গল্পের মূল চরিত্রের সাথে বাসে দেখা হয় একজন মেয়ের, ঘটনা ক্রমে তারই প্রেমে পরে যাওয়ার গল্প রয়েছে এই বাসে প্রেমের গল্প টিতে।

বাসে প্রেমের গল্পঃ- সে কি আমার প্রেমিকা হবে!

বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে টিকিটের জন্য লম্বা লাইন দেখে আমার মাথা ঘুরে গেল। যখন আমি শেষমেশ কাউন্টারে পৌঁছালাম তখন ইতিমধ্যে বাসের সব টিকিট শেষ। এবারে আমাকে টানা চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে, কারণ পরের বাস ঠিক রাত দশটায়।

টিকিট কেটে বসে রইলাম রাস্তার ধারের বেঞ্চ টায়। চলমান গাড়ি গুলি গোনা ছাড়া আমার আর কোন কাজ নেই এখন। অন্যসময় টাইম একেবারে নদীর স্রোতের মত চলে যায়, কিন্তু আজ! আজ টাইম একেবারে হিমবাহের মত গতিতে চলছে।

এরপর দীর্ঘ অপেক্ষা…  

রিস্ট ওয়াচ টার দিকে তাকিয়ে দেখলাম দশটা হয়ে গেছে, কিন্তু বাসের এখনও কোন দেখা নেই। প্রায় মিনিট পনেরো পরে বাসটি এল, সবাই তাড়াহুড়ো করে উঠতে লাগল। সবাই এমন ভাবে উঠছে যেন, তারা বসার জায়গা পাবে না। অথচ, আগে থেকেই টিকিট কেটে রেখেছে সবাই। আজব লোকজন সব!

বাসে প্রেমের গল্প
বাসে প্রেমের গল্প

বাসের দরজার মধ্যে জমা ভিড়টা মিনিট তিনেক এর মধ্যেই শেষ হয়ে গেল। এরপর আমি বাসে উঠে নিজের জায়গায় বসলাম। যদি একটু মোবাইলে টিকিট টা কেটে নিতাম তাহলে হয়ত এতক্ষণ আমি অনেক দূরে পৌঁছে যেতাম। কিন্তু অনলাইনে টিকিট বুকিং করলে প্রায় ১৫০ টাকা বেশি লাগে, তাই অনলাইনে টিকিট বুক না করে সরাসরি কাউন্টারে এসে টিকিট বুকিং করেছি।

পনেরো মিনিটের মধ্যে বাসটি স্টার্ট দিল। তবে বাস স্টার্ট দেওয়ার থেকেও বড় খুশি হচ্ছে আমার পাশের সীট দেখে। আমার পাশের সীটটি একদম খালি পরে আছে। এই নাইট জার্নি তে গোটা রাস্তা আরামে ঘুমিয়ে যেতে পারব ভেবে মনটা আনন্দে নেচে উঠছিল।

হঠাৎ করেই বাসটা থেমে গেল, খালাসি দাদা চেঁচিয়ে বললেন, সীট নাম্বার ১৬ এর প্যাসেঞ্জার আসছে, একটু ধীরে। তার এই কথা শুনে আমার আনন্দ বাসের জানালা দিয়ে উড়ে গেল। কারণ এই ১৬ নাম্বার সীট টি হল আমার পাশে থাকা সীট টি।

দৌড়ে বাসে উঠল একজন বয়স ২৬ এর সুশ্রী তরুণী মেয়ে।

সে বাসে উঠতেই বাস তার যাত্রা পথে রওনা দিল। তার নাকের নোলক টি, বাসের হালকা আলোয় বারবার চমক দিচ্ছে। সে এসেই তাড়াহুড়ো করতে লাগল, ব্যাগ গুলি বাঙ্কারে তুলে দিতে লাগল, হাত ব্যাগ টা বারবার সামলে নিচ্ছিল, হঠাৎ করেই ঘুরে আমাকে সাইড দিতে না বলেই তার সীটে চলে গেল, এভাবে হঠাৎ করে ঘুরে সীটে যাওয়াতে, তার হাতের মোটা ব্যাঙ্গেলস এর খোলা মুখ টায় লেগে আমার হাত ঘড়ির স্ট্র্যাপটি ছিঁড়ে গিয়ে তার ব্যাঙ্গেলস এর সাথে ঘড়িটি ঝুলতে লাগল।

ইস এত তাড়াহুড়ো করার কি আছে! আমাকে একটু সাইড দিতে বললেই তো আমি সরে যেতাম।

আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটা তার ব্যাঙ্গেলসে ঝুলতে থাকা আমার ঘড়িটা খুলে তারই হাতে নিয়ে বলল, “সরি, তোমার ঘড়িটার ফিতে টা ছিঁড়ে গেল।“

মেয়েটার কথা  শুনে আমার সারা শরীরে যেন বিদ্যুতের মত তরঙ্গ বয়ে গেল। কারও গলার আওয়াজ এত সুন্দর কিভাবে হতে পারে! প্রথম দেখাতেই মেয়েটার উপর ক্রাশ খেয়েছিলাম, এমন এক সহযাত্রী যে আমার পাশেই বসবে বিন্দু মাত্র ধারনা ছিল না, তার পর আবার তার এত সুন্দর কোকিলের মত মধুর কণ্ঠ!

আমি বললাম- “ঠিক আছে, কোন ব্যাপার না। অজান্তেই হয়ে গেছে।“ এই বলে আমি ঘড়ি টা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালাম।

হঠাৎ প্রেমে পড়ার গল্প
হঠাৎ প্রেমে পড়ার গল্প

সে বলল- “আমি ঘড়িটির ফিতেটি লাগিয়ে তোমাকে দিয়ে দেব।“

-তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হওয়া সম্ভব নয়।

-কোথায় যাচ্ছ তুমি!

-ত্রিপুরা।।

মেয়েটা উৎসাহের সাথে বলে উঠল- “উয়াও, আমিও তো সেখানেই যাচ্ছি।“

-বাঃ! এবার আমার ঘড়িটি দাও, আমি সাড়িয়ে নেব।

-আচ্ছা এই ঘড়িটার দাম কত! উম্মম… তুমি বরং আমার কাছে টাকা নিয়ে নাও!

-মানে! টাকা নিয়ে আমি কি করব! আমার কাছে ঘড়িটি সাড়িয়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত টাকা আছে। তাছাড়াও তুমি তো আর ইচ্ছে করে ঘড়িটির স্ট্র্যাপ টি ছেড়ো নি!

-না, মানে আমার দ্বারা কোন ভুল হলে সেটাকে ঠিক না করা পর্যন্ত আমার মনে শান্তি আসে না।

-আচ্ছা তাই!….. থাক প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে না, আমার ঘড়িটি দাও।

সে আর কোন কথা না বাড়িয়ে আমার হাতে ঘড়িটি দিয়ে দিল। এরপর অনেকক্ষণ নীরবতা।

নীরবতা কাটিয়ে সে আবার বলে উঠল- আচ্ছা যদি কিছু মনে না কর, তোমার নামটি জানতে পারি কি!

-আমার নাম, প্রকাশ তালুকদার।

পড়ুনঃ- প্রথম প্রেমের গল্প 

ছিঁড়ে যাওয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত ১২ টা। কখন দেড় ঘণ্টা কেটে গেছে কিছুই বুঝি নি।

মেয়েটা আবার বলতে শুরু করল- আমি কিন্তু আজ সারারাত তোমাকে ঘুমাতে দেব না, আমি তোমাকে চিনি না, তুমিও আমাকে চেন না। তাই আমার মনের সব দুঃখ আজ তোমাকে বলে যাব। কারণ দুঃখ অন্যের কাছে শেয়ার করলে কমে যায়, আর মনেও শান্তি আসে- ভবিষ্যতেও তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে না, তাই বলতেও কোন দ্বিধা নেই আমার।

আমি মনে মনে ভাবছি, এমন সুন্দর যার রূপ তার মনে আবার কি দুঃখ থাকতে পারে! আমি ছোট্ট উত্তর দিলাম- “হুম, বল। আমি শুনছি।”

সে শুরু করল- “আমার নাম, রিঙ্কি…, রিঙ্কি সরকার। ইউনিভার্সিটি তে পড়ি। জান তো, সবার মত আমার জীবনেও প্রেম এসেছিল, কিন্তু কে জানত সেই প্রেমই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াবে!

সবার অগোচরে প্রেমের সাগরে ডুব দিয়েছিলাম প্রশান্ত নামক এক ছেলের সাথে। প্রায় মাস ছয়েক আমাদের সম্পর্ক বেশ ভালই চলছিল। কিন্তু মাস ছয়েক পর জানতে পারি, প্রশান্তের মনে ঠিক প্রশান্ত মহাসাগরের মত জায়গা। আর সেখানে বাস শুধু আমার নয়, আমার মত অনেক মেয়ের।

এই বিষয়টা জানতে পেরে, আমি ওর উপর বেশ চটে যাই। পরশু আমাদের মধ্যে বেশ ঝগড়া হয়, আর আজ আমি ইউনিভার্সিটি ছেড়ে চলে যাচ্ছি, কারণ আমি এখানে থাকলে সে আমাকে বাঁচতে দিবে না, সেটা আমি ভালো মতই জানি।

এই দুনিয়ায় মা ছাড়া আমার আর কেউ নেই, তাই প্রশান্ত কে নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম, ওর জন্য আমার মনে একটা আলাদাই জায়গা ছিল, কিন্তু কে জানত আমি তাকে আমার মনে জায়গা দিলেও সে তার মনে অন্য কাউকে জায়গা দিয়ে রেখেছে।

প্রশান্ত ছেলেটা দেখতে খুবই নিরীহ প্রকৃতির হলেও সে খুবই বিপদজনক সেটা আমি কয়েক দিন আগে জানতে পারি। সে একটা গ্যাং চালায়। সেই গ্যাং আর প্রশান্ত আমাকে সেখানে টিকতে দেবে না, তাই সময় থাকতেই আমি জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছি।

বিশ্বাস কর, অন্ধের মত ভালবেসেছিলাম প্রশান্ত কে…”

ক্রাশ খাওয়ার গল্প
ক্রাশ খাওয়ার গল্প
<

মেয়েটা আর বলতে পারল না, তার গলা কেঁপে উঠল, সে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকল আর মাথাটা জানালার দিকে ঘোরাল। আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম, তার দুই সুন্দর নয়নের শোভা অশ্রু ধারায় নিমজ্জিত হচ্ছে ওই মানুষ রূপী বর্বর প্রশান্তের জন্য।

প্রশান্তের কাছে এভাবে মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলা করা হয়ত কিছুই নয়, কিন্তু যে মেয়েরা অন্ধের মত নিজের ভালবাসাকে প্রশান্তের নিকট ভাগ করে নিয়েছে, সেই মেয়েরা! তাদের কি দোষ! তারা তো নিরীহের মত ভালো বাসতে চেয়েছিল, চেয়েছিল একজন মনের কথা বলার মানুষকে পাশে পেতে, চেয়েছিল একসাথে বসে ফুচকা খেতে, কিন্তু প্রশান্ত রূপী বর্বর রা কি তাদের ভালবাসার মুল্য দিতে পারে!

মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখালাম সে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছে। আর খোলা জানালা দিয়ে হাওয়া এসে তার চুল গুলিকে মুক্ত ডানার মত উড়িয়ে দিতে চাইছে।

হয়ত তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই, কিন্তু তার মনের বেদনা ভুলিয়ে দেওয়ার মানুষ হতে আমি প্রস্তুত আছি, সাধারণ একটি ঘড়ির স্ট্র্যাপ ভুল করে ছিঁড়ে যাওয়াতে এত বার যে দুঃখ প্রকাশ করে, অন্তত সে একজন মানুষের, একজন প্রেমিকের মন ভাঙতে পারে না,… পারার ক্ষমতাও নেই।

আমি, তার ব্যাথিত হৃদয়ের দুঃখে ভরা নৌকার কাণ্ডারি হতে চাই, কিন্তু মেয়েটি সেই সুযোগ কি দেবে আমাকে…!!

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
ইমোশনাল লাভ স্টোরি- শেষ কথা

স্কুল জীবনের ব্যর্থ প্রেমের গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

বাসে প্রেমের গল্প। হঠাৎ প্রেমে পড়ার গল্প। ক্রাশ খাওয়ার গল্প।

Spread the love

Leave a Reply