প্রিয়জন হারানোর কষ্ট তো শুধু সেই জানে যে হারিয়েছে। পরিবারেকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রিয়জনকে অবহেলার আসনে ঠাই দিয়ে পরবর্তীতে তাকে মিস করার গল্প রয়েছে আজ।
প্রিয়জন হারানোর কষ্ট:- ‘জন্মদিন’
আজ ওর জন্মদিন। ২৫ টা বছর হলো এই দিনটা আমি আর আমার মেয়েতে মিলে পালন করি। আমাদেরকে একলা করে দিয়ে চলে গেছে। হ্যাঁ আমার স্ত্রীর কথা বলছি। আমরা লাভ ম্যারেজ করেছিলাম। ভেবেছিলাম মেনে নেবেনা আমার মা বাবা, আসলে ওনারা একটু সামাজিকতাতে বিশ্বাসী। কিন্তু অসুবিধা হয়নি মেনে নিয়েছেন। ভেবেছিলাম আধুনিকতার প্রভাব পড়েছে। কিন্তু ওর মৃত্যু আমায় ভাবিয়ে তুলেছে। ওর মৃত্যুর পর আমার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলাম। সেই দিন টা মনে করলে আমার গায়ে কাঁটা দেয়।
যখন শুনলাম ও মা হতে চলেছে কতো খুশি হলাম। সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন আমার মা। কিন্তু ভাবতে পারিনি এমন হবে। যদিও মায়ের কথায় কেমন খটকা লেগেছিল সেই দিন বুঝতে পারিনি তার পরিণতি এমন হবে। মা বললেন বৌমা যে ছেলে আসতে চলেছে তাকে সুস্থ ভাবে গড়ে তুলতে হবে। ও শুধু ঘাড় নেড়ে চলে গেলো। আবেগ বশত সেই কথা তখন বুঝতে পারি নি। ওকে দেখে মনে হয়েছিলো ও মুষড়ে গেছে। কথা বলতে চেয়েছিলাম বললো কাজ আছে তুমি অফিস যাও রাত্রে কথা হবে।
অফিস থেকে এসে শুনলাম ও নাকি বাপের বাড়ি চলে গেছে। সন্তান হবার আগে বাপের বাড়িতে গিয়ে থাকতে হবে। মাকে বললাম কিসের নিয়ম এই গুলো , বললো তুই বুঝবি না যখন শ্বশুর হবি বুঝবি। চুপ করে চলে গেলাম। কিছুদিন পর যখন এলো বাড়ি আগের কথা ভুলে গেলাম।
রাত্রে ও আমায় জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করলো। ভেবেছিলাম না বলে চলে গেছিলো বলে কাঁদছে। ওকে বললাম কি হয়েছে তোমার। বললো কিছু না অনেকদিন দেখিনি তোমায়। আমি ওকে বললাম তুমি এখন কাজ কম করো তোমার বিশ্রামের দরকার খুব। সব কিছু ঠিক হবে আমায় জিজ্ঞাসা করলো। কেনো না ঠিক হওয়ার কি আছে। ও কিছু বলতে যাচ্ছিলো আমি বলে দিলাম কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়ো।
অনেক প্রতীক্ষার পর সেই দিন এলো। গমগমে ঘর আজ ফাঁকা। ঘর তালা দেওয়া। সবাই বলা কওয়া করছে, উত্তরসূরি আসতে চলেছে সংসারে। সবাই হাসপাতালে। হাসপাতালে ওটি তে সবুজ আলো জ্বলে উঠলো। মা আমায় ডেকে বললো ঈশ্বরকে ডাক, যে রাজপুত্র আসতে চলেছে সে যেমন সুস্থ ভাবে আসে। আমি বললাম সে যেই আসুক না কেনো সে আমাদের মাথা উজ্জ্বল করবে। জানিনা মায়ের মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। লাইট নিভে গেলো। সবার আত্মহারা আনন্দের শেষ নেই। কিন্তু মোটেও বুঝতে পারি নি এক অবিশ্বাস্য ঘটনা অপেক্ষা করছে।
পড়ুনঃ- প্রিয় মানুষকে হারানোর গল্প
প্রথমে সেবিকা হাসিমুখে এলেও মা কে দেখে কেমন যেন হতাশায় ভরে গেলো তার মন। তবু মুখে হাসি নিয়ে বললেন, অভিনন্দন, আপনাদের বাড়িতে মা লক্ষ্মীর আগমন হয়েছে। আমি তো আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু মায়ের দিকে চোখ যেতেই দেখলাম রেগে লাল হয়ে আছেন। বলেই ফেললেন খুশি হবার কিছু নেই। কথায় কান না দিয়ে ঢুকে পড়লাম ভিতরে। আমার ছোট্ট মহারানী ঘুমে কাদা। চোখে জল চলে এলো। ও তখন হাসছে। বললাম কি হল। বললো এই প্রথম চোখে জল দেখলাম তোমার।
কাছে গিয়ে বসলাম , ওর হাত টা ধরতেই আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। বললো আমি জানি মা খুশি হননি। বললাম মায়ের কথা ছেড়ে দাও উনি একটু অবুঝ। কান্না থামিয়ে আমার সাথে অনেকক্ষণ কথা বললো। কতো কিছু বললো । আমি বললাম আরে থাক থাক এতো কথা বলতে নেই এখন। আজকেই কি সব কথা বলে শেষ করে দেবে নাকি। কথাটা শুনে কেমন চুপ হয়ে গেল।
নার্স এসে বললো আমায় থাকা যাবে না। মেয়ে কে দেখলাম আর একটি বার। ও বললো একটু আনো। দুজনে একটু আদর করি। আমি না বুঝেই চলে গেলাম। মেয়ে আমাদের দুজনকেই ছাড়ে না, শক্ত করে হাত দুটো ধরে আছে আমাদের। এই জন্য হয়তো বলে শিশুরা ঈশ্বরের রূপ, আমি যেটা বুঝতে পারি নি সেটা হয়তো ও বুঝে গিয়েছিলো হয়তো। ওর থেকে ছাড়িয়ে শুইয়ে দিলাম। আমি ওকে শুইয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। আবার ডাকল, ডেকে জড়িয়ে ধরে আরো কাঁদতে লাগলো।
আমি ওকে বললাম কি হয়েছে বলোতো । বললো কিছু না, তোমার জন্য একটা গিফট ঘরে রাখা আছে আলমারির ভিতর। বাড়ি গিয়ে দেখবে। সাবধানে যাবে। এই বলে শুয়ে পড়লো। আমি বাড়ি গিয়ে আলমারি খুলে দেখলাম কি রেখেছে। দেখলাম একটা চিঠি। চিঠিটা খুলে পড়তে থাকি । শেষ করেই বসে পড়ি বিছানাতে। আমি নিস্তব্ধ।
হঠাৎ ফোনের আওয়াজ বেজে উঠলো। আমি ভয়ে ফোনটা কানে নিলাম , বললো তাড়াতাড়ি হসপিটালে আসুন। আমি ছুটে যাই। যেয়ে শুনি সে আর নেই। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না কি করে হল। আমি বুঝেছি কি হয়েছিল। আমাদের দুজনকে একা করে চলে গেলো সে। আমিও পরে সবাইকে ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে চলে এলাম।
ক্রিং ক্রিং, আবার ফোনের শব্দ, ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো, বাবা, আজ একজন মেয়ের মা হলেন। হ্যাঁ আমার মেয়ে আজ ডাক্তার।
ওই চিঠিতে কি লিখা ছিল জানেন, ” প্রিয়, খুব ভালো থেকো, আজ আমি বাবার কাছে যাচ্ছি, মা বললেন বাপের বাড়ি যেতে। তোমায় না বলেই যাচ্ছি, ক্ষমা করো। আর একটা কথা, আমার যদি এক মেয়ে হয় হয়তো আমি আর থাকতে পারবোনা, মাকে খুশি না করতে পারলে। যদি মেয়ে হয় খেয়াল রেখো তার। মায়ের নামটাই দিয়ো। ওকে ডাক্তারি পড়াবে যেমন খুব বড় ডাক্তার হয়। আর মাকে কিছু বলবে না। এটা মা বলেন নি আমি বলছি। আমাদের মেয়ে যেন না জানে এই কথা। আর তুমি বিয়ে করবে। ইতি, …।”
নিজের নামটাও লিখেনি। আমি ওর দুটো কথা রাখতে পারি নি। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ। হাতের চিঠিটা বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়ে অন্য জায়গাতে রেখে দিলাম আগের ২৫টা বছরের মতো।…
শুভদীপ গরাই
গল্পের চিত্রকলায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- এক তরফা প্রেমের গল্প বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
প্রিয়জন হারানোর কষ্ট। স্বজন হারানোর কষ্ট। bengali emotional story
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।