আজকের গল্পটি একটু ভিন্ন স্বাদের। আজ একটি ছোটদের ভূতের গল্প আপনাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। এই গল্পটির নাম দিদিমণি গল্পটি পাঠিয়েছেন- মানব মন্ডল। এই সুন্দর ভূতের গল্পটি পড়ার পড়ে আপনার উপলব্ধি হবে যে, ভুত মানে শুধু ভয়ানক নয় বরং ভূতের সাথে বন্ধুত্বও হতে পাড়ে।
ছোটদের ভূতের গল্প। দিদিমণি। ভালো ভূতের গল্পঃ-
ভুতেরা যে শুধু বিদঘুটে হয় , কে বলেছে আপনাকে? কিছু কিছু ভুত বাচ্চাদের বন্ধুও হয়। যদিও ভুতেরা একটুখানি দুষ্টু হয়। আরে এ যেমন তেমন ভূতের কথা আমি বলছি না। আমি বলছি তিন্নির ভুত দিদিমণির কথা। কিভাবে ওর সাথে বন্ধুত্ব হলো! আমার ভাইজি-তো, আমার মতো। তিন্নি ঠিক পড়াশোনা করতে ভালো বাসতো না। ওর গ্রামের বাড়ির লাল্টু , পটলাদের মতো জীবনটা ভালো লাগতো। ওরাতো স্কুলে যায় , বাড়ি ফেরে, বিকালে গিয়ে মাঠে ডাঙগুলি খেলে, নদীর ধারে গিয়ে ফড়িং ধরে, সন্ধা হলে হরিলুট এর বাতাসা কুঁড়ায় তারপর পড়তে বসে।
আর তিন্নির জীবনটা একটা নিয়মের খাঁচায় বাধা। বিকাল গুলো রুটিন বন্দী- ক্যারাটে ক্লাস, আঁকার ক্লাস, গানের ক্লাস, সাঁতারের ক্লাস, আবৃত্তি ক্লাস, যোগ ক্লাস, নাচের ক্লাস, গীটারের ক্লাস। ওর কোনো ছুটি নেই। হোম ওয়ার্কের খাতায় গুড নেই। রোজ বকা খায়। সুফিয়ার সাথে ওর প্রথম বন্ধুত্ব হল স্কুলেই। সুফিয়া খুব দুষ্টু, রোজ ওর টিফিন তো খাবেই সাথে অন্য দের টিফিন টাও খেয়ে নেয়। কিন্তু সূফিয়াকে কেউ দেখতে পায় না, সুফিয়া রাজার চুল ধরে টানবে, তিন্নির দোষ হবে। দিদিমণির বকা খাবে। তবে তবুও সে তিন্নি কে বন্ধু বলে। আর কারও কাছে তো টাইম নেই ওর বন্ধু হবার।
তিন্নির একা শুতে ভয় লাগে বলে ,সুফিয়া রোজ রাতে তিন্নির বাড়িতে এসে শুয়ে পড়ে চুপিচুপি, রাতে কতো গল্প বলে- ভুতের, রাজ পুত্তুরের, পরীদের আরও অনেক কিছু। তিন্নি ওর একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড। রাহুলরা তিন্নির সাথে খারাপ ব্যাবহার করলে ও রাহুল দের ল্যাঙ মেরে কাঁদায় ফেলে দেয়। কোথা থেকে- তেঁতুল, কামরাঙা , আঁশফল, ফলসা, খেজুর, কালো জাম এনে খাওয়ায় ওকে।
আপনি ভাবছেন, গল্প এর নাম ছোটদের বন্ধু ভুত দিদিমুনি অথচ আমি একটা ছোট ভুতের গল্প বলছি। আসলে এই মাত্রই মূল গল্পটা শুরু হলো। হাফ ইয়ারলি exam result সবে বেড়িয়েছে। তিন্নি চায় না এবার কেউ ওকে ব্যাড গার্ল বলুক। কিন্তু রেজাল্টের সময় দেখা গেল ও খুব খারাপ নাম্বার পেলো। ওর মা বলে দিয়েছে ডল কেনাতো দূরে থাক, নতুন জামা কাপড়ও কিনে দেবে না। সুফিয়া ছাড়া তো তিন্নির কেউ নেই, ওর উপরেই চোটপাট নিলো তিন্নি। সুফিয়া দুই দিন দেখা করলো না ওর সাথে। তিন্নি খুব কাঁদলো।

ওরা দুইজন খুব ভালো বন্ধু ছিলো, তাই সুফিয়া তিন্নি কে বললো চলো তোমাকে আমি এমন জায়গায় নিয়ে যাবো যেখান গেলে কেউ তোমাকে বকবে না, যতক্ষণ খুশি খেলা করবে, যখন খুশি পড়বে। ওখানে কেউ ভুঁড়ি ভুঁড়ি নাম্বার পাওয়ার জন্য পড়ে না। সবাই পড়ে জানার জন্য। নতুন জিনিস জানতে বই পড়তে দারুন মজা হয়। বলে রাখি এই সুফিয়াকে তিন্নি ছাড়া আর কেউই দেখতে পায় না।সুফিয়া হল অদৃশ্য এক ছায়া।
ও তিন্নিকে ছাদের ওপর নিয়ে গেলো। কয়েক বছর আগে স্কুলের ছাদে লুকোচুরি খেলতে এসেছিলো সুফিয়া। তারপর পা পিছলে পড়ে গিয়ে মারা যায়। আজ তিন্নিকেও সুফিয়া নিয়ে এলো ছাঁদে। আর ঠেলা মেরে ফেলে দিলো। কারণ ও বললো এভাবেই ছাদ থেকে পড়ে গেলে ওরা নাকি চিরকাল বন্ধু থাকবে।
তিন্নি আর কাউকে বিশ্বাস করে না। ও সব কথা আমাকে বললো। কারণ আমি ওর ভালো জেঠু কোনও দিন বকাঝকা করি না। বরং ওকে নানা রকমের ছবির বই এনে দিই, একটা ছবি আঁকতে পাড়লেই চকলেট দিই। তবুও একটা কিছু গোপন করে গেলো সে, তিন তলা ছাদ থেকে পড়ে গিয়েও ওর কিছু হলো না কেন? তবে ওর ডান হাঁতে সামান্য একটু ছড়ে গেছে।
আমি ওর বাবা মাকে ভীষণ বকাঝকা করলাম, একটা বাচ্চা মেয়ের উপর ওরা কেনো অনেক বেশি চাপ দিয়ে ফেলছে? এত্ত ছোট্ট একটা মেয়ে কি সব কিছু করে উঠতে পারে? নিজেদের অনেক স্বপ্নের কাছাকাছি গিয়ে হয়তো ব্যার্থ হয়েছে, তবে সেই স্বপ্ন গুলো ওকে দিয়ে পূরণ করতে গিয়ে ওর শৈশব টাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম, পড়াশোনা ছাড়া যে কোনো একটি বিষয় বাছতে হবে , অত চাপ দেওয়া যাবেনা, তাহলেই সফলতা আসবে। ওর মা বাবা রাজিও হলো , কিন্তু একটা বিষয় বাছতে বললে, ও যেনো কারো সাথে আলোচনা করছে।
সবাই চলে যেতে আমি জিজ্ঞেস করলাম “তুই আবার সুফিয়ার সাথে কথা বলছিস, ও না তোর ক্ষতি করতে চেয়েছিলো!”
ও বললো “না সুফিয়া না। আমি কারো সাথে কথা বলছি না।”
তিন্নি বেশ বদলে গেলো। বেশ হাসিখুশি থাকছে। একটা শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছে। নিয়ম করে ঘুম থেকে উঠে গানে রেওয়াজ করছে, তৈরি হয়ে একদম ঠিক সময় খাওয়া দাওয়া, পড়াশোনা করেছে। এক্কেবারে good girl হয়ে গেছে। “জীবনে সেরাটাই হতে হবে এমন হতে বলি নি, কিন্তু তুমি পরীক্ষায় নিজের সেরাটাই পারফর্ম করবে” এটুকু আমি বলেছিলাম। গানের প্রতিযোগিতায় ও দ্বিতীয় হলো আমাদের সবাইকে অবাক করে। যদিও আমাদের আগেও অবাক করেছে। ও এবার স্কুলে পঞ্চম হয়ছে। শর্ত অনুযায়ী ওর জন্মদিন করতে হলো।
বিকেলে থেকে বেশ মজা করছিল ও। হঠাৎ রাতের বেলায় দেখি, ও বারান্দায় গিয়ে কাঁদছে।
তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম, কি ব্যাপার তা দেখতে। ও বললো “ভালো জেঠু তুমি আটকাও না দিদিমণিকে”
চোখ ঘুরিয়ে দেখি “ছাঁদের কোনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে অপর্ণা”
আমি অবাক হয়ে গেলাম এত বছর পর ওকে দেখে। ও বললো “বুবাই দা আমারও যদি বিয়ে হতো তিন্নির মতোই সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে হতো তাই না বল! ওকে তোমরা একটু ভালোবেসো। কোনো মানুষ সেরা হয়ে জন্মগ্রহণ করে না, কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনই তাকে সেরা করে। ও সেটা এখন বুঝে গেছে, তাই আমাকে প্রয়োজন নেই আর। তু তুমি এসেছো ভালো হয়েছে। শেষ বার দেখা হলো ভালো হলো। একটা কথা জেনে রেখো- প্রতিযোগিতার ফল, পরীক্ষার ফল, rank এগুলো সব একটা সংখ্যা মাত্র। ও কতটা শিখলো কতটা যোগ্য হলো সেটাই আসল কথা। এ টুকু জেনে রেখো। ভালো থেকো।”




মনে পরে গেল সুফিয়া কে বাঁচাতে গিয়ে অপর্ণাও ছাদ থেকে পড়ে যায়। খোলা ছাদ অথচ গেটে তালা না থাকার ফলেই দূর্ঘটনায় সুফিয়া মরেছে ও পুলিশ কে স্টেটমেন্ট দিয়ে ছিল। কতৃপক্ষ নিজেদের বাঁচাতে ওর ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়। ও নাকি ভয় দেখাতে গিয়ে সুফিয়া কে মেরে ফেলছে।
ও হয়তো প্রমান করে দিতে পারতো ও নির্দোষ। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে ওকে বিদায় নিতে হয়েছিল এই পৃথিবী থেকে। কিন্তু ও বেঁচে আছে আরেকটা পৃথিবীতে, তিন্নীদের জন্য।
গল্প প্রেরক- মানব মন্ডল।(facebook)
পড়ুন- বিস্কুট রহস্য। মজার গোয়েন্দা গল্প হোটেলের শাঁকচুন্নি। ভুতের রহস্য
“ছোটদের ভূতের গল্প। দিদিমণি। ভালো ভূতের গল্প। bangla horror story. horror story for kids bangla. bhuter golpo”
FOR TELEGRAM UPDATES:- ছাড়পত্র। CHARPATRA FOR FACEBOOK UPDATES:- গল্প আর গল্প




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।