Spread the love

অদ্ভুত নেশা আমাদের পৃথিবীর প্রতিটি মানুষেরই কিছু না কিছু আগ্রহ বা নেশা থাকে। কারও নেশা ভালো বাড়ি বানাবে, আবার কারও দামী ব্র্যান্ডের গাড়ির প্রতি। ইত্যাদি নানান নেশা বা ইচ্ছা আমাদের মধ্যে থেকে থাকে এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কি হবে এই নেশা যদি একটু অন্য ধরনের হয়। মানে আমি বলতে চাইছি একটু বীভৎস রকমের নেশা। তাহলে চলুন জেনে নিই অবাক করা কিছু নেশার ব্যাপারে।

অদ্ভুত নেশা। অবিশ্বাস্য তথ্য।

রক্তের নেশাঃ-

পৃথিবীতে নেশা করার হাজারো বস্তু থাকলেও, আমাদের তথা সমগ্র প্রাণীকুলের জীবনের অন্যতম প্রধান উপাদান রক্তের নেশা হওয়াটা নিতান্তই অস্বাভাবিক। এখানে আমি জলের মত সরাসরি রক্ত পান করার কথা বলছি। হ্যাঁ এরকমই এক নেশায় আবদ্ধ মিশেল নামের এক মহিলা। মানুষ যেভাবে হার্ড ড্রিংকের সাথে জল মিশিয়ে খায় ঠিক সেভাবেই সে প্রতিদিন প্রায় এক লিটার রক্ত কফির সঙ্গে মিশিয়ে খায়। তবে শুকরের রক্ত তার বেজায় পছন্দের।

একটি টেলিভিশন শো তে সে জানায়- “জলের মতনই রক্ত আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি যখন বই পড়ি, টিভি দেখি, যখন আরাম করি বা যখন ছবি আঁকি তখন রক্ত পান করা আমার খুবই পছন্দের।”   

রক্তের নেশা অদ্ভুত নেশা।
রক্তের নেশা অদ্ভুত নেশা।

মৃত দেহের নেশাঃ-

মৃত দেহ দেখে বেশিরভাগ মানুষই ভয় পেয়ে যায়। অনেকেই তো আবার মৃত দেহের ধারে-কাছেও যেতে ভয় পায়। কিন্তু লুইস স্কোয়ারিসি নামের 42 বছর বয়স্ক এক ব্যাক্তি তার শহরের কোনো ব্যক্তি মারা গেছে শুনলেই তার বাড়িতে এসে হাজির হবে এবং মৃত দেহের কাছে বসে থাকবে। এতে নাকি সে পরম সুখ অনুভব করে। তার শহরের কোনো মানুষ মারা যাবে আর সেখানে লুইস থাকবে না সেটি কখনো হতে পাড়ে না।

শরীর মডিফিকেশনঃ-

 নতুন গাড়ি কেনার পড় সেটিকে অনেকেই অনেক কিছু পরিবর্তন করে নতুন কিছু বাড়তি সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করে আবার অনেকেই অনেক ধরনের স্টিকার দেয়। অর্থাৎ এক কথায় মডিফিকেশন করে। কিন্তু আপনি কি কখনো শরীর মডিফিকেশনের কথা শুনেছেন?

এমন অনেক মানুষই আছেন যাদের কাছে এটি নেশার মতন। প্রায় প্রতিনিয়তই তারা তাদের শরীরে বিভিন্ন যন্ত্রণাদায়ক ট্যাটু বা ছিদ্র করান, এবং মেয়েরা কানে যেমন রিং পড়ে অনেকটা সেরকমই কিছু বস্তু সেই ছিদ্র গুলিতে রেখে দেন। এটি তাদের কাছে একটি নেশার মত। এর মাধ্যমে তারা অনেক তৃপ্তি পায়। এদের কাছে মডিফিকেশনের সময় যে ব্যাথা অনুভূত হয় সেগুলি কিছুই না, অথচ আপনি যদি তাকে একটি সামান্য চর মারেন তাতেই তার মাথায় রাগ চরমে উঠবে।

কিন্তু যতই শরীরে মডিফিকেশন করুন না কেন, ঈশ্বর প্রদত্ত শরীরকে নিজের মত করে বানিয়ে নেওয়া নিতান্ত বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

পড়ুনঃ- ফোবিয়ার ধরণ

ইতিহাসের কিছু খারাপ শাস্তির প্রথা

কাঁচ খাওয়ার নেশাঃ-

পৃথিবীতে খাওয়ার জিনিসের কমতি নেই। কিন্তু মানুষ যে কাঁচও খেতে পাড়ে এবং এটি যে একটি নেশায় পরিণত হতে পাড়ে সেটি হয়ত আগে নিশ্চয়ই আপনি জানতেন না। এরকমই একজন ব্যাক্তির নাম জোশ। সে যখন হার্ড ড্রিংক পান করে, হার্ড ড্রিংকের থেকেও নাকি কাঁচের বতলটি খেতে তার খুব ভালো লাগে। সে তার জীবনে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫০ টিরও অধিক বাল্ব খেয়েছে এবং ১০০ টিরও বেশী কাঁচের বতল খেয়েছে।

পাথর খাওয়ার নেশাঃ-

46 বছর বয়সী টেরেসা। তার নেশা একটু আলাদা ধরনের। সে পাথর খেতে ভালোবাসে। সে বিগত ২২ বছর ধরে পাথর খেয়েই আসছে। এভাবে পাথর খেতে খেতে তার পাকস্থলীতে ব্যাথার সৃষ্টি হয়েছে এমনকি তার সব দাঁতও অকালে পড়ে গেছে। কিন্তু ছাড়তে পাড়েননি তিনি তার এই নেশা।

<

তবে বলে রাখি এখানে পাথর খাওয়া মানে সারাক্ষণ বা পাথর খেয়েই যে বেঁচে থাকেন সে কথা বলা হচ্ছে না। যেহেতু আমরা নেশার কথা বলছি সেহেতু মনে রাখা দরকার যে, নেশা মানুষ সবসময় করে না বা নেশার দ্রব্য খেয়ে মানুষ বেঁচে থাকে না। তাকে নিয়মিত অন্যান্য আহার গ্রহণ করতেই হয়।

পাথর খাওয়ার নেশা অবাক করা কিছু কথা
পাথর খাওয়ার নেশা অবাক করা কিছু কথা

ডিটারজেন্ট খাওয়ার নেশাঃ

মানুষ হার্ড ড্রিংক পান করে। কিন্তু ১৯ বছর বয়সী আমেরিকার বাসিন্দা টেমপেস্ট হ্যান্ডেরসন সাবান ও ডিটারজেন্ট  খেতে অনেক ভালোবাসে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত পাঁচটি সাবানের বার না হলে তার নাকি চলেনা।

ডাক্তারেরা জানান হ্যান্ডেরসন  PICA নামে এক বিরল রোগে আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি বিভিন্ন ধাতব বস্তু, টাঁকা, চক, ব্যাটারি, বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য খেতে বেশি ভালোবাসে।

চুল ছিঁড়ে ফেলার নেশাঃ-

হয়ত এমন অনেক মানুষকেই দেখেছেন যারা যারা চুল নিয়ে খেলা করতে করতে চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলেন। অথবা বসে কিছু চিন্তা করছেন এবং অবিরাম চুল ছিঁড়েই যাচ্ছেন। আজ্ঞে এটিও এক প্রকার নেশা, এটি হল চুল ছেঁড়ার নেশা।

আর এই নেশাটিকে বলা হয়- Trichotillomania. কেবল মাত্র মাথার চুলই নয় সাথে সাথে আইভ্রুর চুলও নিজের অজান্তেই ছিঁড়তে থাকেন এই রোগে আক্রান্ত মানুষেরা। ১৩-১৯ বছর বয়সী এবং যারা সবে যৌবনে পদার্পণ করেছেন তাদের মধ্যে এই রোগটি বেশি দেখা যায়। মূলত অত্যধিক ভাবনার কারণেই এই addiction –এ তাদের আগমন।

স্যোসাল মিডিয়ার নেশাঃ-

বর্তমানে এই নেশাটির কবলে পড়েছেন অনেক যুবক-যুবতী। হয়ত আপনিও। কিছুক্ষণ পড় পড় মোবাইলের নোটিফিকেশন চেক করা, কিছুক্ষণ পড় পড় হাঁতে মোবাইল নিয়ে ইমেল চেক করা বা অন্যান্য স্যোসাল মিডিয়া গুলি ঘেঁটে দেখা ইত্যাদি এই সবই এই addiction এর লক্ষণ।

strange addiction আজব নেশা সোশ্যাল মিডিয়ার নেশা
strange addiction আজব নেশা সোশ্যাল মিডিয়ার নেশা
<

কিন্তু তাদের কাছে এটি স্বাভাবিক মনে হলেও এটি অনেকটাই অস্বাভাবিক। এর ফলে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার সাথে সাথে সারাক্ষণ মনমরা ভাব, খিটখিটে স্বভাব, ডিপ্রেশন ইত্যাদির ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আপনি আপনার মোবাইলে App power use এ গেলেই দেখতে পাড়বেন যে, আপনি কি পরিমাণ সময় ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া গুলিতে ব্যয় করেছেন। এই Addiction থেকে যত তাড়াতাড়ি দূরে চলে আসা যায় ততই আপনার ও আপনার ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গল।

বরফ খাওয়ার নেশাঃ-

এই নেশায় যে কেউ আক্রান্ত হতে পাড়ে। এই নেশাটিকে বলা হয়- Pagophagia, আমরা যেমন চুইংগাম চিবিয়ে চিবিয়ে খাই ঠিক সেরকমই আক্রান্ত ব্যাক্তি বরফ চিবোতে বেশি ভালোবাসে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি বরফ বা সেই জাতীয় খাবার খেতে বেশি ভালোবাসে। এরা প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বরফ চিবিয়ে খায়।

গবেষকদের মতে এটি আসলে শরীরের রক্তে আয়রনের ঘাটতির লক্ষণ।

weird addiction list বরফ খাওয়ার নেশা
weird addiction list বরফ খাওয়ার নেশা image

মুত্র পান করার নেশাঃ-

করোনা মহামারীতে আপনি নিশ্চয়ই টিভিতে বা মোবাইলে গো-মুত্র পান করার কথা শুনেছেন। কিন্তু কখনো কি নিজের মুত্র নিজেই পান করার কথা শুনেছেন? কথাটা শুনতেও কেমন যেন বীভৎস লাগে, তাই না! ক্যারি নামের এক মহিলার তার নিজেরই মুত্র পান করার শক রয়েছে। তার জীবদ্দশায় এতদিনে সে নাকি প্রায় কয়েক গ্যালনের মত মুত্র পান করে ফেলেছে। তার কথা মতে, মুত্রের স্বাদ এবং গন্ধ তার খুব প্রিয়।

এই অদ্ভুত নেশা গুলির মধ্যে কোনটি আপনাকে নিতান্তই বেমানান লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের জানাতে ভুলবেন না। প্রতিদিনের আপডেটের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ এবং ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে ভুলবেন না।

ভালো থাকবেন সুরক্ষিত থাকবেন। ধন্যবাদ।

অদ্ভুত নেশা। অবিশ্বাস্য তথ্য। আজব নেশা। weird addiction list


Spread the love

Leave a Reply