চলুন আজ আরেকটি দমফাটা মজার গল্প পড়া যাক। এই নতুন হাসির গল্প সম্পর্কিত আপনার মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না। গল্প লেখা আপনার প্যাশন হয়ে থাকলে অবশ্যই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পাড়েন।

মজার গল্প। এ কেমন গুরুসেবা! ফানি গল্প বাংলাঃ-

অনেকদিন আগের কথা। গ্রামের নাম বাদামপুর। জমিদার বাড়ীতে গুরুদেব এলেন। জমিদার নিজে গুরুদেবের পা ধুইয়ে চরণামৃত পান করলেন। তারপর শুরু হল গুরুদেবের পরম আদর যত্ন!

শেতলপাটির ওপর গোলাপ জল ছিটিয়ে দেওয়া হলো—গুরুদেব তাতে ঘুমিয়ে পড়লেন। চারদিক থেকে চারজন পাখা নিয়ে বাতাস করতে লাগলো। এমনকি জমিদার নিজেও একটি পাখা নিয়ে বাতাস করতে লাগলেন! তারপর বাড়ীর ভেতর থেকে স্বয়ং জমিদার-গিন্নী নিজে দু’গ্লাস ঠাণ্ডা মিছরির শরবত আনলেন। গুরুদেব হাই তুলে উঠে বসে চোঁ চোঁ করে কয়েক টানেই দু’গ্লাস শরবত শেষ করে ফেললেন। তারপর কিছু ফল খেয়ে গুরুদেব মহাশয় জলযোগ করলেন।

নতুন হাসির ও মজার গল্প
নতুন হাসির ও মজার গল্প hasir golpo

দুপুর বেলা গুরুদেব চান করলেন তারও কি ঠেলা কম। লোকজন চাকরবাকরের জমিদার বাড়ীতে অভাব নেই–প্রায় চল্লিশ ঘড়া কুয়োর ঠাণ্ডা জল তোলা হলো। গুরুদেব এসে চত্বরে শ্বেত পাথরের ফলকের ওপর বসলেন—এক এক করে চল্লিশ ঘড়া চল গুরুদেবের মাথায় ঢালা হলো। তারপর আবার দুপুরে আহার ও শীতলপাটিতে শয়ন। হাওয়া করার জন্য সব সময় চারজন লোক পাখা নিয়ে ব্যস্ত। আদর-যত্নে ত্রুটি নেই।

এক বোকা চাষী সেদিন জমিদার বাড়ীতে বেগার খাটতে এসে গুরুসেবার বহর দেখে থ’ হয়ে গেলো। চাষী জমিদার বাড়ী থেকে নিজের বাড়ী ফিরে এসে বউ আর তিন ভাইদের ডেকে বলল—জমিদার বাড়ীতে দেখে এলুম গুরুসেবা কাকে বলে। গুরুসেবা করতে হলে শেতলপাটি চাই, চল্লিশ ঘড়া জল চাই, শরবত চাই–সে এক এলাহি কাণ্ড!

চাষীর বউ বললে–এবার আমাদের গুরুদেব এলে আমরাও ঐরকম সেবা করব। শেতলপাটি কেনা কষ্টকর নয়। চল্লিশটা অবশ্য পেতলের ঘড়া আমাদের নেই, তবে চল্লিশটা মাটির কলসী আমরা কয়েক মাসে নিশ্চয়ই জোগাড় করতে পারব।

চাষী বউয়ের কথা শুনে চাষী আনন্দে বললে–ঠিক কথা বলেছো। আমরাও আমাদের গুরুদেবকে জমিদার বাড়ীর গুরুদেবের মতোই সেবা করব। আমাদের চাকর-বাকর না থাক আমরা তো চার ভাই রয়েছি। পালা করে দু’ভাই হাত পাখা করতে নিশ্চয়ই পারব। আর এখন থেকে কিছু কিছু করে টাকা জমালে চল্লিশটা মাটির কলসীও নিশ্চয় কিনতে পারবো।

একদিন চাষী হাটে গিয়ে হাট থেকে ভাল দেখে একটা শেতলপাটিও কিনে আনলে। পাটিটা বউকে দিয়ে বললে– পাটিটা তুলে রাখো, গুরুদেব যখন আসবে তখন গুরুসেবায় লাগান হবে। চাষী-বউ বললে–গুরুসেবা করা খুব ভালো। আমরা তো ভগবানকে দেখতে পাই না, গুরুই আমাদের কাছে ভগবান। গুরুসেবায় আমাদের ত্রুটি হয় বলেই আমরা আজও গরীব, জমিদারের সেবায় ত্রুটি নেই বলেই জমিদারদের জমিদারী আরো বেড়ে গেছে। আমরাও এবার আমাদের সাধ্যমত গুরুসেবা করব। যাতে গুরুদেবের যত্নের কোন ত্রুটি না হয়।।

চাষী-বউ চাষীর হাত থেকে শেতলপাটি নিয়ে ঘরের এক কোণে রাখলে। তারপর আর একদিন চাষী আর তিন ভাই মিলে কুমোরের কাছ থেকে চল্লিশটা মাটির কলসী কিনে এনে ঘরের দাওয়ায় জমা করে রাখলে। চাষী চাষী-বউকে বললে—সব ব্যবস্থাই হলো; কিন্তু গুরুদেব যে আসছেন না! চাষী-বউ বললে—গতবার ওনার সেবা-যত্নের ত্রুটি হয়েছে বলে, উনি বোধ হয় আমাদের ওপর রাগ করেছেন। অবশ্য তিনি আসার এখনও সময় যায়নি, তুমি আর দু’টো মাস অপেক্ষা করে আমাদের গুরুদেবকে আসতে চিঠি লিখে দাও।

চাষী বউয়ের কথামতো দু’মাস অপেক্ষা করল, কিন্তু তবু গুরুদেব এলেন না। তখন চাষী জমিদারের গোমস্তাকে ধরে গুরুবাড়ীতে একটা চিঠি লিখে পাঠালে—-

” শ্রীশ্রীগুরুদেব—আপনি একবার দয়া করিয়া গরীবের বাড়ীতে পায়ের ধুলা দিন। এবার আর আপনার আদর-যত্নের কোন ত্রুটি হইবে না। সব ব্যবস্থা পূর্ব হইতেই করিয়া রাখিয়াছি। এবার ফসলও বেশ ভালো হইয়াছে—অতএব আপনাকে দক্ষিণাও দিব। গতবার ফসল ভালো না হওয়ায় আপনার দক্ষিণাও দিতে পারি নাই—–তেমন আদর-যত্নও করিতে পারি নাই।

অধীনের শতকোটি প্রণাম গ্রহণ করিবেন।”

ইতি—

গলদা মণ্ডল

বাদামপুর।

গলদা মণ্ডলের গুরু নাড়ুগোপাল গোঁসাই শিষ্যের চিঠি পেয়ে একেবারে নেচে উঠলেন। গিন্নীও মুখ ঝামটা দিয়ে বললে—ঘরে চাল-ডাল বাড়ন্ত। পুরুতগিরি করে খাবে তারও উপায় নেই—মন্ত্ৰতন্ত্র কিছুই শেখেনি। সেবার এক জায়গায় সরস্বতী পুজো করতে গিয়ে ঠেঙানি খেয়ে ফিরে এসেছো। একমাত্র আছে তো গুরুগিরি। তা শিষ্য যখন এতো কাকুতি-মিনতি করে চিঠি দিয়েছে তখন অতো গোমর কেন? একবার বাদামপুর থেকে ঘুরেই এসো!

mojar golpo Bangla  
mojar golpo bangla hasir golpo হাসির গল্প বাংলা ফানি গল্প বাংলা মজার গল্প
ফানি গল্প বাংলা mojar golpo bangla image

নাড়ুগোপাল গোঁসাই আর কি করেন? এদিকে স্ত্রীর হুকুম। তাছাড়া শিষ্যের চিঠিতে মোটা দক্ষিণার প্রলোভন। অতএব চিঠি পাওয়ার পরদিন নাড়ুগোপাল গোঁসাই বাদামপুরের শিষ্যবাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। তা মাত্র চার ক্রোশ পথ। মাঘ মাসের দিন। রৌদ্রের কষ্ট নেই।

দুপুরের কিছু আগে নাড়ুগোপাল গোঁসাই শিষাবাড়ীতে এসে পৌঁছুলেন। গুরুকে দেখে চাষী আর তার বউয়ের আনন্দ আর ধরে না। সেবার সব ব্যবস্থা কয়েক মাস আগে থেকেই করা আছে। শেতলপাটিও কেনা আছে, আর গুরুদেবের স্নান করার জলের জন্য চল্লিশটা মাটির কলসীও আগে থেকেই যোগাড় করা আছে। এবার আর গুরুসেবার কোন ত্রুটি হবে না।

প্রথমেই গুরুদেবের হাত-পা ধুইয়ে দেওয়া হলো। চাষী তার বউ আর তিন ভাই চরণামৃতও খেলো।

তারপর চাষী দাওয়ায় সেই শেতলপাটি বিছিয়ে দিলে। কিন্তু গোলাপজল পারে কোথায়? গোলাপ জলের অভাব পূরণ করলে এদৌ পুকুরের জল। চাষী শেতলপাটির ওপর কিছু এঁদো পুকুরের জল ছিটিয়ে দিলো। তারপর গুরুদেবকে বিশ্রাম করতে বললে।

গুরুদেব শীতের দিনে মোটা দক্ষিণার লোভে জল-ছেটানো শেতলপাটিতেই গড়াতে লাগলেন। শুধু কি তাই? চাষীর দু’ভাই আবার দু’দিক থেকে দুটো বড় হাতপাখা নিয়ে বাতাস করতে লাগলো।

নাড়ুগোপাল গোঁসাই শীতের দিনে অতো ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পেরে চোখ কপালে তুলে চাষীকে ডেকে বললেন—এসব কী ব্যাপার, গলদা?

চাষী কাঁচুমাচু হয়ে হাত জোড় করে বললে— গুরুদেব, এ আর তেমন কি?

আমাদের জমিদারবাবু যেমন করে গুরুসেবা করেছেন, আমি এবার তেমন করে গুরুসেবা করতে চাই। কোনো ত্রুটি রাখব না। সেবায় আপনি বাধা দেবেন না, গুরুদের। নাড়ুগোপাল গোঁসাই কি আর করেন? মুখ গোমড়া করে চাদর মুড়ি দিয়ে কাঁপতে লাগলেন।

চাষী নিজেও আর একটা বড় হাতপাখা নিয়ে বাতাস করতে লাগল। একে মাঘ মাসের প্রথম দিক, তার ওপর গুরুসেবার এ-রকম বহর দেখে নাড়ুগোপাল গোঁসাইয়ের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। ঘরের ভেতরে তিনটে জোয়ান মরদের পাখার বাতাস ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝড় তুলল। তারপর আবার চাষী-বউ দু’গ্লাস ভর্তি মিছরির ঠাণ্ডা শরবত নিয়ে এলো।

গুরুদেব জিজ্ঞেস করলেন— ওটা আবার কি?

চাষী মিষ্টি হেসে বললে– ঠাণ্ডা মিছরির শরবত, জমিদারবাবুও ওনার গুরুদেবকে দু’গ্লাস ঠাণ্ডা মিছরি শরবত খাইয়েছিলেন। আমিও সে ব্যবস্থা করেছি। কোনো দিক থেকে কোন ত্রুটি রাখিনি গুরুদেব।

নাড়ুগোপাল গোঁসাই কি আর করেন? ঠাণ্ডার দিনেও ঠাণ্ডা শরবতের গ্লাস চুমুক দিতে হলো। একটা গ্লাসে একটু চুমুক দিয়েই নাড়ুগোপাল গোঁসাই শরবতের গ্লাসটা নামিয়ে রাখলেন। আর একটা গ্লাস তখনও ছোঁননি।

চাষী বললে–গুরুদেব, ওটি হবে না। দু’গ্লাস শরবতই আপনাকে খেতে হবে। চাষীর দু’ভাই নাড়ুগোপালকে দু’দিক থেকে জাপ্টে ধরল আর চাষী দু’গ্লাস শরবতই একরকম জোর করে নাড়ুগোপালের মুখে দিয়ে গলায় গলিয়ে দিলো। গুরুদেব কাঁপতে লাগলেন, চাষী আর তিন ভাই মিলে হাতপাখার জোর বাতাস করতে লাগল।

চাষী বললে—অপরাধ নেবেন না, গুরুদেব। আমি আপনার আদর-যত্নের কোন ত্রুটি রাখতে চাই না। জমিদারের গুরুদেব ঠিক পাক্কা দু’গ্লাস শরবত খেয়েছিলেন। তাই আমিও আপনাকে পাক্কা দু’গ্লাস শরবত খাইয়ে দিলুম। হতে পারে ওনারা জমিদার, কিন্তু গুরুভক্তিতে বা গুরুসেবায় আমরাও কম কিসে? তাছাড়া আপনি যখন কাল বিকালে যাবেন, তখন গুরুদক্ষিণাটাও নিয়ে যাবেন। টাকা পায়ের উপর রেখে আমরা স্বামী-স্ত্রী গলবস্ত্র হয়ে প্রণাম করব।

পড়ুনঃ- 21 টি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তু

নতুন অনুপ্রেরণা মূলক গল্প

 জমিদার তাঁর গুরুদেবকে পঁচিশ টাকা প্রণামী দিয়েছিলেন, আমি নায়েব পঞ্চয়েতকে জিজ্ঞেস করে সঠিক জেনে নিয়েছি, তাই আমিও ধান বিক্রী করে আপনাকে দক্ষিণা দেওয়ার জন্য পঁচিশ টাকা আলাদা করে রেখেছি। কাল আপনার যাবার সময় দক্ষিণা দিয়ে প্রণাম করব। ওনারা জমিদার হতে পারেন, কিন্তু গুরুসেবায় প্রজা হয়ে আমরাও কম যাই না।

পঁচিশ টাকা প্রণামী কথা শুনে নাড়ুগোপাল গোঁসাই তবু একটু আশ্বস্থ হলেন। কিছুক্ষণ পর চাষী-বউ এসে বললে-গুরুদেবের চানের ব্যবস্থা করে রেখেছি। চাষী একখানা নূতন গামছা গুরুদেবের হাতে দিয়ে বললে–চলুন, চানের ব্যবস্থা সব ঠিক করে রাখা হয়েছে। বেলাও হয়ে গেছে। নাড়ুগোপাল গোঁসাই নতুন গামছাখানা গলায় জড়িয়ে বললেন—গলদা, শরীরটা আজ বেজায় খারাপ, ভাবছি, চান করব না।

চাষী বললে—তা কি হয় গুরুদেব? চানের ব্যবস্থা অনেক দিন থেকেই পাকাপাকি করে রেখেছি। চাষী ভাইরাও বললে—তা কি হয় শুরুদেব? চান আপনাকে করতেই হবে।

অতএব নাড়ুগোপাল গোঁসাইকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চান করবার জন্য উঠোনে যেতে হলো। কিন্তু চান করবার অতো পেল্লায় ব্যাপার জানলে নাড়ুগোপাল গোঁসাই কিছুতেই চান করতে উঠতেন না, শেতলপাটি আঁকড়ে ধরে বসে থাকতেন।

নাড়ুগোপাল গোঁসাই সার বেঁধে রাখা চল্লিশটা মাটির কলসী দেখে আঁৎকে উঠলেন—এতো কলসী কেন? চাষী বললে–এতো আর কোথায় গুরুদেব, জমিদার বাড়ীতে চল্লিশটা পেতলের বড় বড় ঘড়া ছিলো। আমরা গরীব, তাই মাটির কলসীর ব্যবস্থা করেছি গুরুদেব।

উঠোনের মাঝখানে একটা আসনে গুরুদেবকে বসানো হলো। প্রথম কলসী জল ঢালতেই গুরুদেব কাঁপতে কাঁপতে উঠে পড়লেন—আর আমার চানের দরকার নেই।

চাষী বললে—তা কি হয় গুরুদেব? নাড়ুগোপালের মেজাজ বিগড়ে গেলো, একটু রুক্ষ মেজাজেই বললেন— আমি আজ চান করব না। চাষী গলবস্ত্র হয়ে বললে—তা কি কখনও হয় গুরুদেব। আপনার চানের জন্যেই চল্লিশ কলসী জল দূরের পুকুর থেকে আমরা চার ভাই বয়ে এনেছি। অতএব চাষীরা দু’ভাই গুরুদেবকে জাপ্টে আসনের উপর বসাল, আর এক ভাই কলসীর জল ঢালতে লাগল। একরকম জোর করে নাড়ুগোপালের মাথায় চল্লিশ কলসী জল ঢালা হলো।

নাড়ুগোপাল গোঁসাই চল্লিশ কলসী জল ঢালার আগেই—চোখ কপালে তুলে চান করতে করতেই অচৈতন্য হয়ে পড়ে গেলেন। চাষী বউ বললে—আমাদের গুরুদেবের তো কোনো জমিদার শিষ্য নেই—অতএব জমিদার বাড়ীর মতো গুরুসেবা কি করে সহ্য করবেন?

চার ভাই মিলে ধরাধরি করে আবার গুরুদেবকে শেতলপাটির ওপর শুইয়ে দিল। কিছুক্ষণ পরেই দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা। গুরুদেবকে শেতলপাটির ওপর শুইয়ে রেখে চার ভাই মিলে পুকুরে চান করতে গেলো। চাষী-বউ রান্নাঘরে গুরুদেবের খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত।

হঠাৎ নাড়ুগোপাল গোঁসাইয়ের চৈতন্য ফিরে এলো। আর্শীতে নিজের মুখ দেখে নাড়ুগোপাল গোঁসাই আঁৎকে উঠলেন। চোখ দু’টো ভাঁটার মতো লাল। চল্লিশ কলসী জল ঢালার ফলে তখনও কাঁপুনি যায়নি।

ফানি গল্প বাংলা 
mojar golpo bangla hasir golpo হাসির গল্প বাংলা ফানি গল্প বাংলা মজার গল্প
মজার গল্প ফানি গল্প বাংলা mojar golpo bangla
<

নাড়ুগোপাল চারিদিকে একবার চাইলেন, দেখলেন কেউ নেই। ভাবলেন, দক্ষিণার লোভে কাল পর্যন্ত থাকতে গেলে তার আগেই পটল তুলতে হবে। রাতেও এই শেতলপাটিতে শুতে হবে, তারপর আবার চার ভাইয়ের হাত-পাখার হাওয়া। আগামী কাল আবার চল্লিশ কলসী জলে চান।

নাড়ুগোপাল আর ভাবতে পারলেন না। না, এক্ষুনি পালাতে হবে। দক্ষিণার মায়া করলে চলবে না। দুপুরের ভোজন? বরবাদ হোক। জীবনে বেঁচে থাকলে অনেক খাওয়া আর দক্ষিণা পাওয়া যাবে। নাড়ুগোপালের শিষ্যসংখ্যা মোটামুটি কম নয়। নাড়ুগোপাল একবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখলেন—–না, কেউ নেই। ওরা চার ভাই মিলে চান করতে গেছে। চাষী বউ রান্নার ব্যাপারে রান্নাঘরে ব্যস্ত। এই সুযোগ! নাড়ুগোপাল সামনের দরজার খিল খুলে—পোঁটলা-পুঁটলী নিয়ে ভোঁ দৌড় মারলেন।

দৌড়াতে দৌড়াতে বিকেলবেলা নাড়ুগোপাল গোঁসাই নিজের বাড়ীতে পৌঁছে গেলেন। গোঁসাই-গিন্নী ঘর ঝাঁট দিচ্ছিলেন, নাড়ুগোপালকে হস্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে ঝাঁটা তুলে জিজ্ঞেস করলেন—শিষ্য বাড়ী থেকে এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলে কেন?

নাড়ুগোপাল সবিস্তারে শিষ্যের গুরুসেবার বর্ণনা দিয়ে গিন্নিকে বললে–বেঁচে থাকলে অনেক দক্ষিণা পাব। আর একদিন গলদার বাড়ীতে থাকলে আমাকে বেঁচে ফিরে আসতে হতো না। নাড়ুগোপাল গোঁসাই হাত-পা না ধুয়েই কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন।

গোঁসাই-গিন্নী গোঁসাইয়ের গায়ে হাত দিয়ে দেখলেন, জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। গোঁসাই-গিন্নী নাড়ুগোপালকে জিজ্ঞেস করলেন—হ্যাগা, গলদাটা এরকম গুরুমারা বিদ্যে শিখলে কোত্থেকে গো?

নাড়ুগোপাল গোঁসাই জ্বরের ঘোরে বললেন—ওদের জমিদার বাড়ী থেকে। এদিকে গলদা চাষী আর তিন ভাই ঘরে এসে দেখলে গুরুদেব নেই। চাষী বউকে জিজ্ঞেস করলে–বউ, গুরুদেব কোথায় ? চাষী বউ বললে—আমি কি করে বলব? আমি তো রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিলাম। চাষী জমিদারের গোমস্তাকে সব কথা খুলে বলল।

হাসির গল্প বাংলা
মজার গল্প হাসির গল্প বাংলা mojar golpo bangla

গোমস্তা বললে—তা তোর গুরুদের পালিয়ে যাবে না? শীতের দিনে কেউ শীতলপাটিতে শুতে দেয়, না চল্লিশ কলসী জল নিয়ে স্নান করায় ? জমিদার গুরুসেবা করেছিলেন গরমকালে, তাই শেতলপাটি আর চল্লিশ কলসী জলে স্নানের ব্যবস্থা ছিলো। আর তোর গুরুদেব এলো শীতকালে তাঁর সেবা কি সমান ব্যবস্থা কখনও হয়? তোর গুরুদেব পালিয়ে বেঁচেছে।

চাষী জিভে কামড় দিয়ে বললে—তাইতো বড্ড ভুল হয়ে গেছে। ওটা ছিলো গরমকাল। আর এটা শীতকাল। গুরুদেবের ওপর ভুল করে অত্যাচারই করে ফেল্লুম! ছি, ছি।

পড়ুনঃ- স্বামী স্ত্রীর মজার জোকস।


আমাদের সাথে কিভাবে অংশগ্রহণ করবেন, সেই সম্পর্কিত বিস্তারিত ভিডিও এই পেজের একটু নীচে রয়েছে। চাইলে দেখে নিতে পাড়েন।

mojar golpo bangla hasir golpo হাসির গল্প বাংলা ফানি গল্প বাংলা মজার গল্প mojar golpo bangla

Spread the love

Leave a Reply