(কুসংস্কারের সত্যতা) বর্তমানে একটি কথা খুবই জনপ্রিয় যে আমরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু যতই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যতই বিজ্ঞান মনস্ক ব্যক্তিই হন না কেন, কুসংস্কার কিছুতেই তার পিছু ছাড়ে না। রাস্তা দিয়ে বেড়াল পারাপার করলে আমরা থেমে যাই, ভাঙ্গা আয়না ব্যবহার করা যাবে না, ইত্যাদি নানান কুসংস্কার প্রচলিত আছে আমাদের মধ্যে। কিন্তু সেই কুসংস্কারের পেছনে আসল সত্যটি হয়ত আমাদের অনেকেরই অজানা।
এগুলি কুসংস্কার নয়, এর একটি বাস্তব ভিত্তি ছিল একসময় কিন্তু বর্তমানে তা পরিবর্তিত হলেও পরিবর্তন হয়নি আমাদের মানসিকতার তথা বংশ পরম্পরায় প্রচলিত এই প্রথাগুলির।
কুসংস্কারের সত্যতা superstition AND REALITY:-
মৃত মানুষকে সমাধিস্থ করে আসার পড়ে স্নান করার পেছনের আসল কারণঃ-
আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ে না ছিল বর্তমান দিনের মত এত উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা না ছিল উন্নত পরিবেশ। যার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ছিল স্বাভাবিক। বর্তমান দিনে যেমন গুটি বসন্ত, হেপাটাইটিস, পোলিও ইত্যাদি রোগের টীকা আবিষ্কৃত হয়েছে সেকালে কিন্তু সেরকমটি ছিল না। যার ফলে কোনো রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সমাধির অনুষ্ঠানে গিয়ে অন্যান্য অনেক মানুষেরাও সেই রোগে আক্রান্ত হয়ে যেত।
এরপর থেকে মানুষ এই সমস্যার সমাধানের জন্য মৃত মানুষকে সমাধিস্থ করে আসার পর মানুষ ভালো মত স্নান করা শুরু করে, যাতে তারা রোগগ্রস্ত না হয়ে পরেন। এটিই হল মৃত মানুষকে সমাধিস্থ করে আসার পরে স্নান করার পেছনের আসল কারণ।
কিন্তু বর্তমানে এর পেছনে যে কারণটি আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে সেটি হল- স্নান না করলে অর্থাৎ শুদ্ধি না হলে সেই মৃত মানুষের আত্মা এসে ভড় করতে পাড়ে!

বেড়াল রাস্তা পাড় করলে রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে নাঃ-
রাস্তা দিয়ে আমরা যখনই কোনো বেড়ালকে যেতে দেখি, আমাদের মধ্যে অনেকেই গাড়ি যতই স্পীডে থাকুক না কেন, আমরা থেমে যাই। আমরা বলি বেড়াল রাস্তা কেটেছে তার মানে সামনে বিপদ আসছে, আবার একটু দাঁড়িয়ে আবার আমরা যাত্রা শুরু করি, এতে নাকি বিপদ কেটে গেল। আবার যদি কালো বেড়াল রাস্তা পারাপার করে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই।
এবার আমাদের মধ্যে প্রচলিত এই কুসংস্কারটির আসল রহস্যটি কি সেটি জানুন-
ফিরে চলুন সেই সময়টিতে যখন বর্তমান দিনের মত যন্ত্রচালিত গাড়ি ছিল না। গরু বা ঘোড়ায় টানা গাড়ির প্রচলন ছিল সেই সময়। যখন মানুষেরা রাতের বেলা বিশেষত সন্ধ্যার সময় রাস্তা দিয়ে যেত তখন বেড়াল বা সেই জাতীয় প্রাণী যেমন- হায়না, শিয়াল ইত্যাদির উজ্জ্বল চোখ দেখে মানুষেরা এবং গাড়ির সঙ্গে যুক্ত থাকা পশুটি ভয় পেয়ে যেত, যার ফলে গাড়ির সঙ্গে যুক্ত থাকা পশুগুলি পালানোর জন্য ছটফট করত।
এই সমস্যা সমাধানের জন্যই মানুষেরা যদি কখনো রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বেড়াল জাতীয় কোনো প্রাণীকে দেখে তাহলে আগে থেকেই গাড়ি থামিয়ে দেওয়া শুরু করে, যাতে করে সেই বেড়ালটি রাস্তা পাড় হয়ে চলে যায় এবং তাদেরও কোনো ক্ষতি না হয়।
এই যে বেড়াল দেখলে গাড়ি থামিয়ে দেওয়ার প্রথাটি চালু হল তা আজ পর্যন্ত বহাল রয়েছে।

বাড়িতে গবরের প্রলেপ দেওয়ার প্রথাঃ-
অনেকেই দেখবেন বাড়িতে গবরের প্রলেপ দিয়ে থাকে, তাদের কাছে গরুর মতনই এটিও একটি পবিত্র জিনিস। তাই সমস্ত উঠোন গবরের প্রলেপ দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু জানেন কি, এর পেছনে থাকা আসল সত্যটি কি?
বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত আমাদের সমাজ। এই সমাজে রয়েছে উচ্চবর্ণের থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিম্নবর্ণের মানুষও। উচ্চবর্ণের তথা ধনী মানুষেরা বাড়িতে সাপ বা অন্যান্য পতঙ্গের আক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন দামী দামী বস্তু বাজার থেকে ক্রয় করে নিয়ে আসত, এবং বাড়ির আশেপাশে ছড়িয়ে দিত।
কিন্তু আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ব্যক্তিদের সেগুলি কেনার সক্ষমতা ছিল না। এদিকে গবরের সহজলভ্য এবং গন্ধযুক্ত। তাই তারা বাড়িতে এই গবরের প্রলেপ দিতে শুরু করে। যার ফলে বিভিন্ন পতঙ্গ এমনকি সাপের হানাও অনেকটা কমে আসে। আর এভাবেই বংশ পরম্পরায় উঠোনে গবরের প্রলেপ দেওয়ার রীতি চলে আসছে। বর্তমানে গবরের প্রলেপ দেওয়াকে অনেক পবিত্র মানা হয়ে থাকে। তবে সে আর যাই হোক উপরোক্ত কারনের জন্যই গবরের প্রলেপ দেওয়ার রীতি প্রচলিত হয়েছিল।
রাতের বেলা নখ কাটা বারন :-
আপনার বাবা-মা বা বাড়ির কাউকে হয়ত অবশ্যই বলতে শুনবেন যে, রাতের বেলা নখ কাটতে নেই, কিন্তু তাদের কাছে এর পেছনের কারণটি জানতে চাইলে অনেকেই কিছু বলেন না।
বর্তমান দিনে প্রযুক্তির দৌলতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ পরিষেবা, যার ফলে কালো কুচকুচে অন্ধকারও হয়ে গিয়েছে আলোকময়। কিন্তু এই কথাটি হল যখন প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না তখনকার দিনের।
সারাদিনের কাজ শেষে মানুষেরা রাতের বেলা অন্ধকারে বসেই বা ক্ষীণ আলোতে বসেই হাতের নখ কাটতে লেগে পড়ত। যার ফলে অনেকেরই নখের সাথে সাথে আঙ্গুলও অনেকটা কেটে যেত, এই সমস্যাকে টেক্কা দিতেই মানুষ ধীরে ধীরে রাতের বেলা নখ কাঁটা বন্ধ করে দেয়, কিন্তু সময় পরিবর্তিত হলেও পরিবর্তন হয়নি এই প্রথাটির।

পড়ুনঃ- ইতিহাসের কিছু খারাপ শাস্তির প্রথা
মাসিক এর সময় মহিলাদের বা মেয়েদের মন্দির প্রবেশ নিষেধ!
প্রাচীন কালে বর্তমান দিনের মত না ছিল স্যানিটারি প্যাড না ছিল পেইন কিলার ওষুধ। যার ফলে মহিলারা মাসিক সমস্যার কয়েকটা দিন খুবই কষ্ট এবং ডিপ্রেশনে ভুগতেন। আবার অনেক মহিলা বা মেয়েরই মন্দিরে থাকা কালীন তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়ে যেত, যার ফলে তারা সেখানেই লুটিয়ে পড়ত।
সে যুগে মেয়েদের যথেষ্ট সম্মানের চোখে দেখা হত, মহিলারা সব ধর্মীয় কাজে যোগ দিতেন, আবার অনেক মহিলা বা মেয়েও অনেক সময় বাড়ির বাইরে থাকাকালীন অবস্থাতেই এই সমস্যায় পড়ে যেতেন, যার ফলে তাদের কাপড় নোংরা হতে যেত। এই সমস্যাটির সমাধানের জন্য মন্দির বা ধর্মীয় কার্যালয় কতৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় যে, মাসিক এই সমস্যাটি থাকা কালীন কোনো মহিলাকেও ধর্মীয় কার্যালয়ে আসার দরকার নেই, এই কয়েকটা দিন তারা বাড়িতেই বিশ্রাম নিবেন।
কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে মেয়েদের এই সমস্যাটির সময় সমাজ তাদের নীচ চোখে দেখতে শুরু করে। মহিলাদের সম্মান এবং আরাম দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রচলিত এই ব্যবস্থাটি বর্তমানে ধর্মীয় হস্তখেপে ‘মাসিক এর সময় মহিলাদের বা মেয়েদের মন্দির প্রবেশ নিষেধ’ বলে ঘোষিত হয়।

লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে, তাই বাকি কুসংস্কারের পেছেন থাকা সত্যতা গুলি জানানোর চেষ্টা করব পরবর্তী কোনো এক লেখাতে।
প্রতিদিনের আপডেটের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ- OBAKA BISWA
আমাদের ফেসবুক গ্রুপ- AMAZING FACT (অজানা তথ্য)
যদি আমাদের আপনার লেখা যে কোনো গল্প-কবিতা-নাটক ইত্যাদি পাঠাতে চান যোগাযোগ করুন – +91 6296 096 634 অথবা নিচের লেখা পাঠানোর লিংকে ক্লিক করুন নতুবা মেইল করুনঃ- charpatrablog@gmail.com –এ।
অন্ধবিশ্বাস ও তার আসল সত্যতা reality behind superstition কুসংস্কারের সত্যতা.

কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।