আজকের বড় রহস্যময় গল্প টির কেন্দ্রে রয়েছে দুই বান্ধবী। রহস্যজনক ভাবে এক বান্ধবী খোঁজ পায় এক অদ্ভুতুড়ে মোবাইল নাম্বারের। কিন্তু কি ভাবে কি হল! জানতে হলে অবশ্যই গল্পটি শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
বড় রহস্যময় গল্পঃ- রহস্যময় ফোন নাম্বার
“রোজ দেখছি এই এক নম্বর থেকে ফোন আসছে। ফোন টা তুই যদি না ধরিস তাহলে আজ আমিই ধরবো।”
“না না সুলেখা ঐ ফোন টা ধরিস না!”
“না আমি আর সহ্য করতে পারছি না । রোজ রোজ এই এক রোজনামচা আমার ভালো লাগছে না আর । আমি আজ ফোনটা ধরবই আর তোর এত কীসের ভয় রে? তুইও তো ফোনটা ধরতে পারিস! তা না করে সেই ডে ওয়ান থেকে দেখছি কেমন ভয়ে কঁকিয়ে উঠিস নয়ত প্যানিক করিস এই নম্বর টা থেকে ফোন এসেছে দেখলেই। আজ তো তোর ঐ ভূতের সাথে আমি কথা বলবোই।”
“না সুলেখা, লক্ষীটি ,তুই ঐ ফোন ধরিস না…”
…
কলকাতার একটি গার্লস হস্টেলে একসাথে থাকত সুলেখা আর জাহ্নবী । হস্টেলেই তাদের পরিচয় আর বন্ধুত্ব ।
আরো অনেক মেয়েদের সাথে বেশ হৈ হৈ করে থাকে সবাই। পড়াশোনা, খেলাধুলা, আড্ডা মিলিয়ে খুব প্রাণবন্ত একটা হস্টেল।
জাহ্নবী রোজ রাত জেগে চোখের তলায় কালি করে বয়ফ্রেন্ড পীযুষ এর সাথে গল্প করে। তার রুমমেটই হলো সুলেখা।
সুলেখা খুব রেগে যেত মাঝে মাঝে কিন্তু কিছু বলতে পারত না।
কিন্তু পরে যখন তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব টা সত্যিই গাঢ় হয় তখন সেই অধিকারবোধ থেকে সুলেখা জাহ্নবী কে বলে রাতে না ঘুমিয়ে এতক্ষণ ধরে ফোন দেখা ঠিক নয়।
জাহ্নবী হেসে উত্তর দেয়, তা তুই ঠিক বলেছিস আমি জানি কিন্তু পীযুষ এর সাথে এই রাতেই যা কথা হয়, ও তো সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকে তাই আর তাড়াতাড়ি রাখতে পারি না রে। সরি বান্ধবী।
আচ্ছা ঠিক আছে পাগলী আমি সব বুঝলাম কিন্তু তবুও তোর চোখের যে ক্ষতি হচ্ছে তা তুই বুঝতে পারছিস না! তাই বলছি পীযুষ দা কে বল আর তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ার চেষ্টা করবি কেমন। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে প্রেম করবি কি করে হুম!
হেসে ওঠে দুজনে।
আচ্ছা জাহ্নবী, রাত বারোটা বাজে। আমি শুয়ে পড়লাম তুইও তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়িস কেমন লাইট অফ করে।
-“আচ্ছা ঠিক আছে সুলেখা।”
সুলেখা গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে আর জাহ্নবী পীযুষ এর সাথে আস্তে আস্তে অল্পক্ষণ কথা বলে রেখে শুয়ে পড়ে।
কটা বাজে দেখেনি জাহ্নবী। শুয়ে পড়লেও ঘুম আসছে না কিছুতেই। ভাবল ইউটিউবে কিছু দেখবে। তাই সেইমতো সে হেডফোন নিয়ে এসে বসে আর খুঁজতে থাকে কি দেখা যায়।
অনেকক্ষণ দেখতে দেখতে খুব অদ্ভুত একটা জিনিস চোখে পড়ল তার। গুগলে একটা ফোন নাম্বার লেখা যেখানে খুব সতর্কবাণী দিয়ে লেখা, ” আমার রহস্যের সমাধান যে করবে সেইই মরবে বলে দিলাম, তাই, Never call on this number”
খুব কৌতুহল হলো জাহ্নবীর ঐ নম্বরটা দেখে । কিছু একটা করতে যাচ্ছিল হয়ত কিন্তু তখনই সুলেখা বলে ওঠে, “কীরে জাহ্নবী তুই এখনো ঘুমোসনি? উফ! তোকে নিয়ে আর পারা যায় না। শো বলছি। কটা বাজে খেয়াল আছে তোর? দেখ ঘড়ি। দেড়টা বাজে। এতরাত অবধি জাগবি তারপর বেলা অবধি পড়ে পড়ে ঘুমিয়ে দাঁত মেজেই কলেজ চলে যাবি তাই তো? তোকে কিছু বলার নেই আমার আর! রাখ ফোন রাখ বলছি।”
-“আচ্ছা বাবা সরি। রাখছি রাখছি, অত রাগ করতে হবে না, অত বকিস না আমায়।”
-“তোকে বকা নয়, মারা উচিত। যা শো বলছি।”
সুলেখার শাসনে জাহ্নবীর আর দেখা হয় না নম্বরটা নিয়ে। কিন্তু মনে মনে একটা অন্যরকম কৌতুহল তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাকে।
তাকে জানতেই হবে কি আছে ঐ নম্বরটা তে। ঘুম আসছে না যেন আজ কিছুতেই। সুলেখা ঘুমোচ্ছে আবার। চুপি চুপি উঠে ফোন টা সাইলেন্ট করে আবার সার্চ করে ঐ নম্বরটা সম্পর্কে। হ্যাঁ সত্যিই নম্বরটার পাশে, নীচে, চারিদিকে লেখা ” আমার রহস্যের সমাধান যে করবে সেইই মরবে বলে দিলাম, তাই, Never call on this number”
পড়ুনঃ- এক ভয়ানক নিশি রাতের গল্প
নম্বরটা কে স্ক্রিনশট করে রাখল সে। থাক কাল দেখা যাবে। সুলেখা এতবার করে বারণ করল এরপরেও যদি দেখে সে ফোন ঘাঁটছে , না না থাক বরং।
জাহ্নবী নিজের ফোন টাকে নেট অফ করে, সুইচ অফ করে রেখে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কেন জানি না কেবলই ওই নম্বরটা কে নিয়ে অজস্র ভাবনা তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে সমানে। ফোন টা যেন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে বারবার।
জাহ্নবী ফোনের উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ল। মুখের সামনে খোলা জানলা। হঠাৎ যেন কি একটা সরে গেল মনে হলো।
ঘুমিয়ে পড়ে জাহ্নবী এবার।
আবার অনেক ক্ষণ পর হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যায় সুলেখার গর্জনে।
“কি রে জাহ্নবী তুই তোর ফোন সুইচ অফ করিসনি?”
জাহ্নবী আমতা আমতা করে বলে, “করেছি তো”
“কই করেছিস। তোর ফোন অন, নেট অন, নোটিফিকেশন সাউন্ড অন। মাথাটা জাস্ট গরম করে দিচ্ছিস তুই।”
না সুলেখার গর্জন কানে যাচ্ছে না জাহ্নবীর । তবে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। তার ভালো মত মনে আছে যে সে ফোন সাইলেন্ট, অফলাইন আর সুইচ অফ করে ঘুমিয়েছিল। অথচ এখন ফোন টার বর্তমান অবস্থা সবকিছুর উল্টো।
এ কি করে সম্ভব? এতটা ভুল সে করতে পারে সে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারে না কিছুতেই।
-“কীরে জাহ্নবী তুই চুপ করে রইলি কেন আবার, উফ! না নিজে ঘুমোবি না আমায় ঘুমোতে দিবি।”
জাহ্নবী অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছিল ফোন টা এমন ভাবে অন হলো কি করে এমন সময় সুলেখার বিরক্তি দেখে সে রেগে গিয়ে বলে, “তুই শো না। এত কথা কেন বলছিস? শুয়ে পর তে পারছিস না!”
-“হ্যাঁ আমি শুয়েই পরব। আমার আর ভালো লাগছে না এসব।”
সুলেখা রেগেমেগে শুয়ে পড়ে আর জাহ্নবীর মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। অফ করে দেওয়া ফোন টা অন হলো কি করে? শুধু ফোন অন হয়েই থেমে থাকেনি, নেট অন, নোটিফিকেশন সাউন্ড অন। আশ্চর্য তো? সে তো সব অফ করেই শুয়েছিল। তাহলে কি অফ করেনি তখন? এতটা ভুল সে করতে পারে কি করে! কোনোরকমে এপাশ ওপাশ করে রাতটা কাটায় জাহ্নবী।
সকাল হতেই আবার একটা নতুন, ফ্রেশ দিন শুরু। গতকালের কিছুই মনে করল না বলে প্রায় ভুলেই গেল সে। সুলেখাও ঠিক আছে। কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তারা। বাকি মেয়েরাও নিজেরা নিজেদের মতো কলেজে যাওয়ার জন্য স্নান সেরে খেয়ে দেয়ে তৈরি হয়।
সারাদিন কলেজের ক্লাস নিয়ে হৈ হল্লা করে কাটল। বিকেলে হস্টেলে ফিরে আসে জাহ্নবী আর সুলেখা।
সন্ধ্যা বেলা। সুলেখা আর জাহ্নবী দুজনেই তখন পড়ছিল । কিন্তু জাহ্নবীর হঠাৎ মনে পড়ে গেল গতকাল রাতে ঘটা ঘটনা গুলোর কথা। আর চমক দিয়ে মনে পড়ল সেই নম্বরটার কথা! ঐ নাম্বার টার কথা তো ভুলেই গেছিল সে! যেই মনে পড়া অমনি আবার ফোন টা নিলো সে। আর তখনি সুলেখা বলে উঠল, “জাহ্নবী কি হচ্ছে ওটা? পড়া ছেড়ে উঠলি কেন রে? পড়তে বস এখন, পরে ফোন দেখবি।”
সুলেখা যেন একদম তার মা। “আচ্ছা ঠিক আছে তাই হোক” বলে সে পড়তে বসে। রাতেই না হয় দেখবে।
এগারোটা বেজে গেছে। খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে। সুলেখা গান শুনছে আপনমনে আর প্রেমালাপ চলছে জাহ্নবী আর পীযুষের।
তবে আজ জাহ্নবীর মন যেন অন্য দিকে। খুব দ্রুত কথা শেষ করে সেই নম্বরটা নিয়ে আবার ঘাটাঘাটি করা শুরু করে দেয়।
“Never call on this number” লেখাটা পড়েই কৌতুহল ক্রমশ বাড়ছে তার। তাই নাম্বারটা সম্পর্কে আর কিছু না দেখে বুকে কৌতুহল রেখে ডায়াল করেই বসল জাহ্নবী নতুন কোনো অ্যাডভেঞ্চার এর উদ্দেশ্যে।
ফোন করে ভেবেছিল অনেক কিছু হবে কিন্তু ফোন টা লাগলোই না । কোনো শব্দ না হয়েই কেটে গেল।
মনে কৌতুহল থেকে সোজা একটা কৌতুক কাজ করছে এবার। আর্টিকেল টা যে লিখেছে মনে হয় লোকটা সস্তার নেশা করে লিখেছিল । খুব হাসি পাচ্ছে এবার জাহ্নবীর। এই একটা নাম্বার নিয়ে সে তো একেবারে চিরুনি তল্লাশি করতে নেমেছে। সত্যি যতসব পাগলামি, ফালতু!
আপনমনে বলতে বলতে সুলেখা কে গুড নাইট বলে শুয়ে পড়ে।
আর ভালো করে দেখে নেয় যে আজ ফোন অফ বা যাবতীয় সবকিছু ঠিক ঠিক যা করার তা ঠিক করে করেছে কিনা।
“হুম অলরাইট” বলে এবার সত্যি সত্যি শুয়ে পড়ে জাহ্নবী।
ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে হঠাৎ করে। আধবোজা চোখে আস্তে আস্তে যেখানে জাহ্নবীর ওঠার কথা সেখানে সে তড়াক করে ওঠে এইটা দেখে যে আজকেও সেই গতকালের মতো ঘটনা!
সে যে ফোন অফ করেনি এইটা ভগবান বললেও সে বিশ্বাস করবে না কারণ সে আজ দৃঢ় গলায় জোর দিয়ে বলতে পারে সে ফোন অফ করে ঘুমিয়েছে যে। তাহলে অফ থাকা ফোনে কল আসে কি করে? কেমন একটা ভয় করতে থাকে তার। আশ্চর্য তো, আজ সুলেখার ঘুম ভাঙেনি। যাক ভালো হয়েছে নাহলে আবার চেঁচামেচি করত হয়ত।
জাহ্নবী কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন টা দেখে সেই নম্বরটা থেকে ফোন এসেছে যেই নম্বরটা নিয়ে তার এত গবেষণা ও সবশেষে কৌতুক প্রাপ্তি। গলাটা শুকিয়ে গেছে তার। ফোন টা দুবার হওয়ার পর তৃতীয় বারের মাথায় ওকে করল সে আর বলল “হ্যালো”।
ওপার থেকে কোনো সাড়া নেই । ফের জাহ্নবী বলে, “হ্যালো।” ওপারে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন? “হ্যালো হ্যালো।”
অনেক বার করে হ্যালো বলার পর বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয় জাহ্নবী। দূর এই নম্বরটা নাকি horrible , কচু horrible, এটা harassment call. যত্তসব! সে ফোন রেখে শুতে যাবে ফের ফোন বেজে ওঠে। হ্যাঁ ঐ নম্বরটা থেকেই। আবারো ওকে করে জাহ্নবী “হ্যালো হ্যালো” বলে কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায় না।
মাথাটা খুব গরম হয়ে যাচ্ছে এবার। একে তো ফোন টার গন্ডগোল শুরু হয়েছে। অফ করলেও অফ হয় না তার উপর আবার এই আননোন নম্বর টা! মাথা খারাপ করে দিচ্ছে তার।
“এই সুলেখা একটু ওঠ না রে। কি রে, ঐ, ওঠ না একটু।”
“হুম বল কি হয়েছে?” ঘুম জড়ানো গলায় বলে সুলেখা।
“বলছি দেখ না এই নাম্বারে ফোন করছে অনেক বার কিন্তু কোনো কথা বলছে না।”
“আবার ফোন! আমি শুনব না।” বলে পাশ ফিরে শোয় সুলেখা।
সুলেখা কে উদ্দেশ্য করে “দূর বাজে মেয়ে একটা!” কথাটা বলে আবার ফোনের ব্যক্তি তে মনোনিবেশ করে।
পড়ুনঃ- ভুতের গল্প- অদ্ভুতুড়ে বাড়ি
“হ্যালো আপনি কে বলছেন বলুন তো? দেখুন আপনি যদি এভাবে চুপ করে থাকেন আমি কিন্তু ফোন কাটতে বাধ্য হবো। হ্যালো হ্যালো…।”
বিরক্ত হয়ে রেগেমেগে ফোন কেটে দেয় জাহ্নবী। ফের ফোন বেজে ওঠে। ঐ নাম্বার থেকে ফের ফোন এসেছে। জাহ্নবী ফোন সঙ্গে সঙ্গে সুইচ অফ করতে উদ্যত হয় কিন্তু ফোন সুইচ অফ হলো না বরং গোটা ঘরে সে নিজেকে একা আবিষ্কার করল।
“সুলেখা! সুলেখা কৈ গেলো? সুলেখা! সুলেখা!” করে এদিক ওদিক তাকিয়ে ডাকতে থাকে জাহ্নবী।
ফোন বাজছে এদিকে। জাহ্নবী ওকে করে থমথমে গলায় বলে, “হ্যালো।” একটা শো শো শব্দ শুনতে পায় এবার জাহ্নবী।
“হ্যালো আপনি কে বলছেন প্লিজ বলুন। “
ঘড়িতে তখন রাত তিনটে বাজে। বাইরে কুকুর গুলো কি বিশ্রীভাবে কেঁদে উঠছে। গোটা ঘর অন্ধকার। তার উপর আকস্মিক ভাবেই সুলেখা কে ঘরে দেখতে পাচ্ছে না তারপর সবশেষে এই রহস্যময় ফোন টা। মনে অজানা একটা ভয় এবার বাসা বাঁধছে তার।
“হ্যালো।”
হঠাৎ ওপাড় থেকে একটা আর্তনাদ শুনতে পেল জাহ্নবী।
আ!!!!!!!!!
যেন খুব উঁচু কোনো জায়গা থেকে কেউ পড়ে গেল ।
আঁৎকে ওঠে জাহ্নবী। ফোন টা হাত থেকে পড়ে যায় তার। “সুলেখা, সুলেখা কোথায়?”
জাহ্নবী ছুটে বাইরে চলে যায় আর গিয়ে যা দেখে তাতে তার হৃৎপিন্ড বের হয়ে আসতে চাইছে আতঙ্কে ।
দেখে সুলেখা আর বাকি মেয়েরা হস্টেলের নীচে দাঁড়িয়ে একজোট হয়ে কী একটা ঘিরে রয়েছে তারা। জাহ্নবী দ্রুত সিড়ি দিয়ে নেমে দেখে যেই জিনিসটাকে ঘিরে গোটা হস্টেলের জটলা সেটা হস্টেলের একটা মেয়ে সীমার লাশ। সে সম্ভবত ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে। কখন পড়েছে কেউই বুঝতে পারেনি। হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই সিকিউরিটি গার্ড বাইরে এসে চিৎকার করে ওঠে, “খুন, খুন” বলে!
শম্পা ম্যাডাম বলেন, “কি করে ও পড়ে গেল ও উঁচু ছাদ দেখে? কেউ খেয়াল করল না এ কি করে সম্ভব? এতবড় একটা হস্টেলের এতজনের মধ্যে কেউই খেয়াল করেনি ! পুলিশে খবর দাও শিগগির। আমি জানি এতে আমাদের হস্টেল নিয়েও টানাটানি চলবে কিন্তু একটা মেয়ের প্রাণের থেকে তো হস্টেল বড় হতে পারে না!”
রেখা ম্যাডাম বলে, “তুমি কি বলছ শম্পা, একবার যদি এইসব জানাজানি হয় তো আমাদের কনস্ট্রাকশনের দোষ দেবে সবাই। কেউ ভর্তি হতে আসবে ভেবেছ এখানে?”
নানারকম আলোচনা সভা হচ্ছে সেই জটলার মধ্যে। কিন্তু জাহ্নবীর বুক ভয়ে কাঁপছে। সে সকলের আলোচনার মাঝে দেখে দূরে কি যেন একটা ছায়া মতো দাঁড়িয়ে।
জাহ্নবী মন দিয়ে তাকাতেই সরে গেল হঠাৎ করে।
“কি রে জাহ্নবী, কি হয়েছে তোর? কি দেখছিস তুই ওভাবে?” জাহ্নবী কে ঠেলা দিয়ে বলে সুলেখা।
“থতমত খেয়ে জাহ্নবী বলে, কই কিছু না তো, কিচ্ছু হয়নি আমার। ”
সে ছুটে নিজের ঘরে চলে আসে। থরথর করে কাঁপছে সে এক অজানা আতঙ্কে। ঐ নাম্বার টা তে সে ফোন করবে আবার।
ডায়াল বাটন ক্লিক করতেই ফোন কেটে যায়। মনে দ্বন্দ্ব চলছে। এটা কি হ্যাকার দের কাজ। কিন্তু ঐ আর্তনাদ? গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। জল খায় সে।
না এখানে থাকা ঠিক হবে না একা একা। সে আবার নীচে চলে গেল।
সুলেখা বলে, “তোর কি হয়েছে বলতো জাহ্নবী, বেশ কিছুক্ষণ ধরে তোকে খুব অন্যমনস্ক লাগছে। তুই কি সীমার আকস্মিক মৃত্যুতে….”
সঠিক পয়েন্ট পেতেই কথা ঘোরাতে আরো সুবিধা হলো দেখে জাহ্নবী বলে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ সুলেখা, তুই ঠিক বলেছিস, আমি সীমার ব্যাপার টা নিয়েই ভাবছিলাম আসলে।”
“হ্যাঁ রে, কি করে যে এসব হলো আর কি থেকেই বা হলো, কেউ বুঝতেও পারেনি, টেরও পায়নি।খুব অবাক লাগছে বিশ্বাস কর।”
ততক্ষণে পুলিশে খবর দেওয়ার তারা এসে নিজেদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর ডেড বডি টা গেছে পোস্ট মর্টেম এ। সবারই একটাই প্রশ্ন, মেয়েটা ছাদ থেকে এভাবে পড়ে গেল আর কেউই টের পেল না!
পড়ুনঃ- রহস্যময় গল্প- অভিশপ্ত পেইন্টিং
কিন্তু জাহ্নবীর মন ও মস্তিষ্কে আতঙ্কমিশ্রিত দুশ্চিন্তা ভর করেছে। রাতে আর এই ঘটনা ঘটার পর কারোরই ঘুম হয় না। সবার মন নয় চিন্তিত, নয় ব্যথিত কিন্তু জাহ্নবীর মন আতঙ্কিত!
ঐ আর্তনাদ টা কি তাহলে নিঃশব্দে, সবার অলক্ষ্যে ছাদ থেকে পড়ে যাওয়া সীমার ছিল? আগেভাগে জানান দিচ্ছিল ঐ নাম্বার! দুর্ঘটনার রেশ কাটে আস্তে আস্তে। তবে কি করে হঠাৎ এভাবে সীমা ছাদ থেকে পড়ে গেল তার উত্তর কেউ বের করতে পারে না। অনেক গুলো দিন কেটে গেছে ঐ ঘটনার পর। আর তারপর ঘটে আরেকটা অদ্ভুত অলৌকিক ঘটনা।
সীমার আকস্মিক মৃত্যুর রেশ ততদিনে মোটামুটি কেটে গেছে । সবাই নিজেদের মতো আবার যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
জাহ্নবী আর সুলেখাও তৈরি হচ্ছে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে।
কলেজ শেষ ততক্ষণে। সবাই যে যার মতো বেরিয়ে পড়েছে। তখন বিকেলের মেঘলা আকাশ। চারিদিক টা প্রাকৃতিক ভাবে অন্ধকার লাগলেও, জাহ্নবীর কাছে যেন অস্বাভাবিক অন্ধকার লাগছে। সবাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ির দিকে রওনা দেয়। কারণ বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা আছে।
জাহ্নবী কি যেন ভাবছে দেখে সুলেখা বলে, “এই জাহ্নবী, কি ভাবছিস তুই? আরে তাড়াতাড়ি চল, বৃষ্টি নামলে তো পুরো শেষ।” বলতে বলতে জল খাওয়ার উদ্রেক হয় সুলেখার। সে ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে জল খেতে যাবে ঠিক তখনই জাহ্নবীর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। সে দেখে সুলেখার বোতলে জল নয়, রক্ত।
জাহ্নবী হ্যাঁচকা টানে ছুঁড়ে ফেলে দেয় বোতলটা।
বন্ধুর এ হেন আচরণ দেখে ঘাবড়ে যায় সুলেখা। বলে, “এই জাহ্নবী, তুই আমার জলের বোতলটা ওভাবে ফেলে দিলি কেন? আমি তো জল খেতে যাচ্ছিলাম।”
“জল! কি বলছিস তোর খেয়াল আছে? ওতে রক্ত ছিল।”
“হোয়াট! কি যা তা বলছিস তুই! জলের বোতলে রক্ত কোথা থেকে আসবে?”
সুলেখার কথা কানে যায় না জাহ্নবীর।
“হ্যালো তোর কি মাথা টাথা খারাপ হলো নাকি রে, বেশ কয়েকদিন ধরে তোর মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। কি হয়েছে বলতো?”
জাহ্নবী শিরায় শিরায় টের পাচ্ছে যে ঐ আননোন নম্বর টা তে ফোন করার পর থেকেই তার সাথে অদ্ভুত কিছু না কিছু হচ্ছে।নাহ, আজ বের করতেই হবে ঐ নাম্বার টার রহস্য কি! কেন ঐ নাম্বার টা তে লেখা Never call on this number? জানতেই হবে।
সুলেখা খুব বিরক্ত হয় জাহ্নবীর উপর। হস্টেলে ফিরে সব কাজ শেষ করতে করতে একসময় রাত নামে। আর তার সাথে আসে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা! জাহ্নবী আজ পীযূষ এর সাথে তেমন কথা বলেনি। তার ধ্যান জ্ঞান শুধু ঐ নাম্বার টা কে নিয়ে। রাত বাড়ছে, একটা একটা করে ঘন্টা পার হচ্ছে।
গভীর রাত। সুলেখা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। জাহ্নবী ফোন টা নিয়ে নাম্বার টা তে ফোন করতে যাবে, হঠাৎ দেখে নাম্বার টা থেকেই ফোন আসছে। জাহ্নবীর গলা শুকিয়ে যায়। সে ফোন টা ওকে করে হ্যালো বলে। কিন্তু কোনো শব্দ পায় না শুনতে।
পড়ুনঃ- অভিশপ্ত বন্ধুত্ব
“হ্যালো কে বলছেন বলুন, আমি কিন্তু আপনার নাম্বার পুলিশের কাছে দেবো।:”
কোনো উত্তর নেই। জাহ্নবীর প্রচন্ড রকমের রাগ হয়। সে কলটা কেটে দেয়। আর ফোন সুইচ অফ করে দেয় আর…
চোখের সামনে ভেসে উঠেছে নাম্বার টা থেকে ফোন। নাহ, ভয় পেলে চলবে না। এটা পুলিশে দিতেই হবে।
কোনোরকমে রাতটা কাটল। পরদিন সে সুলেখা কে না জানিয়ে খুব গোপনে থানায় যায়, সমস্ত বিবরণ দেয় ঘটনার। পুলিশ অফিসার কেও গোপনে তদন্ত চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায় জাহ্নবী।
কিন্তু এক দুর্বিষহ ভবিষ্যত অপেক্ষা করছিল জাহ্নবীর জন্য। যেই পুলিশ অফিসার এই ব্যাপারটা নিয়ে তদন্ত চালানোর কাজে ছিলেন তিনি আকস্মিক দূর্ঘটনায় মারা যান। রাতে এসব ভাবছে হঠাৎ ঘরের লাইট গুলো অফ, অন হতে থাকে, চিড়চিড় করে শব্দ হতে থাকে। আর তারপর গোটা ঘর অন্ধকার। সুলেখা কোথায়? জাহ্নবী আপন মনে ভয়ার্ত হয়ে বলতেই খেয়াল করে সুলেখা তার সামনেই দাঁড়িয়ে কিন্তু তার গলা টিপে রয়েছে আর বলছে, “কি ভেবেছ, আমার রহস্যের সমাধান করবে পুলিশের কাছে গিয়ে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোমাকে একদম শেষ করে দেবো ঐ অফিসার এর মতো!”
“ছাড় আমায় সুলেখা, ছাড়।” আর্তনাদ করে ওঠে জাহ্নবী।
“কে সুলেখা, আমি সুলেখা নই, আমার রহস্য সমাধান যে করবে সেইই মরবে বলে দিলাম। আমার ফোন আসলে যদি কারোর সমাধান বের করার খুব দরকার পড়ে তো তার কপালে মৃত্যুই অপেক্ষা করবে। মনে থাকে যেন।”
এরপর প্রায় প্রতিদিনই জাহ্নবীর সাথে কিছু না কিছু অদ্ভুত, ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতেই থাকত। আর সুলেখাকেও একটু ভয় পেত ঐ ঘটনার পর থেকে। এরপর সে ঠিক করে ফোন টাকেই পুরো বিদায় করবে। যেই ভাবা সেই কাজ কিন্তু সেই কাজটা জাহ্নবী যতবার করতে যায় ততবারই বাধা পড়ে যায়। তাই কিছুতেই জাহ্নবীর চেষ্টা সফল হয়না।
এমনই একদিন সে শুয়ে শুয়ে ভাবছে কিভাবে ফোন টাকে শেষ করা যায় হঠাৎ সেই ভূতুড়ে নাম্বার থেকে ফোন। তবে আজ সুলেখার কি হয়েছে জানে না, জাহ্নবীর ফোন আসতেই খুব রেগে গেল আর ফোনের স্ক্রিনে দেখল সেই নাম্বারটা, যেটা নিয়ে জাহ্নবীর এত প্যানিক।
“রোজ দেখছি এই এক নম্বর থেকে ফোন আসছে। ফোন টা তুই যদি না ধরিস তাহলে আজ আমিই ধরবো।”
“না না সুলেখা ঐ ফোন টা ধরিস না!”
“না আমি আর সহ্য করতে পারছি না । রোজ রোজ এই এক রোজনামচা আমার ভালো লাগছে না আর । আমি আজ ফোনটা ধরবই আর তোর এত কীসের ভয় রে? তুইও তো ফোনটা ধরতে পারিস! তা না করে সেই ডে ওয়ান থেকে দেখছি কেমন ভয়ে কঁকিয়ে উঠিস নয়ত প্যানিক করিস এই নম্বর টা থেকে ফোন এসেছে দেখলেই। আজ তো তোর ঐ ভূতের সাথে আমি কথা বলবোই।”
পরদিন জাহ্নবীর আধমরা দেহ আর সুলেখার মৃত দেহ ঐ ঘর থেকে পায় সবাই। জাহ্নবী কে সবকিছু জিজ্ঞাসা করা হলে খেয়াল করে সে বোবা হয়ে গেছে। সে অনেক কিছু আকার ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইছে কিন্তু কেউই বুঝতে পারে না। অবশেষে সবাই তার আচার আচরণ এর জন্য স্মৃতিবিভ্রম হয়েছে ভেবে মানসিক হাসপাতাল পাঠিয়ে দেয়।
তবে জাহ্নবীর কানের কাছে এখনো একটা কথাই বাজছে, “আমার রহস্য সমাধান যে করবে সেইই মরবে বলে দিলাম , তাই Never share what you saw!”
রহস্যের হাতছানি রচনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- রহস্যময় গল্প- কে ছিল ওটা!! রহস্যের গল্প- যূথিকা tailors
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
বড় রহস্যময় গল্প। রহস্যময় ফোন নাম্বার mysterious story in bengali
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।