একটি নতুন আধুনিক ছোট গল্প থাকছে আজ। এই গল্পটিতে, প্রাক্তনের সাথে দেখা হওয়ার পর কিভাবে বদলা ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে বদলা নিয়েছেন গল্পের লেখক তাইই দেখানো হয়েছে। এর থেকে বেশি বললে সেটা ‘স্পয়লার’ হয়ে যাবে!
আধুনিক ছোট গল্পঃ- 420 কাজের মেয়ে-
সন্দীপন বাবু বেশ ভালো মানুষ দেখলাম। দিল খোলা মানুষও বটে। রেখে ঢেকে কথা বলেন না। তবে নীলাঞ্জনা বোধহয়, এরকমই স্বামী সংসার চেয়েছিলো । প্রচন্ড কেয়ারিং। নয়তো ঠিকে ঝি কাজ ছাড়বে, তাতে বৌ এর কষ্ট হবে ভেবে , যেচে এসে আলাপ করে কখনো প্রতিবেশীর সাথে। তবে বরাবরের মতো স্বামীর যোগ্যতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী না হওয়ায়, নীলাঞ্জনাও তার স্বামীর সাথে হাজির। স্ত্রী দুইজনে মিলে কাজের লোক বাঁচাও অভিযান।যাইহোক ৪২০ কাজের মেয়েটার জন্যই, এতো বছর পর হঠাৎই দেখা হলো, আমার নীলাঞ্জনার সাথে আবার।
আমি দুইটো পাড়া পাশেই থাকি। এ পাড়ায় এসেছি নতুন। তবে খুব বেশি দিন নয় মাস খানেক হলো হয়তো। আসলে আমার বসত বাড়িটা কাছাকাছি, তাই এখানে আমি থাকিই না । কিন্তু সে খবর রাখেন না আমার প্রতিবেশীরা। মজাদার ঘটনা তাদের কাজের মেয়েকে বেশি মাইনেতে কাজে রেখেছি সেই আতঙ্কে , তাঁরা আজ আমার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমার ঘরে এসে হাজির।এটা বোঝাতেই বেশি মাইনে দিয়ে ঠকে যাচ্ছি ।
বিদেশে চাকরি করতাম আমি। মধ্যবিত্তের ঘরের সদস্য আমি। মা বাবা জীবিত অবস্থায় আছেন। একটা ভাই আছে সে বিবাহিত। তবে সকলে আমাকে এখন অবিবাহিত জানলেও আমি আসলে স্ত্রী পরিত্যক্তা । ভালো বাসার বিয়ে ছিলো আমাদের। ছাত্র অবস্থায় প্রেম এবং ক্যারিয়ার দুই নৌকায় পা দিয়ে চলেছিলাম। তাই ক্যারিয়ার সাথে দিলো না। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম । আমি আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে না পরায় , আমাদের ভালোবাসা হারিয়ে গিয়েছিল আগেই। তারপর সে একটু ভালো মাইনে চাকুরী ও এক উচ্চপদস্থ অফিস কলিগ এর বন্ধুত্বের ভরসায় আমাকে সহজেই ত্যাগ করছিলো এই নীলাঞ্জনা দেবীই।

অর্থ উপার্জন করা কঠীন কাজ নয়। কিন্তু আমরা আসলে যে কাজ করি তার সঠিক মূল্য পাই কিনা সেটাই আসল কথা। যেমন মিঠাই সন্দীপনদের ঘরের সকালের এবং বিকালের সব কাজ সামলে দুই হাজার টাকা মাসিক বেতন পাচ্ছেন। অথচ এই কাজটি নীলাঞ্জনা দেবী করলে কতটা ক্ষতি হতো ভেবে বলুন তো! সংসারের রান্না বান্না , কাপড় চোপড় ধোঁয়া, ঘর গোছানো কাজ করে অফিস সামলাতে পারাটা বড়ো চাপের। সে হিসেবে নীলাঞ্জনা দেবীর আয়ের অর্ধেকটা প্রাপ্য মিঠাই এর কিন্তু সেটা কি ও পায়?
ঠিক এটা বুঝতে পারছিলাম বলে, শ্রমের সঠিক মূল্য পেতে বিদেশে চাকরি করতে গেলাম। আসলে চাহিদা বাড়লেই সঠিক মূল্যায়ন পাওয়া যায়। তাই বিদেশে গিয়ে পয়সার মুখ দেখলাম। অবসর নিয়ে নিয়েছি তাই কিছু দিন আগেই। কারণ আমার চাহিদা সামান্য ছিলো। এই ফ্যাল্টটা কিনেছি একা থাকবো এমন উদ্দেশ্য নিয়ে এমনটাও নয়। কিনেছি একটি গেরজ ঘরে দরকার ছিলো আমার। তাছাড়া বাড়িটা আমাদের পুরাতন , ঘরের সংখ্যা কম তাই ঘরে অভাবে, আত্মীয় স্বজন আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই ফ্ল্যাট কেনায়, আত্মীয় স্বজন এখন আসতেই পারেন থাকার জায়গা তাদের হয়ে যাচ্ছে বাড়িতেই।
পড়ুনঃ- সন্দেহ! একটি অন্যরকম প্রেমের গল্প
প্রথমেই বলেছি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। মা বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমার মা ট্যাক্সি চড়তে ভালোবসান । বছরে এক দুইবার তার ট্যাক্সি চড়তে পারলেই খুব খুশি সে । তাই তাকে চড়ানোর জন্য মোটর গাড়ি কিনালাম। মধ্যবিত্ত ঘরের অনেক চিন্তা। বললো মোটর গাড়ি কিনেছি দেখলেই পাড়ার চাঁদা দ্বিগুন হয়ে যাবে। তাই তাড়াতাড়ি এ পাড়ায় এই হাউসিং কমপ্লেক্স গেরেজ সহ ফ্ল্যাল্ট কেনা। আসলে মধ্যবিত্ত মানুষের ছোট ছোট স্বপ্ন পূরণ করতে অনেক বেশি মূল্য চোকাতে হয়।
এ কমপ্লেক্স আসার পর থেকে আমি কখনো কারো সাথে তেমন কিছু কথা বলি নি, আলাপ করে ওঠাতো দূরের কথা। সন্দীপন বাবুদের কথা মতো আমার চরিত্রটি নাকি আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে রহস্য জনক। গাড়ি নিয়ে কখনো সখনো আমাকে এরা বের হতে দেখে। কিন্তু কখন আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে কখন ঢুকি এটা কেউ বুঝতে পারে না কারণ আমি সাইকেল ব্যবহার করি। আসলে সাইকেল চড়া মানুষদের তো এরা মানুষ বলে মনে করে না। ঐ দুধ ওয়ালা কাগজ ওয়ালারাই সাইকেল ব্যবহার করে। ওরা ওদের কাজ করলেও, ওদের মুখ এনারা চেনেন না।




মানুষ জনের সাথে বেশি কথা না বলায়। আমার তথ্য না পাওয়ায় আমার প্রতিবেশীরা নানা জল্পনা কল্পনা করে নিয়েছে আমার চরিত্রটি নিয়ে।
এসব নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ৪২০ কাজের মেয়েটি নিয়ে। মিঠাই এই কমপ্লেক্সর, ঠিকা কাজের মেয়ে। প্রায় বছর পাঁচেক ধরে এক মাইনেতে কাজ করছিলো এখানের পাঁচটি ফ্ল্যাটে। এসব পরিবার ভোর ছয়টা থেকে দশটা অবধি তার পরিসেবা পেয়ে থাকে। মিঠাই গল্প ফেঁদেছে তাকে আমি পরে মাসে থেকে কাজে রাখবো বলেছি। এর ফলে সবাই এক ধাক্কায় পাঁচশত টাকা করে ওর মাইনে বাড়িয়ে দিয়েছে । তবে এটা অফিসিয়াল। কেউ কেউ ওর মন পেতে কিছু উপহার দিয়েছে গোপনে এমন খবরও আছে। কারণ ওর ওপর সবাই নির্ভরশীল হলেও একচেটিয়া মালিক পক্ষ এতো দিন ওর দাবি দাবাগুলো গুরত্ব দিতো না।
কিন্তু ওর নতুন মালিকের সাথে ওদের বোঝাপড়া নেই তাই ওরা বিপাকে পড়েছে। কারণ ও আমাকে যে পরিসেবা দেবে সেই সময়টুকু কারো না কারো থেকে ও চুরি করে নেবে। অথবা কারো না কারো চাকুরী ছেড়ে দেবে। তাই নীলাঞ্জনারা ভয় পেয়ে গেছে। সবচেয়ে কম মাইনে যেহেতু নীলাঞ্জনা দেয় তাই চিন্তার ভাঁজ তার কপালে বেশি। রাতে দেরি হলে চলবে কিন্তু সকালে যেহেতু তার অফিস যাওয়া থাকে তাই আমার কাছে আর্জি নিয়ে এসেছে । আমি যাতে আমার ঘরে মিঠাইকে পরে কাজ করতে ডাকি ।এই অনুরোধ নিয়ে নীলাঞ্জনা তার বর্তমান স্বামী নিয়ে আমার ঘরে হাজির হয়েছে।
পড়ুনঃ- অবহেলা থেকে ভালোবাসা- কলেজ লাভ স্টোরি
আমি যে কথা বললাম সে কথাটা সন্দীপন বাবু হয়তো কিছুই বুঝতে পারলো না। তবে নীলাঞ্জনা বুঝতে পেরেছে বোধহয়। আমি জানিয়ে দিলাম আমার বাড়িটা বেশ বড়ো কিন্তু সেখানে আমার কোন ঘর নেই। যেটা আছে সেটা কিছু স্মৃতির মিউজিয়াম। মা বাবাকে ছাড়তে পাড়লে আমার হয়তো ঘর করা হতো এ শহরের বুকে। আজকাল সব দম্পতিদের ধারণায় জন্ম দাতা মা বাবা তাদের সকল দুঃখের কারণ।
তাই ‘বোঝা’ স্বরূপ বাবা মায়ের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে নিউক্লিয়ারপরিবার গড়তে তারা বিশ্বাসী। অথচ যৌথ পরিবার থাকলে বোধহয় কাজের মেয়ে নিয়ে এতো চাপের মুখে পড়তে হতো না নীলাঞ্জনা দের। কারণ আমাদের বাড়িতে কাজের লোক ছাড়াই আমাদের সব কাজ আমরা করে নিয়ে থাকি কোন অসুবিধা হয়না। যৌথ পরিবারে এটাই মজা। অসুখ বিসুখ হলে আয় লাগে না। ছেলেপুলে মানুষের জন্য বেবি সিটার লাগে না।




থাক সে সব কথা। একথায় সেইদিন যখন নীলাঞ্জনার জন্যে ঘর ছাড়তে পারিনি আজ কিভাবে মা বাবাকে ছেড়ে যাবো? এ ফ্ল্যাটটা আমার কেনা থাকার জন্য নয়। এখানে কাজের লোকের প্রয়োজন নেই। আমার আগোছালো জীবনের চিন্তাভাবনাকে দিয়ে সাজানো এই ফ্ল্যাট একাকীত্ব উপভোগ করতে এখানে আসি মাঝে মাঝে।
কারণ জীবন আর্থিক সফলতা শেষ কথা নয়। কখনো কখনো নিজেকে সময় দিতে হয় । টাকা কামানোর যন্ত্র হয়ে আমরা নিজেরাই হারিয়ে যাচ্ছি অবচেতন মনে।
যাইহোক নীলাঞ্জনা চোখের জলটা আফসোস কিনা জানিনা। তবে সন্দীপন বাবুর নিশ্চিত ভাবে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কারণ নীলাঞ্জনা নাকি বলেছিলেন। মিঠাইকে আর মাইনে বাড়লে , বিউটি পার্লার যাওয়া বন্ধ করতে হবে তাকে । তাই মিঠাই কাজ ছেড়ে দিলে সন্দীপন বাবুকেই সব ঘরের কাজ করতে হবে। ৪২০ কাজের মেয়ে কাজের মেয়ে মিঠাই। নতুন চাকরি পেয়েছে খবর রটিয়ে পাঁচশত টাকা করে মাইনে বাড়িয়ে নিলো ঠিক । যাইহোক মালিক পক্ষ বোকা হয়েছে দেখে বেশ খুশিই হলাম আমি।
গল্পের ভাবনায়-
লেখকের আরও কিছু লেখা- মধ্যবিত্তের প্রেম- সাইকেল মজার হাসির জোকস হাসির গল্প- বউ নাকি গোয়েন্দা!
“আধুনিক ছোট গল্প। প্রাক্তনের সাথে বদলা। 1 NEW BEAUTIFUL BENGALI CHOTO GOLPO”
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।