আজকের না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প টিতে ব্যস্ততার অজুহাতে প্রিয় মানুষের হাত ছেড়ে চলে যাওয়ার এক মর্মস্পর্শী সত্যি ঘটনা গল্পের আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্পঃ- “সমাপ্তি”
অবশেষে তিন বছরের রিলেশনশিপের এখানেই সমাপ্তি। আর এই সমাপ্তির পিছনে কারণ হল ব্যস্ততা। হুম ব্যস্ততা নামক এক অজুহাতের অদৃশ্য হস্ত ছিঁড়ে দিল দুইটি নিষ্পাপ প্রানের বন্ধন। দুইজনের গন্তব্য আজ দুই দিকে। ঘটনা টা তাহলে প্রথম থেকেই বলি-
ধ্রুব আর রাজলক্ষ্মীর প্রথম দেখা হয়েছিল ধ্রুবরই এক বন্ধুর বিবাহ অনুষ্ঠানে। প্রথম পরিচয় এই ভাললাগা শুরু, এরপর ইনস্টাগ্রামে একে অপরকে অনুসরণ করা শুরু আর ধীরে ধীরে কথা বলার সূত্রপাত। একে অপরের আর ভালভাবে পরিচিত হওয়া। তারা জানতে পারে যে, উভয়ই একই শহরের বাসিন্দা।
পরিচিত হওয়ার এক মাসের মাথায় তারা সম্পর্কে আসে। একই শহরের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে প্রায়ই দেখা হত তাদের। একসাথে ঘুরতে যাওয়া থেকে শুরু করে রাত জেগে কথা কোনটাই বাকি ছিল না। এভাবেই চলতে থাকা সুন্দর সম্পর্কটার মাঝে এক বছরের মাথায় চলে আসে ব্যস্ততা নামক এক অজুহাত।
ধ্রুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেকে নিয়ে, সে রাজলক্ষ্মীকে ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করে, ঠিক মত ম্যাসেজ এর রিপ্লাই নেই কল করলেও সে “পরে কথা বলব” বলে আর কল করার নাম নেই। ধ্রুব একদিন রাজলক্ষ্মী কে জানায়, সে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে চায় এখন। এইভাবেই ধীরে ধীরে ব্যস্ততার আগমনে ধোঁয়াশার মতো ঝাপসা হতে থাকে একে অপরের প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টি।
কিন্তু রাজলক্ষ্মীর পক্ষে কথা না বলে থাকা যাচ্ছিল না কিছুতেই। রাজলক্ষ্মীর চেষ্টাতেই ধোঁয়াশায় হারিয়ে যেতে থাকা সম্পর্কটা আবার ধোঁয়াশা কাটিয়ে আগের রূপ নেয়।
প্রায় তিন মাস সবকিছু ঠিক চলল। এরপর ধ্রুব জিমে জয়েন করল, রাজলক্ষ্মীর জন্য বরাদ্দ সময় আরও কমে এল। কিন্তু রাজলক্ষ্মী ধ্রুব কে জানায় যে, সে হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও অন্তত কয়েকটা ঘণ্টা সে যেন তাকে দেয়।
পড়ুনঃ- এক তরফা ভালোবাসার গল্প- কলেজের সেই মেয়েটি
কিন্তু ধ্রুব জানায়- ‘যে থাকার সে হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও এমনিতেও থাকবে’। রাজলক্ষ্মী ধ্রুব কে বারবার বোঝাতে থাকে যে, সম্পর্কে একে অপরকে সময় দেওয়াটা অনেক অনেক জরুরি। যে থাকার সে এমনিতে নয়, তাকে আগলে রাখতে হয়। কিন্তু ধ্রুব নিজ সিধান্তে অটুট। তার কথা মতে ধ্রুব রাজলক্ষ্মী কে অত সময় দিতে পারবে না, আর সে তেমন দেখা করতেও পারবে না। এতে রাজলক্ষ্মী যদি থাকার হয় থাকবে না হলে সে চলে যাক।
ধ্রুব এর এরকম কথাতে রাজলক্ষ্মী অনেক আঘাত পায়, সে রাগে অভিমানে মোবাইলের সুইচ বন্ধ করে দেয়। প্রায় এক সপ্তাহ পর যখন সে মোবাইল খুলে তখন সে নিতান্ত হতাশ হয়, কেননা সে আশা করেছিল যে, ধ্রুব তাকে ম্যাসেজ করবে অথবা কল করবে। ধ্রুব তাকে ম্যাসেজ করেছে ঠিকই, কিন্তু সেটা রাজলক্ষ্মী ফোন বন্ধ করে দেওয়ার পাঁচ দিনের মাথায়।
রাজলক্ষ্মী ধ্রুবকে ছাড়া এক দিনও থাকার কথা ভাবতে পারে না, কিন্তু ধ্রুব…! পাঁচ দিনের মাথায় করা ধ্রুবর ম্যাসেজটাও ছিল খুব সংক্ষিপ্ত। তাতে শুধু লেখা আছে- ‘হাই, কি করছ।‘ রাজলক্ষ্মী ভেবেছিল ধ্রুব তাকে মানাবে, কিন্তু উল্টে ধ্রুব এর পক্ষ থেকে কোনো বার্তা সে পায় নি। নিজের সমস্ত অভিমান নিজেই দূরে সরিয়ে দিয়ে রাজলক্ষ্মী ধ্রুব কে ফোন করে, কিন্তু ধ্রুব কল তুলে বলে- “আমি একটা ওয়েব সিরিজ দেখছি একটু পড়ে ফোন করো।“
রাজলক্ষ্মীর চোখে জল এলেও, সে পাগলের মত হাসতে থাকে। যে ছেলেটা একসময় তার পিছনে এত্ত এত্ত পাগল ছিল সে আজ এতটুকু সময় দিতে পারছে না তাকে! যে ছেলেটা একসময় হেসে হেসে কথা বলত সেই ছেলেটা আজ এত খরুস ভাবে কথা বলছে!
সে ওয়েব সিরিজ দেখার সময় পাচ্ছে অথচ তাকে সময় দিতে পারছে না। পরের দিন রাজলক্ষ্মী আবার ধ্রুবকে ফোন করে, তখন তাদের একটু মত কথা হয়। কিন্তু সেই কথাতে ধ্রুব শুধু তার সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততা দেখিয়ে যাচ্ছিল। রাজলক্ষ্মী ভেবেছিল, ধ্রুব হয়ত তাকে সরি বলবে কিন্তু তার গলা শুনে এতটুকুও মনে হল না যে রাজলক্ষ্মীর জন্য তার মনে আদও কোন অনুভূতি আছে!
রাজলক্ষ্মী ধ্রুবকে জানায় সে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে নিক, কিন্তু দিনে অন্তত একটা ঘণ্টা ধ্রুব যেন তাকে দেয়। এই কথা শোনা মাত্রই ধ্রুব সরাসরি হেসে বলে দেয় যে, একটা ঘণ্টাও তার পক্ষে অনেক অনেক মূল্যবান।
পড়ুনঃ- ১৫+ টুকরো প্রেমের গল্প
এইভাবে টানাপোড়নের মধ্যে আরও তিনটা বছর কেটে যায়। আর এই দুই বছরে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়েছে অগুনিত বার।
অবশেষে রাজলক্ষ্মী আজ নিজেই নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। সে ধ্রুবকে একটি পার্কে শেষ দেখা করার জন্য ডাকে এবং সেখানে সে ধ্রুবকে জানায়- “কি চাইতাম আমি সময় টুকুই তো চাইতাম! তুমি আমাকে সেই সময় টুকুও দিতে পারছ না। সম্পর্ক কে টিকিয়ে রাখার জন্য একে অপরকে সময় দেওয়া টা অনেক অনেক জরুরী।
কত কত স্বপ্ন দেখতাম আমি, দুইজনে একসাথে সারাটা জীবন থাকব। যা করব দুইজনে একসাথে করব। হাসতে হাসতে কাটিয়ে দেব সারাটা জীবন এটাই ভেবে বসে ছিলাম আমি, কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল। হ্যাঁ আমি জানি ক্যারিয়ার অবশ্যই দরকার, কিন্তু কখনো তো আমাকে বল নি যে, আমাকে একটু সময় দাও। তুমি সোজা আমাকে ইগনোর করো। কেন এরকম করো তুমি?
ভেবেছিলাম কত সুন্দর একটা সংসার গড়ে তুলব কিন্তু তোমার কাছে তো সময়ই নেই। এখনই সময় দিতে পারছ না আমাকে আর বাকি জীবনটা যে সময় দিতে পারবে সেই আশা ছেড়ে দিয়েছি আমি। জানো তো মন তোমাকে কিছুতেই ছাড়তে চাইছে না, কিন্তু বিশ্বাস করো এত অপমান এত ইগনোর আমার আর সহ্য হচ্ছে না। ব্যস্ততা না দেখিয়ে আমাকে পাশে নিয়েই যদি চলতে তাতেই আমি খুশি হতাম। কিন্তু তুমি সর্বদা সময় নেই বলেই গেছো। আমিও তো মানুষ আমারও তো কষ্ট হয়।“
কথা গুলো বলতে বলতে রাজলক্ষ্মী অঝোরে কেঁদে উঠে। কিন্তু ধ্রুব পুতুলের মত সব কিছু দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে। এরপর রাজলক্ষ্মী ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে- “ঠিক আছে, তুমি যেহেতু মনে করছ আমি তোমাকে বিরক্ত করছি, করব না আর বিরক্ত আজ থেকে। কত ভালো হবে তাই না বলো! কেউ তোমাকে আর বিরক্ত করবে না, নিজের মত করে বাঁচবে। হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছিলে তুমি, জীবনটা তো তোমার অতে আমার অধিকার জন্মাবে কেন!
আজ না হোক কাল তোমার বিয়ে হবে, তোমার কাছে হাত জোড় করে বলছি নিজের স্ত্রীকে কখনো ব্যস্ততা দেখিও না প্লিজ প্লিজ প্লিজ। তুমি বড় জব করো, এটাই চাই। কিন্তু এটাও বলব যে, শুধু অর্থ আর ক্ষমতা থাকলেই মানসিক শান্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। বাঁচার জন্য অর্থ অবশ্যই দরকার কিন্তু সেই অর্থের পিছনে ছুটতে গিয়ে হারাবে মানসিক শান্তি। আর এই শান্তি এমন একটা বিষয় যেটা তুমি অর্থ দিয়ে কিনতে পারবে না।“
এই কথা বলার পর রাজলক্ষ্মী চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে চলে যেতে থাকে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- ভালোবাসার গল্প- প্রেম স্মৃতি ফিরে পাওয়া ভালোবাসার গল্প- মনের মানুষ ছেড়ে চলে যাওয়ার গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প। অসমাপ্ত গল্প। real love story bangla. unsuccessful love story
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।