আজকের বন্ধুত্বের গল্প টিতে টক্সিক প্রেম থেকে নিজের প্রিয় বান্ধবীকে রক্ষা করার ঘটনা খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা।

বন্ধুত্বের গল্পঃ- “বেস্টফ্রেন্ড”

কি ব্যাপার তোর, বড্ড ঘ্যাম নিয়ে আছিস মনে হচ্ছে? শ্রাবণী কে প্রশ্ন করে নীলাভ। 

কিছু হয়নি তুই যা তো এখন, ভালো লাগছে না। বিরক্ত হয়ে বলে শ্রাবণী। 

আমি তো এখন কিছুতেই তোকে ছেড়ে যাবো না। আগে তোর মন খারাপ এর কারণ জানব, মানে আমি বুঝতে পারছি কিন্তু মিলিয়ে দেখব। তারপর যদি আমার ধারণা টা ঠিক হয় সেই অনুযায়ী তোর মন খারাপ ঠিক করব তারপর আমি যাবো বুঝতে পেরেছিস। 

শ্রাবণী আর নীলাভ দুজনেই ছোটবেলাকার প্রিয় বন্ধু একে অপরের। কেউ কাউকে জোর করে বলেনি, “তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হবি বা আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড হবো।” আপনা থেকেই খুব সুন্দর একটা অটুট বন্ধন তৈরি হয়েছিল সময়ের সাথে সাথে। 

ছোট থেকে পড়াশোনা, খেলাধূলা, ঝগড়া, মারামারি, খুনসুটি, অধিকারবোধ, মান – অভিমান আর এখন বড় হয়ে কলেজে পড়া; সবটাই একসাথে। শ্রাবণী খুব সুন্দর নাচে আর নীলাভ গায় খুব সুন্দর গান, ছোট থেকে একসাথে সবজায়গায় একসাথে অনুষ্ঠান করে এসেছে। দুজনেই দুজনের অন্তরের, দুজনেই দুজনের  নাড়ি নক্ষত্র সব চেনে জানে। 

আজ আমার শ্রাবণী ম্যাডাম এর মন খারাপ এর কারণ টা আমি গণনা করে বলতে পারি নিশ্চয়ই গতকাল আমি বাড়ি ফিরে কল করিনি বলে রাগ হয়েছে, কি তাই তো?

বন্ধুত্বের গল্প
বন্ধুত্বের গল্প

ইচ্ছে করছে এক চড় মারি তোকে! তোকে আমি খুন করে ফেলব বুঝতে পেরেছিস তো নীলাভ! রাগে ফুঁসে ওঠে শ্রাবণী। 

ওরে বাপরে, খুব হট টেম্পার আছে দেখছি। শ্রাবণের ধারা এখন অগ্নিশিখা হয়ে গেছে!

ইয়ার্কি মারিস না, মাথা গরম আছে খুব। 

তাই আমি তোর জন্য চকলেট এনেছি। শ্রাবণীর দিকে চকলেট এগিয়ে হেসে বলে নীলাভ।

আমি খাবো না তোর চকলেট। তুই কেন গতকাল ফোন করিসনি পৌঁছে। খুব পাকা হয়ে গেছিস তাই না! খুব শয়তান হয়ে গেছিস তুই!

আচ্ছা বাবা সরি, কান ধরছি। এবার তো চকলেট টা ধর।

না। 

আচ্ছা আমি কান ধরে ওঠবোস করছি দেখ। সরি আমার বেস্টু, সরি ডিয়ার, মাফ কর দো। তুই আমার চড় মার, থাপ্পড় মার, ঝগড়া কর, কিন্তু প্লিজ মন খারাপ করে থাকিস না। আমার ভুল হয়ে গেছে শ্রাবণী, আর হবে না কথা দিচ্ছি। আই অ্যাম ভেরি ভেরি ভেরি সরি, এক্সট্রিমলি সরি।

আবার সরি বলছিস! তোর সাথে তো আরোই কথা বলব না। তোকে না আমি বলেছিলাম যে বেস্ট ফ্রেন্ড এর মধ্যে না সরি, না থ্যাঙ্কু ইউ কোনোটাই হয় না। আর তুই…

হ্যাঁ সত্যিই তো, তোকে সরি বলতে যাবো কেন, দোষ তো তোরও আছে, তুই কেন আমাকে ফোন করে বকা দিসনি! 

পড়ুনঃ- সেরা বন্ধুত্বের গল্প

ওরে শয়তান, তুই তো দেখছি যতটা শয়তান ভাবি তার চেয়েও অনেক বেশি। সরি বলে আবার ফিরিয়ে নিচ্ছিস শুধু তাই নয়, আবার আমার ঘাড়ে নিজের দোষ চাপিয়ে। তোর সাথে কথাই বলব না। তুই যা খুশি কর গিয়ে।

তুই তো আচ্ছা পাগলী দেখছি। সরি বললে বলছিস বন্ধুত্বে এসব হয় না আবার ফিরিয়ে নিলে রেগে যাচ্ছিস, কোনটা করব? হাসতে হাসতে বলে ওঠে নীলাভ। 

শ্রাবণীর রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। 

নীলাভ ওর কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, অত রাগ করতে নেই পিচ্চি আমার, একটু চকলেট খা প্লিজ, মনটা ঠিক হয়ে যাবে। 

মান অভিমান সব একসময় ঠিক হয় শ্রাবণীর। নীলাভ অদ্ভুত সব হাসানোর মতো অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে বলে, শোন, তুই রাগ কর, ঝগড়া কর, মার আমায় তাও ঠিক আছে কিন্তু ছেড়ে চলে যেতে পারবি না, কথা বন্ধ করতে পারবি না মনে রাখিস। বাড়ি হামলা করব তোর যদি এমন করিস।  

শ্রাবণীও হাসে নীলাভর এমন বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে কথা বলা দেখে। 

তোকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব রে পাগলা। 

নীলাভ শ্রাবণীর গাল দুটো ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলে, তুই আমার প্রিয় বন্ধু, তোকে আমি কোথাও যেতে দেবো না আমাকে ছেড়ে। তোর সব রাগ, অভিমান, ঝগড়া, চিল্লাচিল্লি সহ্য করব, পারলে গালাগালিও করিস কিন্তু তবুও তোকে সবসময় এই হৃদয়ে আগলে রাখব। 

ঠিক আছে ঠিক আছে অনেক হয়েছে। 

আচ্ছা শ্রাবণী রে, আজ আসি কেমন। 

ফোন করব, একবারে ওকে করবি বুঝলি। 

বন্ধুত্ব ভালোবাসার গল্প
বন্ধুত্ব ভালোবাসার গল্প

যথা আজ্ঞা মহারাণী আমার, আদেশ শিরোধার্য । সেলাম ঠুকে বলে নীলাভ। 

সাবধানে যাস কেমন। 

হ্যাঁ।

“সাবধানে যাস কেমন”- আলাদাই একটা আবেগ অনুভূতি থাকে এই ছোট্ট কথাটা তে। নীলাভ সাইকেল চালাতে চালাতে ভাবে শ্রাবণীর ঐ রাগী মুখটার কথা। রাগলে ওকে যে কতটা সুন্দর লাগে তা যদি ও জানত তাহলে কি হতো কে জানে! 

বেশ চলছিল দিন দুজনা তে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে শ্রাবণী কে একটু বেশিই খুশি খুশি দেখায়। নীলাভ প্রথমে কিছু বুঝতে পারে না। পরে শ্রাবণী নিজেই একদিন বলে, জানিস নীলাভ, কলেজের একটা ছেলে আমাকে প্রোপোজ করেছে। 

তাই নাকি!! তোকে করেছে প্রোপোজ, যে করেছে সে মরল তাহলে! ইয়ার্কি করে বলে ওঠে নীলাভ। 

এই, খবরদার, এসব কি বলছিস তুই! মরল মানে! আমি কি এতোই খারাপ নাকি? 

না না আমি ভাবছি ও তো জানে না তুই কেমন তাই ভাবলাম আর কি! মুচকি মেরে হেসে ওঠে নীলাভ। 

তুই না খুব বাজে ছেলে বুঝলি তো! 

আচ্ছা তুই কি তার প্রস্তাবে হ্যাঁ বলে প্রেম করাও শুরু করে দিয়েছিস নাকি? 

শ্রাবণী সব দাঁত বের করে হেসে বলে, হ্যাঁ রে। 

বাহ, খুব ভালো কথা। 

জানিস ছেলেটার নাম শ্রেয়াণ, আমার নামের সাথেও মিল আছে। খুব ভালো ছেলে, তোকে দেখাবো ওকে। 

পড়ুনঃ- প্রিয় বন্ধুকে হারানোর গল্প 

ঘাড় চুলকে বিজ্ঞদের মতো নীলাভ বলে ওঠে, আমি কত কি ভাবলাম আর তুই সব চটকে দিলি। 

কি ভাবলি? 

ভাবলাম জীবন টা সুখের করব, তা আর হলো না। 

মানে? 

মানে আর কি,ভাবলাম নিজেও সিঙ্গেল থাকবো, তোকেও সিঙ্গেল রাখব, কেউ কোনো রিলেশন বা প্রেমটেম এর দিকে যাবো না। অথচ তুই সেই প্রেমে পড়ে গেলি…! ঠিক আছে অসুবিধা নেই প্রেম কর, তবে আমি ছেলে টা কে দেখতে চাই। দেখি তোকে পছন্দ করেছে, তার তো এলেম থাকা দরকার নাহলে তো তুই কি করবি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! হো হো করে হেসে ওঠে নীলাভ। 

আমাকে সবসময় লেগপুল করে তুই কি পাস বলতো! মুখ ভার করে বলে শ্রাবণী। 

দারুণ মজা পাই! 

শয়তান ছেলে একটা! 

বেশি পাকামি করবি না, সিঙ্গেল মানুষ, তোদের প্রেম চটকে দেবো কিন্তু। 

নীলাভ! তেড়ে ওঠে শ্রাবণী। 

সেদিন কলেজ ফেরত পথে শ্রাবণী আলাপ করিয়ে দেয় নীলাভর সাথে শ্রেয়াণের। 

নীলাভ দেখে বেশ হ্যান্ডসাম চেহারা, স্মার্ট, সুন্দর দেখতে ছেলেটা কে।

হাই তুমিই মনে হয় শ্রাবণীর বন্ধু নীলাভ? 

শুধু বন্ধু না, ওর সবচেয়ে প্রিয় ও কাছের বন্ধু, বেস্টফ্রেন্ড আমি। ভদ্রতা মেশানো অথচ তীক্ষ্ণ স্বরে বলে ওঠে নীলাভ। 

ওহ হ্যাঁ, সরি সরি। হেসে বলে ওঠে শ্রেয়াণ। 

নীলাভ শ্রাবণীর নতুন রিলেশনশিপ কে অভিনন্দন জানাতে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ট্রিট দেওয়ার প্ল্যান করে মনে মনে। তবে মুখে বলে ফুচকা খাওয়ানোর কথা। তাই শুনে শ্রেয়াণ বলে, এই নীলাভ শোনো না বলছি কি মেয়েদের মতো ফুচকা পার্টি করছ! চলো আজ কোনো রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাক, আমি রেফার করছি। 

awesome friendship story
awesome friendship story
<

নীলাভের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিটা এক মুহুর্তের জন্যও সরেনি শ্রেয়াণ এর ওপর থেকে। ও মুখে হাসি রেখে বলে, কেন ফুচকা পার্টি তোমার পছন্দ না? শ্রাবণী তুই কি বলিস? 

শ্রাবণী দো’টানায় পড়ে যায়। মন তো চাইছে ফুচকা পার্টি কিন্তু যদি লাভার রাগ করে, তাই বাধ্য হয়ে রেস্টুরেন্টেই হ্যাঁ বলে। 

নীলাভ সবটাই বুঝতে পারে। তবুও না বোঝার ভান করে বলে, আচ্ছা বেশ তাই হবে। তা আমি আজ খাওয়াই, শ্রেয়াণ তুমি অন্য দিন খাইও কেমন। 

না না তা কেন, আজকে আমিই খাওয়াবো। 

না আমি। তুমি অন্য দিন প্লিজ শ্রেয়াণ। 

আচ্ছা ঠিক আছে। 

রেস্টুরেন্টে গিয়ে তিনটে কোল্ড ড্রিঙ্কস এর অর্ডার দিয়েছে শ্রাবণী। শ্রেয়াণ আর শ্রাবণী পাশাপাশি বসেছে আর শ্রাবণীর মুখোমুখি চেয়ারটাতে নীলাভর জায়গা। নীলাভ তখনো আসেনি। কিছু একটা দরকারে রেস্টুরেন্টের বাইরে গিয়েছিল।

ফিরে আসার সময় দূর থেকে দেখতে পায় শ্রেয়াণ খুব চেষ্টা করছে শ্রাবণীকে অসৎ স্পর্শ করার। রাগে জ্বলে ওঠে নীলাভ। সে চালাকি করে ডাকে, শ্রাবণী একটু শোন তো।

শ্রাবণী ব্যস্ত হয়ে উঠে বলে, একটু ওয়েট, নীলাভ ডাকছে, আমি এখনি আসছি। 

কি হয়েছে নীলাভ? তুই কোথায় গেছিলি?

বলছি শোন না চল আমার সাথে, শ্রেয়াণের সাথেই বলব। 

আচ্ছা তাহলে ডাকলি কেন, চেয়ারে বসেই তো বলতে পারতিস! 

সরি রে। 

নীলাভ শ্রাবণীর হাত ধরে নিয়ে বসিয়ে দেয় ওর চেয়ারটাতে আর নিজে বসে শ্রাবণীর চেয়ারে। 

একি, চেয়ার চেঞ্জ হয়ে গেল কেন? শ্রেয়াণ আশ্চর্য হয়ে বলে। 

পড়ুনঃ- জীবন যুদ্ধের কাহিনী 

নীলাভ হেসে বলে, শ্রাবণীর সাথে তো তোমার আলাপ আছে, প্রেম করছ দুজনে, আমি যখন কাবাব মে হাড্ডি অলরেডি হয়েই গেছি তখন তো সেটা বজায় রাখা উচিত বলো।

শ্রেয়াণের মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে ও খুব বিরক্ত। তবুও বলে, না না তুমি এভাবে বলছ কেন?

হঠাৎ শ্রাবণীর একটা ফোন আসে আর শ্রাবণী ওদের দুজনকে ওয়েট করতে বলে কথা বলতে বাইরে যায়। 

আর নীলাভ ড্রিঙ্কস এর দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে অথচ দৃঢ় কন্ঠে বলে ওঠে, আমার প্রিয় বন্ধুর সাথে ওর সরলতার সুযোগ নিয়ে কোনো অসাধু কাজ করা তো দুরের কথা, চেষ্টা করলেও বুঝবে এই নীলাভ তোমাকে ছেড়ে দেবে না। মনে থাকে যেন। 

শ্রেয়াণের গলা শুকিয়ে যায় আকস্মিক নীলাভর এমন কথা শুনে। 

ভয় পাচ্ছ নাকি অবাক হলে? দেখো যেটাই হও সবার আগে মগজে, রক্ত, শিরা, উপশিরা, ধমনী ও মনে এটা ঢুকিয়ে নাও যে শ্রাবণীকে ঘিরে ওকে রক্ষা করার জন্য সবসময় এর তৈরি একটা ঢাল আছে , যেটা হলাম আমি। তাই যেটা করবে ভেবে চিন্তে, কেমন। আমি চাই না শ্রাবণীর নতুন রিলেশনশিপ ভাঙুক কিন্তু আমি চাই সেটা যেন ভুল মানুষের সাথে হলে ভেঙে যায়। বি কেয়ারফুল। 

শ্রাবণী ফিরে এসে বলে, আজকের দিনটা খুব সুন্দর কাটল তাই না? 

হ্যাঁ ঠিক বলেছিস! কি বলো শ্রেয়াণ। 

হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। ঢোঁক গিলে বলে শ্রেয়াণ।

এর পর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে, নীলাভ এর মধ্যে শ্রেয়াণের উপর নজর রেখে ভালোই আন্দাজ করতে পেরেছে যে ছেলেটা খুব ই সন্দেহবাতিক এবং সবসময় শ্রাবণীকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রবণতা। তবে নীলাভ প্রতিবারই শ্রাবণীর সামনে হোক বা ওর আড়ালে, শ্রেয়াণের অসৎ উদ্দেশ্য পূরণ হতে দেয়নি।

নীলাভর বাড়িতে শ্রাবণী গেছিল সেদিন।  তখন পড়াশোনা করছে আর শ্রাবণী ওর  পাশে থাকা জানলার বাইরে উদাস ভাবে তাকিয়ে আছে। 

নীলাভর নজর পড়তেই বলে, কি হয়েছে শ্রাবণী, মন খারাপ কেন? 

জানলার দিকে তাকিয়েই শ্রাবণী বলে, বেস্টফ্রেন্ড গুলো সত্যিই টক্সিক হয়। 

মানে? কি বলতে চাইছিস তুই? 

বেস্টফ্রেন্ড থাকলে কখনোই কোনো রিলেশনশিপে যাওয়া যায় না। ওদের টক্সিক স্বভাবের জন্যই রিলেশনশিপ গুলোতে টক্সিক এর তকমা পড়ে যায়। 

আমি তোর কথা কিছু বুঝতে পারছি না। 

বুঝবি কি করে বল, অন্যায় যে করে সে কি বোঝে বল ! রেগে বলে ওঠে শ্রাবণী। 

কি অন্যায় করেছি আমি? 

তুই সেদিন রেস্টুরেন্টে ওভাবে সিট বদলালি, এমনই একটা পরিস্থিতি, আমি কিছু জিজ্ঞাসা করার সুযোগই পেলাম না যে তুই সিট চেঞ্জ কেন করলি। আর এখানেই শেষ নয়, আমাদের আলাদা করে বসিয়ে আমার ফোন আসাতে আমি যখন চলে গেলাম, সেই ফাঁকে তুই শ্রেয়াণ কে অপমান করেছিস! তুই কি চাস বলতো, নিজের তো প্রেম করার ক্ষমতা নেই, আমার প্রেমটাকেও কি সহ্য করতে পারছিস না? তুই বেস্টফ্রেন্ড না কানে বিষ ঢালার সেই টক্সিক ফ্রেন্ড গুলো!!! ছি! আমি তোকে এমন ভাবিনি নীলাভ বিশ্বাস কর। আজ তোর জন্য আমাদের নতুন সম্পর্ক শুরুতেই ভাঙতে বসেছে। ও আমার মেসেজ সিন করে না, লেট করে রিপ্লাই দেয়। দেখা হলেও ইগনোর করছে। এটাই তো চেয়েছিলি তুই তাই হয়েছে, এখন নিশ্চয়ই আমাকে কাঁদিয়ে খুব খুশি হয়েছিস?

নীলাভ সব চুপচাপ শোনে, তারপর বলে, বেশ, আমি যখন টক্সিক ফ্রেন্ড তখন তোর জীবন থেকে আমার সমস্ত টক্সিন আমি সরিয়ে নেবো। কিন্তু মনে রাখিস তুই যাকে ভালোবাসছিস সে তোকে ভালোবাসে না,  ভালোবাসতে পারে না । তুই একটা ভুল মানুষ কে বেছে নিজের ক্ষতি করছিস। 

আবার! এতকিছু বলার পরেও তুই সেই শ্রেয়াণের নামে বলছিস! তোর লজ্জা নেই তাই না? 

না নেই, কি করব বল। 

একটা চড় মারব তোকে আমি। একদম কথা বলবি না আমার সাথে। তোর মুখ আমি দেখতে চাই না। 

শ্রাবণী চলে যায় কাঁদতে কাঁদতে আর নীলাভ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। 

কথা কমিয়ে দেয় শ্রাবণী নীলাভর সাথে। নীলাভ অনেকবার ফোন করলেও ফোন ধরে না। আর শ্রেয়াণ সেই সুযোগ টা নীলাভর উপর প্রতিশোধ হিসেবে কাজে লাগায়। আর তুরুপের তাস করে শ্রাবণীকে। শ্রাবণীর উপর মানসিক চাপ দেয়, সবসময় সব জায়গার রাগ, মেজাজ, খারাপ ব্যবহার সবটা শ্রাবণীর উপর দেখায়। আর চলে ভালোবাসার দোহাই দিয়ে নোংরা নোংরা কথা। 

কয়েকদিন এই অসহ্য অনুভূতি নীলাভ আর সহ্য করতে পারে না, ও সোজা চলে যায় শ্রাবণীর বাড়ি। শ্রাবণীর ঘরে  গিয়ে দেখে শ্রাবণী মাথা নীচু করে বসে আছে আর পাশে ফোন টা রাখা, ফোনে মেসেজের নোটিফিকেশন এলো , কি হলো বেবি, তোমার ন্যুড পিক টা দাও, আমি দেখি তোমাকে , তোমার বডি স্ট্রাকচার টা কে। নীলাভ আমাকে অপমান করেছে তো কি হয়েছে, আমি তো তোমাকে ভালবাসি বলো। আমি তোমার উপর কোনো রাগ করিনি সোনা, তুমি তোমার কয়েকটা ন্যুড পিক দাও, আমি ঠিক হয়ে যাবো।

এটা দেখে নীলাভর অবস্থা তো সাংঘাতিক পর্যায়ে। সে ডাকে, শ্রাবণী, শ্রাবণী ওঠ। 

শ্রাবণী অচৈতন্য অবস্থায় ছিল। 

পড়ুনঃ- স্কুল লাইফের প্রেমের গল্প 

নীলাভ পুলিশে ফোন করে ও সমস্ত চ্যাট রেকর্ড ও শ্রেয়াণের এমন নোংরা মানসিকতার কথা জানায় এবং সব জানানোর শেষে যাতে হাতেনাতে ধরা যায় শ্রেয়াণ কে তার পরিকল্পনা টাও বলে নীলাভ পুলিশকে। পুলিশ সম্মতি জানিয়ে দ্রুত আসার কথা বলে আর নীলাভ শ্রেয়াণের মেসেজের রিপ্লাই করে, আজ বাড়িতে কেউ নেই, তুমি চলে আসো। ন্যুড পিক তো শুধু পিক, তুমি আমাকে সরাসরিই দেখতে পাবে। 

সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই, সত্যি বলছ! 

হ্যাঁ গো সত্যি বলছি শ্রেয়াণ। 

ওয়েট বেবি, আমি খুব তাড়াতাড়ি আসছি তোমার কাছে। 

এরপর নীলাভ শ্রাবণীর জ্ঞান ফেরায় আর নিজে সরে যায় সেখান থেকে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্রেয়াণ এসে হাজির হয়। ওকে দেখে শ্রাবণী খুব অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে কিন্তু শ্রেয়াণ ওর শার্ট খুলতে খুলতে বলে, এই তো আমি এসে গেছি। 

শ্রাবণী কিছুই বুঝতে পারে না, আর শ্রেয়াণ প্রায় আক্রমণাত্মক ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে যাবে ঠিক সেই সময়ে পুলিশ ভ্যান এর শব্দ। নীলাভ গোপন জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে দরজা খুলে দেয় আর পুলিশ সবটা দেখে, শুনে বুঝতে পারে আর একজন নারীর প্রতি এমন অমানসিক ও নোংরা অন্যায়ের সাজা হিসেবে যা প্রাপ্য তাই পায় শ্রেয়াণ। 

শ্রাবণীর চোখের সামনে এতগুলো ঘটনা একসাথে ঘটে যাওয়া তে ওর সবটা বুঝতে সময় লাগে। নীলাভ চলে যেতে যাবে তখন শ্রাবণী সবটা বুঝতে পারে যে শ্রেয়াণের ভালোবাসার মুখোশের আড়ালে আসলে একটা নোংরামি ছিল আর নীলাভ সেটা প্রথম থেকেই বুঝে সতর্ক করেছিল বারবার। অথচ তা না শুনে সে…. 

নীলাভ! ধরা গলায় বলে ওঠে শ্রাবণী। 

ekti বন্ধুত্বের গল্প
ekti বন্ধুত্বের গল্প

অধর্মের সাথে লড়াই করতে হলে অধার্মিক হতে হয় মাঝে মাঝে বুঝলি। তেমন টক্সিক রিলেশনশিপ ভাঙতে বেস্টফ্রেন্ড কেও মাঝে মাঝে টক্সিক ফ্রেন্ড হতে হয়। 

আমি সব বুঝতে পারছি রে, আমাকে ক্ষমা করে দে। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি তোকে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেছি না জেনে, না বুঝে ও বিশেষ করে ঐ পশ্বাধম পশুটার ভালোবাসার নামে নোংরা খেলায় অন্ধ হয়ে। 

আজ কাকু, কাকিমা বাড়িতে নেই, তাদের অজান্তে তাদের মেয়ের অনেক বড় ক্ষতি হয়ত আজ হয়ে যেতেই পারত। কিন্তু তবুও ঈশ্বর আছেন আমাকে জানান দেওয়ার জন্য।

শ্রাবণী চুপ করে থাকে মাথা নীচু করে। নীলাভ বলে, সেদিন রেস্টুরেন্টে ও তোকে নোংরা স্পর্শ করতে চেয়েছিল, ও তোকে বরাবর নিজের কন্ট্রোলে রাখতে চেয়েছে। সবজায়গার ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত দুই মেজাজই তোর উপর দেখিয়েছে। ভালোবাসা মানে ভালো রাখা, ভালো থাকা। আর যেই সম্পর্কে ভাল থাকা যায় না সেটা কোনো সুস্থ সম্পর্ক নয়। অসুস্থ সম্পর্ক থেকে আস্তে আস্তে বিষাক্ত সম্পর্কে পরিণত হয়। তুই যদি কোনো সঠিক মানুষ কে বাছতিস তাহলে আমি তোকে সবসময় সাপোর্ট করতাম।

কিন্তু আমি যখন থেকে বুঝতে পেরেছি তুই যাকে তোর সরলতার প্রভাবে ভাল ভাবছিস সে আসলে কতটা জঘন্য তখন থেকে আমি ভেবে গেছি কবে তোকে ওর থেকে আলাদা করব। হ্যাঁ বেস্টফ্রেন্ড রা টক্সিক ই হয় কেন জানিস ,কারণ ওরা নিজেদের আপন মানুষ টা কে কারোর সাথে সহ্য করতে পারে না। আপন মানুষ টার সাথে কেউ খারাপ কিছু করলে মাথায় খুন চেপে যায়। ওরা সবসময় নিজেদের প্রিয় মানুষ টাকে প্রিয় করে রাখে, আগলে রাখে, কেয়ারে রাখে,  ভালো রাখে। আর ওদের প্রাণের ফুলবাগানে কেউ এসে ফুল ছিঁড়ে চলে গেলে ওদের সমস্ত টক্সিন এক হয়ে যায়। বুঝতে পেরেছিস? রাগে, অভিমানে, কষ্টে ফেটে পড়ে নীলাভ। 

পড়ুনঃ- অনুপ্রেরনার ছোট গল্প 

নীলাভ চোখ মোছে। শ্রাবণীও কাঁদছে কারণ ও এই ছেলেটা কে কত না খারাপ কথা বলেছে, তারপরেও নীলাভ ওর জন্য এতোটা ভাবে।

শ্রাবণী এতবছরের এত সুন্দর একটা সম্পর্ক কে ও সর্বোপরি ছোটবেলাকার প্রিয় বন্ধু কে এইকদিনের নাটুকে প্রেমের জন্য অপমান করেছে, অসম্মান করেছে।

শ্রাবণী নীলাভর কাছে যায়। ওর চোখ মুছিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর নীচু স্বরে  বলে, খুব কষ্ট পেয়েছিস না রে, খুব অভিমান করেছিস আমার উপর! 

নীলাভ কাঁদতে কাঁদতে ওকে জড়িয়ে ধরে আর বলে, আমি তোকে অনেক ভালবাসি রে শ্রাবণী, অনেক ভালবাসি। তাই তোর এতটুকু ক্ষতি, এতটুকু খারাপ আমি সহ্য করতে পারি না। তুই আমাকে আর ভুল বুঝিস না রে। 

শ্রাবণীও কাঁদছে। ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, তোকে ছেড়ে আর কোথাও যাবো না, কারোর হবো না। আমি শুধু তোর আর তুই শুধু আমার। আমরা একসাথে সারাজীবন একে অপরের পাশে থাকব, সাথে থাকব। প্রেমের চেয়ে ভালোবাসা অনেক শক্তিশালী, অনেক ক্ষমতা আর পৃথিবীতে ভালোবাসার চেয়ে বড় শক্তি আর কিছু নেই। প্রেমিক হওয়ার আগেও সবচেয়ে বেশি দরকার একজন প্রিয় বন্ধু হওয়ার, বেস্টফ্রেন্ড হওয়ার, যে হবে সবার চেয়ে বেস্ট, সবার চেয়ে সেরা, ঠিক তোর মতো। আমরা সবার আগে দুজন দুজনকে আগলে রাখা, আঁকড়ে ধরে রাখার “বেস্টফ্রেন্ড!”

সুস্মিতা গোস্বামী

গল্পের চিত্রকলায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 

এক তরফা প্রেমের গল্প 

বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

বন্ধুত্বের গল্প। বন্ধুত্ব ভালোবাসার গল্প awesome friendship story.

Spread the love

Leave a Reply