরু বুকে ফিরেছিলাম আমার বাড়ি।

বাবা মা মেনেও নিয়েছিল আমাদের সম্পর্ককে। এরই মাঝে তানিশার বাবাও আমাদের সম্পর্ককে মেনে নেন। এরপর চার হাত এক হয়।   

এরপর হেসে খেলে কাটতে থাকে আমাদের দিন। আর আমাদের হাসিতে আরও বেশি প্রজ্বলন এনে দেয়, আমাদের খোকার আগমন।

খোকা আমাদের কোলে আসার দুই বছর পর খুকির আগমন। খোকা- খুকি দুইজনেরই ফুটফুটে ছেলে মেয়ে হয়েছে। আর আমি দাদু হয়েছি। দাদু হওয়ার আনন্দে আমি মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিলাম। তানিশার চোখে আনন্দাশ্রু দেখে, এই বুড়ো বয়সেও তানিশার প্রতি প্রেম জেগে উঠেছিল।

মৃত্যু নিয়ে গল্প
মৃত্যু নিয়ে গল্প

এরই মাঝে বাবা আমাদের ছেরে চলে যান, খুব কষ্ট হয়েছিল সেদিন। বাবা ছেরে যাওয়ার তিন বছরের মাথায় মা ও চলে গেলেন।

সারাদিন অনেক খেঁটে বাবা আমার পড়াশোনার খরচ চালাতেন।তখন আমি কলেজে পড়ি, একদিন রাতে শুনি বাবা মাকে বলছে- “বাবুটা একটা ভাল কাজ পেলেই বাঁচি বুঝলে তো!” মা জানায়- “তোমাকে কাল কাজে যেতে হবে না, তোমার হাতে তো ফোসকা পরে গেছে।“ বাবার উত্তর- “তা কি করে হয় গো! ওই যে বাবু, কি একটা বইয়ের নাম বলছিল না সকালে আজ, কাল কাজ থেকে টাকা উঠিয়ে ওর জন্য বইটা নিয়ে আসতে হবে। আমি বেঁচেই তো আছি বাবুর জন্য, তার চাওয়া- পাওয়া কে গুরুত্ব না দিলে হবে বলতো!”

মা- “তুমিও পারো বটে” 

মা প্রতিদিন ভোর চারটায় বাবার জন্য খাবার তৈরি করত। আমি ঘুম থেকে উঠার আগেই বাবা কাজে বেরিয়ে যেত। যে বাবা বলেছিল, “বাবুর জন্যই তো আমি বেঁচে আছি” সেই বাবাও আমাকে ছেঁড়ে চলে যায়। আর শেষে মা- ও।

হঠাৎ করেই ছোট বেলার কথা মনে পরে গেল, ছোট কাকিমারা আর আমার মা মিলে রোজ ওই পুকুর পাড়ে গল্প করতে বসত। আর আমি আগ্রহ ভরে তাদের সব গল্প শুনতাম। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় মায়ের সেই রূপকথার গল্পের জন্য আমি অপেক্ষা করে থাকতাম। ধীরে ধীরে যতই বড় হতে লাগলাম, ততই সব কিছু ফিকে হয়ে যেতে লাগল।

আমি হসপিটালের বিছানায়। আমার খোকাকে খুব চিন্তিত দেখছি। সে বারবার পায়চারী করছে। আমার অনেক আত্মীয় স্বজন বসে আছে। কিন্তু আমার তানিশাকে দেখছি না কোথাও!


পড়ুনঃ- 
ভাই- বোনের ভালবাসা- আমার দিদি। 

হুমায়ুন আহমেদের উক্তি- ছবি সহ 
মৃত্যুর করুন কাহিনী

আমার খুকি আমার পায়ের কাছে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। ব্যাপারটা কি! আমাকে এরা হসপিটালে এনেছে কেন! আমার তানিশাই বা কোথায়! আমি বিছানা থেকে উঠে বসলাম। হঠাৎ করেই সবাইকে দেখি অঝোরে কান্না করছে। আমাকে জড়িয়ে ধরছে, কিন্তু আমি তাদের ছোঁয়া অনুভব করতে পারছি না। একি একি হল আমার!

আমি খুকির মাথায় হাত বুলাতে চাইছি, কিন্তু আমি তাকে স্পর্শ করতে পারছি না কেন? কি হয়েছে আমার হাতের! আমি খোকাকে জিজ্ঞেস করছি- “হ্যাঁ রে খোকা তোরা সব কান্না করছিস কেন? তোর মা কোথায়?” কিন্তু খোকা আমার কথার উত্তর দিচ্ছে না। খোকা কি আমার কথা শুনতে পেল না! আমি বেশ কয়েক বার খোকা কে জিজ্ঞেস করলাম, তোর মা কোথায়, আর তোরা কাঁদছিস কেন! কিন্তু খোকা না শোনার ভান করে রইল।

বউমা কে জিজ্ঞেস করলাম- কিন্তু বউমা চুপচাপ, অশ্রু সজল তার দুই চোখ।

আমি চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- “কেউ কি আমাকে বলবে, তোমরা সবাই কাঁদছ কেন?” কিন্তু এত আত্মীয় –স্বজন কেউই আমার কথার উত্তর দিল না, সবার চোখেই শুধু জল। আমি আবার চেঁচিয়ে বললাম- “কান্নার কারন না হয় নাই বললে- অন্তত আমাকে তো জানাও যে, আমার তানিশা কোথায়!” কিন্তু এবারও কেউই আমার প্রশ্নের জবাব দিল না।

ছেছেড়ে চলে যাওয়ার গল্পড়ে চলে যাওয়ার গল্প
ছেড়ে চলে যাওয়ার গল্প
<

না আমার নিজেকেই তানিশাকে খুঁজতে হবে। আমি হসপিটালের রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে যেতে চাইছি, কিন্তু আমি দরজা খুলতে পারছি না কেন! উফফ এত শক্ত কেন দরজাটা! অথচ একজন নার্স দিব্যিসে দরজাটা খুলে চলে গেল। পিছন ঘুরে দেখি, আমার মত দেখতে একটি লোক হসপিটালের বিছানায় শান্তির ঘুম দিচ্ছে।

কি ব্যাপার, হুবহু আমার মত দেখতে কেন লোকটা! আমি কাছে গিয়ে দেখলাম, লোকটার গলায় তিলের দাগটা। আমি চমকে উঠলাম, আরে এটা তো আমি! আমি এখানে আমার শরীর ওখানে, আমি কিছুই বুঝছি না!  কিন্তু আমার তানিশা কোথায়!

আমার একজন আত্মীয় বলে উঠল- “আচ্ছা বউ দিদির কি জ্ঞান ফিরেছে!” কি হয়েছে আমার তানিশার! আমি বারংবার এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেও কেউই আমার কথার উত্তর দিচ্ছে না কেন! আমি যে একটিবার তানিশার সাথে কথা বলতে চাই।    

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
পড়ুনঃ- 
রহস্যময় গল্প- অভিশপ্ত পেইন্টিং 

বাবার ভালবাসার গল্প 

বাবাকে নিয়ে একটি শিক্ষণীয় গল্প 
মৃত্যুর করুন কাহিনী
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২) 
মৃত্যুর করুন কাহিনী

মৃত্যুর করুন কাহিনী। মৃত্যু নিয়ে গল্প। ছেড়ে চলে যাওয়ার গল্প। বাস্তব গল্প

Spread the love

Leave a Reply