অনেক দিন পর আজ আবারও একটি প্রেমের গল্প নিয়ে আসা হয়েছে। এই গল্পে দেখবেন, কিভাবে দুই বান্ধবী তাদের আরেক বান্ধবীকে পছন্দের মানুষের হাতে হাত রেখে চলতে সহায়তা করেছে।

একটি প্রেমের গল্পঃ- ‘বিবাহ অভিযান’

আরে অসীমা শোনো তো আগে …
কিছু বলার সুযোগই দিলো না অসীমা , হা হা হা করে অদ্ভুত একটা হাসি হেসে মুখের ওপর কল টা কেটে দিলো ।

এই যে আপনারা , হ্যাঁ হ্যাঁ আপনাদেরকেই বলছি , জানি বিষয়টা কিছুই বুঝলেন না , তাই বলছি কিছুক্ষন থাকুন আমার সাথে
আমি মানে কনা মিত্র , দক্ষিণবঙ্গের মান্ধাতার আমলের এক গ্রামে আমার জন্ম। এক্কেবারে গ্রামীণ মাটির মানুষ বলতে পারেন । এই গ্রামেই আমার ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা আর সেই বড়ো হয়ে উঠার মাঝে জীবনে অনেক গুলো মানুষ অনেক গুলো অধ্যায় দিয়ে গেছে আমার জীবনে। তাদের মধ্যে বিশিষ্ট হলো অসীমা । হ্যাঁ ঠিক শুনছেন , যে অধ্যায়টা আজ থেকে দশ বছর আগে জীবনে এলেও , আজ অব্দি বর্তমান।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমার সাথে অসীমার পরিচয় হয় , সেই থেকে বন্ধুত্ব তারপর বাকিটা ইতিহাস , যে ইতিহাসটা গল্পটা পড়লেই জানতে পারবেন।।

একটি প্রেমের গল্প
একটি প্রেমের গল্প

তখন সদ্য গ্র্যাজুয়েশন পাশ করে একটা বেসরকারি কোম্পানিতে join করেছি। মাইনে টা মনের মত না হলেও সাধারণ জীবন যাপনের জন্য যথেষ্ট। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ার তিন বছরের বন্ধুত্বে একবারও সরাসরি দেখা হয়ে উঠেনি আমাদের । তাই কাজটা পাওয়ার পর থেকেই কয়েকদিন ভাবছিলাম অসীমাদের বাড়ি , হঠাৎ করে গিয়ে এক্কেবারে চমকে দেবো ওকে। তবে দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গের দূরত্বটা যথেষ্ট তাই ভাবনা টা ভাবনাই থেকে যাচ্ছিল।

একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর হঠাৎ করে অসীমা এর কল , এক্কেবারে রাগী গলায় আদেশ দিয়ে বললো ” সুমেধার বাবা জোর করে অন্য ছেলের সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে , তাই তুমি , কাল যেভাবেই হোক ওর বাড়ি থেকে ওকে নিয়ে আসবে। এদিকে আমি রঞ্জন কে নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে অপেক্ষা করবো। বিশ্বাস করে অন্য কারুর ওপর দায়িত্বটা দেওয়া সম্ভব নয়, তাই কথাটা যেন মনে থাকে। “

উত্তরে কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না , দক্ষিণবঙ্গের মানুষ হঠাৎ করে উত্তরবঙ্গ এমনকি কোনোদিনও সুমেধার বাড়ি যায়নি। সরাসরি তার সাথে কথাও হয়নি কোনোদিনও আমার। তাকে নিয়ে পালিয়ে আসবো কি করে! এই কথা বলা মাত্রই হা হা হা হা করে একটা উদ্ভট হাসি হেসে, দিল কল টা কেটে।

পড়ুনঃ- ছোট ছোট কয়েক লাইনের প্রেমের গল্প 

বেশ মুস্কিলে পড়লাম , তবে কথা মানে সেই কথা , কথা ফেলার সাহস আমার নেই। আর সূমেধা যেহেতু ওর প্রিয় বান্ধবী তাই ব্যাপারটাকে সহজ ভাবে নেওয়া যাবে না। তাই পরের দিন সকালেই রওনা দিলাম উত্তরবঙ্গের ঠান্ডা পাহাড়ি এলাকায়। অসীমার সাহায্যে খুব সহজে খুঁজেও পেলাম সুমেধার বাড়ি ।

তবে বাড়ি পৌঁছানোর পর , ওদের বাড়িতে বেঁধে গেলো লঙ্কা কাণ্ড। প্রবেশ মাত্রই ওর ঠাকুমা খ্যাক খ্যাক করে কেসে জিজ্ঞাসা করলো ” ও বাছা বলি তোমার নাম কি ? এখানে কি করছো?” তোমাকে তো এ তল্লাটে জীবনেও দেখিনি!”

নার্ভাস হলেই কেমন যেন মির্গি রুগীর মত শরীর কাপতে শুরু করে । সেই হলো ওখানেও , হাত পা কাঁপতে দেখে ঠাকুমা পুরো বাড়ি মাথায় করে দিলেন- “এই কে কোথায় আছিস রে ,এদিকে আয়, দেখে যা তাড়াতাড়ি একটা অচেনা মেয়ে বাড়ি এসে কেমন কাপচে।”

যে যেখানে ছিল ছুটে এসে সার্কাস দেখার মত আমায় ঘিরে ফেললো। তখন অবশ্য নিজেকে জায়গাটার সাথে মানিয়ে নিয়েছি তাই নার্ভাস কাটিয়ে জোর গলায় বললাম ” আমি সুমেধার বন্ধু ” ওর সাথেই দেখা করতে এসেছি । ও নিজেই বিয়েতে নেমন্ত্রণ করেছে আমায়।

পালিয়ে বিয়ে ভালোবাসার গল্প
পালিয়ে বিয়ে ভালোবাসার গল্প

কথাটা শোনা মাত্রই সুমেধার বাবা শকুনের চাহনি তে জিজ্ঞাসা করলেন “সুমেধার বিয়ে তুমি কি করে জানলে ?”
আমি স্পষ্টভাবে জবাব দিলাম ” সুমেধা নিজেই কল করে আসতে বলেছে আমায় “
তার বাবা কাউকে কিছু না বলে দ্রুত গতিতে বাড়িতে ঢুকে গেলেন । ভেতর থেকে বেশ আওয়াজ ওঠার শব্দ। ভয়ে সবার মুখ তখন শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে। ভালো করে মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করলাম , ভেতরের কথোপকথন , ” মনে হলো বারেবারে সুমেধার বাবা জিজ্ঞাসা করছেন , ফোন টা কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস বল ?”

আর সূমেধাও বারেবারে একটাই উত্তর ” আমার কাছে কোনো ফোন নেই “
এরপর তার বাবা সরাসরি তাকে নিয়ে এসে আমার সামনে হাজির করলে, সে রীতিমত তাচ্ছিল্যের স্বরে জবাব দিলো ” এই মেয়েটিকে আমি জন্মেও দেখিনি , একে আমি চিনি না।”

সবাই দাগী আসামীর দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে নানান প্রশ্ন করতে শুরু করলে, নিজেকে বাঁচানোর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে সুমেধা কে উদ্দেশ্য করে বললাম , তাহলে হয়তো অসীমা ভুল ঠিকানা দিয়েছিল আমায়। ক্ষমা করবেন, আমি চলে যাচ্ছি।

সুমেধা , অসীমার নামটা শোনা মাত্রই কিছু একটা বুঝতে পেরে, আমার হাত টা টেনে , এক দৌড়ে সোজা বাড়ির গেটের বাইরে নিয়ে গেলো।

পরের পর অদ্ভুত কান্ডকারখানা গুলোতে বেশ বিস্মিত হয়েছি , তাই কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবো , তার আগেই সুমেধা বলে উঠলো ” তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দাও , যে লোকেশন এ বলছি সেদিকে নিয়ে চলো”

পড়ুনঃ- ভালবাসার কথন- প্রেম স্মৃতি 

ততক্ষনে ওর বাড়ির লোক ধাওয়া করতে শুরু করেছে। তাই আমার গাড়িও চলছিল বেশ দ্রুত গতিতে। নিজেকে ধুম থ্রি এর আমীর খান মনে হচ্ছিল তখন। শেষমেষ রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দুই মহারথী অর্থাৎ অসীমা আর রঞ্জন কে দেখে বেশ স্বস্তি বোধ করলাম। ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে গেলো ওদের। অসীমা আগের থেকেই দিল্লির টিকিট কেটে রেখেছিল ওদের জন্য। রেল স্টেশনে পৌঁছে ওদের গন্তব্য স্থির করে আমরাও একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে রওনা দিলাম ।

এরপর অবশ্য সূমেধার বাবা আমাদের ছেড়ে কথা বলেন নি । পুলিশ কোর্ট-কাচারী করে বেশ বান্দর নাচন নাচিয়েছিলেন। তবে শেষমেশ রঞ্জন একটা ভালো সরকারি চাকরি পাওয়ার পর শ্বশুরের মুখোমুখি হলে , তখন তিনি মেয়ে জামাইকে মেনে নিয়ে তবে আমাদের রেহাই দিয়েছিলেন।

awesome bengali love story
awesome bengali love story
<

অসীমা আর আমি সর্বদাই এসব ন্যাকামো বিরোধী হওয়া সত্বেও , সেদিন ওদের সত্যিকারের ভালোবাসাটা বুঝতে পেরে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। আর আজ দেখুন ওরা সত্যি বেশ সুখে সংসার করছে। এমনকি সুমেধাও একজন বিশিষ্ট লেখিকা হিসেবে পরিচিতি গড়েছে নিজের।

আজ অসীমার সাথে বসে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় , টেলিভিশনের পর্দায় সুমেধাকে best author এর অ্যাওয়ার্ড টা পেতে দেখে , মনে পড়ে গেলো ওদের বিবাহ অভিযান টা। তাই সেই অভিজ্ঞতাটা ভাগ করে নিলাম আপনাদের সাথেও। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন কিন্তু।

তবে অসীমা আবার সেই হা হা হা হা করে বিকট হাসিটা হেসে বেরিয়ে গেলো, ওর কিছু একটা হয়েছে মনে হয় ! দাঁড়ান এট্টু দেখে আসি …

আলোরানি মিশ্র

গল্পের সার্থক ভাবনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও  বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- 

অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী 

অভিমানী ভালবাসার গল্প- সমাপ্তি 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

একটি প্রেমের গল্প। পালিয়ে বিয়ে ভালোবাসার গল্প। 1 new bengali love story

Spread the love

Leave a Reply