বাস্তব জীবনের শিক্ষনীয় গল্প আমাদের জীবন নিয়ে আমাদেরই অভিযোগের শেষ নেই। সর্বদা ভাবতে থাকি আমি ওর মত কেন নয়, ওর যেটা আছে আমার সেটা কেন নেই! জীবন নিয়ে এই হাজারো অভিযোগের সমাপ্তি হবে না কোনদিন। কিন্তু জীবন নিয়ে অযথা এই অভিযোগ গুলির ভীত বড়ই নড়বরে।

বাস্তব জীবনের শিক্ষনীয় গল্পঃ- “জীবনের অঙ্কুর”

এই ঘটনা টি কয়েক বছর আগের। এখনও পরিষ্কার মনে আছে, কৃষ্ণ পক্ষ চলছিল তাই চাঁদ মামা বিশ্রামে ছিলেন। তার উপর আবার শীতকাল চলছিল। তবে সেই দিন কেন জানি না, অন্যদিনের তুলনায় ঠাণ্ডা টা একটু বেশিই অনুভূত হচ্ছিল। আমি পাড়ার মোড়ের বড় কালিমন্দির এর পাশ দিয়ে আসছিলাম, দেখলাম একজন বছর ১৪ এর ছেলে মন্দিরের দরজার সামনে যে লাইট টা রয়েছে সেই লাইট এর নীচে বসে এক মনে বই পড়ছে।

আমাকে মাঝে মধ্যেই ওই মন্দিরের রাস্তা দিয়ে রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। আর যেদিনই সেই রাস্তা দিয়ে ফিরি দেখি সেই ছেলেটা বই পড়ছে অত্যন্ত একাগ্রচিত্তে। একদিন দিনের বেলা ইচ্ছে করেই ওই রাস্তা দিয়ে গেলাম কিন্তু ছেলেটাকে খুঁজে পেলাম না।

কেন জানিনা এরপর থেকে সেই ছেলেটার প্রতি অনেক কৌতূহল জন্মাল। একদিন রাতে একটি কাজে বাইক নিয়ে বের হই। হঠাৎ করেই মনে পরে গেল সেই ছেলেটার কথা। ঠিক করলাম ওই মন্দিরের রাস্তা দিয়েই যাব।

বাস্তব জীবনের শিক্ষনীয় গল্প
বাস্তব জীবনের শিক্ষনীয় গল্প

আমি গিয়ে দেখি ছেলেটা অন্য দিনের মত সেই দিনও মন্দিরের লাইটের আলোয় বসে একমনে পড়ছে। আমি বাইক টা দাঁড় করিয়ে রেখে, ছেলেটার কাছে যেতেই ছেলেটা আমাকে দেখে খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বসল। যেন মনে হল, আমি যেন ওর কতদিনের পরিচিত! আমার উদ্দেশ্যে চেনা পরিচিত হাসি দিয়ে সে আবার পড়াশোনায় মন দিল।

আমার মনের বহু দিনের প্রশ্ন তাকে করেই ফেললাম-“আচ্ছা একটা কথা বল তো, তুমি প্রতিদিন রাতে এখানে বসে বই পড় কেন বলত?

ছেলেটা খুব সাধারণ ভাবে উত্তর দিল- “মহাশয়, আমার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। রেশন থেকে যেটুকু তেল পাই, তা আমার অসুস্থ মায়ের জন্য চুলোতে কয়লা জ্বালানোর কাজেই চলে যায়। তাই আমি এখানে এসে পড়াশোনা করি।“

পড়ুনঃ- সুন্দর কয়েকটি শিক্ষণীয় গল্প 

কিন্তু এই ঠাণ্ডায় মানুষ বাড়ির বাইরে পর্যন্ত বের হতে ভয় পাচ্ছে, আর তুমি এখানে বসে আছ! তোমার ঠাণ্ডা লাগে না!

সে জবাব দিল- “আমার মা আর আমি একই সুতোতে বাঁধা। মা কে তো বাড়িতে গরম আগুনের পাশে রেখে দিয়ে এসেছি। মা বেশ আরামে ঘুমাচ্ছে। এই উষ্ম অনুভূতির কাছে এই ঠাণ্ডা কিছুই নয়।

আমি আবার প্রশ্ন করলাম- “তুমি কি আমাকে চেন? আমাকে দেখেই তুমি হাসলে যে!”

সে আবার একটা সুন্দর হাসি দিয়ে বলল- “ কারণ আপনি ভগবান।“

জীবন নিয়ে শিক্ষনীয় গল্প
জীবন নিয়ে শিক্ষনীয় গল্প

আমি ছেলেটার কথা শুনে মৃদু হেসে বললাম, “ঠিক আছে বলতে হবে না। তবে আমার এই প্রশ্ন টার উত্তর তোমাকে দিতেই হবে- তুমি কি খাওয়া দাওয়া করেছ? নাকি এমনি খালি পেটে এখানে এসে পড়ছ? ঊম আমার মনে হচ্ছে তুমি এখনও খাওয়া দাওয়া করনি। আমি তোমার জন্য কিছু খাবার এনেছি।“

এই বলে আমি  বাড়ি থেকে ছেলেটার জন্য নিয়ে আসা খাবার গুলি তার হাতে দিলাম।

ছেলেটা আবার একটা সুন্দর হাসি দিয়ে বলল- “বুঝলেন তো এবার আমি কি জন্য আপনাকে ভগবান বলেছি!” কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে আবার বলতে শুরু করল- “আমি আজ সকাল থেকে কিছুই খাই নি। চায়ের দোকানে কাজ করে যে টাকাটা পেয়েছি সেটা দিয়ে মায়ের জন্য কিছু ওষুধ কিনেছি। আর বাকি টাকাটা দিয়ে মায়ের পছন্দের খাবার মুড়ি আর চানাচুর নিয়ে গেছি।”

“আমি না খেয়ে আছি, এই কথাটার কোন ভাবনা আমার মাথায় ঘুরছিল না। কারণ ভগবান যেহেতু আমাকে খিদে দিয়েছেন , সেহেতু তিনিই আমার খাবার জোগাড় করে দেবেন। আমার বিশ্বাস ছিল যে ভগবান আমাকে কখনোই খালি পেটে ঘুমে বিছানায় যেতে দিবেন না। আমার বিশ্বাস ছিল যে, তিনিই আমাকে খেতে দিবেন, আর আপনি খাবার নিয়ে এসে গেলেন।  এবার বলুন আপনি ভগবান নয় তো আর কি!

সেই ছেলেটাকে উত্তর দেওয়ার মত আমার কাছে কোন শব্দই ছিল না। এদিকে আমি আমার জীবনের নানান সমস্যার জন্য সর্বদা ভগবান কে দোষারোপ করতাম, আর আজ এই ছেলেটা আমাকেই ভগবান বানিয়ে দিল। নিজের কাছেই নিজেকে লজ্জিত মনে হতে লাগল।

পড়ুনঃ- আধুনিক শিক্ষণীয় গল্প- স্মার্ট ফোন

সে অর্ধেক খাবার খেয়ে, অর্ধেক বাঁচিয়ে রেখে আমাকে বলল- “মহাশয়, আপনি এখানে একটু অপেক্ষা করুন, আমি এখনই মা কে এই খাবার টা দিয়ে আসছি।

এরপর ছেলেটা মন্দিরের বিপরীত গলিটার অন্ধকারে হারিয়ে গেল।

প্রায় মিনিট পনেরো পর সে হাতে কিছু ফুল নিয়ে আমার কাছে এল। আমার পায়ের উপর সেই ফুল গুলি রেখে দিয়ে সে বলল- “আমার মা বললেন, যেই ভগবান আমাদের পেট ভরিয়েছেন, তার পায়ে এই ফুল গুলি অর্পণ করিস বাবা।“

এরপর আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে, অজান্তেই কয়েক ফোঁটা চোখের জল টপ টপ করে পরে গেল। আমি চোখ খুলে দেখলাম, সেই ছেলেটা আবারও একটা সুন্দর হাসি দিয়ে বই গুলি গোছাচ্ছে। তার মুখ দেখে আমার মনে হচ্ছিল, যেন সেইই দুনিয়ার সবথেকে খুশি মানুষ।।

এই ঘটনার পর থেকে জীবনের প্রতি আমার আশা আকাঙ্ক্ষা সব উঠে গেছে। নিজের চাওয়া পাওয়া গুলি নিজের কাছেই বিলাসিতা মনে হতে শুরু করল। ঈশ্বর আমাকে তো অনেক কিছু দিয়েছেন, কি দেননি! সুন্দর একটা বাড়ি দিয়েছেন, আমার পছন্দের বাইক দিয়েছেন। সুন্দর জীবন দিয়েছেন। অথচ আমার যেন আরও চাই, মন ভরছে না।

bengali real life inspirational story
bengali real life inspirational story
<

কেন জানিনা এরপর থেকে নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করা শুরু করলাম। নিজের যা আছে তাতে তো কিছু খামতি নেই! তবে বাড়তি চাওয়া পাওয়া কেন! আমার যা আছে অনেকের কাছে সেটাই হয়ত স্বপ্ন, তাহলে মন আরও চাই আরও চাই করছে কেন! আসলে প্রতি হিংসা! যখনই আমরা নিজের চেয়ে উৎকৃষ্ট কাঊকে দেখি তখন তার জীবন যাত্রা আমরা পেতে আগ্রহী হই।

এই পৃথিবীতে গল্পের বাচ্চাটার মত কয়জনেই বা আছে, যে অল্পতেই খুশি!  

জীবন দিয়েছেন যিনি আহারও দিবেন তিনি, শুধু কর্ম, বিশ্বাস আর পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে।  

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও  বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- 
আপনার গল্পের কিং আপনিই নাকি অন্য কেউ! 

বিয়ের অদ্ভুত যত সব বিয়ের রীতি-নিয়ম
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

বাস্তব জীবনের শিক্ষনীয় গল্প। জীবন নিয়ে শিক্ষনীয় গল্প bengali real life inspirational story

Spread the love

Leave a Reply