প্রথম প্রেমের গল্পওইসব প্রেম ট্রেম করে কি হবে বলা মানুষটাও একসময় কারও না কারও প্রেমে পড়ে যায়। যেন এক পুনর্জন্ম হয় তার, অদ্ভুত ভাবেই পূর্বের কঠিনতা কোমলতায় পরিণত হয়।

প্রথম প্রেমের গল্পঃ- ‘প্রথম সফর’

প্রেমে বড়ো অ্যালার্জি অর্ণবের। অ্যালার্জি মানে ভীষণ রকমের। আর নিজের থোবড়ার উপর চরম আত্মবিশ্বাস আছে যে কোনো মেয়ে ওর সাথে প্রেম তো দূরে থাক, ওর দিকে তাকাবেও না! 

তাই আপন মনে আপন রাজ্যে বসবাস করে। ও প্রেম ভালোবাসা কে কোনোমতেই জীবনে আসতে দেবে না। কারণ ও দেখেছে ওর বন্ধুদের জীবনে এই নিয়ে কত সমস্যা, কত কষ্ট, কত চোখের জল ফেলা, আরো কত কি!

একা আছো ভালো আছো। না আছে পাওয়ার আশা , না আছে হারানোর ভয়। নেই কারোর অবহেলা আর না আছে expectation hurt হওয়া। 

মনের মধ্যে ভালোবাসা নিয়ে একটা নেতিবাচক মনোভাব , ভয়ভীতি তৈরি হয়ে গেছে বর্তমানের ভালোবাসা গুলো দেখে।

বাপরে বাপ, ওসব প্রেম ভালোবাসা, টক্সিক রিলেশনশিপে থাকার থেকে সিঙ্গেল বাঁচা অনেক ভালো। রিলেশনশিপে যাওয়া মানেই গরু কে দড়ি বেঁধে আটকে রাখার মতো। দূর দূর! ওসব একদম দরকার নেই। 

আর তাছাড়া এখনকার মেয়েদের মধ্যে তার মনের মতো মেয়ে নেই। খুব বেশি কিছু না, একটা সুন্দর মন থাকলেই হবে, যে ওকে আগলে রাখবে, ওর কোলে মাথা রেখে বলবে, তুমিই আমার পৃথিবী অর্ণব। অর্ণব নিজেও ওকে অনেক ভালোবাসবে। ওর যত্ন করবে, ওর খেয়াল রাখবে। 

প্রথম প্রেমের গল্প
প্রথম প্রেমের গল্প

আরো অনেক কিছু…

ভাবতে ভাবতে নিজেকেই নিজে দুয়ো দেয়। ধুস! এখন এমন মেয়ে পাওয়াই মুশকিল। যে ছেলেদের পকেটে বেশি নোট তাদের আজ অনেক প্রেমিকা। তেতো হলেও সত্যি যে এখন মেয়েরা ভালোবাসার চেয়ে টাকা কে বেশি প্রাধান্য দেয়। আর তাছাড়া, মেয়েরা প্রেমে খুব অসৎ। 

এইসমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে , এত ভীড়ের মাঝে সেই মানুষটিকে যদি কখনো খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে তাকে অর্ণব কখনোই হারিয়ে যেতে দেবে না। 

এই, এসব কি ভাবছি। আমি প্রেমটেম করব না ওসব! করলেই মরতে হবে। নিজের ভাবনা নিজেই থামিয়ে বলে ওঠে অর্ণব আপনমনে। 

অফিস যাবো, চাকরি করব, ব্যস বিন্দাস লাইফ। ওসব ঝামেলায় যাওয়ার দরকার নেই বাবা!

অর্ণব রোজ বিকেলে এই মাঠটাতে আসে। একা একটা বেদী তে বসে থাকে। দেখে জোড়া জোড়া সব প্রেমিকযুগল কে। মনে বিন্দুমাত্র আপশোষ নেই, হয়ও না। কারণ সে সারাজীবন অপেক্ষা করতে রাজি আছে কিন্তু তবুও তাড়াতাড়ি কোনো মানুষকে খুঁজে তার কাছে মন জমা রেখে পস্তাতে চায় না। 

তাই যেখানে ওর সব বন্ধুরা প্রেম করছে, খুব আনন্দে আছে দেখে তাই দেখেই অর্ণব ভাবতে থাকে কে জানে এই হাসি কতদিনের জন্য! ভুল মানুষের আগমনটাই নাকি তাড়াতাড়ি হয়। জানে না এটা সত্যি নাকি মিথ্যে তবুও ওটাকেই মনের মধ্যে স্থান দিয়ে রেখেছে অর্ণব , যাতে প্রেম ভালোবাসা থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়।  

পড়ুনঃ- মধ্যবিত্তের প্রেমের গল্প 

নিজের মতো হেসে খেলে বেড়ায় তাই। মা, বাবা নিয়ে ছোট্ট পরিবার , সবাইকে রেখে আপাতত কলকাতার একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে আছে সে। আর আছে সখের গিটার বাজানো। টুকটাক গান তো চলেই। 

সদ্য চাকরি যেহেতু তাই দক্ষতার পরিচয় দেওয়ার পর কয়েকদিন এর ছুটি চেয়ে ঠিক করে বাড়ি যাবে, অনেক দিন মা, বাবার সাথে দেখা হয়নি। 

যেই ভাবা সেই কাজ। ব্যাগ পত্র গুছিয়ে সোজা হাজির হয় প্ল্যাটফর্মে। একটা ট্রেন ইতিমধ্যে মিস হয়ে গেছে। 

ঘড়ি দেখে অর্ণব। রাত দশটা বাজে তখন। এখন পরের ,মানে লাস্ট ট্রেন আসতে আসতে বারোটা বাজবে যদিও মাঝখানে একটি ট্রেন আছে দশটায়। সে যাই হোক,  এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করার কথা ভাবতেই কেমন একটা বিরক্ত লাগে ওর। 

কিছুক্ষণ সময় যাওয়ার পর, বহু ভীড়ের মাঝে একজনের উপর চোখ আটকে যায় অর্ণব এর। ওর পাশের সিটটাতেই একজন  গ্ৰামের ও নববধূ টাইপের , যদিও গয়নাগাঁটি সেভাবে নেই, তবুও ওর বেনারসী শাড়ি দেখে বোঝা যাচ্ছে, মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে। মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ভীড় করে একবার দেখাতেই। মেয়েটার কি বিয়ে হয়ে গেছে? তাহলে ও একা কেন? নাকি ওর সাথে যে ছিল সে কোথাও গেছে ওকে এখানে বসিয়ে রেখে ? 

অর্ণব আবার তাকিয়ে থাকে ওর পরের ট্রেন আসার দিকে। যদিও এখনো অনেকটা সময় বাকি। ফোন টা বের করে। গান শোনা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। ইচ্ছে করছিল একটু এদিক ওদিক ঘুরতে কিন্তু ভালো লাগছে না একলা তাও আবার অহেতুক ঘোরাঘুরি।

ফোনেই মনোনিবেশ করা ছাড়া আর কিছুই ভেবে পায় না অর্ণব। 

বেশ অনেকক্ষণ পর আবার পাশ ফিরে তাকাতে চমকে ওঠে অর্ণব। মেয়েটা এখনো ওখানেই বসে আছে একলা। চুপচাপ, মূর্তির মতো। এবার অর্ণবের মনে ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নগুলো আরো তীব্র হয়। ভাবে যে ও জিজ্ঞাসা করবে মেয়েটাকে যে এভাবে একা বসে আছে কেন? ও কি ট্রেনের অপেক্ষা করছে অর্ণবের মতোই? কিন্তু তাই যদি হয় ওর মুখ চোখ দেখে তো তা মনে হচ্ছে না। 

না থাক জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই। এখনকার দিনের মেয়েদের খুব ভয় পায় অর্ণব। ভালো করতে গিয়ে খারাপ হয়ে যেতে হবে শেষমেষ। তার চেয়ে কি দরকার। হয়তো সত্যিই ট্রেনের জন্য ই অপেক্ষা করছে। নয়তো ওর সাথে কেউ আছে বা কেউ আসবে তার জন্য অপেক্ষা করছে। থাক দরকার নেই জানার। 

পড়ুনঃ- একটি দুঃখের প্রেমের গল্প 

আবার ফোনেই ডুবে যায় অর্ণব। কিন্তু মনটা কেমন জানি খুব অদ্ভুত ভাবেই খচখচ করছে। মেয়েটার মুখচোখ কেমন জানি লাগছে। অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করছে কিন্তু গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা, মেয়েদের দিকে তাকাতে পর্যন্ত বুকে ব্যথা শুরু হয়ে যায় , সেখানে কি জানতে চাইবে! 

মেয়েটা এতক্ষণ সময়ের মধ্যে বহুবার ফোন চেক করছে, যেন কিছু একটা আসার অপেক্ষায় আছে সে। কিন্তু এখনো তা তার কাছে আসেনি। তাই বারবার হাতে রাখা ফোন টা দেখছে আর অসহায়ভাবে চেয়ে দেখছে ট্রেন আসার দিকে।

মেয়েটা কোনো লোকের সাথেই কথা বলছে না শুধু চুপচাপ বসে আছে একলা। 

ঘড়ি দেখে অর্ণব, ন’টা বাজতে যায়। যাত্রীদের ভীড়টা একটু কম হয়ে গেছে এখন।

দুরুদুরু বুক নিয়ে বহুবার ভাবছে অন্তত একটি প্রশ্ন করবে পর মুহুর্তেই নিজেকে নিজে ধমক দিয়ে বলছে, তুই চুপ করে বসতে পারছিস না। অতোই যখন ভয় তখন চুপচাপ নিজের জায়গায় বস, ট্রেন আসবে সময় মতো, উঠে পড়বি। অত ধানাই পানাই করিস না। 

প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার গল্প
প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার গল্প

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মূর্তিমতী মেয়েটাই অর্ণবের দিকে পাশ ফিরে তাকিয়েই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় আগের মতো । অর্ণব এর চোখ দুটো এতোটাও খারাপ হয়নি, ও পুরো দেখতে পেল যে মেয়েটার চোখ ছলছল করছে। 

নাহ, মনটা আর স্থির থাকতে পারছে না। মনে দ্বন্দ্ব চলছে, কথা বলব নাকি বলব না। কিছুতেই কিছু ঠিক করতে পারছে না। 

যাত্রীদের ভীড়টা আরো কমে আসছে রাত বাড়ার সাথে সাথে। 

এমন সময় অর্ণব শুনতে পায় মেয়েটার ফোন বাজছে। মেয়েটা মুহুর্তের মধ্যে আনন্দিত হয়ে ওকে করতে যায় কিন্তু ফোন টা কানে নিতে পরক্ষণেই হাত থেকে ফোন টা নেমে যায় আপনা থেকে। 

মেয়েটার বলা একটা কথাই শুনতে পেল, ও আর কখনোই আসবে না কারণ আমার কাছে ওর কোনোদিনই আসার কথা ছিল না।। 

অর্ণবের কিছুই মাথায় ঢুকছে না। তার মানে কি সত্যি সত্যিই মেয়েটা কারোর জন্য অপেক্ষা করছিল আর সে এতক্ষণ অপেক্ষা করানোর পর জানায় যে সে আসতে পারবে না, একা একা যেতে হবে তার মানে মেয়েটাকে? আশ্চর্য দায়িত্বজ্ঞান হীন অভিভাবক তো মেয়েটার! মনে মনে খুব দোষারোপ করে অর্ণব মেয়েটার অভিভাবক কে।  

“কিন্তু কোনোদিনই আসার কথা ছিল না” এটার মানে কি? অভিভাবক আসতে পারবে না ঠিক তবে মেয়েটা এমন ভাবে বলছে কেন? 

পড়ুনঃ- স্কুল লাইফের প্রেমের গল্প 

অর্ণব নিজেকে মনে মনে বলে, তুই কিছু জিজ্ঞাসা করিস না, মনে মনে সব ভেবে নিজেকেই নিজে উত্তর দিয়ে দে মেয়েটার ব্যাপারে। অপদার্থ একটা! একটা মেয়ের সাথে কথা বলবি তাও প্রেমালাপ এর জন্য নয়, একটা বিপদাপন্ন মেয়ে সম্ভবত, তার কাছে সামান্য জিজ্ঞাসাবাদ,, তাতেও তোর এত ভয়, এত দ্বিধা, এত কম আত্মবিশ্বাস!

অর্ণব বলেই ফেলে, ম্যাডাম, আপনি কি কারোর জন্য অপেক্ষা করছেন? 

মেয়েটা গম্ভীর ভাবে বলে, আপনিও তো অপেক্ষা করছেন, আমি কি আপনার কাছে জানতে চেয়েছি? 

অর্ণব এর খুব ইচ্ছা করে নিজের গালে একটা ঠাস করে চড় মারতে। বারবার যেটা মনে হচ্ছিল ঠিক সেটাই হলো। এখনকার দিনের মেয়েদের সাথে কথা বলাই উচিত নয়। ওরা ছেলেদের সবসময় খালি ওদের পেছনে ঘোরার ধান্দায় থাকা প্রাণী ভাবে। ফালতু, যত্তসব! বৃথা ঝামেলায় জড়ানো। 

এসব ভাবছে হঠাৎ মেয়েটা এবার নরম গলায় বলে ওঠে, আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি আপনাকে ওভাবে বলতে চাইনি। সরি। 

অর্ণব কোনো উত্তর দেয় না আর। 

সময় আরো পেরোচ্ছে , দশটা বাজতে পনেরো মিনিট বাকি, এরপর জংশন ট্রেন তবে বারোটা বাজতে এখনো অনেক দেরি। অর্ণব ঘনঘন ঘড়ি দেখে। বাড়িতে না জানিয়েই যাবে। সারপ্রাইজ দেবে সবাইকে। মনে মনে খুব খুশি লাগছে তাই। 

মেয়েটার দিকে বেশ অনেকক্ষণ খেয়াল করেনি। হঠাৎ দেখে মেয়েটা পাশে আর নেই। কোথায় গেল ও? একা একাই কি চলে গেল? কিন্তু ট্রেন তো আসেনি! আসবে সেই বারোটায় লাস্ট ট্রেন, তাহলে?

অর্ণবও উঠে পড়ে ওর জায়গা ছেড়ে। দশটা বাজতে আর দুই মিনিট বাকি। কিন্তু মেয়েটা গেল কোথায়? এবার কেমন একটা অজানা আতঙ্ক গ্ৰাস করেছে অর্ণব কে। মেয়েটার চোখমুখ প্রথম থেকেই ঠিক লাগছিল না। তারপর ঐ ফোন টা ওকে করার পর থেকে মেয়েটা আরোই উদাস হয়ে গেছিল। না না, মনটা কু গাইছে। 

পড়ুনঃ- বাস্তব শিক্ষণীয় গল্প 

হঠাৎ বিস্ফারিত চোখে দেখে দূরের থ্রু ট্রেনের আলো আর মেয়েটাকে সেই আলোয় দেখা গেল, সকলের চোখের আড়ালে পুরো রেললাইনের ধারে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে।

বিদ্যুৎ গতিতে অর্ণব ছুটে গেল একে ওকে ধাক্কা মেরে।  

নাহ, কিছু কিছু সময়ে মানুষের কার্যক্ষমতা হয়ত স্বাভাবিক এর চেয়ে অনেক টা বেশিই হয়ে যায়। যেমন অর্ণব এর এখন হলো। অর্ণব মেয়েটার হাত হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেয়। 

আর জাস্ট একটুর জন্য মেয়েটার মৃত্যু ওর কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল হু হু করে। 

অর্ণব এর বুক কাঁপছে। হৃৎস্পন্দন এতোটাই তীব্র সেটা মেয়েটার কান অবধি হয়ত কথায় কথায় বলতে গেলে পৌঁছতে পারবে।  

সব ভয়, জড়তা, দ্বিধা কাটিয়ে রেগে মেগে অর্ণব বলে ওঠে, এটা আপনি কি করতে যাচ্ছিলেন! 

মেয়েটার চোখে জল। ও বলে, আত্মহত্যা। 

আপনি জানেন না আত্মাহত্যা মহাপাপ! তাও কেন একাজ করতে যাচ্ছিলেন? 

পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা মানুষের হাত ধরেছিলাম অনেক বিশ্বাস, ভরসা করে। ভালোবেসেছিলাম তাকে। তার পাশে থাকতে গিয়ে গোটা দুনিয়া আমাকে তাদের পাশ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। অথচ আজ আমি যখন আমার গ্ৰাম থেকে বিয়ে ছেড়ে পালিয়ে শহরে এলাম আর সেও আমাকে ঠকিয়ে আমায় ছেড়ে পালিয়ে গেল। আমি এখন কি করব বলতে পারেন, আমার কে রইল! না পরিবার না ভালোবাসা,, ওহ না ওটা ভালোবাসা আমার কাছে হলেও তার কাছে ব্যবহার, প্রয়োজন, টাইম পাস! তাই ভাবলাম জীবনটা রেখে আর কি করবো! 

অর্ণব ভাবতেই পারছে না মেয়েটা কাউকে এতোটাই ভালোবেসেছিল , এতোটাই বিশ্বাস করেছিল যে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে!  

শুধু তাই নয় নিজের বিয়ে ভেঙে এখানে একলা সেই ঠকবাজ ছেলেটার জন্য অপেক্ষা করছিল এতক্ষণ সময় ধরে!!! 

আপনি এমন কাজ করতে পারেন না। জন্ম ভাগ্যের ব্যাপার আর মৃত্যু সময়ের। নির্দিষ্ট সময়ের আগে আমরা যতোই চাই চলে যেতে, কিন্তু কখনোই যেতে পারি না কারণ জন্ম, মৃত্যু কোনোটাই আমাদের হাতে নেই, স্বয়ং ঈশ্বরের হাতে। 

আমরা সেটাই পারি, যেটা আমাদের সাধ্যের মধ্যে আছে। ঈশ্বরের দেওয়া এই জীবন ও মৃত্যুর এই মাঝের সময়টাতে, যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন একসাথে, মিলেমিশে হেসেখেলে বাঁচাটাই উচিত। 

আমি কার সাথে বাঁচব! আমার যে কেউ নেই! চোখ মুছতে মুছতে বলে মেয়েটি। 

অর্ণব আগে মেয়েটিকে নিয়ে সেই সিটটাতে যায় যেখানে ওদের প্রথম দেখা হয়েছিল। নিজের টিফিন বের করে মেয়েটা কে দেয় ও নিজেও খায়। 

মেয়েটা না না করে। কিন্তু অর্ণব এর সব ভয় জড়তা কেটে গেছে। খুব শাসন সূরে বলে, আমি যা বলব চুপচাপ তাই শুনবেন, কোনো কথা বলবেন না। অনেকক্ষণ না খেয়ে আছেন, আগে খেয়ে নিন। আমি রান্না করেছি, খারাপ হলেও চুপচাপ হাসিমুখে খাবেন। 

এতক্ষণ ধরে মেয়েটার গম্ভীর থমথমে, কাঁদোকাঁদো মুখটাতে সত্যিই হাসি আসে অর্ণবের এমন ছেলেমানুষী কথা শুনে। 

অর্ণব ঘড়ি দেখে এগারোটা পনেরো। এখনো এতক্ষণ সময় বাকি আছে কিন্তু এবার বাকি আছে দেখে বিরক্ত লাগে না। ভালোই লাগে, হয়ত প্রিয়ার জন্য ই। ইতিমধ্যে মেয়েটার নাম জেনেছে, প্রিয়া।  নিজের মনকে আর ভালো লাগার কারণ হিসেবে অন্য অজুহাত দেয় না সে। যেটা সত্যি সেটাই মনে মনে ভাবে। 

পড়ুনঃ- এক তরফা প্রেমের গল্প 

আপনি আর কখনো কোনোদিন অমন কাজ করবেন না, কথা দিন আমায়। 

প্রিয়া চুপ করে আছে। 

আপনি সকলের চোখের আড়ালে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলেন। হয়ত সত্যি সত্যিই রাতের  অন্ধকারে আপনাকে কেউ দেখতে পেত না বা যদি কেউ পেতও তাও বাঁচাতো কিনা জানি না ….

আপনি তো বাঁচালেন। প্রিয়া অর্ণবের কথার মাঝখানে শান্ত ভাবে বলে ওঠে। 

অর্ণব প্রিয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সোজাসুজি তাকিয়ে বলে, আপনি আমাকে কথা দিন। 

বেশ দিলাম। আমি আর কখনোই ওরকম করব না। 

অর্ণব একটা হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসে। আর আপনমনে বলে, সত্যিই এই প্রেম বড় মারাত্মক, এর চেয়ে ভালোবাসা ভালো । প্রেমেও প, প্রতারণাতেও প। আর ভালোবাসাতেও ভ, ভালো রাখা তেও ভ। আপন মনে বিড়বিড় করে যুক্তি উপস্থাপন করে সে। 

আপনি তো বারোটার লাস্ট ট্রেন টায় চলে যাবেন। সাবধানে যাবেন। লাস্ট ট্রেন গুলো তো খুব ফাঁকা থাকে। একটু গা ছমছমে ব্যাপার থেকেই যায়। 

আমি না হয় যাবো আর আপনি কি করবেন? 

প্রিয়া চুপ করে কি যেন ভেবে বলে, আমি দেখি, এই গয়নাগুলো বিক্রি করে কোনো ভাড়াবাড়িতে থাকার চেষ্টা করতে পারি কিনা, তারপর কিছু একটা কাজ করব।

তারপর? 

আমার জীবনটাই যেখানে থেমে যাচ্ছিল আজ সেখানে আর তারপর! দেখি কি করা যায়। 

beautiful love story in bengali
beautiful love story in bengali
<

কিচ্ছু করতে হবে না। 

মানে? প্রিয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। 

আপনার অনুমতি থাকুক বা না থাকুক তবুও আপনি আমার সাথে যাবেন। আমি আপনাকে এখানে একা ছেড়ে চলে যেতে পারব না।  

প্রিয়া অর্ণবের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। অর্ণব বলে , আপনি তখন বলছিলেন না , আপনি কার সাথে বাঁচবেন, আপনার কেউ নেই, আমি আছি আপনার পাশে। আপনি চাইলে আমি আপনার পাশে সারাজীবন থাকতে পারি। 

কি বলছেন আপনি! গলা ধরে আসে প্রিয়ার। 

ঠিকই বলছি। আমি আপনার পাশে সারাজীবন থাকব, আপনার কোনো ক্ষতি হতে দেবো না। সব বিপদ থেকে, গোটা পৃথিবীর সমস্ত খারাপ কিছুর থেকে আপনাকে আমি আগলে রাখব। আপনার সমস্ত দায়িত্ব আমি নেবো। 

আপনি অনেক বড় মনের মানুষ তাই এই কথাগুলো আপনার মনে এসেছে। কিন্তু যিনি আমাকে বাঁচালেন তার জীবনে আমি বোঝা হয়ে তার সমস্যা বাড়াতে পারব না। ক্ষমা করুন আমায়। আপনি ভালো থাকবেন। আমি চলি। 

প্রিয়া উঠে চলে যাচ্ছিল তখন অর্ণব বলে, দাঁড়ান। কোথায় যাচ্ছেন? 

এখন আপাতত কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। তবে ঠিক কিছু একটা খুঁজে পাবো। 

পড়ুনঃ- একটি শিক্ষণীয় গল্প 

আমি ভুলে যাবো আপনার অতীত কি ছিল, এবং আপনাকেও ভুলিয়ে দেবো আপনার অতীত। আপনার সমস্ত কষ্ট, সমস্ত গ্লানি, অপমান সবকিছু আমি মুছে দেবো আপনার জীবন থেকে। কোনোদিন আপনার অতীত আপনার দুর্বল জায়গা কে আঘাত করবে না, আমি সেটা হতে দেবো না। আমি আপনাকে ভালো রাখব। 

প্রিয়া অস্ফুটে বলে, কেন করবেন আমার জন্য এতকিছু! আমাকে এসব বলবেন না প্লিজ, আমি আর এসব কথা গুলো সহ্য করতে পারছি না, কষ্ট হচ্ছে খুব ই। 

যার কাছে শুনেছিলেন এই কথাগুলো বা এর থেকেও বেশী কিছু, সে আপনার প্রথম প্রেম। কিন্তু আমি আপনার….. 

থেমে যায় অর্ণব। 

আপনি আমার কি? প্রিয়া অস্থির ভাবে জানতে চায়। 

আমি আপনার প্রথম প্রেম না হতে পারি কিন্তু শেষ ভালবাসা হতে চাই। 

এত বড় দামী কথাটি প্রিয়া আশা তো দূরের কথা কখনো ভাবেওনি। রীতিমত নীরব হয়ে যায় সে‌।

অর্ণব বলে, জানেন তো এখনকার দিনে প্রেম ও মেয়ে সম্পর্কে আমার খুব ভয়। ভীষণ ঘৃণাও বলতে পারেন। কারণ আমি দেখেছি দু’টো ছেলে আর মেয়ের মধ্যে ভালোবাসা নামেই, আসলে ভালবাসার চাইতে প্রেমটাই হয়। কপালে চুমু দিয়ে আশ্বাস নয়, ঠোঁটে চুমু দিয়ে লালসা প্রকাশ থাকে। হাত ধরে, বুকে জড়িয়ে তাকে আগলে রাখা নয়, বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টার জন্য ই সম্পর্ক গুলো গড়ে ওঠা। তাই এতো বিচ্ছেদ, এত কষ্ট গুলো আগে বিচ্ছেদ বা কষ্ট ভাবলেও এখন ছেলেখেলা মনে হয়।

প্রেমিক বা প্রেমিকা হওয়ার আগে একজন ভালোবাসার মানুষ হওয়া প্রয়োজন। তাই আমি সবসময় এসব থেকে দূরে থাকতাম, অপছন্দ করতাম ভীষণ। আর অপেক্ষায় থাকতাম সেই মানুষটার জন্য যে এখনকার দিনের এই বিষাক্ত প্রেমে নয়, চিরকালের পবিত্র ভালোবাসায় বিশ্বাসী। আর সেটা হলেন আপনি। আমি আপনার চোখে ভুল মানুষের জন্য হলেও ভালোবাসা দেখেছি, অপেক্ষা দেখেছি। কিন্তু আপনার পবিত্র ভালবাসা কে আমি আর ভুল মানুষের জন্য হতে দেবো না। 

আপনাকে আমায় ভালোবাসতে হবে না, আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই। আমার সমস্ত সময়ে আপনাকে আমার পাশে চাই। 

কথা বলতে বলতে বারোটা বেজে যায়। অর্ণব প্রিয়ার হাত ধরে বলে, চলুন প্রিয়া, আমার সাথে। আজ এই ট্রেন টাই হোক আমাদের জীবনের প্রথম সফর, প্রথম একসাথে চলা।

সুস্মিতা গোস্বামী

গল্পের চিত্রকলায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও  বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- 

অসম্পূর্ণ প্রেমের গল্প 

একজন অবহেলিত মেয়ের প্রেমের গল্প- অভিমানী প্রেম 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

প্রথম প্রেমের গল্প। প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার গল্প।beautiful love story in bengali

Spread the love

Leave a Reply