আজ আমরা দুটি নৈতিক শিক্ষামূলক ছোট গল্প পড়তে চলেছি। অসাধারণ এই জ্ঞানমূলক গল্প দুটি থেকে আপনি শিক্ষণীয় অনেক কিছুই জানতে পাড়বেন। এই মজার শিক্ষণীয় ছোট গল্প গুলি তোমাদের কেমন লেগেছে তা অবশ্যই জানাবে।

নৈতিক শিক্ষামূলক ছোট গল্পঃ-

জ্ঞানমূলক গল্প-০১

অনেক দিন আগের কথা ভারত তখনও স্বাধীন হয়নি। বিলাশপুর গ্রামে তখন বেজায় অভাব। আবার এদিকে বাড়ির বাচ্চাদের দুধ জোগাড় করা তো দূরের কথা, দুইবেলার খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে গ্রামের মানুষদের। এই গ্রামেরই দুই বন্ধু সুরেশ আর নরেশ। ছোট থেকেই একই সাথে বড় হয়েছে তারা। কিন্তু সুরেশের বদ-অভ্যেস হল সে একটুতেই রেগে যায়।

গ্রামে অভাব থাকায়, দুই বন্ধু ঠিক করে, তাদের গ্রাম থেকে কয়েক যোজন দূরের শহরটিতে কাজের খোঁজ করবে। কথা মোতাবেক পরেরদিন ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই তারা দুই জনই বেড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে পোঁটলা-পুঁটলি বেঁধে নিয়েছে তারা। তাতে রয়েছে, মায়ের দেওয়া গুটি কয়েক মুড়ির নাড়ু, জল আর দু-একটা জামা-কাপড়। 

নৈতিক শিক্ষামূলক ছোট গল্প জ্ঞানমূলক গল্প শিক্ষণীয় ছোট গল্প।
নৈতিক শিক্ষামূলক ছোট গল্প

রাস্তা যেন, শেষই হয়না। হন্যে হয়ে তারা হাঁটতে থাকে। অবশেষে তাদের শক্তি ফুরিয়ে আসে। তারা ঠিক করে তারা বিশ্রাম নিবে। এরপর তারা একটা বড় বট গাছের ছায়ায় বসে সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে, এরপর খাবার খায়। নরেশ একটু অনুমান করে বলল, এখানে থেকে শহর হয়ত আর মাত্র তিন যোজন দূরে। কিন্তু সুরেশ সেকথা মানতে নারাজ। তারমতে শহর সেখান থেকে কম করে হলেও পাঁচ যোজন দূরে রয়েছে। এই সাধারণ কথা নিয়েই তাদের মধ্যে দন্দ বেঁধে যায়।

সুরেশ হঠাৎ ই কথায় কথায় তার বন্ধু নরেশের গালে জোড়ে একটা চড় বসিয়ে দেয়। কিন্তু নরেশ অনেক শান্ত ছিল, তার মধ্যে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার অদ্ভুত রকমের ক্ষমতা ছিল। সে সুরেশকে এর বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ জানায়নি। এর পরিবর্তে পড়ে থাকা একটা ডাল দিয়ে সে, মাটিতে বড় বড় করে লিখে— আমার সবথেকে  কাছের এবং প্রানের বন্ধু আজ আমাকে থাপ্পড় মেরেছে।

এরপর কেউই আর কারও সাথে কথা বলে না। চুপচাপ চলতে থাকে। নরেশ আগে-আগে আর তার পিছনে পিছনে সুরেশ। নরেশের থেকে সুরেশ অনেক রাগী তাই সে মুখ গোমড়া করে চলছে। যদিও নরেশ, সুরেশের দিকে দেখছে, কিন্তু সুরেশ কিছুতেই নরেশের দিকে দেখছে না।

এরপর তাদের একটি নদী পার হয়ে যেতে হবে। নদীর জল অনেক কম, তাই নরেশ প্রথমে নদীতে নামে। নদীতে নামতেই সে বালিয়াড়ির মধ্যে ডুবে যেতে থাকে। সে প্রাণ বাঁচানোর জন্য চিৎকার করতে থাকে। এটি দেখে মুখ-গোমড়া করে থাকা নরেশ ছুটে আসে এবং হাত বাড়িয়ে তার বন্ধুকে বালিয়াড়ি থেকে টেনে তুলে। এরপর দুইজনে সাবধানে নদী পার হয়ে যায়। এরপর নরেশ রাস্তায় একটি পাথর নিয়ে কাছের একটি দেওয়ালে ঘষে ঘষে লিখে— আমার সবথেকে কাছের এবং প্রানের বন্ধু আজ আমার জীবন বাঁচিয়েছে।

নরেশের এই সব কাজ দেখে সুরেশ আর কিছুতেই চুপ থাকতে পাড়ল না। সে নরেশকে জিজ্ঞাসা করল- “আমি যখন রেগে গিয়ে তোমাকে থাপ্পড় মারলাম তখন তুমি গাছের ডাল দিয়ে মাটিতে লিখলে আর এখন তোমার জীবন বাঁচালাম তো তুমি একটি দেওয়াল দেখতে পেয়ে একটি পাথর জোগাড় করে সেখানে আমার সাহায্য করার কথা লিখলে, তুমি তো নদীর পাড়ে সেখানেই মাটিতে লিখতে পাড়তে, তাহলে এখানে লিখলে কেন?”

অসাধারন শিক্ষামূলক গল্প নৈতিক শিক্ষামূলক ছোট গল্প
অসাধারন শিক্ষামূলক গল্প image

এরপর নরেশ বলল- “আসলে বন্ধু, ব্যাপারটা হল যে, যে ব্যক্তি আমাদের আঘাত করে, তার সেই আঘাত আমাদের মনে পুষে রাখলে চলবে না, আর এই জন্যই তুমি যখন আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলে তখন আমি মাটিতে ডাল দিয়ে লিখেছিলাম। কারণ কিছুক্ষণ পড়েই সেই মাটির লেখাটি হাওয়াতে মুছে যাবে বা তার উপর মাটি এসে পড়ে সেটি মুছে যাবে। কিন্তু যখন আমাদের কেউ সাহায্য করে, তখন তার সাহায্য আমাদের মনের ভিতর এমন ভাবে বসিয়ে নেওয়া উচিত, যেন আমাদের মনের ভিতর তাকে একটা জায়গা করে দিয়েছি। আর সেই জন্যই আমি, পাথর দিয়ে দেওয়ালে লিখেছি, কারণ এই লেখা সহজে মিশে যাবে না।“

নরেশের জবাব শুনে সুরেশ নরেশের কাছে এসে, বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে, এরপর দুই বন্ধু সূর্যাস্তের লাল আবিরের ছায়ায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

পড়ুনঃ- শিক্ষণীয় মোটিভেশনাল গল্প

জ্ঞানমূলক গল্পঃ- ০২

অনেক অনেক কাল আগের কথা। তখন বর্তমান দিনের মত, এত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। তখন ছিল গুরুকুল। গুরু গৃহে শিষ্যরা যেত, সেখানেই তাদের পড়াশোনা, খাওয়া, ঘুম সব। এভাবে কয়েকটা বছর পড়, গুরুগৃহ থেকে শিক্ষা লাভ সম্পূর্ণ হওয়ার পড়, গুরু প্রত্যেক শিষ্যের জ্ঞানের পরীক্ষা করতেন।

এরকমই একটি গুরুকুলের নাম হল- পার্থসারথি গুরুকুল। শিষ্যরা তাদের পাঠ সম্পূর্ণ করেছে। এবার গুরু তাদের পরীক্ষা করবেন। এরপর গুরু তাদের প্রত্যেককে উপদেশ প্রদান করবেন। গুরু সব শিষ্যদের একটি লাইনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পড়তে বললেন। শিষ্যরা  সবাই দাঁড়িয়ে পড়ল। এরপর গুরুজি তিনটি কাঠের খেলনা পুতুল হাঁতে নিলেন এবং শিষ্যদের বললেন- “তোমাদের এই তিনটি খেলনার মধ্যে পার্থক্য কোথায় তা খুঁজে বেড় করতে হবে।“

এই তিনটি খেলনার পুতুলের আকার আয়তন একই এমনকি সব পুতুল গুলি দেখতেও একই রকমের। এদের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বেড় করা অনেক মুশকিল। সব শিষ্যরা খুব ধ্যান দিয়ে খেলনা গুলি দেখতে লাগল। সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে খেলনা গুলিকে দেখছে, কারো মুখে টু শব্দ টুকুও নেই। কারণ গুরু যখন নির্দেশ দিয়েছেন, তখন তা পালন করতেই হবে।

হঠাৎই শিষ্যদের মধ্য থেকে একজন বলল- “আরে এই খেলনা পুতুলগুলির কানের দিকে সবাই লক্ষ্য করো, পুতুল গুলির কানের ছিদ্র গুলি আলাদা আলাদা। এরপর সেই শিষ্যটি গুরুকে বলল- “গুরুদেব এই কাঠের পুতুল গুলিতে কানের ছিদ্রের পার্থক্য রয়েছে। প্রথম টির দুটি কানেই ছিদ্র আছে। দ্বিতীয়টির একটি কানে ছিদ্র আছে আর একটি ছিদ্র রয়েছে এর মুখে। আর তৃতীয় কাঠের পুতুলটির কেবলমাত্র একটি কানেই আমি ছিদ্র দেখতে পাচ্ছি। এর অপর কানে ছিদ্র নেই, এমনকি এর মুখেও কোনো ছিদ্র নেই।“

গুরুদেব, সেই শিষ্যটিকে কাছে ডেকে বললেন- “একদম ঠিক বলেছ বৎস। এবার এই তার টিকে প্রত্যেকটি পুতুলের ছিদ্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দাও।“ এরপর সেই শিষ্যটি গুরুদেবের হাত থেকে তার নিয়ে পুতুল গুলির ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিল।

এরপর গুরুদেব বলতে শুরু করলেন- “দেখ বৎসগণ, এর মাধ্যমে আমরা কি শিক্ষা পাই- তোমরা জীবনে চলার পথে তিন ধরনের মানুষের সম্মুখীন হবে। প্রথম ধরনের মানুষেরা প্রথম পুতুলটির মত হবে। প্রথম পুতুলটির যেমন দুটি কানেই ছিদ্র রয়েছে তেমনই তারাও তোমার কথা এক কান দিয়ে শুনবে আর অপর কান দিয়ে বাইরে বেড় করে দিবে। এই ধরনের মানুষদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।

আর দ্বিতীয় ধরনের মানুষেরা হবে দ্বিতীয় পুতুলটির মত। অর্থাৎ তারা তোমার থেকে তোমার সব কথা এমনকি গোপন কথাও শুনবে আর তাদের মুখ দিয়ে বেড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ তারা তোমার কথা অপর জনকে বলে বেড়াবে। এই ধরনের মানুষদের থেকেও তোমাদের সাবধান থাকতে হবে।

অবশেষে তৃতীয় ধরনের মানুষেরা হবে তৃতীয় পুতুলটির মত। অর্থাৎ কেবলমাত্র একটি কানে ছিদ্র থাকবে। এরা তোমার কথা শুনবে ঠিকই কিন্তু এরা কখনোই তোমার কথা অন্য কাউকে বলে বেড়াবে না। বা তোমার গোপন কথা পাঁচকান করবে না। আর এরাই হল জীবনের একমাত্র ব্যক্তি যাদের বিশ্বাস করা যায়। জীবনে চলার পথে এদেরই বড্ড প্রয়োজন। এদের কাছে তোমরা সঠিক সিদ্ধান্ত পেতে পাড়, সঠিক বিচার পেতে পারো। জীবন থেকে কখনোই এদের দূরে সরিয়ে দিবে না।

আর এত বছরে তোমরা যা শিক্ষা অর্জন করেছো, তা দিয়ে তোমরা আরামেই কোন মানুষ কি প্রকারের তা বুঝে নিতে পাড়বে। যেহেতু আমাদের চারপাশে মানুষ দিয়েই পরিপূর্ণ তাই সবার প্রথমে আমাদের মানুষ চিনতে হবে। মানুষ না চিনলে আমরা কিছুতেই শান্তিতে বা সুখে থাকতে পাড়ব না।“

BENGALI MOTIVATIONAL STORY শিক্ষণীয় ছোট গল্প
BENGALI MOTIVATIONAL STORY শিক্ষণীয় ছোট গল্প image
<

তো বন্ধুগণ তোমাদের জীবনের সেই তৃতীয় পুতুলটির মত মানুষের সন্ধান কি এখনও পেয়েছো। যদি পেয়ে থাকো, অবশ্যই তাকে কমেন্ট বক্সে Mention করে দিও। ভালো থেকো বন্ধু। আর ভালো রেখো সবাইকে।

আর হ্যাঁ যেতে যেতে আরেকটি কথা জানিয়ে রাখি। তোমাদের মধ্যে অনেকেই আমাদের সাথে গল্প লেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলে। তোমাদের কথা মাথায় রেখেই এখন তোমাদের সহজেই account তৈরি করে sign-in করার ব্যবস্থা করা আছে। আর বিস্তারিত জানার জন্য এই পেজেরই একটু নীচে ভিডিওর লিঙ্ক পেয়ে যাবে।

All copyright reserved to ADMIN of charpatra.com. Without any permission, it is offense to use any part or content of this website. LEGAL ACTION will be taken, against the people who disobeying the rules and regulation, under DMCA act.

নৈতিক শিক্ষামূলক ছোট গল্প। জ্ঞানমূলক গল্প। অসাধারন শিক্ষামূলক গল্প।

Spread the love

Leave a Reply