//একটি মর্মস্পর্শী গল্প। আবেগি গল্প। নিয়তি গল্প//
জীবনটা নিজের হলেও এই জীবন সম্পর্কে আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। বিষয়টা কেমন যেন! জীবনটা নিজের অথচ নিজের নয়। সময়ের সাথে সাথে গড়িয়ে যায় জীবন আর খারাপ হওয়া লেন্সের ফোকাস হারিয়ে ফেলার মত ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে একসময় হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় লেন্স দুটো। জীবন তো একটাই প্রতিটি মুহূর্তকে তাই উপলব্ধি করে চলুন কেননা Although Life is yours but it is unpredictable…।
একটি মর্মস্পর্শী গল্পঃ- ‘নিয়তি’
…বিভৎস একটা কম্পন অনুভব হতে না হতেই , নিমেষে চোখের সামনে সবটা ধুলিস্যাৎ হয়ে গেলো । চারিদিকের হাহাকার করা প্রিয়জনদের চিৎকার আর চাইলেও কানে পৌঁছাবে না। শুধু মাত্র রক্তাত্ব একটা ডায়েরি, যার মাঝখানে রাখা একটা শুকনো কালো গোলাপ । আর ছোট ছোট বিবরণ দেওয়া কয়েকজনের জীবনী…।
এই মহুয়া একটু তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও , নইলে ট্রেন মিস হলে কিন্তু তোমার বাপের বাড়ি যাওয়া ক্যান্সেল। মহুয়া রান্নাঘর থেকে কোমল স্বরে জবাব দিল , এই তো রাত্রের খাবার টা বানিয়েই, রেডী হচ্ছি।
এই মহুয়া আর রাতুলের বিয়েটা হয়েছিল , বছর পাঁচেক আগে। যেহেতু বাড়ির মর্জিতে দেখাশোনা করে বিয়ে তাই ওদের মধ্যে বনিবনা হতে বেশ সময় লেগেছে। আর গ্রামের ছেলে রাতুল , শহরের মেয়েকে কখনোই বিয়ে করতে রাজি ছিল না। তবে ‘চাপে পড়ে বাপ’ বলার মতো ওকেও করতে হয়েছিল বিয়েটা। আর মহুয়া শহরের মেয়ে , তাই একটু বেশিই সময় লেগেছিলো একে অপরকে জানতে বুঝতে। তবে সেদিন যখন রাতুল জানতে পারলো মহুয়া মা হতে চলেছে। তখন থেকে বেশ পরিবর্তন এসেছে ছেলেটার মধ্যে। একটু বেশি বেশিই যত্ন রাখছে মহুয়ার।
তাই আজ নিজে দায়িত্ব সহকারে মহুয়াকে ওর বাপের বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছে। দুইজনেই বেশ আনন্দিত হয়েছে নতুন অতিথির আগমন বার্তায় । কারন এর আগে মহুয়াকে এই বিষয়ে অনেক কথাই শুনতে হয়েছে। তাই কোনরকম রিস্ক না নিয়ে রাতুল মহুয়াকে কয়েকমাস বাপের বাড়িতে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেষমেশ ওরা দুপুরের মধ্যাহ্ন আহার সেরে রওনা দিলো toto করে রেল স্টেশনের দিকে।…
ওই পলাশ শুনছিস- কিরে ভাই আজ যাবি নাকি কাজে ? শুনছিলাম তোর বাড়িতে কাকু কাকিমার মধ্যে তোকে নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। ব্যাপার টা কি রে ?
পলাশ কিছুটা নিরাশ গলায় উত্তর দিলো , আসলে ভাই , ফেসবুকের মাধ্যমে একটা মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। এরপর ধীরে ধীরে সম্পর্কটা আগাতে থাকে। একে অপরকে ভালোবেসে ফেলি আমরা। সেই কথা কোনক্রমে বাবার কানে কেউ পৌঁছে দিয়েছে। ওই ফেসবুক করা মেয়ের নাকি কোনো মান সন্মান নেই , হাজার পুরুষের সাথে বন্ধুত্ব করে বেড়ায়। এই যুক্তি দেখিয়ে বাবা আমায় সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসতে বলছে। আর এদিকে মা আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মেয়েটিকে বউ করে আনার আর্জি জানিয়েছে। সেই নিয়েই অশান্তি।
দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আবার পলাশ কে জিজ্ঞাসা করলাম , তাহলে এখন তুই কি করবি ?
কি আর করবো বল! আপাতত আজ বিকেলের ট্রেনে কাজের উদ্যেশ্যে রওনা দেবো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তবেই বাড়ি ফিরব । এই বলে দুপুর দিকেই কয়েকজন গ্রামের বন্ধুর সাথে পলাশ রেল স্টেশনে দিকে রওনা দিলো।…
“মায়ের ওষুধের টাকা জোগাড় করতে হলে কিছু একটা করতেই হবে ,তবে কি করবো আমি? পড়াশোনা তো তেমন শিখিনি , সেই কবেই স্কুলছুট হয়েছি। আর কোনো কোম্পানি তে কাজ পেতে গেলেও নূন্যতম শিক্ষা টুকু প্রয়োজন। ” এসব নানান ভাবনা আজ তুহিনের মাথা গ্রাস করে বসেছে। আসলে এক মাস আগেও ছেলেটা এরকম ছিলনা। কিন্তু হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকে ওর বাবার মৃত্যু হলে পুরো সংসারের দায়িত্ব ওর কাঁধে চলে আসে। পাড়ার মোড়ে আর পাঁচটা বেকার ছেলের দলে সামিল থাকা সেই তুহিন বর্তমানে সংসারের দায়িত্ব বুঝতে পেরে বেশ চিন্তাগ্রস্ত হয়েছে।
তাই সেদিন থেকে কাজের সন্ধানে এদিক সেদিক করে বেড়াচ্ছে। তবে শেষমেশ ওর সন্ধান সফলতা পেয়েছে , বাইরে একটি এজেন্সি তে সিকিউরিটি গার্ড এর চাকরি ও জোগাড় করে ফেলেছে। কিন্তু সমস্যা একটাই , বাড়িতে থাকে অসুস্থ মা আর ছোটো বোন তাদেরকে একলা রেখে দুর রাজ্যে যাবে কি করে। তবে শেষমেশ সংসারের পরিস্থিতি বুঝে ও যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। তাই অপেক্ষারত মা বোনকে রেখে দুপুরের দিকেই রেল স্টেশনের দিকে রওনা দিলো তুহিন।…
পড়ুনঃ- বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প
তিন বছর ধরে সোনার পেছনে ঘুরঘুর করার পর, শেষমেশ বাবুকে নিজের জীবনে জায়গা দিয়েছে সোনা। তবে বাবু প্রথম থেকেই জানে সোনা একটু অভিমানী গোছের মেয়ে। ওর কথায় কথায় ছোট খাটো বাহানা লেগেই থাকে। তাও বাবু সবটা মেনে নিয়েছে। একে অপরকে মানিয়ে নিয়ে বেশ সুখেই আছে ওরা। তবে বিপত্তিটা ঘটলো সেদিন , যেদিন হঠাৎ করেই সোনার বাবা ওর বিয়ে ঠিক করে দিলেন এক সাব ইন্সপেক্টর এর সাথে। সোনার বিয়েতে মত নেই , সে বারবার বাড়িতে জানালেও কেউ তার কথা শুনলো না।
শেষমেশ সোনা , বাবুকে ওকে নিয়ে পালানোর জন্য জেদ ধরে বসলো। তাই বাবু ও কাছের মানুষটাকে হারানোর ভয়ে , পালিয়ে যেতে রাজি হলো । ওদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাবু আজ ট্রেনে করে যাবে আর মাঝ পথে সোনাকে সেই ট্রেনে নিয়ে সোজা দুর রাজ্যে পাড়ি দেবে। সেখানেই গড়ে তুলবে ওদের সুখের সংসার।…
স্নিগ্ধার বাবা ছাড়া আর এই পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। আর ওর বাবা একজন বিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তাই প্রতিদিন তিনি ট্রেনে করে যাতায়াত করেন। সেই সকালে বের হন আর সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরেন। আর সেই ছোট ফ্ল্যাটটি তে তার দশ বছরের মেয়ে স্নিগ্ধা তার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে। তবে আজ স্নিগ্ধার মন খুব উতলা হয়ে উঠেছে। সে বারবার ফোন করে তার বাবাকে তাড়াতাড়ি আসার জন্য বলছে। তাই আজ তার বাবাও তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে রেল স্টেশনের উদেশ্যে রওনা দিলো।…
পড়ুনঃ- শিক্ষণীয় গল্প- জীবন অঙ্কুর
এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশনে এসে থামার পর, রাতুল মহুয়া , পলাশ – আর ওর কয়েকজন বন্ধু , তুহিন , বাবু আর স্নিগ্ধার বাবা সবাই উঠে পড়ল। সবার গন্তব্য স্থল ভিন্ন। তবে পথ তো সবার একটাই।
রাতুল মহুয়াকে যত্ন করে নিজের হাতে ওষুধ খাইয়ে দিতে যাচ্ছিল , এদিকে পলাশ বারেবারে ওর প্রেমিকাকে কল করলে , সে ফোন টা কেটে দিচ্ছিলো। তাই পলাশ চিন্তায় প্রায় পাগলের মত করতে শুরু করেছিল। তুহিন ও মা বোনকে ছেড়ে এই প্রথম বার এতদূর যাবে বলে এক কোনায় বসে চোখের জল মুছছিল। বাবু ও ভয়ের সাথে সাথে বেশ খুশি , কারণ এক ঘন্টা পরেই সোনা এই ট্রেনে তার সাথে রওনা দেবে।
স্নিগ্ধার বাবা স্নিগ্ধাকে কল করে শান্তনা দিচ্ছিল ” আর মাত্র ২ ঘণ্টা মা , তার পরেই তোমার বাবা এত্ত এত্ত চকলেট নিয়ে হাজির হবে , তুমি কান্নাকাটি কোরো না মা …।”
হঠাৎ একটা কম্পন অনুভব করলো সবাই। এদিক সেদিক যে যেদিকে হোক ছিটকে পড়ল। ট্রেন টা লাইন চ্যুত হয়ে অন্য লাইনে প্রবেশ করলে সরাসরি ধাক্কা হলো আরেকটি এক্সপ্রেসের সাথে । কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই সবটা নিমেষে শেষ হয়ে গেলো। চারদিক রক্তের বন্যা আর মৃতের স্তুপে পরিণত হলো।
…পারলো না রাতুল মহুয়াকে বাড়ি পৌঁছে দিতে। …বারেবারে পলাশের প্রেমিকা কল করলেও আর উত্তর দেওয়ার মানুষটাকে পেলো না। ….মা বোন ছেড়ে আসা সেই ছেলেটা পারলো না আর মায়ের ওষুধ কেনার টাকা জোগাড় করতে। …কোনো অপেক্ষারত এক প্রেমিকাকে অপেক্ষায় রেখে বাবু ও পাড়ি দিলো না ফেরার দেশে। …স্নিগ্ধা দরজার দিকে তাকিয়ে থাকলেও ফিরে পেলো না , একমাত্র নিজের আপন মানুষটাকে।
জীবন টা কত তুচ্ছ তাই না বলুন ! বর্তমানে মরা নয় বেঁচে থাকাটাই অস্বাভাবিক ব্যাপার। তাই সময় থাকতে প্রিয় মানুষ গুলোকে অল্প সময় দিন। কে বলতে পারে, আজ যাকে সময়ের অজুহাত দেখিয়ে অবহেলা করছেন , সেইই কাল চিরকালের মতো অবহেলা দেখিয়ে , সবার অগোচরে ফাঁকি দিয়ে মুক্তির উপহার তুলে দিয়ে গেলো আপনার জীবনে। পারবেন তো সেদিন নিজেকে ক্ষমা করতে !!
” অন্য কিছু চাই না প্রিয়
চাই না মূল্যবান উপহার
সময় থাকতে শুধু দিয়ো
ওই অল্প সময়ের অধিকার।”
গল্পের মর্মস্পর্শী ভাবনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- আধুনিক শিক্ষণীয় গল্প- স্মার্ট ফোন মা- নিয়ে কষ্টের গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
হৃদয় ছুয়ে যাওয়ার মত একটি মর্মস্পর্শী গল্প। আবেগি গল্প। নিয়তি গল্প। জীবন ও মৃত্যু।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।