3 টি আকবর ও বীরবল এর গল্প নিয়ে ছাড়পত্রের আজকের গল্পের আসর। এই দুটি গল্পে যেমন রয়েছে হাসির খোঁড়াক তেমনই এই গল্প গুলির মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে শিক্ষণীয়তার বার্তা। অর্থাৎ এই গল্প গুলিকে মজার শিক্ষণীয় গল্প বললেও অত্যুক্তি হয় না!

আকবর ও বীরবল এর গল্প। বীরবলের গল্পঃ-

আকবর ও বীরবলের গল্প-০১ঃ-

সম্রাট আকবরের সাম্রাজ্যে এক শিকারি বাস করত। সে জঙ্গলে গিয়ে প্রায়ই একটি করে তোতাপাখি ধরে নিয়ে আসে, এরপর কিছুদিন ধরে সেই পাখিটিকে কথা বলা শেখায় এরপর সেই অনেক উঁচু দামে পাখিকে শহরের ধনী লোকেদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এভাবেই তার সংসার চলত।

একদিন শিকারে গিয়ে সে একটি সুন্দর তোতাপাখি ধরল। সে বেশ যত্ন করে সেই পাখিটিকে সুন্দর সুন্দর কথা শেখাতে লাগল। অন্য পাখি গুলির তুলনায় এই পাখিটিকে সে বেশ কয়েকটি সুন্দর সুন্দর শব্দ শেখাল। এরপর সে পাখটিকে নিয়ে সম্রাট আকবরের সভায় উপস্থিত হল।

দরবারে পৌঁছাতেই শিকারি পাখিটিকে প্রশ্ন করলেন- “বলোতো তোতা এটা কার দরবার?”

তোতাটি নাকি সুরে উত্তর দিল- এটা সম্রাট আকবরের দরবার।

পাখীটির এই বুলি শুনে আকবর বেশ খুশি হলেন। তিনি শিকারিকে বললেন- “আমার এই তোঁতাটি লাগবে। বলুন এই তোঁতাটির মূল্য কত?”

তোঁতা পাখি আকবর ও বীরবল এর গল্প
তোঁতা পাখি আকবর ও বীরবল এর গল্প

শিকারি বললেন- “জাঁহাপনা, সব কিছু তো আপনারই, এই গরীবকে যা দিবেন তাতেই এই গরীব খুশি।“ শিকারির এই উত্তর শুনে সম্রাট আকবর বেশ খুশি হলেন এবং উচ্চ মুল্যে তোঁতাটিকে ক্রয় করে নিলেন।

আকবর তোঁতাটির জন্য একটি সুন্দর থাকার জায়গার ব্যবস্থা করলেন এবং তোঁতাটি যেন সুরক্ষিত থাকে তার সমস্ত বন্দোবস্ত করলেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করলেন- “যদি কেউ এই তোঁতাটির মৃত্যুর খবর আমার কানে পৌছায় তাহলে তাকে সোজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।“ সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে তিনি তোঁতাটিকে সবাই চোখে চোখে রাখতে বললেন।

তাই সবাই সেই তোঁতাটির বিশেষ খেয়াল রাখতে লাগলেন। কিন্তু ভাগ্যের এমন নির্মম পরিহাস, দিন দুয়েক পড়েই তোঁতাটি মারা গেল। সম্রাট আকবরের কানে এই খবরটি পৌঁছালে তিনি আর আস্ত রাখবেন না কাউকেই। কিন্তু এইভাবে তো বেশিদিন রাখাও যাবে না।

তোঁতাটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। সম্রাটকে তোঁতাটির মৃত্যুর খবর পৌঁছে দেবে টা কে? কেউই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সম্রাটকে তোতার মৃত্যুর খবর দিতে যেতে চাইছে না। কারণ মৃত্যুর খবর নিয়ে গেলেই সোজা মৃত্যুদণ্ড।

তোতার রক্ষকের হঠাৎ মনে হল, বীরবলকে ঘটনাটা বলা যেতে পাড়ে, তিনি যদি কোনো সাহায্য করেন! তোঁতা রক্ষক বীরবলকে আগা গোঁড়া সমস্ত ঘটনা বললেন, সাথে সাথে এও বললেন যে, সম্রাট বলে দিয়েছেন যে তোতার মৃত্যুর খবর নিয়ে তার কাছে যাবে তাকে সোজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।

বীরবল কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন, এরপর তিনি তোঁতা রক্ষককে বললেন- “ঠিক আছে আমি দেখছি।“

বীরবল আকবরের কাছে গিয়ে বললেন- “সম্রাট, আপনার তোঁতা…”

সম্রাট আকবর উৎসুক হয়ে বললেন- “আমার তোঁতা…”

বীরবল আবার বললেন- “সম্রাট আপনার তোঁতা…”

সম্রাট আকবর- “ আরে আমার তোঁতা, কি বল বল আমার তোঁতা কি…”

বীরবল- “ জাঁহাপনা আপনার প্রিয় তোঁতা…”

সম্রাট আকবর- “ আরে বীরবল, আমার তোঁতা কি তাড়াতাড়ি বল।“

akbar birbal story in bengali parrot
akbar birbal story in bengali parrot

বীরবল এবার বলেই ফেললেন- “সম্রাট আপনার তোঁতা কিছু খায় না, আবার কিছু পানও করে না। সে আর তার ডানা গুলিও ঝাঁপটায় না, সে আর মিষ্টি মিষ্টি কথাও বলে না, এমনকি সে চোখ বন্ধ করে আছে তো আছেই সে আর চোখ খোলে না…!

এবার আকবর রেগে গেলেন- “তুমি শুধু কথা ঘোরাচ্ছ কেন বীরবল, সোজাভাবে বলতে কি হয় যে, আমার তোঁতা মারা গেছে।“

বীরবল বললেন- “ সম্রাট আপনি নাকি বলেছিলেন, যে আপনার তোঁতার মৃত্যু সংবাদ আপনার কাছে নিয়ে আসবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আর আমি আপনাকে তোঁতার মৃত্যুর খবর দিই নিই। আমি কেবল আপনাকে তার বর্তমান অবস্থার কথা বলেছি। যাতে আমার প্রাণ বেঁচে যায়।“

সম্রাট আকবর বীরবলের কথার কি উত্তর দেবেন, তা আর যেন ভেবে পাচ্ছেন না!

গল্পটি থেকে কি শিক্ষা পাওয়া গেলঃ-

পরিস্থিতির সাথে হার মেনে নয় বরং পরিস্থিতিকে কিভাবে বাগে আনা যায় সেই চিন্তা করতে হবে। চিন্তা করতে হবে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম দিক গুলি নিয়েও। অনেক সময় সেই দিক গুলিতেই লুকিয়ে থাকে আমাদের বাঁচার পথ। তাই অযথা চিন্তা নয়, বরং সময় নিয়ে প্রতিটি দিক সূক্ষ্ম ভাবে বিবেচনা করা উচিত।

পড়ুনঃ- আকবর ও বীরবলের গল্প

বীরবলের গল্প- ০২ঃ-

একদিন বাদশাহ আকবর এবং বীরবল, বনে শিকারের জন্য যায়। বনে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই আকবর একটি বাঁকা দেখেন। তিনি সেই গাছটির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বীরবলকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ওই গাছটি এরকম বাঁকা কেন? বাকি গাছ গুলি তো বেশ সোজাই দেখা যাচ্ছে!

বীরবল বললেন- “সম্রাট, ওই গাছটি হল বাকি গাছগুলির হচ্ছে কি গিয়ে শ্যালক তাই সেই গাছটি একটু ট্যারা মানে বাঁকা।“

সম্রাট বললেন- “আবোল-তাবোল একটা বলে দিলে আর আমি বিশ্বাস করে ফেলব তা কি হয়? বল কিভাবে তুমি বুঝলে যে, ওই গাছটি জঙ্গলের বাকি গাছগুলির শ্যালক?

বীরবল বললেন- “সম্রাট আপনি তো জানেনই যে, মানুষের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত আছে, কুকুরের ল্যাজ আর শালাবাবুর প্যাঁচ কোনো দিনও সোজা হয় না। সেটা ট্যারা তো ট্যারাই থাকবে।“

আকবর বললেন- “তার মানে তোমার কথা মতে, আমার শ্যালক ও ট্যারা!”

বীরবল- “হ্যাঁ সম্রাট অবশ্যই। এতে কোনো সন্দেহ নেই।“

আকবর- “তাহলে আমার শ্যালককে ফাঁসিতে ঝোলানোর ব্যবস্থা কর।“

বীরবলের গল্প শিক্ষণীয় গল্প
বীরবলের গল্প শিক্ষণীয় গল্প
<

বীরবল ফাঁসির দেওয়ার জন্য তিনটি মঞ্চ তৈরি করলেন। একটি মঞ্চ সোনা দিয়ে তৈরি, একটি একটি রুপো দিয়ে তৈরি আর অন্যটি লোহা দিয়ে তৈরি।

বীরবলের এই কীর্তি কলাপ দেখে আকবর বীরবলকে জিজ্ঞাসা করলেন- “তিনটি মঞ্চ কিসের জন্য?”

বীরবল বললেন- “জাঁহাপনা, সোনার মঞ্চটি আপনার জন্য, রুপোর মঞ্চটি আমার জন্য আর লোহার মঞ্চটি আপনার শ্যালকের জন্য।“

বীরবলের এই কথাটি শুনে আকবর কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন- “কেন কেন, আমাকে আর তোমাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে কেন?”

বীরবল উত্তর দিলেন- “সম্রাট আমরাও তো কারও না কারও শ্যালক!”

বীরবলের এই কথাটি শুনে সম্রাট সহ উপস্থিত সবাই হাসিতে লুটোপুটি যেতে লাগলেন, অন্যদিকে সম্রাটের শ্যালক যেন প্রাণ ফিরে পেলেন।

পড়ুনঃ- পঞ্চতন্ত্রের শিক্ষণীয় গল্প 

আকবর ও বীরবল এর গল্পঃ- ০৩

একদিন বাদশাহের দরবার বেশ রমরমিয়ে জমেছে। হঠাৎ বাদশাহের মনে প্রশ্ন এল, পৃথিবীতে কোন নদীর জল সবচেয়ে ভালো? স্বভাবতই তার প্রশ্ন ছুঁড়ে মাড়লেন সভাসদদের দিকে।

উপস্থিত সবাই এক বাক্যে বলে ফেললেন- “গঙ্গা নদীর জল, সবথেকে ভালো।“

কিন্তু বীরবল কোনো উত্তর দিলেন না। যখন সম্রাট বীরবলকে তার চুপ থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন তখন বীরবল উত্তর দিলেন- “সম্রাট আমার মতে যমুনা নদীর জল সবথেকে ভাল।“

বীরবলের এমন উত্তরে উপস্থিত সভাসদেরা একটু হকচকিয়ে গেলেন। কারণ সবাই জানে, নদীর মধ্যে গঙ্গার জল সবথেকে বেশি ভালো।

সম্রাট বীরবলকে জিজ্ঞাসা করলেন- “কেন কেন, তোমার এরকম মনে হওয়ার পেছনে কারণ অথবা যুক্তিটা কি? বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে গঙ্গার জলকে বিশুদ্ধ বলা হয়েছে। ”

বীরবল উত্তর দিলেন- “সম্রাট আপনি প্রশ্ন করেছিলেন, কোন নদীর জল সবথেকে ভাল, তাই আমি যমুনা নদীর জল সবথেকে ভাল বলেছি, কারণ গঙ্গা নদীতে যে জল প্রবাহিত হয় সেটি শুধু জলই নয় সেটি হল অমৃত এবং পবিত্র, এবার আপনিই বলুন আমি এমন পবিত্র এবং অমৃতকে জলের সঙ্গে তুলনা করতে যাব কেন? তাই আমার কাছে যমুনা নদীর জলই সবথেকে বেশি ভাল। গঙ্গাতে প্রবাহমান ওটা জল নয়, ওটা হল অমৃত।

বীরবলের উত্তর শুনে সম্রাট সহ উপস্থিত সবাই কোনো প্রত্যুত্তর দিলেন না।

আমাদের সাথে যুক্ত হন- 
ফেসবুক-ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- CharpatraOfficial 

WhatsApp Group- ছাড়পত্র

“আকবর ও বীরবল এর গল্প। বীরবলের গল্প। akbar birbal story in bengali”

Spread the love

Leave a Reply