NEW BENGALI STORY..দেশপ্রেম নিয়ে গল্প। বিশ্ব মায়ের চরণ তলে করবো এই তুচ্ছ জীবন সমর্পণ। আচ্ছা কতজন পারে বলুন তো নিজের দেশের জন্য দশের জন্য বিশ্বমাতার উদ্দ্যেশ্য, নিজের জন্মভূমির উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গ করতে। আর চাইলেও কি সবাই সুযোগ পায়? বর্তমানের পাক ছেটানো রাজনীতির অতল তলে ডুবছে আজ আমাদের দেশ, কোথায় আছে সেই জাতীয়তাবাদ কোথায় আছে সেই উদারনীতি বাদ , কোথায় সেই স্বাধীনতার বাণী?

NEW BENGALI STORY. দেশপ্রেম নিয়ে গল্প- নির্ভীকঃ-

রাজনৈতিক নেতাদের নোংরা খেলার শিকার বারবার হতে হয় সাধারণ মানুষকে তারাই তো দমিয়ে দেয় প্রগতিশীল কিছু নবীন কে যারা দেশের জন্য আত্মসমর্পণ করতে চায়। আজ এমনি একজন নবীন এর নিয়ে বলবো আপনাদের, যে সমাজে সাম্যতা প্রতিষ্ঠায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিল।

এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে রবি, ছোট থেকেই অভাব অনটন এর শিকার সে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখেছে কিভাবে সমাজে সে আর তার জাতির মানুষেরা অবহেলিত আর নিপীড়িত। সমাজের উচ্চবর্গের মানুষেরা তাদের ছুলে জাত যায় এমন একটা ভান করতো, কাজের লোকের বাইরে তাদের আর কোনো যথাযোগ্য সন্মান দেওয়ার মতো মনোবৃত্তি উঁচুতলার মানুষের মনে জাগ্রত হয়নি। তারা নিত্যান্তই অপ্রতুল ভাবে সবসময় তাদের পদতলে দমিয়ে রাখতে চাইতো তাদের নিচু জাতিগুলো কে।

রবির বাবা ও মা সেই গ্রামের বসবাসকারী এক দলীয় নেতার বাড়িতে কাজ করতো । রবি তার বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান তাই তাকে চোখে হারাবার সুযোগ তারা হতে দিত না। সেজন্যই ছোট থেকেই তাকে সাথে করে নিয়ে আসত তাদের কাজের বাড়িতে । সেই নেতার ছেলেকে যে শিক্ষক টিউশন দিতে আসতেন তিনি রবি কে বেশ পছন্দ করতেন, কারণ ছেলেটি শুনে শুনেই পড়া মনে রাখতে পারতো। উঠোনে মাস্টার মশাই টিউশন পড়ালে রবি এক কোণে বসে সেগুলো মন দিয়ে শুনত আর বাড়ি ফেরার পথে সেগুলো তার বাবা মা কে গর্বের সাথে বলতো জানো মা আজ আমি এটা শুনেছি ওটা শুনেছি ।

এসব শুনে ওর বাবা বলতো ” আমাদের ভাগ্যটাই খারাপ যে বাপ তোর মত বুদ্ধিমান বেটা আমাদের বাড়িতে লয় কোনো উচুতলার মানুষের বাড়িতে জন্ম হলে সেটা হতো বিধাতার যোগ্য বিচার । কিন্তু হায় কপাল আমাদের যে ভাগ্যে নাই বাপ , তোকে ভর্তি করব যে ওই স্কুলে সেখানে তো তোকে উচোতোলার বাপের বেটারা টিকতে দেবে নি, নইলে আমারও সখ হয় জানিস বাপ , আমাদের ও লোকে সন্মান করুক ,আমাদের ছেলে মেয়েরাও বিনা বাধায় স্কুল এ যাক, পড়াশুনা শিখে মা বাপের নাম আমাদের নিচজাতের নাম করুক ।

NEW BENGALI STORY
NEW BENGALI STORY

তখন রবি জিজ্ঞাসা করেছিল তার বাবাকে ” বাবা কি করলে তেমন দিন টা আসবেক” , তার বাবা বলেছিল ” বেটা উটা কে পারবেক জানিস, যার মধ্যে থাকবেক নাই ভয় ,যে হবেক সত্যবাদী, যার চলনে ভয় পাবেক ওই উঁচুতলার মানুষের দল, যে নির্ভীক হয়ে দুর্বলের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে একাই রুখে দাঁড়াবেক ,সেই হবেক রে বাপ সেই হবেক!” রবি জিজ্ঞাসা করলো তার বাবাকে বাবা আমি যদি হই সেই নির্ভীক।

তার বাবা বলে উঠলো “ইমন কথা মুখে আনিস না রে বাপ তুই আমাদের বংশের বাতি যে , তুকে উ পথে আমরা যেতে দিবো নাই । রবি বললো কেন বাবা আমি কেন পারি না? কাউকে না কাউকে তো হতে হবেক বলো এমন নির্ভীক। নইলে আমাদের মানুষগুলার লিগে কে উঠে দাড়াবেক বলো। তার মা তখন তাকে বললো তুই বুঝবি লাই বাপ এখন অনেক ছুটু তো তুই , যখন বড়ো হবি তখন বুঝবি।” সত্যি রবি তখন খুব ছোট ছিল আর সে নিজেও যে কি বলছিল সেটার ধারণা তার ছিল না , কিন্তু তার জন্ম যে আর পাঁচটা মানুষের মত সাধারণ ভাবে কাটানোর জন্য হয়নি, সেটা তার বাবা মা বুঝতে পারে নি সেদিন ।

রবি যখন একটু বড় হয় সে তার বাবা মা কে খুব জোর করতে থাকে, তাকে স্কুলে ভর্তি এর জন্য, তার মা বাবা না না বলে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু রবি থামেনি সে নিজের কথায় স্থির ছিল। তাই বাধ্য হয়ে তার বাবা মা একদিন যার বাড়িতে কাজ করতো সেই নেতাকে গিয়ে বললো “বাবু আমার ছিলাটা জেদ ধরিছে যে উ ইস্কুল যাবেক, খুব বুদ্ধি জানেন। যা শুনে তাই মনে রেখে দেই, একটুকু ব্যবস্থা করি দিবে বাবু , ছেলেটার পড়ার খুব মন।”

তখন জ্ঞানহীন অথচ সর্বজ্ঞানী সেজে নেতাটি জিজ্ঞাসা করলো “তা একটা কথা বল তো তোদের মাথায় এসব চিন্তা ভাবনা এলো কি করে , তোরা কি বুঝিস না তোদের জন্ম হয়েছে শুধু মাত্র আমাদের মত উচু তলার মানুষদের সেবা করার জন্য। তোরা তো পুরাণ,ধর্মগ্রন্থ বিষয়ে কিছু জানিস এই না, তোদের শিক্ষালাভ করা মানে জানিস কত পাপ ,ঈশ্বর তোদের মাফ করবেন না রে ,করবেন না । যা যা নিজেদের কাজ করগে যা, আর তোর ছেলেকে বলিস যদি ভালো চায় নিজের তাহলে যেন এখন থেকেই তোদের কাছে কাজ শিখে, একটু বড় হোক আমি না হয় তখন ওকেও কাজের লোক হিসেবে রেখে দেব।

তারপর বউয়ের কাছে গঙ্গার জলের ভাড় টা নিয়ে আসে পাশে ছিটিয়ে নিজে স্নানে গেলো। তখন রবির মা বাবা ভেবে পাচ্ছিল না তারা কি মুখ নিয়ে ছেলের কাছে গিয়ে এসব বলবে। আর সত্যিই তো তারা এসব পুরান টুরান নিয়ে কিছুই জানেনা হয়তো তাদের মালিক ঠিক কথায় বলেছে । বাড়ি ফিরে তারা ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু রবি তো নাছোড়বান্দা , সে বললো “ঠিক আছে তাই হোক আমি তাহলে গ্রাম ছেড়ে পালাই যাবো। তুমরা তুমাদের মালিকের কাজ করো কথা শুন কিন্তু আমি লড়বো নিজের জন্য , তুমাদের জন্য আর আমাদের এই দলিত জাতির জন্য।” ছেলের এসব কথা শুনে তাদের চোখ ভরে এলো অশ্রুতে।

দেশপ্রেম নিয়ে গল্প
দেশপ্রেম নিয়ে গল্প

তারা সিদ্ধান্ত নিল তারা শীঘ্রই গ্রাম ছেড়ে শহরে পালিয়ে যাবে । আর সেখানে গিয়ে তাদের সন্তানের সব আশা পূরণ করবে।
রবির মা বাবা রবি কে নিয়ে একদিন ভোর বেলা গ্রাম ছেড়ে রওনা দিলো শহরের উদ্দেশ্যে। তারা ৩ জনই কখনো শহর দেখেনি। আর তাদের ধারণা ছিল শহর মানেই উন্নত সেখানে জ্ঞানী গুণী মানুষেরা থাকে আর তারা নাকি সবাই কে সন্মান দেয়। সেই ভরসা মনে নিয়ে তারা শহরের বুকে পা রাখতেই অর্থাৎ ট্রেন থেকে নামা মাত্রই হটাৎ করে ,কে একজন রবির বাবাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তার ব্যাগ টা নিয়ে দৌড় দিল। তার পেছন পেছন গিয়েও আর শেষ রক্ষা হলো না। তার ব্যাগ নিয়ে সে লোকটি কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেলো তা চোখে পড়লো না।

আসে পাশের মানুষ জন কে জিজ্ঞাসা করার পর, তারা বললো আর ও ব্যাগ ফিরে পাবেন না বুঝেছেন, ও ব্যাগ ছিনতাই হয়ে গেছে। তাদের শহর সম্পর্কে যে ধারণা ছিল তা নিমেষে ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। তাদের কাছে তখন না ছিল কিছু খাবার আর না ছিল থাকার জন্য কোনো আশ্রয় তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলো গ্রামে ফিরে যাওয়াটাই মঙ্গল হবে। রবির অনিচ্ছা সত্বেও তার বাবা মা তাকে জোর করে হাত ধরে টানতে টানতে ট্রেনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, ভিড়ের মাঝে হটাৎ করে পেছন ফিরতেই তারা দেখল রবি নেই তাদের সাথে। কখন ভিড়ের মাঝে তারা তাকে হাত ছাড়া করেছে সেটা বুঝতেও পারেনি তারা। সেখানে বসেই তখন রবির মা মরা কান্না জুড়ে বসল।

আসে পাশে লোক জমা হয়ে গেল। তার কিছুক্ষন পর পুলিশ এলো একটি বাচ্চা ছেলে হারিয়ে গেছে তার খোঁজ চারদিকে করেও পুলিশ কিছুই হদিস পেলো না। শেষ মেষ ফুটপাতে মাস ৩ কাটানোর পরও ছেলেকে না ফিরে পেয়ে তারা গ্রামে ফিরে এল। গ্রামের লোক তাদের সহানুভূতির জায়গায় এক ঘর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো কিন্তু ওই নেতা এসে তাদের যথা সাধ্য অপমান করে কম মাইনে তে নিজের বাড়িতে পুনরায় কাজ করার জন্য বলে গেলো । কিন্তু ছেলে হারানোর দুঃখ তাদের তিলে তিলে শেষ করে ফেলছিল ।

এদিকে সেদিন রবি যখন তার বাবা মায়ের হাত ছাড়া হয়ে যায় তখন ভীষণ কান্নাকাটি শুরু করে , তার কান্না দেখে , সামনের একটি চায়ের দোকানি তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় নিজের বাড়িতে , তারপর মিথ্যে বলে রবিকে সে বোঝায় যে তার বাবা মা তাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে , তাই এখন থেকে সেই তার রক্ষাকর্তা পিতা। রবি কে দিয়ে সে নানান জায়গায় ভিক্ষা করাতো আর রবি স্কুল এ ভর্তি হওয়ার বা পড়াশোনা শেখার আগ্রহ দেখালে, অসুখের ভান করতো।

আর রবিই যে তার শেষ সম্বল, তাই তাকেই তার অসুস্থ রক্ষাকর্তার দায়িত্ব নিতে হবে বলে তাকে দমিয়ে দিতো। তার কিছুদিন পর সত্যি তার শরীরের অবস্থা খুব শোচনীয় হয়ে উঠে , সে নিজের চিকিৎসার টাকা জোগাড়ের জন্য রবিকে বিক্রি করে দেয় এক মাফিয়াকে। ছোট রবি স্বপ্ন দেখেছিল শিক্ষালাভের, কিন্তু হায় কপাল! পিতা মাতা হারা এই ছেলের ভবিষ্যত যে বিধাতা কি স্থির করেছেন তা শুধু তিনি এই জানেন!

NEW BENGALI STORY দেশপ্রেম নিয়ে গল্প
NEW BENGALI STORY দেশপ্রেম নিয়ে গল্প
<

রবি তাদের সাথে থাকতে থাকতে প্রথমে পকেট মার তারপর ছিনতাই তারপর দোকান থেকে চুরি তারপর খুন, সবকটি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠলো মাত্র ২৫ বছর বয়েসেই। মাঝে মাঝে তার বাবা মায়ের কথা মনে পড়লে সে বলতো বাবা মা তোমরা তো আমায় ছেড়ে পালিয়েছিলে বলো, তাই আজ তোমাদের দোষেই আমার এই অবস্থা। তবে তোমরা আমার সাথে যাই করে থাকো না কেন, আমি কিন্তু তোমাদের দেওয়া কথা রাখবো ,আমি নিচু তলার মানুষদের জন্য, সে সব কিছু করবো যা আমাদের প্রাপ্য । আমিও চেয়েছিলাম পড়াশোনা শিখে, তোমাদের সেই নির্ভীক হয়ে উঠতে কিন্তু আমায় সে সুযোগ দেওয়া হয়নি । তাই এই পথেই না হয় আমি তোমাদের নির্ভীক হয়ে উঠলাম।

রবি নেতাদের কালোধন চুরি করে গরীব সাধারণ মানুষের মধ্যে , দলিত জাতির মধ্যে ,সেই টাকা বিলিয়ে দেয়। বিভিন্ন হসপিটালে ,অনাথ আশ্রমে, বৃদ্ধাশ্রমে দান করে, আর সমাজের কীট গুলোকে সদ-সাহসে খুন করে। তাই সে সাধারণ জনগণের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে চাইলেও কোনো যথাযোগ্য প্রমাণের অভাবে ,তারা তার ধরা ছোঁয়া পায় না ।সে নির্ভীক নামে পরিচিত ছিল সমাজের কাছে। তার চেহারা আজ অব্দি কেউ দেখেনি। অনেকে তাকে দুর থেকে দেখে পরিহিত বস্ত্র অনুযায়ী অনুমান করার চেষ্টা করেছে । সে সর্বদাই কালো বস্ত্র পরিধান করতো।

এভাবেই সময় যায়। একদিন খবরের কাগজে বেরোলো নির্ভীক নাকি এবার ভোটে দাড়াবে তাও আবার নাকি ATB টিমের হয়ে সে টিকিটও পেয়ে গেছে । সাধারণ মানুষ তো বেশ খুশি। কারণ যে মানুষ এতদিন কোনো স্বার্থ ছাড়াই তাদের সাহায্য করেছে সে ক্ষমতায় এলে তাদের কতই না খেয়াল রাখবে । নির্ভীক জনসমক্ষে এলো সবাই তার চেহারা দেখলো ধন্য ধন্য রব উঠলো। , ভগবানের চোখে দেখে তাকে সাধারণ মানুষ। সাধারণ জনগন তাকে বিপুল ভোটে জয়ী করলো। এদিকে তার শপথ গ্রহণের দিন, সে যখন স্টেজ এ উঠলো দুর থেকে একটা গুলি এসে তার বুকে আঘাত করলো, সে স্টেজেই লুটিয়ে পড়লো।

কে যেন ভিড়ের মধ্যে থেকে বলে উঠলো,” আপনারা যাকে ভোট দিয়ে ভালোবেসে জিতিয়েছেন সে আপনাদের নির্ভীক নয়” , সে এক নেতার ছেলে যে আপনাদের নির্ভীক এর বাবা মা কে খুন করে নির্ভিককেও খুন করার চেষ্টা করেছিল। জানতে চান আপনাদের নির্ভীক কে? মিডিয়া, রিপোর্টার, পুলিশ, সাধারণ মানুষ ,ভিড়ের মাঝে কালো বস্ত্র পরিহিত ,একটি মুখ ঢাকা ছেলে সবার সামনে এল। সে নিজের মুখের আবরণ সরিয়ে ,সবার সামনে চিৎকার করে বললো আমি আপনাদের নির্ভীক। আর ওই যে স্টেজে যে ছিল, সে হলো আমার গ্রামের এক পাপী নেতার ছেলে, যে নেতার জন্য আমি আমার স্বপ্ন ,মা ,বাবা সবাইকে হারিয়েছি।

পড়ুন- জীবনের চরম বাস্তবতার গল্প- নেতাদের দাদাগিরি 

তারপর সে তার জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো পরের পর বলতে লাগলো , শেষে বললো জানেন সেদিন যদি ওই নেতা আমায় একটু শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে হয়তো আজ আমি এখানে এই অবস্থায় দাড়িয়ে থাকতাম না । ছোট বেলায় শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল কিন্তু তাতেই শেষ হয়নি , শহরে আমার জনপ্রিয়তা শুনে আমার নাম কাজে লাগিয়ে নিজের ছেলেকে ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিল তাই আমায় মা বাবার খুনের হুমকি দিয়ে নিয়ে গেলো গ্রামে, সেখানে গিয়ে নিজের সচক্ষে আমি তিলে তিলে মরতে দেখেছি আমার মা- বাবাকে।

আমার সামনে প্রতিদিন তাদের একটু একটু করে বিষ দিয়ে মারা হতো, আমার জায়গায় সে তার ছেলেকে নির্ভীক বলে পরিচয় দিয়ে জিতিয়ে দিতে চেয়েছিল তার স্বার্থ চরিতার্থও হলো কিন্তু আমি তা পরিপূর্ণ হতে দিই নি। আজ আমি পিতৃমাতৃহীন এক সন্তান, যার কাছে হারাবার মত আর কিছুই নেই। তাই আমি সবার সামনে স্বীকার করছি আজ আমি ওই নেতাকে খুন করেছি আর তার ছেলেকেও । আমি পাপীদের নিধন সহস্তে করেছি। পুলিশ আমাকে অ্যারেস্ট করুক নিয়ে যাক জেলে। আজ আমি আর কিছুতেই ভয় পাইনা। আমি আমার মা বাবাকে কথা দিয়েছিলাম নীচুতলার মানুষদের জন্য আমি কাজ করবো। যেটা আমি পাইনি, সেটার শিকার যাতে আর কেউ না হয়। তার ব্যবস্থাও আমি করবো। কিন্তু আমি পারলাম না, বাবা মা আমি পারলাম না উদ্দেশ্য পূরণ করতে , পারলাম না কথা রাখতে আমি , ক্ষমা করো আমায় পারলে ক্ষমা করো।

সাধারণ মানুষ পুলিশকে তার কাছে আসতে দিচ্ছিল না , তাকে বারবার পালাতে বললো কিন্তু সে সেদিন কোথাও গেলো না সদিচ্ছাই সে পুলিশের কাছে সারেন্ডার করলো , কোট পেশ করা হলো , সে নিজেই তার এতদিন করা সব খুন চুরি ছিনতাই এর অপরাধ গুলি নিজের মুখে স্বীকার করে নিল। ফলে অনিচ্ছা সত্বেও জর্জ সাহেব তাকে ফাঁসির দন্ড দিলেন । সারা দেশে নেমে এলো সেদিন দুঃখের কালো ছায়া , সাধারণ জনগন এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছিলো না। কোর্টের সামনের ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে ,সিআরপিএফ দের ডাকতে হলো।

সবার সামনে দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় এক ক্রন্দনরতা জননী তার ছোটো শিশুটিকে কোলে নিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো, “নির্ভীক তু মোদের লিগে, মুদের নিচুতলার মানুষের লিগে এতকিছু করলি ,আর তার শেষ পরিণাম এই হলো। তাহলে শুনে রাখ তুই মরলেও ,তুর আদর্শটা মরবেক নাই রে , আমার ছিলার মাথায় আশীর্বাদ কর,উয়াকে আমি তুর মতো করেই বড়ো করবো, আর তুর স্বপ্ন উ করবেক পূরণ। উই তুর উত্তরসূরি হবেক”। তখন চিৎকার করে সাধারণ জনগন একত্রে বলে উঠলো নির্ভীক তুমি আমাদের সবার মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকবে , আমরা সবাই দায়িত্ব নিয়ে তোমার দেখা স্বপ্ন কে পূরণ করব । রাখব না সমাজে ভেদাভেদ আমরা, করবো না কোনো জাতিকে হেয় , সবাই কে দেবো আমরা সমান সন্মান , সবাই পাবে সমান অধিকার ।সবাই মিলে গড়ে তুলবো আমরা মিশ্র সমাজ।

দেশাত্মবোধক গল্প
দেশাত্মবোধক গল্প new bengali story

নির্ভীক চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলে উঠলো সবাই মিলে বলুন তাহলে আমার সাথে বিদ্রোহী কবির বলা ” জাতের নামে বজ্জাতি সব , জাত জালিয়াত খেলছে জুয়া, ছুঁয়েই তোর জাত যাবে , জাত ছেলেরা হাতের নয়তো মোয়া”।

সেদিন নির্ভীক এর ফাঁসি হল ঠিকই, এই কিন্তু সে প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে তার মা বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে পেরেছিল। সাধারণ মানুষ গড়ে তুললো এক সংঘ যার নাম দিলো তারা নির্ভীক সঙ্ঘ, সেখানে যোগদান করতে লাগলো বিভিন্ন রাজ্যের মানুষেরা , এই সংঘের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলো নবীন সম্প্রদায়।

এমন নির্ভীক এর সত্যি বড্ডো প্রয়োজন আমাদের , যে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে স্বামী বিকানন্দের বলা বাণী, আর প্রমাণ করে দেবে সমাজে ভেদাভেদ যতদিন না মুছবে ততদিন অব্দি কেউ গণতন্ত্রের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে না। চলুন তাহলে আমরাই গড়ে তুলি নির্ভীক এর দেখা স্বপ্নের দেশ, যেখানে জাতিভেদ প্রথা নয় মানুষকেই অগ্রগণ্য করা হবে। আমাদের কাছে একটাই জাতি হবে শ্রেষ্ঠ, সেটা হলো মানব জাতি। মানুষের জন্য মানুষকে জেগে উঠতে হবে, গড়ে তুলতে হবে এক সুশৃঙ্খল , ধর্মনিরপেক্ষ, জাতি নিরপেক্ষ সুন্দর ভারত।

প্রেরক- আলোরানি মিশ্র

গল্পটির পরিপূর্ণতা যার কলমে-
ই-মেল মাধ্যমে লেখা পাঁঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ। 
আলোরানির কলমে লিখিত আরও কিছু বিশেষ গল্প- 

একটি সফল প্রেমের গল্প 

সেরা বন্ধুত্বের গল্প- রুনিমা 

মা কে নিয়ে অসাধারণ দুটি গল্প 
সরাসরি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

“দেশপ্রেম নিয়ে গল্প। NEW BENGALI STORY দেশাত্মবোধক গল্প”

Spread the love

Leave a Reply