আজকের নিশি রাতের ভৌতিক গল্প টির কেন্দ্রে রয়েছে এক রহস্যময় নারী। রাস্তায় লেখকের সাথে তার পরিচয়, এরপরের ঘটনা ক্রম জানতে হলে অবশ্যই গল্পটিকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
ভৌতিক গল্পঃ- ‘রহস্যময়ী নারী’
শীতকাল শেষে সবেমাত্র বসন্তের আগমন হয়েছে। আমার বন্ধু সুনীল থাকে কলকাতায়।বন্ধুর বউ সুনয়না, আমি তাকে বৌদি বলেই ডাকি। বৌদি প্রায় সময়ই ফোনে একেবারে কানটা ঝালাফালা করে দেয় কলকাতায় আসার জন্য। পড়াশুনা চলাকালীন অনার্স একসাথেই আমরা CU থেকে পাশ করি। বন্ধু সুনীল অন্য ডিপার্টমেন্ট এ থাকলেও আমার এই বান্ধবিটার সাথে চুটিয়ে প্রেম করেছে চার বছর। পরে ফলশ্রুতিতে বিয়ে। এখন চাকুরীর সুবাদে দুজনেই কলকাতায়। অবশ্য আমি এখনও বিয়ে করিনি। তবে অতি শীঘ্রই হয়তো ফাঁন্দে পড়তে হতে পারে। কারন আমিও মনে মনে একজনকে খুঁজছি। যাকগে সেসব কথা।
বন্ধু সুনীল আর বান্ধবী বৌদির প্যান প্যানানির জন্য অফিস থেকে কিছুদিনের ছুটি নিলাম। ফোনে ওদেরকে বললাম আমি আগামীকালই কলকাতা যাচ্ছি। যাক প্ল্যান মত সব ঠিকঠাক করে গুছিয়ে নিলাম। ভাবলাম রাতেই রওনা হবো। কারন দিনের বেলা কলকাতার সেই ট্র্যাফিক জ্যামে বসে বসে আঙ্গুল কামড়ানো আমার একদম পছন্দ নয়।
ড্রাইভারকে ঠিকঠাক ভাবে বলে দিলাম, আমি আজ রাতেই কলকাতা রওনা হচ্ছি। সন্ধ্যায় খাবার খাওয়ার পর মা আমাকে যথারিতী সাবধানতার উপদেশ বানী দিতে লাগলো। সাথে একটা মাদুলীও দিল। আমিতো ওটা দেখে অবাক হয়ে গেছি। মা, তুমিনা সেই আগের মানুষই রয়ে গেলে। এসব তাবিজ কবজকে কি কেও এখন বিশ্বাস করে। মায়ের সোজা জবাব কেও না বিশ্বাস করুক আমি করি। তুই এটা সাথে করে কলকাতা নিয়ে যাবি।
কি আর করা যথারিতী মায়ের হুকুম মেনে আমি আর আমার ড্রাইভার গাড়ীতে গিয়ে উঠলাম।
ঘড়িতে রাত নয়টার মত বাঁজে। এমনিতেই ভরা পূনির্মার রাত তার উপর এই লং ড্রাইভ, বেশ রোমান্টিক করে দিচ্ছে বটে। ড্রাইভারের পাশের সিটেই আমি বসে। পুরো গাড়ীতে আমি আর ড্রাইভার ছাড়া কেও নাই। মাঝে মাঝে ড্রাইভারের সাথে কথা হচ্ছে আর একশো থেকে একশো বিশ বেগে ছুটে চলেছে গাড়ি। আসলে নতুন গাড়ি কিনেছি তো!
ড্রাইভার কিছুক্ষন পর গাড়ির সাউন্ড সিস্টেমে ‘জিন্দেগি এক সফর হে সুহানা…’ গানটা বাজিয়ে দিল। এমনি সময় ফোনটা বেজে উঠলো, বোন ফোন করেছে।
হ্যালো বোন বল…
‘ দাদা তোরা কতদূর এখন, একা যেতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা তো?’ আমার জবাব, আরে না। টেনশন নিসনা, পৌছে ফোন দেব। আর বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলিস। রাখি। ফোনটা রেখে দিলাম। ফোনটা রাখতে রাখতেই জীবন নিয়ে কেমন যেন বিচিত্র অনুভূতি হতে লাগলো। ছুটে চলা জীবনের গাড়ীর শো শো শব্দে নচিকেতার গানটার মত মনে হল- রাত বলে যায় যায়, ডাক দিয়ে যায়।
চোঁখের পাতায় যেন কত কিছুই ভেসে উঠছে। শো শো করে ছুটে চলছে গাড়ী, আর জোৎস্না ছড়াচ্ছে চাঁদ।
কিছু দুর পর পর একটি দুটি গাড়ীর হেডলাইট দেখা যাচ্ছে। আমার চোঁখটা কেমন অবশ অবশ লাগছে। গাড়ীর সিটেই হেলান দিলাম চোখ বুঝে। কিছুদুর যেয়েই হঠাত্ করেই ড্রাইভার গাড়ীর ব্রেকটা এমন ভাবে ধরলো, যেন পুরো গাড়ীটাই উল্টে পড়ে যাবার মত অবস্থা। এই কি হৈছে ভাই, এত জোড়ে কি গাড়ীর ব্রেক ধরে কেও! ড্রাইভারের জবার ‘স্যার আমার দোষ না, ওনার জন্যই সব কিছু।’
পড়ুনঃ- অ্যাানাবেলা নামক অভিশপ্ত পুতুলের আসল ঘটনা
এবার আমি আস্তে আস্তে গাড়ীর সামনে তাকিয়ে দেখি একটি বিশ থেকে বাইশ বছরের মেয়ে একটা বাচ্চা কোলে করে দাড়িয়ে আছে। ঘড়িতে রাত একটা। মেয়েটি সাদা শাড়ী পরে আছে। তার আঁচলের এক অংশ মাটির সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চুলগুলো এলোমেলো আর কান্না ভেজা চোঁখ।
আমি গাড়ির দরজাটা খুলে নিচে নেমে বললাম- কি ব্যাপার, ‘আপনি হঠাত্ করে একটা বাচ্চা কোলে করে আমার গাড়ির সামনে আসলেন কেন?’
মেয়েটি কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো ‘স্যার আমাকে বাঁচান। আমার বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছাই নেই। আপনি আমাকে না বাঁচালে, আমার স্বামী আমাকে আর আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলবে। আমি কোন মতে বাড়ী থেকে পালিয়ে এসেছি। সামনেই আমার বাবার বাড়ী। আপনি দয়া করে আমাকে একটু আপনার গাড়ীতে নিয়ে চলুন।’
আমি বললাম, ‘দেখুন আপনি পথ থেকে সরে দাড়ান। আমি আপনাকে গাড়ীতে নিতে পারবোনা।’ এই কথা বলার সাথে সাথে মেয়েটি তার এক হাতে বাচ্চাটিকে বুকে নিয়ে আর এক হাতে আমার পা জড়িয়ে ধরলো। ড্রাইভার ওপাশ থেকে বলল- ‘স্যার আমাদের গাড়ির পিছনের সীটতো খালি পড়ে আছে। আমরা না হয় এই বিপদ থেকে একটু ওকে সাহায্য করি। আর সামনেই তো ওর বাবার বাড়ী। আমরা ওখানেই ওকে নামিয়ে দেবো।’
ড্রাইভারের এই কথা শুনে মেয়েটিকে গাড়িতে উঠতে বললাম। মেয়েটি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে পিছনের সীটে উঠে বসলো।
আমাদের গাড়ী কিছুক্ষন চলতেই থাকলো। এর মাঝে একবারও পিছন ফিরে তাকানো হয়নি। হঠাত্ করেই মনে হলো মেয়েটিতো কিছুদুর পরেই নামতে চেয়েছিল। আমি গাড়ির মিররের দিকে চেয়ে দেখার চেষ্টা করলাম মেয়েটির কি অবস্থা দেখার জন্য। কিন্তু আয়নার ভিতরেতো কোন কিছুই দেখা যায়না। আমি একটু ভালো ভাবে আয়নার দিকে চোখ দিলাম। দেখলাম দু’টো লাল চোঁখ দেখা যায়।
পড়ুনঃ- ভুতের বশে তনু!
কিছুক্ষন পর দেখি মেয়েটি তার কোলের বাচ্চাটাকে মাথা নিচের দিকে দিয়ে ধরে আছে। আমি ঘামতে শুরু করেছি। এবার দেখি মেয়েটি বাচ্চাটির দু পা দুটি হাত দিয়ে ধরে টেনে ছিড়তে লাগলো। মেয়েটির লাল চোঁখ আর অদ্ভূত চাওনি কি যে ভয়ংকর, বলে বোঝানো যাবেনা। ড্রাইভার তার আপন মনে ড্রাইভ করে চলে যাচ্ছে। ও কি ভয়ংকর!
বাচ্চাটির মাথার দিকটার মুখের মাংসগুলো খেতে শুরু করেছে মেয়েটি। মুখে রক্তের লালা ঝরছে। আমি যে আয়নাতে এটি দেখছি মেয়েটি এখনো সেটি খেয়াল করেনি। ভাবতে থাকলাম ড্রাইভার যদি এখন এই দৃশ্য দেখে তাহলে একটা অঘটন ঘটে যাবে। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। এবার আমি আয়নার দিকে তাকাই। হঠাত্ করেই আয়নাটির ভিতরে তার লাল চোঁখে চোখ পড়ে যায়। বীভৎস রক্তের লালা জড়ানো চেহারা নিয়ে সে আমার দিকে তাকায়।
আমার চোখে তার চোখটা পরতেই বুকের বামপাশ টা কেমন যেন ছ্যাঁত করে উঠল। সে হয়ত জানত না যে, আমি হঠাৎ করেই তাকে দেখে ফেলব। আমি গাড়ির মিররে দেখলাম সে চুপিচুপি হাসছে। তার মুখ দিয়ে রক্ত লালা ঝরে পরছে। এমন সময় ড্রাইভার বলে উঠল, “স্যার আপনি এত ঘামছেন কেন, এসি টা অন করে দিই।” আমি কি উত্তর দেব নিজেও জানি না, কারন যে বীভৎস দৃশ্য আমি গাড়ির মিররে দেখছি তা দেখে আমার মুখ থেকে একটি কথাও বেরিয়ে আসছে না।
গাড়ির স্পিডো মিটারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম গাড়ির গতি ১৫০ ছুঁই ছুঁই। আমি ধীরে ধীরে ব্যাগ থেকে মায়ের দেওয়া মাদুলিটা বের করে ঈশ্বরকে ডাকতে লাগলাম। হঠাৎ আমার মনে হল, একটি হাত ড্রাইভারর দিকে যাচ্ছে, সেই হাতটির নখ বড় বড়, আঙ্গুল গুলিতে রক্ত লেগে আছে। এরপর আমি দেখি, আমাদের গাড়ি জোরে একটি গাছের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দড়াম করে শব্দ হল।
পরেরদিন নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিস্কার করলাম। পরে শুনি, আমাদের কিছুদুর পিছনে একটি গাড়ি আসছিল, আমাদের গাড়ির হঠাৎ গতি বৃদ্ধি দেখে তাদের সন্দেহ হয়, তাই তারা আমাদের পিছু পিছু আসতে থাকে। এরপর আমাদের গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করলে তারাই আমাদের এখানে নিয়ে আসে। স্থানিয়দের মতে- রাতের আগন্তুক অনেক গাড়ির কাছেই আমাদের সাথে যেমন ঘটনা ঘটেছে অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। গাড়িতে তেমন একটি সাদা শাড়ি পরা মেয়েকে উঠিয়েছে এরপর একটা সময় তাদের গাড়ির গতি হঠাৎ করেই বেড়ে যায় এবং অ্যাকসিডেন্ট হয়।
সেই মায়াবী মেয়েটি সম্পর্কে বিস্তারিত কেউই জানাতে পারল না। তবে নতুন মজবুত গাড়ি হওয়ায় সেদিন আমরা বড়জোর বেঁচে গিয়েছিলাম। তবে সেই মায়াবী মেয়েটির পিছনে থাকা কাহিনী আমি অবশ্যই জানব। আর জানতে পারলে অবশ্যই আপনাদের সাথে ভাগ করে নিব।
পড়ুনঃ- রহস্যময় গল্প- হোস্টেলের শেষ রাত পৃথিবীর ভয়ানক ও রহস্যময় কিছু জায়গা
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
ভৌতিক গল্প রহস্যময় নারী। ভয়ানক নিশি রাতের ভুতের গল্প।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।