একটি new রূপকথার গল্প নিয়ে আবারও চলে আসা। আজকের এই রূপকথার প্রেমের গল্পটির কেন্দ্রে রয়েছে একজন রাজকন্যা এবং একজন রাজপুত্র। রাজপুত্র পিতৃ ঋণ শোধ করতে বদ্ধপরিকর, অন্যদিকে রাজকন্যার বাবা পুণ্য অর্জনের কাঙ্গাল।

new রূপকথার গল্প। রূপকথার প্রেমের গল্প।রাজকন্যার গল্প। রাজপুত্রের গল্প princess:-

রাজা ধিরেন দত্তের দানের তুলনা নেই। দানই হলো রাজার জীবনের একমাত্র ব্রত। রাজা দান করে পুণ্য অর্জন করতে চান। আর পুণ্যের ফলে স্বর্গে চলে যেতে চান। রাজভাণ্ডার প্রায় শূন্য হয়ে এসেছে, তবু রাজার দানের ইচ্ছার শেষ হয়নি। যেন দান করেই তিনি সকল দানশীল রাজাদের গর্ব খর্ব করতে চান। রাজা ধিরেন দত্ত অন্য দিনের মতো সেদিনও রাজসভায় বসেছিলেন। তখনওসভার কাজ পুরোপুরি শুরু হয়নি।

একজন বনবাসী প্রবেশ করলেন। রাজা ধিরেন দত্ত কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে বনবাসীকে দান করবার জন্যে এগিয়ে গেলেন। বনবাসী হেসে বললেন—আমি বিষয়ী নই, আমি বনবাসী। অর্থে আমার প্রয়োজন নেই। শুধু আমি আপনার সভায় কিছুক্ষণের জন্যে বসতে চাই। এ ছাড়া আমার আর কোন ইচ্ছা নেই।

রাজা সিংহাসন ছেড়ে দিয়ে বললেন- “বসুন।” বনবাসী কিন্তু সিংহাসনে বসলেন না, হরিণের ছাল পেতে নীচেই বসলেন।

রাজাও সিংহাসনে বসলেন না, দাঁড়িয়ে রইলেন। বনবাসী রাজাকে বললেন আপনার দানের তুলনা নেই অনেকই বলে, কিন্তু দান করলেই আত্মা পবিত্র হয় না। মনকেও পবিত্র রাখা কর্তব্য। ফাঁকি দিয়ে কোনো মহৎ কাজ হয় না। কিছুক্ষণ পর বনবাসী বিদায় নিলেন। রাজা জীবনে এর আগে এমন লোক তিনি দেখেননি, যার কোনো প্রার্থনা নেই।

তারপর এলেন আর একজন প্রার্থী। রাজা কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে প্রার্থীকে দান করবার জন্য এগিয়ে গেলেন।

প্রার্থীটি বললেন-“এই সামান্য দানে আমার কিছু হবে না। আমার দশলক্ষ স্বর্ণমুদ্রা আর সহস্র শ্বেত গাভী চাই।”

প্রার্থীর প্রার্থনা শুনে রাজার মুখ কালো মেঘে ছেয়ে গেল। অতো অর্থ তো বর্তমানে রাজভাণ্ডারে নেই। তাছাড়া দশ সহস্ৰ শ্বেত গাভী সংগ্রহ করাও রাজা ধিরেন দত্তের পক্ষে অসম্ভব। রাজা অবাক হয়ে প্রার্থীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন-“কে আপনি? কেনই বা আপনার এতো অর্থের প্রয়োজন?”

new রূপকথার গল্প। রূপকথার প্রেমের গল্প
new রূপকথার গল্প। রূপকথার প্রেমের গল্প রূপকথার রাজকন্যার গল্প

প্রার্থী উত্তর দিলেন-“আমি রাজপুত্র বরুন। পিতৃঋণ শোধ করব বলেই আমার দশলক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ও দশ সহস্র শ্বেত গাভীর প্রয়োজন। আমার রাজ্য ছিল, এখন কিছুই নেই। বর্তমানে আমি পথের ভিখিরী; কিন্তু পিতৃঋণ শোধ করব বলে আমি মৃতপ্রায়। পিতার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি। তা আমাকে পালন করতেই হবে। শুনেছি আপনি দানশীল। আপনার দানের তুলনা নেই। তাই সকলের আগে—আমি আপনার কাছে আমার প্রার্থনা জানাতে এসেছি।”

রাজা বললেন- “আপনার পিতার পাওনাদারদের গিয়ে বলুন যে পিতৃঋণ শোধ করবার যোগ্যতা বর্তমানে আপনার নেই।”

রাজপুত্র বরুণ বললেন- “আমি কথা দিয়েছি এই ঋণ আমাকে শোধ করতেই হবে।”

রাজা ধিরেন দত্ত বিচলিত হয়ে বললেন- “এতো অর্থ আমার রাজকোষে নেই। তাছাড়া আমার গো-শালায় মাত্র এক হাজার গাভী আছে। তাও বিচিত্র বিভিন্ন বর্ণের। এতো অর্থ ও গাভী একমাত্র কুবেরই দান করতে পারেন।”

-“শুনেছিলাম, আপনি রাজাদের মধ্যে দানে শ্রেষ্ঠ। এখন দেখছি, তা মিথ্যা! আপনি যদি আমার প্রার্থনা পূর্ণ করতে না পারেন, কি করে আপনি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবেন? আমার প্রার্থনা পূর্ণ করে আপনি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করুন।”

রাজা ধিরেন দত্ত মহা ভাবনায় পড়ে গেলেন। রাজপুত্র বরণকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলে, রাজা রাজ-অন্তঃপুরে চলে গেলেন। রাজপুত্র বরুণ রাজসভার এককোণে বসে রইলেন। রাজা ধিরেন দত্ত নিশ্চয়ই তাঁর দাবী পূর্ণ করবেন। সভার অন্যান্য সকলেই চলে গেছে। শুধু রাজপুত্র বরুণ বসে রইলেন, মনে আশা নিয়ে।

হঠাৎ রাজা ধিরেন দত্ত এলেন, সঙ্গে এক পরম রূপবতী রাজকন্যা। রূপের আলোয় সমস্ত রাজসভা আলোকিত করল।

রাজা ধিরেনদত্ত বললেন- “আমার কন্যা নিলিমাকে আপনাকে দান করলুম, রাজপুত্র।”

রাজপুত্র বরুণ অবাক হয়ে গেলেন, কোথায় দশ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা আর কোথায় দশসহস্র শ্বেত গাভী! রাজপুত্র রাজার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেন। রাজা ধিরেনদত্ত আবার বললেন- “রাজপুত্র বরুণ আমার দান আপনি গ্রহণ করুন, এ ছাড়া আপনাকে দেবার মতো আমার আর কিছুই নেই।”

রাজকন্যা নিলিমা এগিয়ে এসে রাজপুত্র বরুণকে প্রণাম করলে। রাজপুত্র বরুণ বললেন- “আপনি কথা দিয়েছেন। আমাকে দশ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ও দশ হাজার শ্বেত গাভী দেবেন। কথা দিয়ে আপনি কথা রাখছেন না কেন? আপনার কন্যাকে নিয়ে কি করব আমি?”

রাজা ধিরেনদত্ত বিচলিত হয়ে বললেন- “আমার কন্যা মূল্যহীনা নয়। পৃথিবীতে এমন রূপবতী নারী আর নেই। সহস্র সূর্যকান্ত মণির মতোই ওর দাম। অতএব আমার কন্যাকে গ্রহণ করুন, রাজপুত্র।”

—”বাবা!” রাজকন্যার দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা গড়িয়ে পড়ল। রাজা ধিরেনদত্তের উদ্দেশ্য এতক্ষণে রাজকন্যা বুঝতে পারলেন। রাজকন্যা রাজাকে প্রশ্ন করলেন—কিসের জন্যে, কেনই বা আমাকে দান করছ বাবা? আর যাকে আমায় দান করছো, তিনিই বা কে? কি তাঁর পরিচয়?

রাজা ধিরেনদত্ত বললেন—উনি একজন প্রার্থী। ওঁর নাম রাজপুত্র বরুণ। পিতৃঋণ শোধের জন্য উনি আমার কাছে অর্থ ও গাভী চেয়েছিলেন। ওঁর সে প্রার্থনা পূর্ণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ প্রার্থীকে ফিরিয়ে দিলে দানবীর হিসেবে আমি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবো না। তাই অর্থের পরিবর্তে ওঁর হাতে তোমায় দান করলুম।

অভিমানে, দুঃখে মাথা নত করলেন রাজকন্যা নিলিমা। পিতৃহৃদয় এতো কঠোর হতে পারে। আর কোন প্রশ্ন করবার ইচ্ছা রইল না।

আর এই রাজপুত্র বরুণ— তাঁরও হৃদয় কি পিতার মতোই কঠোর। তাঁর কাছেও আমার কোন মূল্য নেই, শুধু পিতৃঋণ শোধ করার ওপরই উনি গুরুত্ব দেবেন! রাজকন্যা ভাবতে লাগলেন।

রাজপুত্র বরুণ রাজা ধিরেনদত্তকে আবার বললেন—আমি আপনার কন্যাকে চাই না। আমাকে অর্থ দিন। আমি পিতৃঋণের দায় থেকে মুক্তি পেতে চাই।

“রাজপুত্র!” রাজকন্যার মিষ্টি মধুর কণ্ঠস্বর শুনে রাজপুত্র বরুন অবাক হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে রইলেন। রাজপুত্রের দিকে তাকিয়ে রাজকন্যা নিলিমা বললেন আমাকে আপনি গ্রহণ করুন। আমি আপনার পিতৃঋণ শোধ করতে সাহায্য করব।

রাজপুত্র বললেন–রাজকন্যা নিলিমা, তোমার কথা শুনে সত্যি আমি খুশী হলাম।

পড়ুনঃ-রাজপুত্রের গল্প। শিক্ষণীয় গল্প

তারপর রাজপুত্র রাজা ধিরেনদত্তের দিকে তাকিয়ে বললেন- আপনার কন্যাকে আমি গ্রহণ করলুম। রাজা ধিরেনদত্তকে প্রণাম করে রাজকন্যা নিলিমা রাজপুত্রের সঙ্গে রাজপুরী থেকে বেরিয়ে এলো।

পথ চলতে চলতে কিছুক্ষণের মধ্যে ওঁরা এসে আশ্রয় নিলেন অবন্তীপুরের রাজপ্রাসাদের অতিথিশালায়। রাজপুত্র বরুন, রাজকন্যা নিলিমা। একজনের পিতৃঋণ শোধের জন্য অর্থ চাই— আর একজন এই ঋণ শোধে সাহায্য করবে। এছাড়া দুজনের সঙ্গে দুজনের কোনো সম্পর্ক নেই। বসন্ত আসে, কুহু-কেকা ডাকে। যদিও রাজপুত্র যুবক, রাজকন্যা পূর্ণযৌবনা—ওদের মন এতটুকু বিচলিত হয় না।

একদিন রাজপুত্র বরুন বললেন—”নিলিমা আমার পিতৃঋণ শোধের জন্য পাঁচলক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ও পাঁচশত গাভী অবন্তীপুরের রাজার কাছ থেকে পেতে পারি।”

“আর বাকী পাঁচলক্ষ স্বর্ণমুদ্রা আর পাঁচশত শ্বেত গাভী?”

“অর্থ অবশ্য ভোজরাজের কাছেও পেয়ে যাবো আর তিনশত গাভীও পাবো, কিন্তু আর দুইশত গাভী পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু যা পাওয়া যাচ্ছে তা সংগ্রহ করতে তোমাকে আমায় সাহায্য করতে হবে।”

রাজকন্যা বললেন– “কি আমার কর্তব্য?”

সম্পাদন করে অর্থ ও আটশত শ্বেত গাভী আনতে হবে।।

“তোমাকে অবত্তীপুরের রাজা কৌশিক ও ভোজরাজ চন্দ্রবর্মার মনস্তুষ্টি…”

“আমি আমার কর্তব্য বুঝেছি।” নীলিমার চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে।

দিন যায়, রাত্রি যায়। কিন্তু কর্তব্য পালনে রাজকন্যার কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। মনে যেন অন্য স্বপ্ন, অন্য চিন্তা।

একদিন রাজপুত্র ঘুমিয়ে আছেন, শিয়রে যেন কে দাঁড়িয়ে! কপালে কার মধুর হাতের পরশ পেলেন; এ হাত রাজকন্যা নিলিমার।

তবে কি রাজকন্যা আমাকে কর্তব্য হতে বিচ্যুত করতে চায়! মোহমায়ায় ভুলিয়ে রাখতে চায়!—মনে মনে এই কথা ভেবে বিরক্ত হয়ে উঠলেন রাজপুত্র।

ওর সঙ্গে তো কোন সম্পর্ক নেই। শুধু মাত্র পিতৃঋণ শোধে সাহায্য করবেন, এরজন্যই রাজপুত্র বরুন রাজা ধিরেনদত্তের দান গ্রহণ করেছেন। তবে নিলিমার এই প্রেয়সীর মতো লীলা-চপল ভঙ্গী কেন?

রাজপুত্র গম্ভীরকণ্ঠে বললেন—আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না নিলিমা। রাজাদের সন্তুষ্ট করে তুমি আমায় অর্থ ও গাভী এনে দাও। তারপর দায়মুক্ত হয়ে তুমি তোমার বাবার কাছে চলে যাও, আমি পিতৃঋণ থেকে মুক্ত হয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি।

রাজকন্যা বললেন “কেন বরুণ?”

রাজপুত্র চমকে উঠলেন। নাম ধরে ডাকা। তবে কি রাজকন্যা প্রেম নিবেদন করতে চায়! এতে আর কোন সন্দেহ নেই। সন্দেহ থাকতে পারে না।

রূপকথার রাজকন্যার গল্প সেরা রূপকথার গল্প
রূপকথার রাজকন্যার গল্প সেরা রূপকথার গল্প image

রাজপুত্র বললেন- “ভুল করো না নিলিমা। প্রতিজ্ঞা পালন ছাড়া তোমার আমার মধ্যে আর কোন সম্পর্ক নেই। তোমার প্রেমের চেয়েও পিতৃঋণ শোধ করে যশ অর্জন করাকে আমি শ্রেয় বলে মনে করি।”

“এতো নিষ্ঠুর হয়ো না বরুন। আমার দিকে একবার তাকাও। আমি কি সুন্দরী নই? আমার দিকে তাকালে সমাজে তোমার বদনাম হবে না।”

“তা হয় না নিলিমা।”

“-তোমার কি মায়া নেই, মমতা নেই, লোভ নেই?”

বরুন বললেন—”না, তোমাকে আমার উদ্দেশ্য সাধনের কাজে লাগানো ছাড়া আর অন্য কোন প্রয়োজন নেই।” রাজপুত্র বরুনের মুখে আর কোন কথা নেই।

নিলিমা বললেন—”বেশ, আমি আমার কর্তব্য পালন করব, কিন্তু তারপর?”

রাজপুত্র বললেন—”তারপর তুমি মুক্ত।”

—”আর তুমি?”

—”আমিও পিতৃঋণ শোধ করে মুক্ত হয়ে হিমালয়ে তপস্যা করতে চলে যাব। কামিনী-কাঞ্চনে আমার কোন আসক্তি নেই।”

—”তুমি পাষাণ। কিন্তু আমি কি করব? আমি যদি তোমার কাছ থেকে মুক্তি নিতে না চাই?”

উত্তর দেবার মতো কেউ তখন নিলিমার পাশে নেই, রাজপুত্র বরুন অন্যত্র চলে গেছেন। নিলিমা অবন্তিপুরের রাজমহলের দিকে তাকাল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

পড়ুনঃ- সেরা রূপকথার গল্প। নতুন রূপকথার গল্প

তারপর একদিন রাতে রাজ-অন্তঃপুরের পাশের উদ্যানে আবার বরুনের সঙ্গে রাজকন্যা নিলিমার দেখা হলো। রাজপুত্র বরুন অবাক হয়ে নিলিমার দিকে তাকালেন।

নিলিমা বললেন—”আপনি আমাকে চিনতে পারছেন তো রাজপুত্র?”

-“পেরেছি।”

-“হীরের কণ্ঠাহার আমার গলায় সুন্দর মানিয়েছে, তাই না?”

-“হ্যাঁ। তাতে আর সন্দেহ কি?”

“আপনার কি এখনও আমায় দেখে একটু লোভ হচ্ছে না?”

রাজপুত্রের মুখে কোন কথা নেই। সব কথা যেন ফুরিয়ে গেছে। নিলিমা আবার উৎফুল্ল হয়ে বললেন- “রাজা কৌশিক কিন্তু আমাকে দেখে ভুলেছেন। কাল আমায় রাণীর মর্যাদা দেবেন।”

রাজপুত্র বরুন একবার চমকে উঠে স্থির হয়ে গেলেন।

নিলিমা রাজপুত্রের দু’হাত ধরে বললে- “এখনও তুমি আমায় গ্রহণ করো, কৌশিকের দেওয়া এই হীরের কণ্ঠাহার আমি ফিরিয়ে দিয়ে আসি। আমি যে তোমায় ভালবাসি।” রাজপুত্র বললেন- “তারপর?”

নিলিমা বললেন- “তারপর শুধু আমরা দু’জন। – পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে সুখের নীড় রচনা করব।”

রাজপুত্র বরুন গম্ভীর কণ্ঠে বললেন–”না, তা হয় না নিলিমা। পিতৃঋণ আমি শোধ করবই আমার কর্তব্য।”

-“জীবন বড় না কর্তব্য বড়।”

“কর্তব্য।”

“পিতৃঋণ শোধ না করা পর্যন্ত আমি শান্তি পাব না।”

রাজকন্যা নিলিমার দু’চোখ বেয়ে আবার দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। শাস্তকণ্ঠে বললেন–”ঠিক আছে, তোমাকে আমি সুখী করব।”

তারপর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। রাজকন্যা কৌশিককে সন্তুষ্ট করেছেন, চন্দ্রবর্মাকেও সন্তুষ্ট করেছেন। রাজনটী হয়েই সন্তুষ্ট করেছেন দুই রাজাকে। রাজপুত্র বরুন অর্থ নিয়ে ফিরে গেছে পিতৃঋণ শোধ করার জন্য। তারপর আর দেখা হয়নি।

নিলিমা কর্তব্য সম্পাদন করে আবার পিত্রালয়ে ফিরে এসেছে। রাজা ধিরেনদত্ত বৃদ্ধ হয়েছেন, দানের দ্বারা পুণ্যার্জন করেছেনও যথেষ্ট। তাই সশরীরে স্বর্গে যাওয়ার আগে কন্যাকে পাত্রস্ত করে যেতে চান। জীবনে একটা মাত্র কর্তব্যই রাজা ধিরেন। দত্ত রেখেছেন।

অতএব স্বয়ংবর সভার আয়োজন করা হলো। স্বয়ংবর সভার কথা শুনে রাজকন্যা নিলিমা হাসলেন— স্বয়ংবর সভা তাঁর কাছে সঙের মতোই মনে হলো। কেউ তো তাঁর স্বীয় ইচ্ছার কোন মূল্য দেয়নি। না পিতা না রাজপুত্র বরুন।

পিতা ছিলেন পুণ্যার্জনে ব্যস্ত, আর রাজপুত্র বরুন ছিলেন পিতৃঋণ শোধে ব্যস্ত। কোথায় রাজপুত্র বরুন! এখনও রাজকন্যা তাকে ভুলতে পারেনি। যার জন্য সে রাজকন্যা থেকে রাজনটী হয়েছিল? সে আজ কোথায়?

সে তো আজ পিতৃঋণ মুক্ত। তবে কি আজ এসে নিলিমাকে গ্রহণ করতে পারে না? রাজপুত্র বরুন কি সত্যিই পাষাণ?

স্বয়ংবর সভার খুব জোর আয়োজন। রূপবর্তী রাজকন্যা নিলিমাকে পাওয়ার জন্য সকলেই ব্যগ্র।

স্বয়ংবর সভা বসল। রাজ কন্যা নিলিমা সবার দিকে চেয়ে একবার মিষ্টি মধুর হাসলেন, কিন্তু মালা নিয়ে একেবারে সবার শেষে প্রান্তে চলে এলেন ওখানে তো কেউ নেই!

পড়ুনঃ- শিক্ষণীয় রূপকথার গল্প। ভালো রূপকথার গল্প

রাজা ধিরেনদত্ত চীৎকার করে উঠলেন- “কোথায় যাও নিলিমা?”

“-বনে”। ধিরেনদত্ত বললেন- “তুমি রাজকন্যা রাজ-অন্তঃপুর তোমার যোগ্যস্থান, বনে কেন?”

নিলিমা বললেন-“বনই আমার উপযুক্ত স্থান বাবা!” রূপবতী রাজকন্যা রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে চলে এলো গভীর অরণ্যে।

ধিরেন দত্তের রাজপ্রাসাদে কেউ নেই। শূন্য সেই রাজপ্রাসাদ। রাজা ধিরেন দত্ত শেষ কর্তব্য পালন করতে পারেনি। স্বর্গে চলে গেছেন রাজা ধিরেন দত্ত। অবশ্য অনেকে বলেন, উনি স্বর্গে যাননি। তা যাই হোক।

আর রাজকন্যা নিলিমা?

বনবাসিনী হয়ে এ-বন থেকে ওবনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খাদ্য বনের ফলমূল। শয্যা বৃক্ষতল। সেদিন ঝরণায় স্নান করে ফেরার পথে রাজকন্যা দূর জনপদের কোলাহল শুনতে পেলেন।

পরে এক পথিকের কাছে শুনলেন, নতুন এক রাজা তাদের রাজ্য ও রাজপুরী দখল করে নিয়েছে। সেই রাজা রাজকন্যা নিলিমারও খোঁজ করেছিল; কিন্তু তার খোঁজ কেউ দিতে পারেনি সেই রাজাকে।

নিলিমা ভাবলেন, অবন্তীপুরের রাজা কৌশিক হবেন। অথবা ভোজরাজ চন্দ্রবর্মা হতেও পারেন। তা রাজ্য যাক, রাজপুরী যাক। রাজ্য ও রাজপুরীতে তার কোনো লোভ নেই।

রাজপুত্রের গল্প rupkothar golpo
রাজপুত্রের গল্প rupkothar golpo
<

আর একদিন আর এক পথিকের মুখে শুনতে পেলেন নিলিমা, নতুন রাজা অত্যাচারী ও সুরাসক্ত। প্রজাদের ওপর তাঁর নিপীড়নের অন্ত নেই। এতো আত্যাচারী রাজা কেউ কখনও দেখেনি।

রাজকন্যা তবু বিচলিত হন না। রাজ্যে কি হচ্ছে, তাতে তার কি আসে যায়। হোক রাজা অত্যাচারী, হোক রাজা পাষণ্ড! শিব সাধনায় মগ্ন থাকেন রাজকুমারী নিলিমা। তবুও মাঝে মাঝে একজনের কথাই মনের কোণে বার বার উঁকি ঝুঁকি দেয়—সে রাজপুত্র বরুন। তবু রাজকুমারীর মনে একই সান্ত্বনা আছে। তিনি রাজপুত্র বরুনকে পিতৃঋণ থেকে মুক্ত করেছে। আজ রাজপুত্র বরুন পিতৃঋণ মুক্ত হয়ে হিমালয়ে সন্ন্যাসী হয়ে চলে গেছেন। হঠাৎ গভীর রাতে এক নারীকণ্ঠের আর্তনাদে রাজকুমারী নিলিমা বিচলিত হয়ে পড়েন।

একজন পূর্ণযৌবনা ষোড়শী কন্যা ছুটে আসছে তাঁরই দিকে। নিলিমাকে দেখেই বললেন- “রক্ষা করুন আমাকে, রাজার লোকেরা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাজার কাছে আমাকে ধরে নিয়ে যেতে চায়। এ রাজা সাংঘাতিক অত্যাচারী। রোজ একটি করে কুমারী কন্যা চাই।”

মেয়েটির মুখে সব কথা শুনে রাজকন্যা নিলিমা বিচলিত হয়ে পড়লেন, এ অত্যাচার বন্ধ করা তাঁর উচিত।

রাজকন্যা নিলিমা বললেন – “তোমার কোন ভয় নেই, আমিই তোমার হয়ে রাজপ্রাসাদে যাবো। তোমার কি নাম?”

“আমার নাম চম্পা। কিন্তু আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আপনি কেন বিপদের ঝুঁকি নেবেন?”

রাজকন্যা নিলিমা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন- “তোমাকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য। আমাকে প্রশ্ন করো না। ওই রাজার লোকেরা এসে পড়ল। এসো আর দেরী করো না লক্ষ্মীটি। ওই গাছের আড়ালে আমরা আমাদের পোশাক বদল করে নিই, রাজার লোকেরা কিছু বুঝতে পারবে না।”

রাজার লোকেরা এসে চম্পার পরিবর্তে রাজকন্যা নিলিমাকেই ধরে নিয়ে গেলো।

মধ্যরাত্রিতে সুরাসক্ত রাজা টলতে টলতে এলেন। রাজাকে দেখেই রাজকন্যা নিলিমা চিনতে পারলেন। রাজপুত্র বরুন! তবে সন্ন্যাস নিয়ে হিমালয়ে যাননি! ভোগ আসক্তিতে ডুবে গেছে! অত্যাচারী রাজা—বরুন! ভাবতেও অবাক লাগে রাজকন্যা নিলিমার।

মানুষের জীবনে কি করে এতো পরিবর্তন হয়? রাজপুত্র বরুন টলতে টলতে এগিয়ে এলেন–”কে তুমি?”

নিলিমা বললেন- “আমায় চিনতে পারছো না বরুন? আমি রাজকন্যা নিলিমা।”

“কি বললে তুমি?”

নিলিমা বললেন- ” আমি রাজকন্যা নিলিমা।”

রাজপুত্রের চোখ থেকে দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। নিলিমা, তুমি আমায় ক্ষমা করো। তোমার উপর আমি অবিচার করেছি। জীবন কর্তব্যের চেয়ে বড়। পিতৃঋণ শোধ করে হিমালয়ে সাধনা কতে গিয়েছিলুম; কিন্তু আমি পারিনি। আমি ব্যর্থ হয়েছি। তারপর তোমার রাজ্যে ছুটে এসেছি, তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো বলে। কিন্তু তোমাকে খুঁজে পেলুম না, অত্যাচার শুরু করলাম। কিন্তু আমি জানতাম, তুমি একদিন আসবেই।

নিলিমা বললেন- “কিন্তু এ দেহ তো আমার পবিত্র নয় রাজপুত্র। অবস্তীরাজ আর ভোজরাজ আমার এই দেহকে স্পর্শ করেছেন, তা তুমি জানো।”

রাজপুত্র বললেন- “তারা তোমার দেহকে স্পর্শ করেছেন, কিন্তু মনকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাছাড়া আমি যে তোমাকে ভালবাসি। ভালবাসা তো আগুন। দেহের সব অপবিত্রতাকে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পারে।”

রূপকথার প্রেমের গল্প রাজকন্যার গল্প
রূপকথার প্রেমের গল্প রাজকন্যার গল্প

নিলিমা বললেন-“তাছাড়া জীবনের সীমান্তে এসে জীবনভোগের ইচ্ছা আমার নেই।”

“এতো নিষ্ঠুর হয়ো না নিলিমা। আমি সবকিছু ফেলে তোমার কাছে ছুটে এসেছি।”

– “আমি তোমার সঙ্গে সবকিছু ফেলে চলে গিয়েছিলাম। তোমার জন্যেই রাজকন্যা থেকে রাজনটী হয়েছিলাম। তবু তোমার…”

রাজপুত্র বললেন-” সেদিনের সেই ভুলের জন্যই তো ক্ষমা চাইছি। আমাকে কি ক্ষমা করবে না তুমি?”

রাজকন্যা নিলিমা মিষ্টি হেসে বললেন-“ক্ষমা করে দেওয়াই মনুষ্য জাতির পরম ধর্ম। তোমাকে ক্ষমা করলাম রাজপুত্র।”

সেদিন থেকে দু’জনের জীবনে সুরু হল নতুন অধ্যায়। আর সারা রাজ্য বাঁচল রাজপুত্রের প্রচণ্ড অত্যাচার থেকে।

“new রূপকথার গল্প। রূপকথার প্রেমের গল্প। রূপকথার রাজকন্যার গল্প। রাজপুত্রের গল্প”

Spread the love

Leave a Reply