bangla rupkothar golpo, রূপকথার গল্প সবারই পছন্দের। এরকম খুব কম সংখ্যক মানুষই আছেন যারা রূপকথার গল্প ভালোবাসেন না। আজ এরকমই একটি মজার রূপকথার গল্প থাকছে। ডাইনী বুড়ি।

bangla rupkothar golpo. মজার রূপকথার গল্প ডাইনী বুড়িঃ-

এক সেপাই চলেছে রাজপথ ধরে, ডান-বাঁ, ডান-বাঁ। পিঠে তার পুঁটলি, পাশে ঝুলছে তলোয়ার; যুদ্ধ থেকে সে বাড়ি যাচ্ছে। পথের মধ্যে এক বুড়ি ডাইনীর সঙ্গে দেখা, তার বিকট চেহারা।

ডাইনী বলল, “নমস্কার,সেপাই। বাঃ, তোমার তলোয়ারটি যেমনি ঝকঝকে, পুঁটলিটিও তেমনি বড়ো। আছ বেশ! বলব কি তোমাকে, ইচ্ছা করলেই যত চাও তত টাকা পেতে পার।”

সেপাই বলল, “ধন্যবাদ, বুড়ি-মা!”

পথের ধারের একটা গাছ দেখিয়ে বুড়ি বলল, “ঐ যে প্রকাণ্ড গাছটা দেখছ? ওটি একেবারে ফোপরা। গাছের আগায় চড়লে দেখবে একটা মস্ত ফুটো; তার ভেতর দিয়ে তুমি স্বচ্ছন্দে গলে একেবারে গাছের গুড়ির ভিতর দিয়ে নেমে যেতে পারবে। আমি তোমার কোমরে একটা দড়ি বেঁধে বসে থাকব, ডাক দিলেই তোমাকে টেনে তুলব।”

সেপাই বলল, “গাছের ভেতর নেমে করতে হবেটা কি?”

ডাইনী বলল, “কি করতে হবে? কেন, টাকা আনতে হবে নিশ্চয়। তলায় পৌছলেই দেখবে একটা চওড়া পথ চলে গেছে। প্রচুর আলো পাবে, একশোর বেশি বাতি জ্বলছে সেখানে। তার পর দেখবে তিনটি দরজা, প্রত্যেকটার গায়ে চাবি লাগানো। প্রথম দরজা খুলে যে ঘরে ঢুকবে তার মধ্যিখানে, মেঝের ওপর, দেখবে একটা মস্ত সিন্দুক। সিন্দুকের ওপর দেখবে একটা কুকুর বসে আছে; তার চোখ দুটো চায়ের পেয়ালার মতো বড়ো। তা হোক গে, তাই নিয়ে তোমার মাথা ঘামাতে হবে না। আমার এই নীল চাদরটা তোমাকে দিচ্ছি, এটাকে মেঝের ওপর পেতে, চট করে কুকুরটার কাছে গিয়ে, তাকে পাকড়ে ধরে চাদরের ওপর নামিয়ে রেখো।

তার পর সিন্দুক খুলে যত খুশি পয়সাকড়ি বের করে নিও। ওতে তামার পয়সা ছাড়া কিচ্ছু পাবে না। অবিশ্যি যদি তোমার রুপো বেশি পছন্দ হয়, তা হলে পাশের ঘরে গেলেই হল। সেখানে দেখবে একটা কুকুর, তার চোখ দুটো জাঁতাকলের মতো বড়ে। তাই দেখে একটুও ভয় পেযয়ো না; ওকেও আমার চাদরের ওপর নামিয়ে রেখে, আয়েস করে সিন্দুক খালি করতে পারবে। অবিশ্যি তামা রুপোর চাইতে যদি তোমার সোনা বেশি পছন্দ হয়, যত সোনা বইতে পার তত সোনা যদি চাও, তা হলে তৃতীয় ঘরটিতে যেও। সেখানকার সিন্দুকের ওপরে বসা কুকুরটার চোখ দুটো আমাদের গোল মিনারের মতো প্রকাণ্ড। কোনো ভয় নেই, তাকেও যদি ধরে আমার চাদরের ওপর বসাও, সে-ও তোমাকে কিচ্ছূ বলবে না; তার পর যত চাও তত সোনা সিন্দুক থেকে বের করে নিও।”

bangla rupkothar golpo মজার রূপকথার গল্প
bangla rupkothar golpo মজার রূপকথার গল্প

সেপাই বলল, “যা বলেছ, মতলবটা মন্দ নয়! কিন্তু বুড়িমা, তার পর তোমাকে কত টাকা দিতে হবে শুনি?”

ডাইনী বলল, “কিচ্ছু না, একটা পয়সাও চাই না। তবে আমার ঠাকুমা শেষ যে-বার নীচে নেমেছিলেন, ভুলে একটা পুরনো দেশলাই-বাক্স ফেলে এসেছিলেন। সেইটি আমাকে এনে দিয়ো।”

সেপাই বলল, “বেশ, তা হলে দড়িগাছা দাও, আমি পথ দেখি।”

ডাইনী বলল, “এই নাও দড়ি আর এই নাও আমার নীল চাদর।”

সেপাই তখন গাছে চড়ে, গাছের আগার সেই গর্তটা দিয়ে ভিতরে নেমে দেখে কি না, ঠিক ডাইনী যেমন যেমন বলেছিল, একটা চওড়া পথ, তাতে কয়েকশো বাতি জ্বলছে।

সেপাই প্রথম দরজাটা খুলে দেখল, আরে বাবা! ঐ তো চায়ের পেয়ালার মতে বড়ো চোখওয়ালা কুকুরটা বসে বসে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে!

সেপাই চাদরটা মাটিতে পাততে পাততে বলল, “বাঃ, লক্ষ্মী কুকুর! সোনা কুকুর ” এই বলে টপ করে তাকে চাদরের ওপর নামিয়ে ফেলল। তার পর বাক্স থেকে মুঠো মুঠো তামার পয়সা তুলে পকেট বোঝাই করে, সিন্দুকের ডালা বন্ধ করে, কুকুরটাকে আবার যথাস্থানে তুলে রেখে, সেপাই পাশের ঘরে গিয়ে ঢুকল। উরি বাবা! এ কুকুরটার চোখ দুটো জাঁতাকলের চাকার মতো বড়ো। সেপাই বলল, “আমার দিকে অমন করে তাকিও না তো, চাঁদ, ওতে তোমার চোখ খারাপ হয়ে যাবে!” এই বলে কুকুরটাকে ডাইনীর চাদরের ওপর নামিয়ে ফেলল। তার পর সিন্দুক খুলে যেই-না দেখল ভেতরে রাশি রাশি রুপোর টাকা, অমনি সে পকেট থেকে তামার পয়সাগুলোকে ঘেন্নার সঙ্গে বেড়ে ফেলে দিয়ে, তাড়াতাড়ি পকেট আর পোঁটলা রুপোর টাকা দিয়ে বোঝাই করে ফেলল।

তার পর সে গিয়ে তৃতীয় ঘরে ঢুকল। এ ঘরের কুকুরটার চোখ দুটো সত্যি সত্যি গোল মিনারের মতো বড়ো। শুধু তাই নয়, তার ওপর চোখ দুটো সারাক্ষণ চাকার মতো ঘুরছিল।

পড়ুনঃ- রূপকথার রাজকন্যার গল্প

তাকে দেখে, মাথা থেকে টুপি খুলে, সেপাই বলল, “সেলাম, জাঁহাপনা!” বাস্তবিক এমন একটা দৈত্যের মতে কুকুর সে জন্মে দেখেও নি, শোনেও নি। মিনিট দুই সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কুকুরটাকে দেখল, তার পর ভাবল যত শিগগির কাজ সারা যায় ততই ভালো। এই ভেবে বিরাট কুকুরটাকে ধরে সিন্দুক থেকে নামিয়ে চাদরের ওপর রাখল। তার পর সিন্দুকের ডালা তুলল। ইস্, কত তাল তাল সোনার মোহর! এত সোনা দিয়ে শুধু যে কোপেনহাগেন শহরটাকে কিনে ফেলা যায় তাই নয়, তার ওপর পৃথিবীতে যেখানে যত কেক আর ফলের মোরব্বা আর টিনের সেপাই আর লাটু, আর দোলন-ঘোড়া আছে, সব কেনা যায়!

এবার সেপাইয়ের মন উঠল। তাড়াতাড়ি রুপোর টাকাগুলো এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে পকেট আর ঝুলি খালি করে, সেগুলোকে সোনার মোহর দিয়ে ঠাসল। আর শুধু পকেট আর ঝুলিই নয়, টুপিতে মোহর ভরল, জুতোয় ভরল; সব মিলে এমনি ভারী হল যে হাঁটাই মুস্কিল হয়ে দাঁড়াল। তার পর কুকুরটাকে আবার সিন্দুকের ওপর তুলে দিয়ে, দুম্ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে, হাঁক দিল, “কই, ডাইনীবুড়ি, এবার আমাকে তোল দিকিনি।”

রূপকথার গল্প bangla rupkothar golpo
রূপকথার গল্প bangla rupkothar golpo

বুড়ি বলল, “দেশলাই-বাক্স পেয়েছ?”

সেপাই বলল, “ঐ যাঃ! একেবারে ভুলেই গেছিলাম!” এই বলে ফিরে গিয়ে তাক থেকে দেশলাই-বাক্সটা নিয়ে এল। তার পর বুড়ি ওকে টেনে তুলল। দেখতে দেখতে পকেট, জুতো, পুটলি, টুপিভরা সোনার মোহর নিয়ে সেপাই আবার রাজপথে নেমে দাঁড়াল।

নেমেই বুড়িকে জিজ্ঞাসা করল, “দেশলাই-বাক্স দিয়ে তুমি কি করবে?”

বুড়ি চটে গেল। “তোমার তাতে কি দরকার শুনি? টাকা পাবার কথা, টাকা পেয়ে গেছ; এক্ষুণি আমার দেশলাই-বাক্স আমাকে দিয়ে দাও, বলছি!”

সেপাই বলল, “বেশ, তুমিই বল কি চাও, দেশলাই-বাক্স দিয়ে কি করবে তাই বলবে, নাকি তোমার মুণ্ডুটা কেটে ফেলে দেবো?”

বুড়ি চীৎকার করে বলল, “না, বলব না!” কাজে কাজেই তলোয়ারটা-না বের করে এক কোপে সেপাই ডাইনীবুড়ির মুণ্ডু কেটে ফেলল। তার পর মোহরগুলোকে দিব্যি করে বুড়ির নীল চাদরে বেঁধে নিয়ে সেটাকে পিঠে ঝুলিয়ে, দেশলাই-বাক্স পকেটে ফেলে, কাছেই একটা শহর ছিল, তাতে গিয়ে ঢুকল।

চমৎকার প্রকাণ্ড এক শহর। সেখানকার সবচাইতে ভালো হোটেলে গিয়ে, সবচাইতে ভালো ঘর ভাড়া নিয়ে, সেপাই সবচাইতে বাছাই করা খাবার ফরমায়েস দিল। এখন সে বড়োলোক হয়েছে, হাতে তার দেদার টাকাকড়ি।

হোটেলের যে চাকরটা ওর জুতো সাফ করল, তার এ কথা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে এমন এক ধনী মক্কেলের জুতো কেন এত ছেঁড়া ময়লা হবে। সে যাই হোক, পরদিনই সেপাই গিয়ে নতুন জুতো, শৌখিন পোশাক কিনে আনল। এখন সে একজন হোমরা-চোমরা ব্যক্তি হয়েছে, হোটেলের লোকদের ডেকে জানতে চাইল এ শহরে আমোদ-আহলাদের কি কি ব্যবস্থা আছে, তাদের রাজা কেমন লোক, তার মেয়ে ওদের সুন্দরী রাজকুমারীই বা কেমন।

সেপাই বলল, “ঐ রাজকুমারীকে একবার দেখতে ইচ্ছা করে।”

ওরা বলল, “তা তো হবার জো নেই, তাকে কেউ দেখতে পায় না, কারণ তিনি একটা প্রকাণ্ড তামার তৈরি প্রাসাদে বাস করেন। প্রাসাদটা উচু পাঁচিল আর দুর্গ দিয়ে ঘেরা। রাজা ছাড়া কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পায় না, কারণ কে নাকি গণনা করে বলেছে যে রাজার মেয়ের সঙ্গে একটা সাধারণ সেপাইয়ের বিয়ে হবে। রাজার সেটা একেবারেই পছন্দ নয়।”

সেপাই মনে মনে বলল, তা হতে পারে, তবু রাজকন্যাকে অন্তত একবার দেখতে ইচ্ছা করে?

যাই হোক আমোদ-আহ্লাদে তার দিন কাটতে লাগল। সে প্রায় রোজ নাটক অভিনয় দেখত, রাজার বাগিচায় বেড়াতে যেত, গরিবদের অনেক টাকা দান করত। সে তো নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই জানত ট্যাক খালি থাকার কী কষ্ট! সর্বদা সে সেজেগুজে, একপাল বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরে বেড়াত। বন্ধুরা সবাই একবাক্যে বলত তার মতো খাসা লোক হয় না, একেবারে অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি! এ-সব কথা শুনে সেপাই তো মহা খুশি। কিন্তু একদিকে এত দান-খয়রাত আর খরচ করলে, আর অন্য দিকে ঘরে এক পয়সা না আনলে, শেষটা তার টাকাকড়ি তো ফুরিয়ে যাবেই।

তার পর এমন দিন এল, হাতে যখন দুটি পয়সা ছাড়া আর কিছু রইল না। তখন বেচারা ঐ শৌখিন ঘরদের ছেড়ে দিয়ে, একটা বাড়ির চিলেকোঠায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হল। সেখানে তাকে নিজেই নিজের জুতো সাফ করতে আর ছেঁড়া জামায় রিপুকর্ম করতে হত। বন্ধুরাও কেউ ধারে কাছে আসত না, নাকি অতগুলো সিঁড়ি ভাঙতে তাদের বেজায় কষ্ট হয়!

একটা ঘুট ঘুটে অন্ধকার সন্ধ্যায় একটা খড়ের মশাল জ্বালবার পয়সা পর্যন্ত হাতে নেই, এমন সময় হঠাৎ মনে পড়ে গেল সেই যে ফোঁপরা গাছের ভেতর থেকে ডাইনীবুড়ির দেশলাই বাক্স এনেছিল, তার মধ্যে কয়েকটা দেশলাই ছিল। যেই-না মনে পড়া, অমনি সেপাই বাক্সট বের করে দেশলাই জ্বালতে গেল। একবার দেশলাই ঘষেছে, একটা দুটো ফুলকি ছুটেছে, অমনি হঠাৎ হস্ করে ঘরের দরজা খুলে গেল। তার পর খোলা দরজা দিয়ে ঢুকল গাছের তলাকার গহ্বরে দেখা, চায়ের পেয়ালার মতো চোখওয়ালা সেই কুকুরটা। সে বলল, “প্ৰভু দাসকে আজ্ঞা করুন।”

পড়ুনঃ- সেরা রূপকথার গল্প-রাজকুমারের অভিযান

সেপাই বলল, “এ তো বেড়ে মজা! দেশলাই-বাক্সটাও তো খাসা, যদি তার সাহায্যে যা চাই তাই পাওয়া যায়!”

তার পর কুকুরকে বলল, “এক্ষুণি কিছু টাকাকড়ি নিয়ে এসো।” বলবামাত্র কুকুরটা অদৃশ্য হয়ে গেল আর নিমেষের মধ্যে মুখে এক থলি তামার পয়সা নিয়ে ফিরে এল।

এতক্ষণে ঐ চমৎকার দেশলাই-বাক্সের আসল গুণ বোঝা গেল। একবার দেশলাই ঘষলে তামার সিন্দুকের কুকুর আসে, দুবার ঘষলে রুপোর সিন্দুকের পাহারাদার কুকুর আসে আর তিনবার ঘষলে, তক্ষুণি সোনার মোহরের বিকটাকার পাহারাদার এসে হাজির হয়।

এখন আর তার আগেকার সেই রাজার যোগ্য ঘর-বাড়িতে ফিরে যেতে কোনো বাধা রইল না। মাথা থেকে পা পর্যন্ত নতুন পোশাক কেনা হল; বন্ধুবান্ধবদের আবার তার কথা মনে পড়ে গেল, তারা তাকে আবার আগের মতোই ভালোবাসতে লাগল।

একদিন সন্ধ্যাবেলায় হঠাৎ তার একটা খেয়াল চাপল; সে ভাবল, “এ তো ভারি অদ্ভুত যে এখানকার রাজকন্যাকে কেউ দেখতে পায় না! সবাই বলে তিনি নাকি ভারি রূপসী অথচ ঐ বিরাট তামার প্রাসাদে তাকে বন্ধ করে রাখা হয়; এ তো বড়ো অন্যায় কথা। আমার এদিকে বড়োই ইচ্ছা করে তাঁকে একবার দেখি। আচ্ছা, আমার দেশলাই-বাক্সটা গেল কোথায়? এই বলে যেই-না সে একবার তাতে কাঠি ঘষেছে, অমনি চায়ের পেয়ালার মতো চোখওয়ালা কুকুরটা এসে হাজির! সেপাই বলল, “আমি জানি এখন অনেক রাত হয়েছে, কিন্তু বুঝলে কিনা তবু এক মিনিটের জন্যে হলেও, রাজকন্যাকে একবার দেখতে চাই।”

অমনি কুকুরট দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল আর সেপাই কি বলবে বা কি করবে ভাববার আগেই, ঘুমন্ত রাজকুমারীকে পিঠে নিয়ে ফিরে এল।

বাঃ! এই তো সত্যিকার রাজকন্যা, কী সুন্দর দেখতে, কী অপরূপ রূপসী! সেপাই আর থাকতে পারল না; হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে তার হাতে একটা চুমে খেল। পর মুহুর্তেই ঘুমন্ত রাজকন্যাকে পিঠে নিয়ে, কুকুরটা তামার প্রাসাদে ফিরে গেল। পরদিন সকালে রাজা-রানীর সঙ্গে খেতে বসে রাজকুমারী বললেন, যে কাল রাতে তিনি বড়ো অদ্ভূত এক স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বপ্নে দেখলেন যেন একটা প্রকাণ্ড কুকুরের পিঠে চড়ে কোথায় গেলেন, সেখানে এক সেপাই হাঁটু গেড়ে বসে তার হাতে চুমু খেল।

পড়ুনঃ- সেরা রূপকথার গল্প- যদু পাড়ার যদু পণ্ডিত

শুনে রানী চটে বললেন, “বাঃ, বাঃ, খুব স্বপ্ন দেখেছ দেখছি!” পরদিন রাতে রানী জেদ করে তার বুড়ি সখীদের একজনকে রাজকুমারীর খাটের পাশে পাহারায় রাখলেন, পাছে আবার কোনো স্বপ্ন তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

সন্ধ্যাবেলায় আবার সেপাই কুকুরকে ডেকে হুকুম করল রাজকন্যাকে নিয়ে আসতে। প্রাণপণে দৌড়ে তাই আনলও কুকুর; কিন্তু যতই দৌড়াক-না কেন, সেই পাহারাওয়ালা বুড়ি তার পিছু নিল। বুড়ি দেখল রাজকন্যাকে নিয়ে কুকুর একটা প্রকাণ্ড বাড়ির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল। বুড়ি ভাবল, ঠিক হয়েছে? এই ভেবে কোঁচড় থেকে একটা খড়ি বের করে বাড়িটার দরজায় মস্ত একটা ক্রশ এঁকে দিল। কিন্তু ফিরবার সময় ক্রশ চিহ্নটা কুকুরের চোখে পড়ল। সে-ও অমনি আরেকট খড়ি নিয়ে, শহরের প্রত্যেকটা দৱজায় একটা করে ক্রশ এঁকে রাখল।

ভোরবেলায় রাজা, রানী, সেই বুড়ি ভদ্রমহিলা, রাজবাড়ির সব আমলারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। সক্কলের বেজায় কৌতুহল রাজকন্যা রাতে কোথায় যান দেখতে হবে। রাস্তার প্রথম সদর দরজায় ক্রশ চিহ্ন দেখে রাজা বলে উঠলেন, “এই তো এইখানে!” রানী দেখলেন পাশের বাড়িতেও একটা ক্রুশ চিহ্ন। অমনি বলে উঠলেন, “তুমি কি চোখের মাথা খেলে গো? এই দেখ, এই বাড়ি!” তখন সবাই মিলে বলে উঠল, “না, না, ওটাও নয়, এই যে এখানে! এখানেও যে ক্রুশ আঁকা।” শেষে সবাই বুঝলেন সব দরজাতেই ক্রুশ আঁকা রয়েছে! অতএব আর খোঁজার কোনো মানে হয় না। সবাই মিলে বাড়ি ফিরে গেলেন।

রানী কিন্তু ভারি বুদ্ধিমতী ও বিচক্ষণ ছিলেন। বাড়ি গিয়ে সোনার কাঁচি বের করে, বড়ো একটা রেশমী কাপড়কে টুকরো টুকরো করে কেটে, আবার সেলাই করে জোড়া দিয়ে, চমৎকার একটা ছোটো থলি বানালেন। থলিটাকে রানী মিহি সাদা ময়দা ভর্তি করে, রাজকুমারীর কোমরে বেঁধে দিলেন। তার পর কাঁচি দিয়ে থলির গায়ে ছোটো একটা ছ্যাদা করে দিলেন, যাতে এতটুকু নড়লে চড়লে, ফুটো দিয়ে একটু একটু ময়দা ঝরে।

সেদিন রাতে কুকুর আবার এসে, রাজকন্যাকে পিঠে তুলে সেপাইয়ের কাছে নিয়ে গেল। তার একবারও খেয়াল হল না যে প্রাসাদ থেকে সেপাইয়ের বাড়ি অবধি, আবার সেপাইয়ের বাড়ি থেকে প্রাসাদ অবধি, আসতে যেতে সারা পথ থলির ছোটো ফুটো দিয়ে ঝুরঝুর করে ময়দা ঝরেছে। কাজেই পরদিন সকালে রাজা-রানী খুব সহজেই টের পেলেন তাঁদের মেয়েকে রাতে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন সেপাইকে ধরে কারাগারে বন্দী করা হল।

বেচারি সেখানে বসে রইল, সে কী অন্ধকার, কী বিরক্তিকর! তার উপর কারারক্ষী একটুক্ষণ পর পর এসে তাকে মনে করিয়ে দিতে লাগল যে পরদিন তার ফাঁসি হবে। এমন খবর শুনতে কার ভালো লাগতে পারে? এদিকে তাড়াতাড়িতে সেপাই দেশলাই-বাক্সটাকে আবার বাসায় ফেলে এসেছিল।

সকাল হলে, সরু জানলার গরাদের ফাঁক দিয়ে সেপাই দেখল শহরের লোকেরা কেমন দলে দলে তার ফাঁসি দেখতে চলেছে! দূরে ঢাক ৰাজছে; তার পর সেপাই দেখল রাজসৈনিকরা কুচকাওয়াজ করে বধ্যভূমিতে যাচ্ছে। আর সে কি ভিড়, সবাই ছুটে চলেছে! তাদের মধ্যে ছিল এক মুচির শিক্ষানবীশ ছোকরা। সে এমনি ছুটে চলেছিল যে পা থেকে এক পাটি চটি ছিটকে গিয়ে, সেপাইয়ের জানলার গরাদে লাগল।

সেপাই তাকে ডেকে বলল, “ও ভাই, থাম, থাম, অত তাড়াতাড়ি কিসের? আমি না গেলে তো মজা আরম্ভ হবে না। কিন্তু তার আগে যদি এক দৌড়ে আমার বাসায় গিয়ে আমার দেশলাই-বাক্সটা এনে দাও, তা হলে দুটো পয়সা পাৰে! প্রাণপণে ছুটতে হবে কিন্তু।” দুপয়সা পাবে শুনে ছেলেট মহা খুশি। অমনি এক ছুটে নিমেষের মধ্যে দেশলাই-বাক্সটা সেপাইকে এনে দিল। তার পর—এক্ষুনি বলছি তার পর কি কাণ্ড হল।

শহরের বাইরে ফাঁসি-কাঠ খাড় করা হয়েছিল। তার চারদিকে রাজ-সৈনিকরা দাঁড়িয়েছিল আর লক্ষ লক্ষ লোক। রাজা-রানী চমৎকার দুটো সিংহাসনে বসেছিলেন, তাদের সামনে বিচারকরা আর সমস্ত সভাসদরা।

সেপাইকে বের করে আনা হল। ঘাতক সবে তার গলায় ফাঁসির দড়ি পরাতে যাবে, এমন সময় সেপাই রাজা-রানীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল শেষ এক ছিলিম তামাক খেয়ে নিতে পারে কি না। এমন সামান্য একটা প্রার্থনায় রাজা আর না করেন কি করে? অমনি সেপাই দেশলাই-বাক্স বের করে প্রথমে একবার, তার পর দুবার তার পর তিনবার, তাতে কাঠি ঘষল আর অমনি সেই তিনটে জাদুর কুকুর এসে হাজির হল!

মজার রূপকথার গল্প
মজার রূপকথার গল্প
<

সেপাই বলল, “এবার আমাকে সাহায্য কর। দেখো যেন ওরা আমাকে ফাঁসি না দেয়!” বলামাত্র সেই বিকট কুকুর তিনটে বিচারক আর সভাসদদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, একেকজনাকে মুখে করে তুলে এই উঁচুতে ছুড়ে ফেলতে লাগল। অত উঁচু থেকে পড়ে তারা সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেল!

রাজা সবে বলতে শুরু করেছিলেন, “দেখ, আমরা এমন কিছু করব না যাতে—” কিন্তু গোল মিনারের মতো চোখওয়ালা ভীষণ কুকুরটা কি যে তাঁরা করবেন না সে কথা বলবার আর সময় দিল না, অমনি রাজা-রানীকে মুখে করে তুলে সভাসদদের মতে শূন্যে ছুঁড়ে দিল।

এদিকে রাজার সৈনিকরা তো ভয়ে আধমরা; তখন ভিড়ের লোকরা এক বাক্যে চেঁচিয়ে উঠল, “ও সেপাই, তুমি বড়ো ভালো, তুমিই আমাদের রাজা হবে আর সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে তোমার বিয়ে হবে, তিনি আমাদের রানী হবেন।

কিভাবে আমাদের সাথে যুক্ত হবেন?- 

ফেসবুক- ছাড়পত্র (a world of stories)

Telegram:- ছাড়পত্র 

“bangla rupkothar golpo. মজার রূপকথার গল্প।”

Spread the love

Leave a Reply