একটি মেয়ের বাস্তব জীবন নিয়ে গল্প টিতে একটি সর্বহারা মেয়ের করুন কাহিনী সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা।

একটি মেয়ের গল্পঃ- ‘শ্রদ্ধা’

যেখানে সব বান্ধবীরাই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে আনন্দ করছে, ঘুরতে যাচ্ছে , মজা করছে, ছবি ছাড়ছে স্ট্যাটাসে জাঁকজমক ক্যাপশন দিয়ে, সেখানে শ্রদ্ধা রাত জেগে দুই চোখের পাতা এক করে ভাবছে কি করবে এরপর? 

বাবা মা নেই তার। মামাবাড়ি তে বড় হয়েছে সেই ক্লাস 6 থেকে। বড়মামা, বড়মামী আর ছোটমামা।

মা নেই, বাবাও চলে গেছে বড় অসময়ে। তাই ছোট্ট শ্রদ্ধার গোটা জীবনটা তছনছ হয়ে গেলেও সবাই তাকে অনুপ্রেরণা দিতে গিয়ে অনেক আঘাত দিতে দিতে শিখিয়েছে যে রাজা ছাড়াও রাজ্য চলে। বাবা, মা শুধু তার একার না, অনেকেরই নেই, তাই এসব নিয়ে অত কান্নাকাটি, মনখারাপ করা ঠিক নয়।  

মন দিয়ে পড়াশোনা করো। 

তাই আজ শ্রদ্ধা কীভাবে কাঁদতে হয় ভুলে গেছে। বাবা মা ছাড়া কোনো অনাথ সন্তানের জীবন যে কতটা দুর্বিষহ হয়, তা তারাই জানে যারা অনাথ। আর আত্মীয়ের বাড়িতে ঠাঁই হলে তো আরোই…  

যতোই বলুক ” আত্মীয় মানে আত্মার মিলন।” সত্যিই কি তাই? 

ছোটবেলায় মনে পড়ে মায়ের কথা। আর মামীর কথাও ভাবে। দুইজনের নামেই “মা”  শব্দটি আছে অথচ সত্যিই কি মামী মা হতে পারে? 

তার মা খুব মিথ্যেবাদী ছিল, সে কথা না শুনলে বলত খেতে দেবে না কিন্তু পরে তাকে কাছে টেনে খাইয়ে দিত। সে ছোটবেলায় দুষ্টুমি করলে বলত তাকে মারবে কিন্তু তারপর দেখত তার মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত গল্প শোনাতে শোনাতে। 

কিন্তু তার মামীমা সত্যবাদী। তার কথা না শুনলে বলে খেতে দেবো না আর সত্যি সত্যি খেতে দেয় না তাকে, মারব বললেও মারে।

এ যে পুরো ছুটির ফটিক এর মতো জীবন! 

বাড়ির সমস্ত কাজকর্ম শিখে গেছে শ্রদ্ধা, ছোট থেকেই মামী তাকে অল্প অল্প করে কাজ করাতো। তারপর অনেক কাজ। 

বাস্তব জীবন নিয়ে গল্প
বাস্তব জীবন নিয়ে গল্প

সময়ের সাথে সাথে সব শখ আহ্লাদ, চাওয়া আর কিছু থাকল না তার। মামাবাড়ি যা দেয়, সেটাই নিয়ে নেয় হাসিমুখে। 

তার পড়াশোনা করা নিয়ে অনেক চড়াই উৎরাই পেরোতে হয়েছে তাকে। অনেকবার থামতে থামতেও থামেনি পড়াশোনা। বারবার বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা নয়তো অন্য কিছু । কিন্তু দুকূল হারানো মেয়েটার ভরণপোষণ ও পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে বরাবরই আপত্তি ছিল মামীর। 

বড়মামার যে ছিল না তা নয়। মামীর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সেও ভাগ্নীর প্রতি দায়িত্ববোধ কে একটা অস্থিতিশীল ঝামেলা মনে করতে থাকে। 

ক্লাসের সব বন্ধুরা যখন সুস্বাদু, লোভনীয় টিফিন আনে সেই জায়গায় একলা একটা কোণে শ্রদ্ধা টিফিন বাক্স ঢেকে রেখে শুকনো মুড়ি খায়। আর ভাবে ওর যদি আজ মা থাকত, বাবা থাকত তাহলে হয়ত ওর জীবন টা খুব রাজপ্রাসাদ এর মতো না কাটলেও আনন্দে কাটত। সুখের চেয়ে যে শান্তি বড়। মা, বাবা ছাড়া পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন জন কি আর কেউ হতে পারে! বাবা যার নেই তার অর্ধেক পৃথিবী নেই আর মা যার নেই তার পুরো পৃথিবীই যে নেই!

পড়ুনঃ- মাতালের হাসির গল্প 

কিন্তু একথা মামা, মামী কে বলা যায় না, কারণ তাদের বলতে গেলেই তারা মুখের উপর শুনিয়ে দেবে তোকে দেখছে কারা, আমরা! কৈ তোর বাবার পরিবার থেকে তো কেউ এলো না তোর দায়িত্ব নিতে! সবাই দায়িত্ব নিতে ভয় পায় বুঝলি! 

চোখে জল আসলেও সেটা চোখেই রেখে দেয় না। কার কাছে কাঁদবে, কাকে বলবে ওর কথা। ঈশ্বর অন্তর্যামী, তাঁর সামনে তো কেঁদে বোঝাতে হবে না, উনি তো এমনিই বুঝবেন। 

বন্ধুমহলের তুচ্ছতাচ্ছিল্য, ব্যঙ্গ সবটা বুকে জড়িয়েই স্কুলজীবন টা আজ তার শেষের দোর গোড়ায়। 

আজও সবাই ঘুরতে গেছে আর সে রান্নাঘরে রান্না করছে মামীর বাড়ির সব আত্মীয়দের জন্য। 

মামীর বাড়ির আত্মীয়দের মধ্যে মামীর বোনের যুবক ছেলে বারবার দেখতে থাকে ঘর্মাক্ত শ্রদ্ধার নারীদেহের অবয়ব। সৌন্দর্য যেন উথলে উঠছে তার মধ্যে। 

শ্রদ্ধা সব রান্নাবান্না সেরে মুখ মুছতে মুছতে মামীকে বলে, আমার কাজ হয়ে গেছে আমি ঘরে গেলাম। দরকার পড়লে ডাক দিও। 

আচ্ছা ঠিক আছে যা তুই। 

কিন্তু মামীর বোনের ছেলে অভ্র বাধা দিয়ে বলে ওঠে, না না বোন এখানেই থাক না । বোন, এসো আমার পাশে বসো। 

শ্রদ্ধা দেখে সবাই তাকে ঐ একই কথা বলছে। তাই সে বাধ্য হয়ে অভ্রর পাশেই বসে।

কিন্তু অল্পক্ষণ বসেই শ্রদ্ধা উঠে পড়ে এক অপ্রকাশিত অস্বস্তিবোধ এ।

অভ্র তাকে খারাপ স্পর্শ করে খারাপ ইঙ্গিত ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শ্রদ্ধা ভালোমতোই জানে যে সে যদি সবার মাঝে এই কথাটা বলে তাহলে কেউই তার কথা বিশ্বাস করবে না উল্টে তাকেই আত্মীয়দের কাছে অপমানিত হতে হবে আর মামীর কাছে খেতে হবে চরম বকা। 

তাই সবকিছু ভেবে চিন্তে সে সেখান থেকে নীরবে উঠে চলে যায়।

সম্মান বিসর্জন করার মতো অপরাধ সে না নিজের সাথে হতে দেবে, না কাউকে করতে দেবে। চিরকাল মাথা উঁচু করে, সৎ পথে বাঁচতে চায় শ্রদ্ধা। 

পড়ুনঃ- একটি নষ্ট ছেলের গল্প 

একলা নিজের ঘরে মায়ের ছবির সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে বলে, মা আমি পারব না বলো তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে? পারব তো বলো, বলো না মা! 

বাবার ছবির দিকে তাকিয়েও এক কথা। উদাস দৃষ্টিতে জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেখে যতদূর চোখ যায় সবটাকে। খুব ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কে নিয়ে যাবে তাকে? মা, বাবা যার নেই তার কি কখনো কোনো সখ আহ্লাদ, ইচ্ছা, আবদার থাকতে পারে? হ্যাঁ থাকতে হয়ত পারে কিন্তু বলতে পারে না কাউকে। মনের মধ্যে সবটা জমিয়ে রেখে দিতে হয়। নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে হয়, যখন নিজের পায়ে দাঁড়াবো তারপর দেখা যাবে না হয়।  

কিন্তু এরপর কি আর পড়তে দেবে মামাবাড়ি? নাকি বিয়ে দিয়ে দেবে? মনের ভিতর টা দপ্ করে ওঠে ভয়ে। না না তা কিছুতেই হওয়া সম্ভব না। সে পড়তেই চায়, পড়বে, অনেক পড়বে। অনেক বড় হবে। একটা চাকরি করবে। দুচোখে যে অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা। 

হয়ত সেই আশা বা স্বপ্ন মা বা বাবা কে মধ্যে রেখে পূরণ কোনোদিন ই হবে না কিন্তু মামাবাড়ির প্রতি তার যে একটা দায়িত্ব আছে। মামার কোনো ছেলেমেয়ে নেই, শ্রদ্ধাই তো দেখবে তাদের। 

হয়ত তার এই আশা মামীর কাছে শোধবোধ করা। কিন্তু শ্রদ্ধার কাছে অন্য কিছু। সে মনে মনে সবসময় ভাবে, তাকে তার মামা মামী এত বড় করল, তাকে গড়ে তুলল এবার মামা, মামীর যখন কাউকে প্রয়োজন হবে তাদেরকে দেখার তখন তা শ্রদ্ধা করবে নিজের মেয়ের মতো করে। 

 হঠাৎ একটা বান্ধবীর জন্মদিনের স্ট্যাটাস দেখে চোখ থেকে জল পড়তে থাকে। 

কি সুন্দর সুখী পরিবার, মা, বাবার মাঝখানে থেকে কি সুন্দর বেবি ডলের মতো আদর যত্নে ছবি দিয়েছে। 

একটি মেয়ের গল্প
একটি মেয়ের গল্প

শ্রদ্ধা আপন মনে বলে , পৃথিবীর সব অভাব তখনই সহ্য করা যায় যখন মায়ের কোলে ও বাবার স্নেহের বুকে মাথা রাখা যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা “তোর থেকেও অনেকে আরো বেশী কষ্ট করে বেঁচে আছে” এই কথাটা হয়ত তখনই শুনতে পারা যায় যখন নিজের বাবা অথবা মা কেউ অন্তত থাকে তখনই।

“সময়ের সাথে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে” , সবাই বলে ,”আরে অতো ভেবো না”, কিন্তু শুধু মাত্র সেই জানে , যে রাত্রে সে ঠিক করে ঘুমাতে পারেনা ! সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলে নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়। শুধু মাত্র সে জানে , যে খেতে বসলে গলা দিয়ে খাবার নামতে চায় না , মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠার মতো হয় তবুও কাঁদা যায় না।

মামা মামীর সংসারে সে এক বোঝার মতো, সে এক পরিশ্রমকারী গাধার মত জীবন তার।অবশ্য যাওয়ার জায়গাও যে নেই কোথাও। সবটাকেই মেনে নিতে হবে তাই। 

তাই শ্রদ্ধার অনেক স্বপ্ন, সে চাকরি করবে, নিজের একটা বাড়ি বানাবে। এই মামা মামীকেও দেখবে, দায়িত্ব নেবে তাদের। কিন্তু জানে না কতদূর কি হবে,, তবুও চেষ্টা সে শেষ অবধি করবেই। 

জীবনে অনেক ব্যস্ত হয়ে যেতে হবে যাতে দুঃখ পাওয়ার সময়টাই না থাকে। কারণ সত্যি সত্যি তার লড়াই তার একার, তার নিজের। তাই তাকে নিজেকেই সামলাতে হবে। নিজেই নিজের জন্য সবকিছু হিসেবে তৈরি হবে শ্রদ্ধা।  

কোন কিছুই যে ‘Impossible’ নয় কেননা ‘Impossible’ শব্দটা নিজেই তো বলে ”I – m – possible”.

নিজেকে এভাবেই মোটিভেট করে সমস্ত দুঃখ কষ্ট ঝেড়ে ফেলে। 

একটা একটা করে দিন অতিবাহিত হয়। একটা সময় পর বেরোয় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট। শ্রদ্ধা অসাধারণ রেজাল্ট করে। মনটা খুশি তে ভরে যায়। মামাবাড়িতে বেশ গর্ব হয় ভাগ্নীর সাফল্যের জন্য। গোটা স্কুলেও খুব হৈ হৈ কান্ড হয় শ্রদ্ধা কে নিয়ে। 

পড়ুনঃ- ছোট গোয়েন্দা গল্প- নিল মূর্তি উধাও রহস্য 

আগাগোড়া চুপচাপ থাকা মধ্যমানের স্টুডেন্ট টা যে স্কুলজীবন থেকে বিদায়কালে সবার চেয়ে সেরা রেজাল্ট করবে এটা ভাবতেই পারেনি কেউ। 

তবে ভেবেছিলেন একজন টিচার, তিনি শ্রদ্ধা সম্পর্কে বলতেন, মেয়েটা সাধারণ রূপেই অসাধারণ। 

একে একে স্কুল বিদায়ী পর্ব শেষ হয়। শ্রদ্ধার স্কুলজীবনের বন্ধুত্বে এমন কোনো স্মৃতি ছিল না যাতে তাকে তার স্কুলের বন্ধুদের কথা মনে পড়তে পারে। 

তবে এটাও ঠিক যে, শ্রদ্ধা সবার মতো লোক দেখানোর জন্য কাঁদেনি স্কুল ছাড়ার সময়। সবসময় কি কাঁদলেই আবেগ প্রকাশ হয়, অনুভূতি প্রকাশ হয়! 

কলেজে ভর্তি নিয়ে বাড়িতে ভ্রু কুঁচকানো চলছে। শ্রদ্ধা কে ভর্তি করতে হলে। গার্লস কলেজেই ভর্তি করতে হবে। 

কিন্তু ভর্তি নিয়েই তো খুব টানাপোড়েন, ভাবনাচিন্তা। 

মামা জানতে চায়, তুই কি পড়বি নাকি…. 

আমি পড়ব মামা। মামার কথাটা পুরোপুরি শেষ করতে না দিয়েই শ্রদ্ধা উত্তর দেয়। কারণ ওর বুক দুরুদুরু করছে, ও জানে নাকি র পর মামা বিয়ের কথা বলছে। কিন্তু না, শ্রদ্ধা পড়তে চায়, অনেক বড় হতে চায়। তারপর বিয়ের কথা ভাবা যাবে। 

আচ্ছা বেশ ঠিক আছে। বড়মামা বলে। 

বড়মামী আড়ালে নিয়ে মামাকে বলে , তুমি ঠিক আছে বলে দিলে! আজব তো! আর কত পড়াবে শুনি? এরপর তো এই মেয়ে তোমার মাথার উপরেই নাচবে। সেটা কি খেয়াল আছে তোমার! বলি নিজের ছেলেমেয়ে হয়নি বলে সব টাকা কি ঐ বাপ মা মরা ভাগ্নীর পেছনে ঢালবে? তোমার কি কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই! 

শোনো, আমি অত কাঁচা বুদ্ধির লোক নই ঠিক আছে। মাথার উপর নাচতে চাইলেই কি নাচতে দেবো নাকি আমি! আর তাছাড়া শ্রদ্ধার অত সাহস নেই। আমাদের দয়া বেঁচে আছে, আমাদের চটালে ওরই ক্ষতি। তুমি অত চিন্তা কোরো না। 

এরপর দুই মামা মিলে শলাপরামর্শ করে ভাগ্নীর ভর্তির ব্যবস্থা করে। কিন্তু সেটা নামেই ব্যবস্থা, আসলে সেটা ছিল ব্যবস্থার নামে ভর্তি পিছিয়ে দেওয়া। 

শেষপর্যন্ত একটা ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্টও কলেজে সবার শেষে চান্স পায়। 

শ্রদ্ধা সবটা বুঝেও চুপ করে থাকে। কারণ ও জানে, এখন ওর বলা শোভা পায় না। এখন শুধু শোনা, দেখা আর সহ্য করা। তবুও মনে প্রতিশোধস্পৃহা নেই তার, যেটার বয় মামারা পেয়ে তার সাথে এমন ব্যবহার করে সবসময়। শ্রদ্ধা তো সবসময় চায় ওর মামাদের ভাল হোক, ভালো থাকুক তারা। ও চাকরি পেলে তখন ওইই দেখবে মামা মামী কে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, সে অবশ্য অনেক পরের কথা! 

পড়ুনঃ- ভালোবাসার দুঃখের ছোট গল্প 

একটা সময় পর কলেজে ভর্তি হওয়া। হ্যাঁ গার্লস কলেজে। নামকরা কলেজ। কলেজের ইউনিফর্ম পরে দুচোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে কলেজের মাটিতে পা রাখে শ্রদ্ধা। 

কিন্তু ভাগ্য যে শ্রদ্ধার স্বপ্নপূরণের পথ অন্য দিকে লিখে রেখেছিল! 

পড়াশোনার প্রতি আগে ততটাও ভালোবাসা না থাকলে, এখন শ্রদ্ধা এক অন্য পর্যায়ের মেধাবী স্টুডেন্ট। স্কলারশিপ এর টাকাগুলো তুলে দেয় মামার হাতে। বাবা, মা থাকলে তাদের হাতেই দিত। কিন্তু…

জোরকদমে চলছে শ্রদ্ধার পড়াশোনা। দেখতে দেখতে ফার্স্ট ইয়ার পেরিয়ে গেল। আর বাড়িতে শুরু হলো এক নতুন অশান্তি। কোনো একটা কারণে বড়মামার চাকরিটা যায় যায় অবস্থা। ছোটমামার রোজগারে সংসার চলে না কারণ ওটা যৎসামান্য। বড়মামাই পরিবারের মাথা। কিন্তু এখন তার যদি চাকরি চলে যাওয়ার অবস্থা আসে তাহলে সংসার চলবে কেমন ভাবে, শ্রদ্ধার পড়াশোনাই বা হবে কীভাবে?

শ্রদ্ধা ভাবে ওর জীবনে তো কম বাধা আসেনি, আরো বাকি আছে আসার। নিজের জীবনের সব বাধাগুলোর জন্যই তৈরি কিন্তু তাই বলে মামার চাকরি চলে যাওয়ার মতো এমন ক্ষতি সে মানতে পারবে না।   

কিন্তু তার এই মানতে না পারাকে মামী ভাবে শ্রদ্ধা নিজের পড়াশোনা মানে নিজের আখের গোছানো তে যেহেতু বাধা পড়েছে তাই তার মামার প্রতি দরদ উথলে উঠছে ।

মামী বলে ওঠে, শোনো, তোমাকে অত ভাবতে হবে না বুঝতে পেরেছ। এবার পড়াশোনা ছেড়ে বিয়ে থা করে বিদেয় হও তো বাপু। আর মামার গলগ্রহ হয়ে থেকো না।

শ্রদ্ধা খুব আঘাত পায় মামীর এমন কথাগুলো শুনে। ও বলে, মামী, আমি চেষ্টা করবো কোনো টিউশন পাওয়া যায় নাকি। আপাতত টিউশন পড়িয়ে যেই মাইনে টা.. 

থাক কোনো দরকার নেই তোমার সাহায্য। 

মুখের উপর বলে মামী। 

এদিকে হঠাৎ করেই আগমন হয় মামীর বোনের সেই ছেলে মানে অভ্র। ওকে বাড়িতে দেখেই শ্রদ্ধা ভয় পেয়ে যায়। ভাবে আবার এই ছেলেটা কেন এসেছে! কি চায় ও! 

অভ্র ভালো চাকরি করে এখন। শ্রদ্ধা দেখে ও এখন পুরো বদলে গেছে। ও নিজে থেকে মাসির বাড়িতে এসেছে মাসি ও মেসো কে সাহায্য করতে। আর একজনকে দাঁড় করাতে, সেটা হলো মাসির ভাগ্নী শ্রদ্ধা কে। 

অভ্রর পাশে থাকা দেখে বড়মামা আর কি বলবে ভেবে পায় না। মামী তো খুব খুশি। 

অভ্র বলে, মেসোর চাকরির সমস্যা যতদিন না পর্যন্ত ঠিক হচ্ছে, ততদিন  আমি দায়িত্ব নিচ্ছি শ্রদ্ধার পড়াশোনার। ওর বই খাতাপত্র , যাবতীয় সমস্তকিছু আমিই দেবো। 

শ্রদ্ধা তো বিশ্বাস ই করতে পারে না। কিন্তু না সত্যিই অভ্র এই কথাটা বলছে এবং পালন করবে বলে কথাও দিচ্ছে সকলের সামনে। এরপর শ্রদ্ধা কে বলে, আমাকে খুব খারাপ ভাবো তাই না বোন, কিন্তু বিশ্বাস করো আমি অমন না। তুমি দেখতেই পাবে। আমার উপর বিশ্বাস করতে পারো তুমি। তোমার যা লাগবে বোলো কেমন, নিঃসঙ্কোচে বলবে এই দাদাকে ঠিক আছে। 

অভ্র এরপর সত্যিই নিজের কথা রাখে। আর শ্রদ্ধাও বিশ্বাস করতে শুরু করে তাকে ধীরে ধীরে । 

শ্রদ্ধা বলে, আমি তোমার সব ঋণ হয়ত শোধ করতে পারব না কিন্তু চেষ্টা করব দাদা। 

অভ্র হেসে বলে, ধুর পাগলী কি যে বলো তুমি, কিচ্ছু শোধ করতে হবে না, তুমি ভালো করে পড়াশোনা করে অনেক বড় হও, অনেক ভালো চাকরি করো, অনেক টাকা রোজগার করো তোমার মামা মামী কে দেখো এটাই চাই।

অনেকদিন পরে হঠাৎ করেই একটা ইমেল আসে শ্রদ্ধার কাছে, যেটা একটি বড় চাকরির ইমেল। অ্যাপ্লাই করেছিল একটা সেটাই কি? আগ্ৰহের সাথে দেখতে গিয়ে দেখে হ্যাঁ সেটাই। 

মনটা আজ সবথেক বেশী আনন্দিত হয় এটা দেখে।

পড়ুনঃ- কয়েক লাইনের প্রেমের গল্প 

দেখা করতে হবে, ইন্টারভিউ আরো ফর্মালিটিস আছে। তারপর স্বপ্নপূরণ! 

বুকের ভিতর হৃৎপিন্ড আনন্দে আত্মহারা হয়ে জোরে জোরে ওঠানামা করতে থাকে। ও ঠিক করে মামাকে সারপ্রাইজ দেবে। তাই সবটা গোপনে রাখে। 

কিন্তু একজন সাধারণ ঘরের মেধাবী, শান্ত, ভালো মেয়ের চাকরি করে পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করার দাবিটাই এই সমাজের কাছে অনেক বড় দাবী হয়ে উঠেছিল তাই হয়ত শ্রদ্ধার জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল ‍শ্রদ্ধা শব্দটাই। সত্যি সত্যি এই সমাজে শ্রদ্ধা, সম্মান পাওয়ার কেউ নেই কারণ শ্রদ্ধা বা সম্মান দেওয়ার লোকই যে এই সমাজে বাস করে না। সবাই তো ভদ্র, ভালোমানুষির আড়ালে থাকা জঘন্য লোক। 

সেদিনের সেই চাকরির ইন্টারভিউ টা সম্পূর্ণ অন্য এক ইন্টারভিউ ছিল। মেধার ইন্টারভিউ নয়, লালসার ইন্টারভিউ। 

নেশার ঘোর কাটার পর সকালে উঠে দেখে সে একটা বিছানায় শুয়ে, তার পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। আর ফোনে মামার এত এত ফোন এসেছে। মনে পড়ে সেই দুপুরে বেরিয়েছিল আর তারপর থেকে  সারারাত পর্যন্ত এখানে। আর এখন সকাল। 

সকালের আলোয় শ্রদ্ধা বুঝতে পারে তার নিজের জীবনের আলো নিভে গেছে গতকাল রাতেই। সে গণধর্ষিত হয়েছে। 

কষ্টে পাথর হয়ে যাওয়া শ্রদ্ধা দেখে টেবিলে একটা খাম। খাম খুলে দেখে ওতে একটা লেটার, যেখানে লেখা আছে, তোমার পারিশ্রমিক পৌঁছে গেছে তোমার মামার অ্যাকাউন্টে। আপাতত পাঁচ লাখ, পরে আরো দেওয়া হবে। তবে শর্ত একটাই, তোমাকে এখানেই চাকরি করতে হবে। 

real life story of a girl
real life story of a girl
<

উড বি সাকসেসফুল গার্ল হয়ে গেল কলগার্ল! হ্যাঁ তার Impossible পূরণ করেছে তার সমাজ। তার স্বপ্ন তো পূরণ করেছে, এটাই বা কম কিসের! 

চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, পুলিশে ফোন করে সবটা জানাতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কিছুই করে না শ্রদ্ধা। সে শান্তভাবে সবটা মেনে নেয়। নতুন করে তো আর কিছু হারানোর নেই কারণ তার জীবনে তো সে কিছুই পায়নি। 

আজ এই এত রোজগারের উপায় যে করে দিল তাকেও যে স্যালুট জানাতে চায় শ্রদ্ধা। তার অভ্রদাদা কে। অভ্রদাদা যে তার বোনকে সত্যিই খুব ভালোবাসে। 

সবটা জেনেও সবটা মেনে নেয় শ্রদ্ধা। 

জীবন যে থেমে থাকে না।  

__

ভাগ্নী কি চাকরি করে, কোথায় থাকে তা মামাবাড়ি জানে না। শুধু জানে ভাগ্নী তাদের পাশে সবসময় আছে। ভাগ্নী খুব ভালো চাকরি পেয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকা পাঠায়। মামী আনন্দে সব গোগ্রাসে ভোগ করে। মামা অনেক জানতে চেষ্টা করেছে সেদিন রাতের পর থেকে। 

কিন্তু শ্রদ্ধা একটা কথাই বলেছিল, মামা, সবার জন্য স্বপ্ন দেখা নয় আর স্বপ্ন দেখা হলেও, পূরণ করা সবার কপালে জোটে না আর পূরণ হলেও সবার জন্য সঠিক রাস্তাও হয়ত থাকে না! 

সুস্মিতা গোস্বামী

গল্পের ভাবনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 

রহস্যময় গল্প- অদ্ভুতুড়ে ফোন নাম্বার 

বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

বাস্তব জীবন নিয়ে গল্প। একটি মেয়ের গল্প real life story of a girl bengali

Spread the love

Leave a Reply