//p/hসুন্দর বাংলা গল্প। বাস্তবতা নিয়ে একটি গল্প

অভিনয়ের শহর। সবকিছুতে শুধু অভিনয়। ভালো থাকার অভিনয়, ভালো রাখার অভিনয়, ভালো বাসার অভিনয়। তবুও জীবন হাসতে খেলতে সবটাকে জেনেও মেনে নেয় সবাই নিজেদের জীবনে। তাছাড়া আর যে উপায় নেই। 

একটি সুন্দর বাংলা গল্পঃ- ‘গোলাপের শোভা’

একা কি সত্যিই বাঁচা যায়? তাই যদি হতো তাহলে নিজের কাঁধে হাত রাখা যায় না কেন? নিজেকে কেন জড়িয়ে ধরা যায় না সত্যি সত্যি?  

কিছুই আর আগের মতো নেই! সবটাই হারিয়ে গেছে নয়তো বদলে গেছে। 

মাঝে মাঝে আমরা অন্যের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাই… প্রত্যেকটি প্রতিচ্ছবি নিজেকে আরো স্পষ্ট ভাবে চেনায়, আলো দেখায়। দিন শেষে আমরা সবাই অনেক একা But everyone needs someone… তাই চলো বের হই। বাইরের আলো খুব বেশি না হলেও অন্ধকারে পথ ঠিকই দেখাবে। ফুল হই, বৃষ্টি হই… মেঘ হয়ে হারিয়ে যাই… বাতাস হয়ে মেঘ পাড়ি দেই… বন্ধু হই…… এ জীবনে কেউ জিতবে, কেউ হারবে, কেউ হারিয়ে যাবে এটাই নিয়ম। আবার হয়তো বিকেলের ছাদে কেউ একা কাঁদবে…কেউ হয়তো ভুলে জড়াবে এ শহরেরই ফাঁদে…।

এটাই যে নিয়ম। মনে মনে ভাবে শোভা। 

 সুন্দর বাংলা গল্প
সুন্দর বাংলা গল্প

আজ গোলাপ দিবসে সকলে নাকি নিজের ভালোবাসার মানুষটির কাছে গোলাপ ফুল নিবেদন করে ভালোবাসা প্রকাশ করে, কিন্তু এটা কতটা আন্তরিক? কতটা হৃদয়ের গভীর থেকে আসে? নাকি শুধুই আড়ম্বর?  

কই আজকের দিনটা তো শোভার জীবনেও এসেছিল কোনো একসময় । আর কেউ তাকে কথা দিয়েছিল যে যতই তার গোলাপ; শোভা কে কেউ ছিঁড়ে ফেলতে অর্থাৎ তার থেকে আলাদা করতে আসে, সে নাকি কাঁটা হয়ে তার গোলাপকে বাঁচাবে ।  

কিন্তু কই, আজ তো সে নেই তার সাথে। গোলাপ হাতে নিয়ে এমন গোলাপময় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার এত চেষ্টা কি কাঁটা থেকে বাঁচানোর জন্য নাকি কাঁটায় বিদ্ধ করে রক্তাক্ত করার জন্য? 

তবুও যে মানুষ একা থাকতে পারে না, একা বাঁচতে পারে না। 

চারিদিকের এত গোলাপময় পরিবেশ দেখে মনে মনে পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস। মনে মনে হেসে বলে, জানি সবটা অভিনয়ের ভালোবাসা  ,তবুও সেখানে তো একটু হলেও ভালোবাসা থাকে। নকল হলেও তো সেই ভালোবাসাই! 

পড়ুনঃ- জীবন নিয়ে গল্প- ব্যস্ততা নাকি অজুহাত! 

স্কুল যাওয়ার পথে বাসস্ট্যান্ডে ফুলের দোকান গুলো তে থরে থরে সাজানো ফুল গুলো কে দেখে শোভা ভাবে যতোই যা অভিনয় হোক, এই ফুল বিক্রি করেই কোনো না কোনো পরিবার চলছে, পরিবারের ছোট ছোট বাচ্চাদের কাছে হয়ত এই গোলাপ দিবসের কোনো ফাঁপা আড়ম্বর নিয়ে কোনো ধ্যান ধারণা নেই কিন্তু তাদের ফুলের মতো পবিত্র মন এটাই শুধু জানে যে ঐ ফুলগুলো তাদের বাবা অথবা মা বেচলে তাহলে খাবার খেতে পাবে। 

সবাই যে কিছু না কিছুর জন্য প্রতিনিয়ত ঠিকই লড়াই করছে। 

এত হৈ-হুল্লোড় এর মধ্যে চরম বাস্তবতা কে তো ভুলে যাওয়া যায় না চাইলেও। 

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ শোভার ওড়নায় টান পড়ে। সে পাশ ফিরে দেখে একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে, ধূলিমলিন গা ও করুণ নিষ্পাপ মুখ নিয়ে, হাতে কয়েকটা গোলাপ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

বাস্তবতা নিয়ে একটি গল্প
বাস্তবতা নিয়ে একটি গল্প

আর তাকে দেখে পাশে থাকা ফুলের দোকানের দোকানদারটা উঠল তেড়ে । তুই আবার এসেছিস! কি জ্বালাতনই না করছে মেয়েটা সকাল থেকে!

শোভা শান্ত স্বরে বলল মেয়েটাকে, “আমার ফুল লাগবে না রে। আমি নেবো না, তুই অন্য কাউকে জিজ্ঞেস কর ।” 

“কেউ নিচ্ছে না গো দিদিমনি । আমার ফুল গুলি তো ছেঁড়া, তাই কেউ নিতে চাইছে না। তুমি নাও না গো দুটো ফুল ।” কথাটা বলে মেয়েটি আবার শোভার ওড়না ধরে টানাটানি করতে লাগলো।

এবার ওই দোকানদারটা লাঠি নিয়ে তেড়ে উঠল মেয়েটিকে। মেয়েটি শোভার ওড়না ছেড়ে কিছুটা দূরে পালিয়ে গেল। হয়তো হতাশ হলো শোভার কাছ থেকেও।

শোভা দোকানদারটিকে জিজ্ঞেস করল,  “বাচ্চাটি কে? ওর বাবা মা নেই ?” 

দোকানদার বিরক্তির সাথে জানালো, “বলবেন না দিদি। মেয়েটা একটা পাগলীর মেয়ে । আরে, ওই যে, রেল গেটের সামনে যে পাগলীটা বসে থাকে না, মেয়েটা ওই পাগলীটারই মেয়ে । আমরা যখন হাওড়া যাই, মেয়েটাও আমাদের পিছন পিছন যায় কখনো সখনো। আজও গিয়েছিলো । আমাদের কারোর কাছ থেকেই বোধহয় শুনেছে, যে, আজ গোলাপ বিক্রি ভালো হবে, তাই গোলাপ কুড়িয়ে এনেছে । এমন মূর্খ, এটাও জানে না, যে, আজ কেউ ছেঁড়া গোলাপ কিনবেই না।” 

শোভা সব শুনে জিজ্ঞেস করে, “ওর মা পাগল হলো কি করে?”

“সে টা তো ঠিক জানিনা । তবে হঠাৎ করেই একদিন দেখলাম, পেট ফুলিয়ে বসে আছে। কেউ সুখ মিটিয়ে গেছে বোধহয় কোনো অন্ধকার রাত্রে।”

দোকানদারের কথায় শোভা কোনো উত্তর না দিয়ে এগিয়ে গেল মেয়েটার কাছে। মেয়েটি তাকে দেখে বলল, “আমায় মেরো না গো দিদিমনি। আমি তোমাকে ফুল বেচবো না।”

সে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে , “তুই এই গোলাপ গুলি পেলি কোথায়?”

পড়ুনঃ-  সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে একটি শিক্ষণীয় গল্প 

মেয়েটা কাচুমাচু ভাবে বলল- “বাজারে। শিয়ালদাহ বা হাওড়াতে চলে যাই মাঝে মাঝে। ওখানে অনেক সবজি, ফুল , ফল ট্রাক থেকে নামাতে গিয়ে ট্রাকের পাশে রাস্তায় পড়ে, যার কোনো খোঁজ কেউ রাখে না। আমার মতো অনেক ছেলেমেয়ে ওই সব জিনিস কুড়িয়ে বিক্রি করে। আজ শুনছিলাম সবাই বলছিল যে, আজ নাকি গোলাপের দিন, আজ গোলাপ অনেক চড়া দামে বিক্রি হবে, তাই আজ গোলাপ কুড়িয়েছি। কিন্তু গোলাপ গুলির পাঁপড়ি একটু ছেঁড়া হওয়ায় কেউ কিনছে না।”

“তুই এসব বিক্রি করে কি করিস?”

“আমি খাই, মাকে খাওয়াই। খেতে তো পয়সা লাগে গো দিদিমনি । পয়সা ছাড়া কেউ কিচ্ছু দেয় না।”

শোভা অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকল। এই টুকু বয়সেই কি গভীর জীবনবোধ! বাচ্চাটার জীবনটাও তো এই সুন্দর গোলাপগুলোর মতো হতে পারত অথচ কাঁটার মতো… 

শোভা জিজ্ঞেস করল, “স্কুলে যাস?” 

মেয়েটা হো হো করে হেসে উঠে বলল,  “পাগলীর মেয়েকে কখনো ইস্কুলে যেতে দেখেছো নাকি ?”  

শোভার মনে হলো, তার গালে জোরে দুটো চড় কষালো কেউ । তাদের সরকার নাকি সমগ্র শিক্ষা মিশন শুরু করেছেন । আদতে সমগ্ৰ শিক্ষা হচ্ছে কি?

শোভা বলল, “তুই কিচ্ছু জানিসনা । তুই স্কুলে গেলে রোজ দুপুরে খাবার পাবি, স্কুলের ড্রেস পাবি। ভর্তি হবি স্কুলে?”  

“কে করাবে ভর্তি আমায়?”  

“আমি করাবো ভর্তি তোকে। আমি একটা স্কুলের দিদিমনি । তোকে আমি আমার স্কুলে ভর্তি করাব।”  

“কিন্তু আজ খাবো কি দিদিমনি? আমি যে একটা গোলাপও বিক্রি করতে পারিনি।” 

শোভা ওকে ব্যাগ থেকে একশোটা টাকা বার করে দিয়ে বলল, “এটা রাখ, কিছু কিনে মা আর তুই খাস| কাল সকাল দশটার সময় এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি । আমি আসবো এখানে। তোকে নিয়ে গিয়ে আমার স্কুলে ভর্তি করে দেবো ।”

কথা গুলি বলে চলে আসছিল শোভা। পিছন থেকে মেয়েটি আবার চিৎকার করতে করতে ছুটে এলো । শোভা দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, কিছু বলবি?

পড়ুনঃ- হুমায়ুন আহমেদের সেরা কিছু বাণী 

“এই ফুলগুলি তোমার দিদিমনি । এই গুলি তুমি নাও । গোলাপ গুলি সবই ছেঁড়া, তবুও তুমি নাও দিদিমনি । আমাকে কেউ কোনোদিন এত ভালোবাসেনি গো দিদিমনি। আজ প্রথম তুমি আমায় ভালো বাসলে। তাই, এই গোলাপ গুলি তোমার ।”

শোভা ওর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকল। 

হাত বাড়িয়ে ফুলগুলি নিতে নিতে জিজ্ঞেস করল , .”তোর নাম কি রে বাবু? তোর নামটাই তো জিজ্ঞেস করা হয়নি।”

“আমার নাম? …পাগলীর মেয়ে।” 

শোভার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। আজ গোলাপ দিবসে পৃথিবীর সব গোলাপের কাঁটা যেন তার বুকে এক সাথে বিঁধলো।

শোভা বলে ওঠে,  “এবার থেকে কেউ তোর নাম জিজ্ঞেস করলে বলবি, ” আমার নাম গোলাপ। ” আজ থেকে তোর দিন শুরু হলো । জীবনের সকল কাঁটাকে দুমড়ে মুচড়ে তুই তোর সুগন্ধীতে ভরে উঠবি।”  

বাড়ি ফিরে আসলে শোভার হাতে এক থোকা গোলাপ দেখে আমার মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তোর হাতে গোলাপ ?”

bengali awesome real life story edited
<

শোভা হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মা, এক গোলাপের কাছ থেকে পেলাম।”

ছেঁড়া গোলাপের সেই থোকা গুলিকে শোভা সযত্নে সাজিয়ে রাখে তার ঘরে । আজকের দিনে যখন বেশিরভাগ ভালোবাসাটাই অভিনয়ে ভরপুর থাকে, সেখানে এই গরীবের ছেঁড়া গোলাপ গুলির মূল্য থাকবে কি করে ? তার চাইতে এই গোলাপগুলি শোভার ঘরেই শোভা পাক । এই গোলাপে প্রেম না থাকলেও জীবনের স্পন্দন আছে , একটা শিশুমনের খাঁটি ভালোবাসা  ।

আজ শোভার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর গোলাপ দিবস, এমন দুর্মূল্য গোলাপ আজও যে জগতে পাওয়া যায় ! 

হয়তো এই গোলাপগুলোর দাম অনেক নয়, দেখতে অতটাও সুন্দর নয়, কিন্তু তবুও এই গোলাপে যা আছে তা হয়ত আজকের আর কোনো গোলাপ ফুলেই নেই। 

একটা ক্ষুধার্ত শিশুর আর্তি, একটা নিষ্পাপ হৃদয়ের খাঁটি ভালোবাসা। 

সমাজের প্রতি ওর কুড়োনো এই ছেঁড়া গোলাপগুলো কি শুধুই গোলাপ নাকি সত্যি সত্যি কিছু জানান দিচ্ছে সমাজকে যে গোটা সমাজ, গোটা শহর যেখানে এত আড়ম্বরে, এত খুশি তে, এত আনন্দে মেতে সেখানে এইটুকু একটা শিশুর জন্য একচিলতে আনন্দ নেই! 

হয়ত গোলাপ ফুলের শোভা আছে এই সমাজে কিন্তু গোলাপ শিশুদের শোভা নেই…।।

সুস্মিতা গোস্বামী

গল্পের অতুলনীয় ভাবনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও  বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- 
আধুনিক শিক্ষামূলক গল্প- অশ্লীল আসক্তি  

শিক্ষণীয় গল্প- জীবন অঙ্কুর 

আধুনিক শিক্ষণীয় গল্প- স্মার্ট ফোন 

ছাড়পত্রের সমস্ত আপডেট পাওয়ার জন্য যুক্ত হন- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

একটি সুন্দর বাংলা গল্প। বাস্তবতা নিয়ে একটি গল্প। bengali awesome real life story

Spread the love

Leave a Reply