স্কুল লাইফের ক্রাশ মেয়েটা যদি আপনাকে এসে প্রেমের প্রস্তাব দেয় আপনার অনুভূতি কেমন হবে! আজকের না পাওয়া ভালোবাসার গল্প টিতে ক্রাশের সাথে প্রেম এবং পরবর্তী ঘটনাক্রম সুন্দর ভাবে তুলিতে এঁকেছেন লেখক।
না পাওয়া ভালোবাসার গল্পঃ- “স্কুল লাইফের ক্রাশ”
আমি সুমন, দারিদ্র্যতার সঙ্গে হার না মানা আমার মা বাবার নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়া জীবন যুদ্ধের একজন ক্লান্ত সৈনিক। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও অর্থের অভাবে স্বার্থকেই একটু নজর দিতে হয়েছিল। তাই কলেজ শেষ করেই আমার পড়াশোনার চাকা আর গড়ায় নি।
পরিবারের জীবন যুদ্ধে মন্ত্রীর অবস্থান গ্রহন করতে আমিও কাজে যোগ দিই। রং মিস্ত্রীর কাজে। কারন সেই কাজের চাহিদা প্রচুর।
এরকম খেটে খাওয়া জীবনে কখনো কখনো নিজেকে বড্ড একা মনে হত। নিজের অপূর্ন ইচ্ছে, অপূর্ন চাওয়া পাওয়া বারবার আমাকে উদাসীন করত। অথচ ততটাও খারাপ ছাত্র ছিলাম না আমি। ইচ্ছে ছিল কালেক্টর হব…। যাক গে থাক সেই সব কথা। এই সব কথা চিন্তা করতে গেলেই ভাবুক হয়ে যাই।
এমন আটকুরে জীবনেও যে প্রেম আসতে পারে সেটা আমার ধারনার বাইরে ছিল। বেশ মনে পরে সেই দিনের কথা –
কলেজ শেষ করে সবে নতুন কাজে যোগ দিয়েছি, প্রতিদিন মেট্রোতে চেপেই আমাকে যাতায়াত করতে হয়। একদিন মেট্রোতেই দেখা হল আমার স্কুল জীবনের ক্রাশ বান্ধবী সাগরিকা এর সাথে। কথায় কথায় জমে উঠল বেশ। এরপর কয়েকদিন কেটে গেছে। বাড়ি ফেরার সময় পার্কের পাশে আবার তার সঙ্গে দেখা।
পার্কের ভিতরে গিয়ে বসলাম। পার্কের বেঞ্চে বসেই তার প্রথম প্রশ্ন – কি করছ আজকাল…?
প্রশ্নটাতে আমি খুবই ভাবুক হয়ে গিয়েছিলাম। কি উত্তর দেব তার কোনো কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
শেষে কিছুটা নিচু স্বরে বলেই ফেললাম – তুই তো জানিসই আমার পরিবারের অবস্থাটা, তাই পড়াশোনা ছেড়ে রং মিস্ত্রীর কাজে যোগ দিয়েছি।
পড়ুনঃ- স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প- সন্দেহ!
সাগরিকা আমার কথাটা শুনে হাসতে লাগল বলল- “কাজ তো কাজই হয়, এই কথাটা বলতেই তুমি এত লজ্জা পাচ্ছ…!”
আমি জিজ্ঞাসা করলাম- আচ্ছা তুই আজকাল কি করছিস?
সে আমার মাথায় একটা চাটা মেরে বলল – তোমাকে কতবার বলেছি আমাকে ‘তুই’ করে বলবে না।
সত্যি মেয়েটা সেই স্কুল জীবনের সাগরিকার মতনই আছে। একটুও বদলায় নি।
আমার প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে সে বলল – আচ্ছা প্রেম করবা আমার সাথে।
মা মা মানে..! ও ও ওইসব জিনিসে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই, বুঝলি… ইয়ে সরি বুঝলে!
-প্রেম করে দেখই না একবার।
-কিন্তু জানোই আমার অবস্থা ভাল নয়। আমার পক্ষে প্রেমিকাকে প্রতি সপ্তাহে শপিং করাতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
-কে বলেছে শপিং করাতে! আমার ড্রেস আমি নিজে কিনতেই বেশি ভালোবাসি।
-আমার পক্ষে দামী রেস্টুরেন্টে খাওয়ায় খাওয়ানো সম্ভব নয়।
-কে বলেছে দামী রেস্টুরেন্টে খাওয়ার খাওয়াতে। রেস্টুরেন্টের খাবার খেতে ভালো নয়। তুমি ফুটপাথের ধারের ছোট্ট দোকানে ফুচকা তো খাওয়াতে পারবে..!
-আমি প্রতিদিন দেখা করতেও হয়ত পারব না।
-তাতে কি হয়েছে বাড়ি ফিরে, একটা কল তো করতে পারবে..!
-ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলার সময় আমি পাব না।
-so what..! দিন শেষে পাঁচ মিনিট সময় তো আমার সঙ্গে কথা বলতে পারবে..!
-প্রতি মাসে ফোন রিচার্জ করে দেওয়াটা ও হয়ত আমি পারব না, কারন এক রিচার্জের দাম ৩৫০ টাকা। এটি করতে গেলে আমাকে পরিবারের একটি খরচ বাদ দিতে হবে।
-উফফ কে বলেছে রিচার্জ করিয়ে দিতে। আমার বাবা আমাকে প্রতি মাসে রিচার্জ করিয়ে দেন।
-তাহলে প্রেম করতে আপত্তি নেই। কিন্তু যদি ছেড়ে চলে যাও..!!
– ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য তো ভালোবাসিনি।
পড়ুনঃ- সিনিয়র আপু যখন ক্রাশ। টাকার কাছে ভালোবাসা ফিকে!
স্কুল ক্রাশের মুখে এইসব কথা শুনে কখন চোখের কোণায় একফোঁটা আনন্দাশ্রু চলে এসেছিল আমি নিজেও জানি না।
এরপর কেটে যায় চার বছর। ইতিমধ্যে সাগরিকার হাত ধরে বেশ কয়েকটি স্কিল আয়ত্ত করে নিয়েছি। সে আমাকে এত্ত সুন্দর ভাবে গাইড করত, তা আমার জীবনে আসা সমস্ত শিক্ষক এর উর্দ্ধে। এরপর আর পিছন ঘুরে দেখতে হয় নি।
সামনের বছর আমার বিয়ে হয়ে যায়। আপসোস সাগরিকার সাথে নয়, বাধ্য হয়েই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়েছে এক অন্য মেয়ের সাথে।
আমি যখন সফলতার শিখরে তখনই সাগরিকার পরিবার তার বিবাহ অন্য জায়গায় ঠিক করে ফেলে। আমি আরেকটু চেষ্টা করলেই হয়ত আমাদের বিয়েটা হয়ে যেত। কিন্তু ব্যস্ততা দেখিয়ে সেদিকে আমি কম গুরুত্ব দিয়েছিলাম।
শেষ দেখায়, সে বলেছিল – “যখন দুটি মানুষ পরস্পরকে খুব ভালোবাসে তখন তারা একত্রে চলে আসে। তখন তারা হয়ে উঠে একই শরীরের অভিন্ন অংশ। আর আমরাও একই শরীরের অভিন্ন অংশ। কাজেই নিজেই নিজের শরীরকে বিবাহ করা সম্ভব নয়।”
সে বলেছিল – “ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে বিবাহ না হওয়াটাই হয়তো ভালো কারণ, বিবাহ হলে মানুষটা তো পাশে থাকে ঠিকই কিন্তু ভালোবাসাটা থাকে না। সময়ের সাথে সাথে সেটিও ফিকে হয়ে যায়।”
এরপর এক বছর তার ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলাম। পরে তার কথামতোই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি তারই পছন্দ করা পাত্রীর সাথে।
আজ আমার কোল আলো করে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। আমি তার নাম রেখে দিয়েছি ‘সাগরিকা’,
আজ আমার কাছে কোটি টাকার মার্সিডিস আছে ঠিকই কিন্তু পাশে নেই সেই মার্সিডিস ক্রয় করার ক্ষমতা প্রদান কারী অমূল্য মানুষটি। কাজেই ধনী হয়েও আজ গরিবই রয়ে গেছি আমি, সর্বদা এক না পাওয়া এক পাপ বোধ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।
গল্পটির স্বত্ব ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। ছাড়পত্র তার কোনো গল্প কেই ভিডিও বানানোর বা অন্যত্র প্রকাশের অনুমতি দেয় না।
লেখা পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এই মেইল ঠিকানায় অথবা, সরাসরি WhatsApp এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।।
পড়ুনঃ- বিরহের গল্প- good bye break-up হওয়ার গল্প এক তরফা প্রেমের গল্প
সমস্ত আপডেটের জন্য-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
না পাওয়া ভালোবাসার গল্প। স্কুল লাইফের ক্রাশ। ক্রাশ গল্প। 1 bengali sad love story.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।