আজকের নিশি রাতের ভয়ানক গল্প টির প্লটে রয়েছে এক ভয়ানক রাত। আর সেই ভয়ানক রাতে ঘটে যাওয়া অদ্ভুতুড়ে অমীমাংসিত ঘটনা।

নিশি রাতের ভয়ানক গল্পঃ- এক রাতের গল্প

বিষ্টু পণ্ডিতের মৃত দেহ টাকে আমরা যখন শ্মশান ঘাটে নিয়ে গেলাম তখন রাত প্রায় ২ টো। খুব খারাপ ভাবে মৃত্যু হয়েছে বিষ্টু পণ্ডিতের।

প্রতিদিনের মত বিষ্টু পণ্ডিত সকাল সকাল দুধের ভাঁড়টা নিয়ে বেড়িয়েছিল। ঝড় বাদলার দিন, আকাশের গতিক ভালো নেই তবুও সে যাবেই। দিন নয়টার মধ্যেই তার ফিরে আসার কথা কিন্তু বিষ্টু পণ্ডিত ফিরে না। সকাল গড়িয়ে দুপুর হল কিন্তু বিষ্টুর দেখা নেই।

কাঁদো কাঁদো হয়ে তার স্ত্রী গেল আমাদের ক্লাব ঘরে। আমরা ছেলেরা সবাই মিলে তখন ক্যারাম বোর্ডে ব্যস্ত ছিলাম। বিষ্টুর স্ত্রীর মুখে সবটা শুনে আমরা বেড়িয়ে পরলাম বিষ্টুর খোঁজে। পুরো গ্রাম তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম, এমনকি বাদ যায় নি পাশের গ্রাম ও। কিন্তু না, বিষ্টুর কোন দেখা নেই।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল, সন্ধ্যা নেমে আসতে লাগল। বিষ্টু পণ্ডিত কে আমরা আবিস্কার করলাম তেমাথার মোড়ে যে বিশাল খাল টা রয়েছে সেখানে। বীভৎস অবস্থা করে রেখেছে তার। গলায় ছুরির চিহ্ন। মাথা দিয়ে রক্ত পরে পরে জমাট বেধে গেছে, হাতের মাঝ বরাবর জায়গায় জায়গায় কাটা। খালের জলে রক্ত মিশে, জলের একপ্রান্ত তখনও টকটকে লাল দেখাচ্ছিল।

আমরা ছেলেরা তাঁকে পারে টেনে তুলে খবর দিলাম পুলিশে। এদিকে বিষ্টুর স্ত্রী সময়ে সময়ে মূর্ছা যাচ্ছে।

এবার প্রশ্ন দাঁড়াল, কে বিষ্টুর এরকম অবস্থা করল! যত দূর জানি সে খুব সৎ মানুষ ছিল। এরপর পুলিশ এল, বিষ্টুর দেহ টার সাথে আমাদেরও নিয়ে গেল থানায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসতে জানা গেল প্রায় ৮ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ সকাল ৬ টা নাগাদ তাকে খুন করা হয়েছিল।

নিশি রাতের ভয়ানক গল্প
নিশি রাতের ভয়ানক গল্প

এরপর নানা জটিলতা সেরে অবশেষে আমরা বিষ্টু পণ্ডিত কে তার বাড়িতে নিয়ে এলাম। এই জগতে স্ত্রী ছাড়া বিষ্টুর আর কেউ নেই। তাই আমারা ক্লাবের ছেলেরাই হাত লাগালাম। বিষ্টুর স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হসপিটালে, সে যে অজ্ঞান হয়েছে আর তার জ্ঞান ফেরে নাই।

এদিকে পাড়ার লোকেরা তাগাদা লাগাল- যা করার আজকেই করতে হবে বাছারা। নইলে মরা যে বাসি হয়ে যাবে।

আমি বললাম- কিন্তু তার স্ত্রী যে এখনও শেষ দেখা করে নি।

আমার কথায় কেউই কান দিল না। কয়েকজন এক স্বরে বলে উঠল- আজকেই সদগতি না করলে গ্রামে ঘোর অমঙ্গল নেমে আসবে।

আমাদের ইচ্ছে ছিল, বিষ্টু পণ্ডিতের স্ত্রী বিষ্টুকে একবার শেষ দেখা দেখুক, কিন্তু তার স্ত্রী যে এখনও হসপিটালে পরে আছে।

অবশেষে একরকম বাধ্য হয়েই বিষ্টুর নিথর দেহ টাকে তুলে নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

আকাশ জুড়ে কালো মেঘ নেমেছে। দক্ষিণ আকাশ টা হলুদ বর্ণ ধারন করেছে, অর্থাৎ তুলুম ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শ্মশানে যাওয়ার পথে শুরু হল বৃষ্টি। কাঠ- বাঁশ সব প্লাস্টিকে দিয়ে ভালো ভাবে মুড়ে নিয়ে আমরা আবার চলা শুরু করলাম।

আমাদের ক্লাবের পনেরো জন সদস্য আর সাথে কয়েকজন গ্রামবাসীও আছেন। তবে বিষ্টুর স্ত্রীর সাথে ঘোর অন্যায় হল।

অবশেষে যখন আমরা শ্মশানে পৌঁছালাম তখন রাত প্রায় দুটো। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, সাথে হালকা শীতল হাওয়ায় শরীর শিউড়ে উঠছে।

ভয়ানক রাতের গল্প
ভয়ানক রাতের গল্প

এদিকে আমাদের সবার অবস্থা খুব খারাপ। এত রাতে শ্মশানে আসার অভিজ্ঞতা আমাদের ছিল না। মাঝে মাঝে শেয়ালের ডাক শুনে হৃদপিণ্ড জোরে জোরে টান মারছে।

কাঠ বাঁশ সবকিছু সাজিয়ে বিষ্টু পণ্ডিত কে সেখানে রাখা হল। কিন্তু এবার সমস্যা হয়ে দাঁড়াল আগুন নিয়ে। আগুন কিছুতেই জ্বালানো যাচ্ছে না। প্রকাণ্ড হাওয়া এসে বারংবার আগুন নিভিয়ে দিচ্ছে।

কোন মতে আগুন টা জ্বালিয়ে বিষ্টুর চিতার নিকট ধরতেই আমাদের সবাইকে অবাক আর আতঙ্কে ফেলে দিয়ে এই ঝড় বাদলের মাঝেও কেরোসিনের শিখার মত হঠাৎ করে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল চিতা।

সবাই কয়েক হাত পিছিয়ে গেছে, বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, পালানোর শক্তি টুকুও আর অবশিষ্ট নেই শরীরে। এদিকে হিমেল হাওয়ার তালে তালে ভয় পুরো শরীর কে গ্রাস করেছে।

হঠাৎ করেই চোখ গেল, নিলুর দিকে। সে বালিতে হাত দিয়ে কি যেন আঁকছে আর বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। আলো আধারিতে ঠিকঠাক কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।

আমি কাছে গিয়ে বললাম- নিলু, এই নিলু কি বলছিস রে!

নিলু চেঁচিয়ে উঠে বলল- সব কটাকে আজ এখানে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারব।

তার কথাটা এত জোরে ছিল যে, এই শুনশান শ্মশানে বার বার প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। আর আমি ভয় পেয়ে কয়েক গজ দূরে ছিটকে পরেছি।

নিলু আবার চেঁচিয়ে উঠল- আমাকে তোরা শেষ দেখাটাও দেখতে দিলি না, আমার মনের মানুষের সাথে। তোদেরও আজ বাড়ি ফিরতে দেব না।

এই বলে সে দৌড়ে গিয়ে চিতা থেকে একটি জ্বলন্ত কাঠ উঠিয়ে নিয়ে ভয়ংকর রকমের নাচ জুড়ে দিল। উপস্থিত সবাই থতমত হয়ে গেছে। অবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে পালানোর শক্তি টুকুও হচ্ছে না।

নিশ্চয় কোন অপশক্তি তার উপর ভর করেছে। নিলু সবাইকে পাগলের মত ধাওয়া করতে শুরু করল। পরি মরি করে যে যেদিকে পারে ছুটতে লাগল। তার হাতে থাকা কাঠ টা মশালের মত দাউ দাউ করে জ্বলছে এই বৃষ্টির মাঝেও।

দূর থেকে দেখে মনে হল সে একজন গ্রাম বাসীকে ধরে ফেলেছে। আর রেহাই নেই। ওদিক থেকে আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম।

নিজেদের বাঁচাতে আমরা কয়েক বন্ধু দিলাম এই বর্ষার জলে ফুলে উঠা নদীতে ঝাঁপ…

পড়ুনঃ- মাঠের সেই ভূতুড়ে আম গাছ 

হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল বোনের ডাকে- দাদা ও দাদা এত ঘামছিস কেন। তোর তো জ্বর চলে এসেছে বোধ হয়। হাঁ করত থার্মোমিটার টা মুখে দিয়ে দেখি…

মনে পরে গেল আজ থেকে প্রায় পাচ বছর আগে, বিষ্টু পণ্ডিত কে কারা যেন হত্যা করে খালের জলে ফেলে দিয়েছিল। আর আমরা কয়েকজন ক্লাবের ছেলে মিলে তার সদ গতি করেছিলাম।

ওদিকে বিষ্টুর স্ত্রীর আর কখনো জ্ঞান ফেরেনি। আশ্চর্য জনক ভাবে তার দেহ টা হসপিটাল থেকে হারিয়ে যায়। আর খোঁজ পাওয়া যায় নি তার দেহ টার।

bengali horror story of a terrible night
bengali horror story of a terrible night
<

যে কয়েকজন গ্রাম বাসী বিষ্টু পণ্ডিতের দেহ কে তাড়াতাড়ি নিয়ে যেতে বলেছিল, তার স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা না করে, তাদের আর কেউই বেঁচে নেই। সবাই বড্ড রহস্য জনক ভাবে মরেছে। আর সেই রহস্যের কিনারা আজও কেউ করতে পারেনি।

গ্রাম বাসীদের বিশ্বাস, বিষ্টুর আত্মা আজও শান্তি পায়নি। তার আত্মা এখনও তার স্ত্রীকে খুঁজে বেড়ায়।

আবার কিছু গ্রাম বাসী বলেন, বিষ্টুর স্ত্রী মরেনি, তার অজ্ঞান হওয়া দেহ টা থেকে পার্টস খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে সেই হসপিটালের ডাক্তারেরা।

যদি এই কথাটি সত্য হয় তাহলে বিষ্টু পণ্ডিতের আত্মা সেই ডাক্তার দেরও ছারবে না।

তবে আজ এত বছর পর এই ঘটনা আমার স্বপ্নে এল কেন! তবে কি তবে কি! কিন্তু আমি তো কোন অপরাধ করিনি…!

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- ভৌতিক গল্প- রহস্যময়ী নারী 

ভুতের গল্প- মাথা কাটা লাশ 

ভুতের সঙ্গে প্রেম! 
ছাড়পত্রের সমস্ত আপডেটের জন্য- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

নিশি রাতের ভয়ানক গল্প। ভয়ানক রাতের গল্প bengali horror story of a terrible night

Spread the love

Leave a Reply