কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেমের গল্প//একে অপরের প্রতি দুর্বল হলে সাধারণত সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ারই কথা! কারণ এই প্রেম একতরফা নয়। কিন্তু তবুও কিছু কিছু সম্পর্ক পূর্ণতা পায়না কেন জানেন…! উত্তর লুকিয়ে আছে নীচের গল্পে… তাহলে চলুন গল্পটি পড়ে আসি।।

কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেমের গল্পঃ- ‘মনপাখি’

“নীলাভ আকাশি রঙের এই শাড়ির ছোঁয়ায় বেশ মানিয়েছে ম্যাডামকে ” কথাটা বলেই রিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে নেয় স্বরূপ।
ঠোঁটের কোণে একটা আলতো হাসির জোয়ার বয়ে যায় রিয়ার। সেও স্বরূপকে উদ্দেশ্য করে বলে ” কারুর নিদারুণ আভার সাদা পাঞ্জাবি চারদিকটা বেশ নির্মল করে তুলেছে “

কথার মানে বুঝতে পেরে স্বরূপ হাসতে হাসতে চলে যায়। রিয়ার হৃদস্পন্দন যেন মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বাড়তে থাকে , সে ছুট্টে গিয়ে স্বরূপ কে আটকে কিছু বলতে চায়, তার আগেই লক্ষ্য করে স্বরূপ অন্য কারোর হাত ধরে ওই কলেজের গেটের সামনে দিয়ে হেঁটে চলেছে …

রিয়া থমকে যায়, তার মনে হতে থাকে, পুরো পৃথিবীটা যেন এই মুহূর্তে আবর্তন , পরিক্রমণ সব গতি বন্ধ করে যেন রিয়াকে আবর্তন করে চলছে…

কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেমের গল্প
কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেমের গল্প

…প্রায় বছর তিন আগে রিয়ার সাথে ,স্বরূপের দেখা হয়েছিল। তখন ওরা সদ্য কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, তবে কোনোদিনও সেভাবে একে অপরের সাথে কথাবলা হয়ে উঠেনি । স্বরূপের যেমন দেমাগ , রিয়ার ও সেরম আত্মসম্মানবোধ , তাই কথা বলা তো দূরের কথা , মুখ ফিরিয়ে দেখার ও কোনোদিন ইচ্ছেবোধ জন্মাতো না।

এভাবেই দেখতে দেখতে দুটো বছর পেরিয়ে যায়। তবে সেই দুই বছরে স্বরূপের প্রতি রিয়ার ধারণা অনেকটাই পাল্টায়। ছেলেটা যে মোটেও দেমাগী নয় , বরঞ্চ পরোপকারী , শান্ত স্বভাবের , এক অন্যরকম ধাঁচে বানানো একটা মাটির মূর্তির ন্যায় স্বরূপ , এটুকু বুঝতে সক্ষম হয় রিয়া। তাই কেমন যেন দিন দিন তার ব্যক্তিত্বের মায়াজালে জড়িয়ে পড়ে।

স্বরূপ কখনোই মেয়েদের সাথে খুব একটা মেশেনা, তাই রিয়া প্রথম থেকেই মিশতে শুরু করলো স্বরূপের সাথে । অবশ্য স্বরূপ প্রথম প্রথম একটু avoid করার চেষ্টা করলেও , পরে ধীরে ধীরে রিয়ার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে।

পড়ুনঃ- ভালবাসার জন্য ত্যাগ 

এরপর শুরু হয় কলেজ জীবনের তৃতীয় বর্ষের নতুন মোড়। যেখানে স্বরূপ আর রিয়া একসাথে কলেজ যাওয়া আসা, টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়া, রাস্তায় রোড ক্রসের সময় শক্ত করে হাত টা ধরে পার করে দেওয়া , অন্য কারুর সাথে বেশি কথা বললেই একটা অন্য রকমের অভিমান। একে অপরের ছোট খাটো বিষয় নিয়ে খেয়াল রাখা, সবকিছু মিলিয়ে দুজনেই বেশ উপভোগ করছিল নতুনত্বের ছোঁয়া টা কে।

দীর্ঘ পাঁচ মাস পেরিয়ে যায় বন্ধুতের , শুধুই কি বন্ধুত্ব নাকি অন্য কিছু! সে যাই হয়ে থাক , মোদ্দা কথাতে আসি …

রিয়া বারেবারে স্বরূপ কে কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু কোনো না কোনোভাবে সেটা বলা হয়ে উঠেনা। স্বরূপও এদিকে কলেজের পর কি করবে , কি ভবিষ্যত সেই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠে। ধীরে ধীরে সারাদিনের ব্যস্ততায় রাত্রি টুকু ওদের কথা হয় , তাও নানান কারণে মনমালিন্যতার সৃষ্টি হয়, সেই সুন্দর বন্ধুতের সম্পর্কটা কোথায় যেন মিলিয়ে যেতে থাকে। তবে সেগুলোকে উপেক্ষা করে স্বরূপ বারেবারে রিয়াকে বুঝিয়ে ,নিজের কাছে ফিরিয়ে নিয়েও আসে। রিয়াও স্বরূপের অল্প কথায় খুব সহজে সব ভুলে লক্ষ্মী মেয়ের মত ওর দ্বারস্থ হয়ে যায় । কথা দেয় একে অপরকে, কলেজের পরেও বন্ধুত্বটা একই রকম রাখবে।

বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা
বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা

আর আজ কলেজের ফেয়ারওয়েল সেরিমনী, যেখানে সব কিছুর সমাপ্তি আবার নতুন কিছুর প্রাপ্তি। যাইহোক বিষয়টা বুঝেছেন আশা করি , তাহলে ফিরে যাই আবার উপরের অংশে…

আর এই প্রথমবার রিয়া , স্বরূপকে অন্য মেয়ের সাথে হাঁটতে দেখে , অবাকের সাথে সাথে প্রচন্ড রাগে , ওখানেই চেঁচিয়ে ওর নাম টা ডাকতে গেলে , পেছন থেকে একটি ছেলে এসে , বলে ” কি গো বাড়ি কখন ফিরবে “?
রিয়া বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে ” তুমি এখানে কি করছ “?
ছেলেটি উত্তরে বলে ” কেন নিজের হবু বউ এর সাথে দেখা করার জন্য পারমিশন লাগে বুঝি !”
রিয়া স্বরূপের ওপর করা অভিমানের কান্নার জোয়ার টা ভাসিয়ে দেয় ছেলেটির বুকে মাথা রেখে।

ওই দূরে স্বরূপ দাড়িয়ে সবটা দেখে , সাথে দাড়িয়ে ছিল ওর বোন। ওর বোন কৌতুহলী দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা করে ” কি রে দাদা , এটা রিয়া দি না , যার কথা বাড়িতে বলে রেখেছিস “
স্বরূপ একটা ম্লান হাসি হেসে বলে, কই না তো ! এটা তো সেই রিয়া নয়…ও বোধয় হারিয়ে গেছে সবার ভিড়ে …

পড়ুনঃ- হারানো ভালবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প 

শেষবারের মত কলেজের গেটের সামনে ওরা মুখোমুখি হয় একে অপরের। স্বরূপের মনে প্রশ্নের পাহাড় ” কেন তাকে রিয়া একবারের জন্যও বলেনি , সে কারোর বাগদত্তা ? কেন এত গাঢ় সম্পর্কের মাঝেও এতটা ফাটল কে আশ্রয় দিয়েছিল রিয়া ? কেন একবারের জন্যও স্বরূপের মনের কথাটা বুঝলো না রিয়া !

রিয়ার মনেও পাহাড় সমান প্রশ্ন ” কেন রিয়ার এতটা খেয়াল রাখার পর অন্য মেয়ের হাত ধরলো স্বরূপ ? কেন স্বরূপ একটি বারও বুঝলো না , এত এত ছেলের মাঝে সে স্বরূপকেই কেন বন্ধু রূপে চেয়েছে ? রিয়ার সব ভাবনা তো ও বুঝেই যেতো, তাহলে কেন রিয়ার মনের কথাটা বুঝল না স্বরূপ !

এই প্রশ্ন গুলোর মীমাংসা হওয়ার মাঝে চীনের প্রাচীর এর ন্যায় দাড়িয়ে সেই ছেলেটি , যাকে রিয়ার বাবা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার মেয়ের ওপর শুধুমাত্র সেই ছেলেটিরই অধিকার। তবে এই বিষয়ে রিয়ার কোনোদিনও সম্মতি ছিল না , কারণ স্বরপেই তো ওর সব ছিল ।

মুখে হাসি চোখে জল নিয়ে বিদায় নিল উভয়েই। আবারো একটা ছোট ভুল বোঝাবুঝির জন্য , নিষ্পাপ একটা সম্পর্ক হারিয়ে গেলো মানুষের জনস্রোতে। হয়ত একে অপরকে ছাড়া ওরা বেঁচে থাকবে সহজেই, তবে সেই বাঁচার অধ্যায়টা হবে পৃথক , যেখানে সব থাকলেও , থাকবে না , রাগ করে ‘চলে যাবো’ বলার পরেও বারেবারে ফিরে আসা সেই মেয়েটা , আর থাকবে না ” ঘণ্টার পর ঘণ্টা অভিমান সহ্য করেও বুঝিয়ে মানিয়ে কাছে টেনে নেওয়া সেই ছেলেটা। থাকবেনা অপ্রকাশিত কথা গুলো বুঝে নেওয়ার মানুষটা।।

bengali college life sad love story
bengali college life sad love story
<

চাইলেও আর অনুপম রায়ের সেই লাইনটাতে স্বরূপ পারবে না রিয়াকে ভোলাতে-
” বাড়িয়ে দাও তোমার হাত
আমি আবার তোমার আঙ্গুল ধরতে চাই ।”…

তাই আপনাদের বলছি , হ্যাঁ হ্যাঁ মশাই আপনাদের মনের কথা মনে রেখে সময় নষ্ট করবেন না । যদি কাউকে চেয়েই থাকেন মুখ ফুটে বলার সাহস টুকুও রাখুন , নইলে কোনদিন মনপাখি টা খাচা থেকে উড়ে যাবে টেরও পাবেন না। সেদিন হাজার বার চাইলেও আর ফিরে পাবেন না আপনার মনের মানুষটাকে।।

আলোরানি মিশ্র

প্লট রচনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও  বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- 

একটি প্রেমের গল্প- জুনিয়রের সাথে প্রেম 

সুন্দর ছোট গল্প- চির-বসন্ত 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেমের গল্প। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা। bengali college life sad love story

Spread the love

Leave a Reply