দুটি জীবন যুদ্ধের গল্প থাকছে আজ। এই কঠিন জীবন যুদ্ধে নানান চক্রব্যূহ ভেদ করে আমাদের বেঁচে থাকতে নয়। বারংবার আহত হয়েও আবার উঠে দাঁড়াতে। আজ এমনই দুটি জীবনমুখী গল্প থাকছে ছাড়পত্রে।

জীবন যুদ্ধের গল্পঃ-

জীবন সংগ্রামের গল্পঃ-

জীবনে চড়াই, উৎড়াই থাকে, কিন্তু জীবনে বয়ে চলা প্রানটা কচি ছেলের মতো ঠ্যাং ছড়িয়ে কাঁদলে কেমন লাগে তা অনুভব করার চেষ্টা করবেন পাঠকরা। আমিও তো তেমনি ছিলাম, বোধ হয়, এটা একটা অটোবায়োগ্রাফি বলতে পারেন, যাই হোক আমার নাম সৌগত, থাকি পশ্চিমবঙ্গের শেষ সাগরঘেঁষা জেলার দক্ষিন ২৪ পরগনাতে।

আমি জন্মানোর আগে থেকেই আমার মাকে মেরে ফেলার অনেক চেষ্টা চলেছিল, কিন্তু মা কালীর দয়ায় অনেকবার মরনের ঝাঁপি থেকে ফিরে এসেছে। জন্মালাম ১৯৯৮ সালের ১৪ই জানুয়ারীতে, কলকাতার এক হাসপাতালে। বাবার পৈত্রিক বাড়িতে ফিরতেই বাবার সৎ ভাই আর ভাইয়ের বউ ভীষন অত্যাচার শুরু করলো, যার ফলশ্রুতি ঘটে গেলো ভয়ংকর ভাবে। আমি তখন চার মাস হয়েছি পৃথিবীর আলো দেখেছি, একদিন হঠাৎ আমার মেজকাকি আমায় আয়নার পেছনে থাকা লাল পারা জাতীয় বিষ দুধের সাথে খাইয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে, কিন্তু ভগবানের করুনায়, আমি প্রান ফিরে পাই, দেহ প্রান ফিরে পেলেও দেহে দেখা দেয় এক ভয়ংকর “সোরাইসিস” চর্মরোগ, যা একটু একটু করে গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

দীর্ঘ বারো বছর পুঁজ রক্ত, জ্বালা যন্ত্রনা নিয়ে এই অধ্যায়ের অবসান ঘটে। কিন্তু আমার গল্পটা কখনো সুন্দর ছিল না, যখন আমি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে, চাকুরিজীবি হওয়ার দিকে এগোচ্ছি তখন দেখা দিল শরীরে আর একটি দূরারোগ্য ব্যাধি এজমা এলার্জি, যাতে পরীক্ষা করে দেখা যায় আমার ডান দিকের ফুসফুসটা প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্থ, ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, “ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করবেন না, কিন্তু শ্বাস কষ্ট বেড়েই চলেছে দীর্ঘদিন ধরে।

জীবন যুদ্ধের গল্প
জীবন যুদ্ধের গল্প

এখনও আমি পড়ুয়া, আমার স্বপ্ন ছিল লেখালেখি নিয়ে আমি জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাব, তবে সমাজ অত্যন্ত কঠোর, এছাড়া নিজের ভাই এর থেকেও শুনতে হয় “তোর বারো মাসে তেরো রোগ”। এছাড়া বাবার সুযোগ্য নতজানু সন্তান না হতে পারার দরুন আমার দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার অর্থ দিতে তিনি অনাগ্রহী। এদিকে আমি আর পাঁচটা সন্তানের মতো রোজগারে অসমর্থ। তাই জীবনের ২৪টি বসন্ত অতিকষ্টে বহন করলেও, আর বহন করা হয়ত সম্ভব নয়।

এক নিম্নউচ্চতাযুক্ত মেদবহুল রোগগ্রস্থকে কোনো মেয়েও কোনোদিন ঘুরে তাকায়নি। কাউকে হয়তো ভালোবাসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু জীবনের ব্যর্থ পথিক হয়ে আজ আমি জলপ্রপাতের পাশে দাঁড়িয়ে। ভেবে দেখলাম আমি না থাকলে অনেকের জীবন বেশ হেসে খেলে চলবে। কিছুটা হলেও সংসারের খরচা কমেবে। বাড়ির পাশের মাঠে আর কেউ ডিফেন্স ভুলে গোল খাবে না, বাড়িতে লুচি খাওয়ার বায়না আর কেউ ধরবে না, তবলার ‘তেরেকেটে’ অভ্যাস করতে আর কেউ থাকবে না। এক নির্ঝঞ্ঝাট সকাল-সন্ধ্যা উপহার দিতে পারব এই পরিবারকে , এই সমাজকে, এই বিশ্বকে।

আমি প্রায় শেষের দিকে এসে গেছি, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি পরের জন্মে রোগমুক্ত জীবন দিও আর একটা মনের মানুষ। ব্যস আর কিছু চাই না। যাই হোক জীবনের শেষ অধ্যায়ের উপসংহারে শেষ কবিতা লিখে গেলাম,

জীবন যেন রক্তাভ বেশ,
অরূপ চলার পথে-
দিগন্তে তাই ছুটিয়ে মারে,
মরহিল্লোল রথে।
মৃত্যু আমায় চেতন মায়ার,
অনিত্য শব্দে চেনায়-
বেসুর জীবনের হারমোনিকায়
স্বর যে থমকে দাঁড়ায়।।

হে জীবন তুমি তনু হতে করো
সজল ঝরানো মুক্তি,
আকুল বিষাদে, অমোঘ পাত্রে
বলি হওয়ার সুপ্ত শক্তি।।
যদি কোনোদিন অন্য কোনোখানে
জন্মাই মানুষ বেশে
চিনবে তখন গলার দাগে
আর স্বরের সন্নিবেশে।।

জীবনের গল্প
জীবনের গল্প

‘বিদায় বন্ধু’

পড়ুন- মধ্যবিত্তের প্রেম 

কঠিন জীবনের গল্পঃ-

সৌমেন সাউ, কসবার একটি ঘিঞ্জি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। ওনার ১০ টা ৫ টার ডিউটি দেখে মনে হয়, গুদামের ইঁদুর খাদ্য অভিযানে সামিল হবে। মানুষটা খুবই সাধারণ, ভদ্র। প্রশান্ত, নির্ভীকভাবে যেন বয়ে নিয়ে চলেছেন, অনেকগুলি পেট। ওনার বয়স এখন চল্লিশ ছুঁইছুঁই কিন্তু এখনও বিয়ে করেননি। কারনটা হলো ‘কাঁধে আর ঠাঁই নেই’ যে, অফিস সেরে যখন বাড়ি ফেরেন, তখন তার এক হাতে থাকে ওষুধের কাগজ, আরেক হাঁতে শাক-সবজি আর কিছু চকলেট, ওনার স্নেহের বোনটির জন্য। যে একটা দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী। প্রতিরাতে বোনকে গল্প শোনানো হল তার কাছে অকৃত্রিম এক স্নেহের স্পর্শ।

জীবনটা এভাবেই চলে যাচ্ছিল সৌমেনের। এমন সময়েই সৌমেনের জীবনে এক বান্ধবীর দেখা হয়, সে তারই অফিস ক্লার্কের মেয়ে সুজাতা। সৌমেন এই বন্ধুত্বে নিরুৎসাহিতই ছিল, এক কষ্টময় জীবনের সাথে কাউকে সে জড়াতে চায় না। কিন্তু ধীরে ধীরে এই বন্ধুত্ব প্রেমের মোড় নিতে থাকে। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাও বাড়তে থাকে। একদিন সৌমেন বলে “চলো বিয়ে করে ফেলি। কথাটা শুনে সুজাতা যেন একটু চমকে ওঠে, সৌমেন ব্যাপারটা লক্ষ্য করে আর অনেক ভাবনা তার মনে উঁকি দিয়ে ওঠে।

সুজাতা বলে ” বাবার সাথে কথা বলতে হবে, আজ উঠি। এর কিছুদিন পরে অফিসে যেতেই মধুসূদন বাবু একটি নিমন্ত্রণপত্র দিয়ে সৌমেনকে নিমন্ত্রন করে বলল ” পরশু আমার একমাত্র মেয়ে সুজাতার বিয়ে, তোমার এবং তোমার পরিজনের নিমন্ত্রন রইলো, আসবে কিন্তু!

উত্তরে সৌমেন কাঁপা গলায় বললো ” যাবো।” ঘরে ফিরে যখন সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করানোর জন্য বিয়ের নিমন্ত্রনের খামটা খুলে, সে দেখে তার সুজাতার ছবি একটি অপরিচিত ছেলের সাথে জ্বল জ্বল করছে। কিছুক্ষন পরে সৌমেনের বোন হুইলচেয়ারে ভর দিয়ে সৌমেনের ঘরে ঢুকলো আর দেখলো সৌমেন বুকের যন্ত্রনায় ছটপট করে খাটের এক কোণে নিথর ভাবে পড়ে আছে।

কঠিন জীবনের গল্পকঠিন জীবনের গল্প
কঠিন জীবনের গল্প
<

হাসপাতালে ভর্তি করা হলো সৌমেনকে। তেমন কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়না সৌমেনের। কিছুদিনের মধ্যে সৌমেন আবার অফিস যাওয়া শুরু করে। বোনের আর মায়ের খেয়াল রেখে সে নিত্যদিনের কাজ সারে। আর সুজাতার অবিশ্বাসের ‘কল’ আর কোনোদিন সে রিসিভ করে না। তার মনে একটা কথাই বাজে এখন,

“ভালোবাসাটা এখন টাকায় কেনে,
প্রেমটা বেজায় খেলনা
সত্যি বলতে এসবগুলো
আবেগ থেকে আসেনা।।
প্রেম আজ থুনকো কাঁচের
অবিশ্বাসে ঘেরা,
সেই কাঁচেরই আয়নায় মুখ
দেখতে লাগে সেরা।।

ভালোবাসা আজ ক্লান্ত পথিক,
প্রেমের রক্তাঘাতে-
সুজাতা আজ খেলনা হারিয়েছে
বিলাস পৃথিবীতে।।
শেষ পর্যন্ত পড়ে ডায়েরীটা বন্ধ করে দেয় সৌমেন। মাঝরাতের ঘুম তার চোখকে জড়িয়ে ধরে প্রতিমুহুর্তে।

সৌগত প্রামাণিক facebook

গল্পের বাস্তবমুখী ভাবনায়-
লেখকের কলমে পূর্ণতা প্রাপ্ত কিছু লেখা- 

বাস্তব জীবনের গল্প 

কয়েকটি বাছাই করা অনুগল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

“জীবনের গল্প। জীবন যুদ্ধের গল্প। কঠিন জীবনের গল্প”

Spread the love

Leave a Reply