ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার গল্পটিতে প্রেমিকের সাথে প্রেমিকার আবার দেখা হয়, কিন্তু বদলে গেছে মানুষ দুটি।

ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার গল্পঃ- “আমার হিয়ার মাঝে”

বিকেলের পড়ন্ত রোদে, অফিস ফেরত পথে কিরণ দেখে রাস্তা খুব ভীড়। এত ভীড়ের মাঝে চলতে গিয়ে বুকের ভিতরে থাকা অনেকদিনের চাপা কষ্টটা জেগে ওঠে প্রভাত কে দেখে। 

পুরো সাত বছর পর দেখা হলো আজ। 

মনে পড়ে প্রভাত সেদিন অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিল কিরণের জন্য। কিরণ দেরি করে এসে পৌঁছাতে প্রভাত রেগে বলে ওঠে, আমি তোমার জন্য কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি সেটা খেয়াল আছে তোমার! কোথায় ছিলে এতক্ষণ? 

কিরণ খুব খারাপ ব্যবহার এর সাথে উত্তর দেয়, আমি আমার সময় মতো আসব তোমার তাতে কি শুনি! আর তুমি কে যে তোমাকে সব কৈফিয়ত দিতে হবে? 

ও ও আচ্ছা, তা তো বলবেই এখন। আমার জন্য তোমার তো এখন আর ভালোবাসা নেই, আছে শুধু অবহেলা। আমার জন্য তোমার সময়টাও এখন আর আগের মতো নেই। 

ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার গল্প
ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার গল্প

না নেই বুঝতে পেরেছ! কিরণ রূঢ় ভাবে বলে ওঠে। 

তুমি কেন আমার সাথে এমন ব্যবহার করছ কিরণ? তুমি কি বুঝতে পারো না এতে আমার কতটা কষ্ট হয়! 

শোনো ফালতু না বকে যেটা বলার জন্য ডেকেছ সেটা বলো। 

এত তাড়া তোমার কিরণ! 

হ্যাঁ। 

সবকিছু কে কি আবার নতুন করে ঠিক করে নেওয়া যেত না?

কেন সবকিছু তো ঠিকই আছে। 

না ঠিক নেই। তুমি আর আগের মতো নেই কিরণ। তুমি কি আমাদের সম্পর্ক আর রাখতে চাইছ না ? তুমি আমাকে বলো তুমি কি অন্য কারোর সাথে নতুন করে সম্পর্কে জড়িয়েছ, ভালোবাসো কাউকে? প্লিজ বলো, তুমি যদি বলো যে হ্যাঁ তুমি  অন্য কাউকে ভালোবাসো, আমি তোমাকে সত্যিই মুক্তি দিয়ে দেবো। 

কিরণ চুপ করে থাকে। 

-কি হলো বলো। 

-না সেসব কিছু নয় তবে আমার পক্ষে এই সম্পর্ক টা সত্যিই রাখা আর সম্ভব নয়। 

-কেন সম্ভব নয়? 

-আমি আর এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারছি না। 

পড়ুনঃ- কলেজ প্রেম কাহিনী- পরিসমাপ্তি 

-কেন পারছ না? 

-এত প্রশ্ন কোরো না প্রভাত। কথাটা বলে উঠে দাঁড়ায় কিরণ। 

-কোথায় যাচ্ছো কিরণ? 

-আজকের পর থেকে তোমার সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ থাকবে না ঠিক আছে। 

-আচ্ছা, আমার দোষটা কি একটু বলবে যার জন্য আমাকে এত বড় শাস্তি দিচ্ছ? 

সেদিন প্রভাতের প্রশ্নের জবাব না দিয়েই চলে গেছিল কিরণ। আর রাখেনি তারপর থেকে যোগাযোগ। 

কেটে গেছে সাত সাতটা বছর। আজ আবার প্রভাতের সাথে দেখা। কিরণ দেখে, প্রভাত ঠিক আগের মতোই আছে। একদম সেই সাতবছর আগের যুবকটি। 

কিরণ একদৃষ্টে চেয়ে আছে প্রভাতের দিকে, প্রভাত বলে ওঠে, কেমন আছো কিরণ? 

ঘোর কাটে কিরণের। থতমত খেয়ে বলে, হ্যাঁ আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো? 

আমিও ভালো আছি। তা তুমি বুঝি অফিস থেকে ফিরছ? 

তুমি কি করে বুঝলে? 

প্রভাত হেসে বলে, সাবধানে যেও বাড়ি। 

আর তুমি ?

আমিও ফিরব। 

প্রভাত  চলে যেতে যাবে উল্টো দিকে তখন কিরণ বলে, প্রভাত। 

প্রভাত মুখ ফিরিয়ে বলে, কি হয়েছে কিরণ? 

বলছি তোমার কি আজ আমার সাথে থাকার জন্যে একটু সময় হবে? আমি তোমার বেশি সময় ব্যয় করব না, অন্তত কিছুক্ষণের জন্য আমার সাথে থাকো প্লিজ। 

আচ্ছা বেশ তাই হবে। তোমার আবদার আমি কখনোই ফেলতে পারি নি আর পারবোও না। তবে তোমার বর কিছু বলবে না তো তোমার দেরি করে ফেরা দেখে?

-না শ্রীজাত কিছু বলবে না। তুমি চলো আমার সাথে। 

-বেশ চলো যাওয়া যাক একসাথে।

ভালোবাসার মানুষকে হারানোর গল্প
ভালোবাসার মানুষকে হারানোর গল্প

ঠিক তখনই কিরণ খেয়াল করে পাশ দিয়ে কিছু লোকজন কিরণের দিকে তাকাতে তাকাতে নিজেদের মধ্যে বলতে বলতে যাচ্ছে, আজকালকার মানুষ ব্লুটুথ ছাড়াই আপন মনে বকবক করে চলে। সত্যি যতসব পাগলের দরবার! 

না না ভায়া, আপন মনে নয় বলো হাওয়ার সাথে কথা বলে । হেসে বলে ওঠে আরেকজন। 

কিরণ কিছু বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে দেখে প্রভাত বলে, কি হলো যাবে না? 

ওই লোকগুলোর কথা শুনলে? 

হুম তো? 

ওরা মনে হয় আমাকেই বলল। 

বলল তো বলল, তাতে আমাদের কি! 

না একা একা বকবক করছি মানে? 

আরে ছাড়ো তো ওদের কথা। লোকের সব কথা অত ধরতে আছে নাকি! তুমি না এখনো বড় হলে না জানো তো কিরণ। সেই ছোট বাচ্চাদের মতো করছ! কোথায় এই আচরণ তোমার ছেলেমেয়ে করবে তা না, তুমি করছ! 

অভিমানী কন্ঠে কিরণ বলে, আমার ছেলেমেয়ে হয়নি এখনো। 

ও ও আচ্ছা আচ্ছা, এবার হবে। এই যে আমি অজান্তেই বললাম তোমার ছেলেমেয়ের কথা সেই রাজা দশরথ কে অন্ধমুনির দেওয়া বরের মতো। 

পড়ুনঃ- বিরহের গল্প- গুড বাই 

মজা করছ তুমি!

মজা নয়, সিরিয়াসলি বলছি। চাকরি বাকরি করছ দুজনেই তাই এখনো সময় আসেনি তবে এবার ঠিক ই আসবে। 

তুমি খুব ভালো আছো তাই না? 

হুম আছি তো। 

কিরণ উদাস ভাবে হেসে বলে, যাক, তুমি ভালো আছো শুনে ভালো লাগলো। 

আচ্ছা এখানেই কি সব কথা বলবে নাকি হাঁটতে হাঁটতে বলবে? 

না না চলো চলো যাওয়া যাক এবার। 

দুজন পাশাপাশি চলতে থাকে। কিরণকে বামদিকে রেখে প্রভাত ওকে আগলে রেখে হাঁটছে তবুও দুজনের মাঝে কতটা দূরত্ব। 

পাশাপাশি হাঁটলেও দূরত্ব বজায় রেখে। 

কিরণ বলে, আমি ভুল করেছি জানো। 

কি ভুল শুনি? খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলে ওঠে প্রভাত। 

তোমাকে অবহেলা করে, তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে, তোমাকে কষ্ট দিয়ে ,আরো অনেক কিছু। আজ যখন সবটা বুঝতে পারছি তখন অনেক টা দেরি হয়ে গেল। এখন তোমার মূল্য বুঝলেও তোমাকে পাওয়া আমার সম্ভব নয়। কারণ তুমিও তো এখন অন্য কারোর। 

কিছুক্ষণ নীরব থেকে প্রভাত বলে, জানো কিরণ, জীবনের সবচেয়ে “ভালোবাসার  জিনিস বা ভালোবাসার মানুষ” গুলো হয়ত অবৈধ! নয়তো নিষিদ্ধ ! হয়তো দামী! নয়তো অন্য কারোর! 

কিরণ শুকনো হেসে বলে, ঠিক বলেছ প্রভাত। আমি অনেক দেরি তে বুঝলাম তুমি আসলে আমাকে কতটা ভালোবাসতে! তা তোমার বৌ কেমন আছে? 

বিয়েই করিনি, বৌ আসবে কোত্থেকে! হেসে বলে ওঠে প্রভাত। 

বিয়ে করোনি এখনো? 

না গো, বিয়ে, সংসার সবকিছু যার জন্য তোলা ছিল তার জন্যই যত্ন করে তোলা আছে। ও আর আমি অন্য কাউকে দেবো না!

এই সাত বছরে তোমার জীবনে কি নতুন কেউ আসেনি প্রভাত?

এসেছে তবে আমি তাদের কাউকেই কষ্ট দিয়ে নিজের জীবনে আটকাতে চাইনি। কারণ আমি জানি আমি কখনোই তাদের মধ্যে কাউকেই ভালোবাসতে পারব না। আমার মন এক নারীতেই আসক্ত ছিল, আছে, রয়েও গেল। 

bengali very sad love story
bengali very sad love story
<

আরে দিদিভাই একটু দেখে চলুন না! পাশ কাটিয়ে একটা সাইকেল বলে। 

কেন আমি কি না দেখে চলছি? চেঁচিয়ে বলে ওঠে কিরণ। 

তা পাশ ফিরে এভাবে পাগলের মতো একা একা বকবক করলে আপনি তো অ্যাক্সিডেন্ট করবেন! যত্তসব অদ্ভুত পাবলিক! 

কিরণের এবার খুব রাগ হয়। সেই ঐ রাস্তা থেকে এই এক কথা, “একা একা বকবক করছে।” লোকগুলোর দু’টো চোখেরই কি বারোটা বেজে গেছে? তাই যদি হয় তাহলে কিরণকে তো দেখতে পাচ্ছে, কিন্তু প্রভাত কে দেখতে পাচ্ছে না, আজব তো! 

মাথা কাজ করছে না। 

কি হয়েছে তোমার? 

তুমি খেয়াল করছ লোকেদের অসভ্যতামো টা ?

হুম করছি। 

কতটা অসভ্য বেহায়া হলে এমন ধরণের বাজে মজা করে। দেখতে পাচ্ছে তুমি আর আমি পাশাপাশি যেতে যেতে কথা বলছি তবুও কীরকম অসভ্যতা করেই চলেছে। 

আরে বাদ দাও ওসব কথা। তুমি চলো।

কিরণ একটা ক্যাফেটেরিয়া তে ঢোকে আর দু’টো কফির অর্ডার করে। 

ওয়েটার খুব অবাক হয় যে কাস্টমার  একজন অথচ একই রকম কফির অর্ডার দু’টো দিচ্ছে। 

অত ভেবে ওর কি, দু’টো কফি কিরণের সামনে রেখে চলে যাচ্ছে তখন কিরণ বলে, আরে ভাই, দু’টো কফি আমার সামনে রাখলে কেন, ওনার দিকেও যে একটা রাখতে হয়, এটাও কি তোমাকে বলে দিতে হবে? 

পড়ুনঃ- অবহেলা থেকে ভালোবাসার গল্প 

ওয়েটার ছেলেটি তো আরো অবাক, ম্যাডাম ওনার সামনে কাকে ইঙ্গিত করছেন, কেউই তো নেই ওখানে। 

যাই হোক, কিরণের কথা মতো আরেকটা কফি কিরণের সামনাসামনি চেয়ারের কাছটাতে রাখে। আর অবাক হয়ে চেয়ে দেখে ম্যাডাম বলছে, ওয়েটার ছেলেটি খুব অদ্ভুত তো। ও তোমাকে কফি না দিয়ে দু’টো কাপ ই আমার দিকে রাখছে। 

প্রভাত মজা করে বলে, আসলে ম্যাডাম কে খুব পছন্দ হয়েছে তো তাই আমার কাছে কফি রাখতে ভুলে গেছে। 

তুমি চুপ করো বুঝলে, সবসময় খালি ইয়ার্কি! 

বেশ কিছুক্ষণ সময় আরো কেটে যায়। কিরণ বলে, তোমাকে আমি এখন খুব মিস করি জানো, ভীষণ অনুতপ্ত হই এখন। ভীষণ কষ্ট হয় আমার পুরোনো দিনের সব কথা ভাবলে।

আরে পাগলী! ওহ সরি, কিরণ! 

কিরণ প্রভাতের কথার মাঝখানে বলে ওঠে, কেন, আমাকে বুঝি আর পাগলী বলা যায় না? এত ফর্মাল হয়ে গেছো আমার সাথে? 

আচ্ছা নাও ঠিক আছে পাগলী বলছি। শোনো, অত পুরোনো কথা ভেবো না গো। নতুন মানুষের সাথে নতুন করে জীবন শুরু করো, ভাল থাকো। এটাই তো চেয়েছিলাম সবসময় যে তুমি সবসময় ভালো থাকো, সুখে থাকো, সুস্থ থাকো। আর অতীত আঁকড়ে বেঁচে থাকা ঠিক নয় গো।

আচ্ছা তুমি এখন কোথায় থাকো, কি করছ কিছুই তো বললে না।

আমি আর কি বলো, একা মানুষ, তিনকূলে কেউ নেই। মা নেই, বাবা নেই, কোনো পরিবার ই নেই আমার। নিজের পেট চালানোর মতো টুকটাক যা কাজ করার করি, তবে তোমার মতো কিন্তু অত ভালো চাকরি আমি করি না। তাই দেখো না তোমার টাকায় কফি খাচ্ছি! একগাল হেসে বলে ওঠে প্রভাত। 

সবটাই তো আমার জন্য হয়েছে , নাহলে তুমিও আজ অনেক ভালো চাকরি করতে। আমি তোমার জীবন টা তছনছ করে দিয়েছি। তুমি আমাকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলে, তবুও আমি এতোটাই নিকৃষ্ঠতম ও নীচ মানুষ…. 

আহ কিরণ, কি হচ্ছে টা কি! এসব কি কথা বলছ তুমি আমার সামনে! খবরদার আর যেন এসব কথা না শুনি। আর কখনো বলবে না তুমি এসব, মনে থাকে যেন। 

আমি তোমাকে ভালবাসি প্রভাত। আমি পারছি না শ্রীজাতর সাথে থাকতে বিশ্বাস করো। তোমাকে হারিয়ে আমি বুঝতে পারছি যে আমার জীবনের খুব মুল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলেছি আমি অবহেলায়! কবিগুরুর একটা গান আছে না, “আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি, তোমায় দেখতে আমি পাইনি !” কিরণের চোখে জল চলে আসে বলতে বলতে।  

প্রভাত বলে, তোমাকে ছোঁয়ার অধিকার আমার আর নেই কিরণ। তাই গোটা রাস্তা তে তোমার হাত ধরিনি বা এখনো পর্যন্ত তোমাকে আমি এতটুকু টাচ্ করিনি। এখন তোমার চোখের জল টাও আমি মুছিয়ে দিতে হয়ত পারব না, তুমি প্লিজ কেঁদো না গো। আমি সবকিছু সহ্য করতে পারব কিন্তু তোমার চোখের জল না। তুমি প্লিজ চোখ মোছো।  

আমার চোখের জল মোছার অধিকার টাও তুমি ফিরিয়ে দিয়েছ প্রভাত, আমার ব্যবহার তোমাকে এতটা দূরে সরিয়ে দিয়েছে আমার থেকে! কিরণের গাল বেয়ে নেমে আসে চোখের জল। 

সেই দূরত্বটা শারীরিক ভাবে, কিন্তু মানসিক ভাবে, আত্মিক ভাবে তুমি সবসময় আমার কাছে, আমার ভালোবাসা সবসময় তোমাকে জড়িয়ে। তোমার আর আমার আত্মা এখনো একসাথে আছে। তুমি প্লিজ কেঁদো না। তোমার বর জানতে পারলে আমার উপর খুব রাগ করবে। আমি তখন কি বলব ওনাকে? আচ্ছা কিরণ সন্ধ্যা হয়ে আসছে তুমি এবার বাড়ি ফেরা বুঝলে। নাহলে তোমার বর চিন্তা করবে, ফোন করবে এখনি দেখো। 

” তোমার বর ” এই কথাটা বারবার করে বলতে তোমার খুব ভালো লাগছে তাই না প্রভাত? 

তুমি তো সত্যিই এখন কোনো একজনের বৌ, তা সে তো হিসেবমতো তোমার বরই হবে! 

বড্ড হাসি পায় তোমার তাই না সবসময়?

বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় যে এই হাসিটাই। হাসি যার নেই তার জীবনে তো অমাবস্যার অন্ধকার গ্ৰাস করেছে। তুমি কি চাও সেটা আমার জীবনে হোক? 

না না না এসব বোলো না প্রভাত। ঠিক আছে তুমি হাসো কেমন। অনেক হাসো। তুমি ভালো থাকো সবসময়। আবার হয়ত কোনো একদিন তোমার সাথে দেখা হবে তখন আরো একটু বেশি সময় থাকব । 

আর দেখা হবে কিনা জানি না কিরণ। 

কেন, তুমি বুঝি এখানে আসবে না আর? 

মনে হয় , না।

কেন, তুমি এই ক্যাফে তেই অপেক্ষা করবে, আমি তোমার সাথে দেখা করব। 

সেটা ঠিক নয়, তোমার সাংসারিক অশান্তি হতে পারে এতে, ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। 

তুমি একদম বেশি কথা বলবে না, যেটা বলছি সেটা করবে। 

সেটা সম্ভব নয় কিরণ, তোমার আমার এটাই শেষ দেখা, আমাকে এবার বিদায় জানাও প্লিজ । 

“শেষ দেখা ” বা ” বিদায় ” শব্দটা ততটা খেয়াল করে না কিরণ। সে শুধু কেন সম্ভব নয় এইটাই জানতে চায়। কিন্তু জানতে গিয়ে প্রভাত বলে যাও এবার বাড়ি, ট্যাক্সি এসে গেছে। 

পড়ুনঃ- অদ্ভুত প্রেমের গল্প 

রীতিমত জোরপূর্বক ট্যাক্সি তে তুলে দেয় কিরণ কে। 

কিরণ জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে প্রভাতকে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাতে যাবে আর দেখে প্রভাত নেই। 

কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যে ও গেল কোথায়? 

গাড়িতে যেতে যেতে মনে হলো, ওর বর্তমান  ঠিকানা আর বর্তমান ফোন নাম্বার টা নেওয়া উচিত ছিল। ইস! এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার টা ভুলে গেল কি করে!

প্রচন্ড অস্থির লাগে তার। সে ড্রাইভার কে বলে, দাদা প্লিজ আমাকে যেই স্টপেজ থেকে পিক করলেন ওখানে একটু ছেড়ে দেবেন।

ড্রাইভার খুব বিরক্ত হলেও কিরণকে ভাড়ার বিনিময়ে সেই স্টপেজে নামিয়ে দেয়।   

গাড়ি থেকে নেমে তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকে প্রভাতকে। এইটুকু সময়েতে ও কোথায় চলে গেল? এতবড় শহরের বুকে এত কম সময়ের মধ্যে কোথায় হারিয়ে গেল! 

আর কি কখনোই খুঁজে পাবে না প্রভাতকে? 

কিরণ আরো এগিয়ে যায়, হাঁটতে হাঁটতে ক্যাফেটেরিয়া পর্যন্ত যায়। কিন্তু না, কোথাও নেই প্রভাত। 

বুকের ভিতর হু হু করে ওঠে। এমন সময় শ্রীজাতর ফোন। 

ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে
ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে

হ্যালো।

হ্যালো কিরণ, তুমি কোথায় আছো ,এখনো বাড়ি আসোনি কেন? 

আমি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাচ্ছি। 

তুমি ঠিক আছো তো? তোমার গলার আওয়াজ এমন শোনাচ্ছে কেন? 

না না আমি ঠিক আছি শ্রীজাত, আমি এখন রাখলাম কেমন।  

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও প্রভাত কে আর খুঁজে পায় না। 

এরকম অস্থির ভাবে ছুটতে গিয়ে ধাক্কা খায় জনৈক এক মহিলার সাথে। 

মহিলা কিরণ কে দেখে বলে, আরে আপনি! আপনি ঠিক আছেন তো? আপনাকে সেই প্রথম থেকে দেখছি খুব অস্বাভাবিক। 

কিরণের এতকিছু কানে যায় না। সে অস্ফুটে একটাই প্রশ্ন করে, আপনি কি আমার সাথে থাকা একজন 34 – 35 বছরের যুবককে দেখেছেন? 

আপনাকে আমি কেন, এই রাস্তায় যারা যারা দেখেছে সবাই একাই দেখেছে। আপনি একাই রাস্তা দিয়ে চলছিলেন। অনেকেই আপনাকে দেখে বলাবলি করছিল আপনি কার সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন। প্রথমটায় আমরা ভেবেছিলাম হয়ত আপনি মানসিক সমস্যা তে ভুগছেন। তারপর আপনাকে কয়েকজন যখন বলে যে আপনি একা একা কথা বলছেন তখন আপনার উত্তর দেখে মনে হলো, আপনি পুরোপুরি সুস্থ। 

আমার সাথে কোনো ছেলেকে দেখেননি? উদাস ভাবে বলে ওঠে কিরণ। 

পড়ুনঃ- অসম্পূর্ণ প্রেমের গল্প 

হ্যাঁ দিদিভাই, সত্যিই দেখিনি। আপনার সাথে সত্যিই কেউ ছিল না। আর তাছাড়া আপনার সাথে কে আছে না আছে সেটা তো আমাদের চেয়ে আপনার জানা উচিত সবার আগে। দেখুন এই ব্যাপারে বাকিরা শুনলে কতটা হাসাহাসি করবে ভাবতে পারছেন। তবে আমি অতটা অমানবিক নই। 

মহিলা নিজের মতো যা বলার বলে চলে। কিন্তু কিরণের কানে কিছু যাচ্ছে না। একটা কথাই মাথায় ঘুরছে, প্রাণে বাজছে “আপনার সাথে কেউ ছিল না। ” তাই জন্যই কি ওয়েটার ছেলেটিও ওভাবে দু’টো কফি…. 

হ্যালো আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন? মহিলাটি জিজ্ঞাসা করে কিরণকে। 

কিরণ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। 

জ্ঞান ফিরতে দেখে সে বাড়িতে তার ঘরে বিছানায় শুয়ে। আর পাশে মাথার কাছে শ্রীজাত। 

একটাসময় পর সুস্থ হয়ে ওঠে কিরণ। 

আর প্রভাতের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে প্রভাত গত সাতবছর আগেই মারা গেছে। যেদিন কিরণ চরম অবহেলা করে সম্পর্ক ভেঙে চলে গিয়েছিল প্রভাতকে ছেড়ে, তার কিছুদিন পরেই এক কঠিন অসুখে মারা যায় ।

তাই প্রভাত তাকে ছুঁতেও পারেনি কারণ অশরীরী কীভাবে ছোঁবে? আর খুব ভালো মতো মনে পড়ছে, কথায় কথায় খেয়াল না এলেও সেদিন কফিতে চুমুক দেওয়া তো দুর, কফির কাপটা প্রভাত একবারও তুলে ধরেনি। 

আর এটাও মনে পড়ছে ও বলেছিল আর দেখা করা সম্ভব নয় আর কি, আর কি… 

হ্যাঁ মনে পড়েছে, প্রভাত বলেছিল এটাই নাকি শেষ দেখা আর বিদায় জানানোর কথাটাও মনে পড়ছে তার। 

আর তাই সেদিন গোটা রাস্তায় সে তার প্রভাতকে দেখলেও আর কেউই দেখতে পায় নি তাকে। কারণ তার সাথে যে ছিল সে জীবিত প্রভাত ছিল না!

মনে পড়ে যায় একটা কথা, “স্ত্রীর চেয়ে নাকি প্রেমিকার মৃত্যু ভয়ানক। স্ত্রীর লাশ ছোঁয়ার অধিকার থাকে কিন্তু প্রেমিকার লাশ ছোঁয়ার অধিকার থাকে না। “

আজ বড় দমবন্ধ হওয়া কষ্টের অনুভূতি হতে হতে কিরণের মনে হচ্ছে, “প্রেমিকার হয়তো লাশ ছোঁয়ার অধিকার থাকে না কিন্তু প্রেমিকের মৃত্যুর খবরটুকুও পাওয়া যায় না!” 

সুস্মিতা গোস্বামী

গল্পের ভাবনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 

ফিরে পাওয়া ভালোবাসার গল্প- মনের মানুষ

ছেড়ে চলে যাওয়ার গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার গল্প। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর গল্প। bengali very sad love story

Spread the love

Leave a Reply