সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো এক জেদি ছেলের গল্প, থাকছে আজ। ধীরে ধীরে কিভাবে তার ধ্বংসপ্রাপ্ত জীবন পুনরায় সঠিক রাস্তায় এল, সেটির প্রেক্ষাপটেই গল্পটি। বড় বাংলা গল্প

একটি জেদি ছেলের গল্পঃ- ‘অন্ধ স্নেহ’

-আমার এটাও চাই ।

-মানে? এতকিছু কেনার পর এটাও চাই! 

-হ্যাঁ হ্যাঁ চাই ।

-কিন্তু বেটা, এত কিছু…. 

-না না মম্, আমি কোনো কথা শুনব না, আমার ঐ পিয়ানো টাও চাই। প্লিজ ডিয়ার মম্। 

মালতী ওর বাবার সাথে দূর থেকে দেখছিল যে ওর বয়সের ঐ ছেলেটা ওর মায়ের কাছে এত কিছু দামী দামী খেলনা আবদার করার পরেও আবার আবদার করছে দামী ঐ পিয়ানো টা।

কিন্তু মালতী ওর বাবাকে দেখে, বাবা ওকে মাত্র একটা পুতুল কিনে দিয়েছে। বাবা যেন কেমন ধরণের। ওই ছেলেটার মা ওকে মেলা থেকে কত কি কিনে দিল, দিচ্ছে আর সে জায়গায় ওর বাবা, মাত্র একটা ছোট্ট পুতুল। মনটা খারাপ হয়ে যায় ছোট্ট বাচ্চা মালতীর। 

তবুও পুতুল টাকে নিয়ে খুশি থাকতে চেষ্টা করে সে। 

জেদি ছেলের গল্প edited

মেলা থেকে একগাদা খেলনা, দামী জিনিস কিনে সাহিল ওর মায়ের সাথে গাড়ি করে ফিরে আসে তবে একবার হলেও চোখ পড়ে মালতীর পুতুলটার দিকে।  

সাহিল কে? বিরাট বড়লোক ঘরের ছেলে। প্রাচীন কথায়, সে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো ছেলে। ব্যঙ্গাত্মক কথায়, নবাব পুত্তুর, লাটসাহেব এর ছেলে নয়তো রাজার ব্যাটা। আর আধুনিক ভাষায়, high profile এ belong করা, high status family র ছেলে। 

সে যখন যা চায় তার মা নয়তো বাবা তাকে এনে দেয়। একমাত্র ছেলের আবদার তারা কখনোই ফেলতে পারে না। ছেলের খুশিতেই তাদের আনন্দ। তাই ছেলে কখনো অভাব কি জানে না তা, “রক্ত জল” এই দুই শব্দের সাথে তার কোনো পরিচয়ই নেই।  

যাই হোক, বড়লোক পরিবারের বড়লোক ছেলের গড়ে ওঠার সময় অর্থাৎ ছোটবেলা থেকেই বড়লোক সংস্কৃতি তে গড়ে ওঠে। থাকে না জীবন যাপনে সংগ্রাম, থাকে না, না পাওয়া কাকে বলে, থাকে না অভাব কি এই সম্পর্কে ধারণা। আর তাই তার জীবনের ছবিটা একটা অন্যরকম  রঙ তুলিতে আঁকা হয়। 

পড়ুনঃ- ভালবাসার সূক্ষ্ম অনুভূতি 

যাই হোক, সাহিল তখন ক্লাস এইটের স্টুডেন্ট। স্কুলে গাড়ি করে যায় ও আসে। নিত্যদিন নিত্য নতুন ব্যাগ, নিত্য নতুন দামী কেডস্, বোতল ও সর্বোপরি দামী টিফিন। আর ক্লাসের বাকি ছেলেমেয়েদের চোখে খুব অদ্ভুত ভাবেই তাই সমীহের কারণ হয়ে উঠেছিল সাহিল। 

তবে সাহিলের ব্যাপার টা খুব ভালো লাগত।কারণ তার মা তাকে সবসময় বলে, লোয়ার মিডিল ক্লাসদের থেকে সবসময় দূরে থাকবে। কারণ ওরা তোমার expensive lifestyle দেখলেই হামলে পরবে, কারণ ভিখারীর জাত তো ভিখারীই হয়। ওদের ওই ঘামের গন্ধ ইস! জাস্ট অসহ্য। তুমি সবসময় নিজের স্টেটাস বজায় রাখবে কেমন, বেশি মেশার দরকার নেই কারোর সাথে। তোমার মতো যারা তাদের সাথেই মিশবে নাহলে এড়িয়ে যাবে। 

মায়ের শেখানো এই শিক্ষায় সাহিল এত বড় হয়েছে। 

তাই স্কুলে সে কোনো বন্ধু হোক বা না হোক তা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই এই শিশু বয়স থেকেই। 

নতুন বাংলা গল্প
বড় বাংলা গল্প

আস্তে আস্তে সাহিল পরিবারের কাছে পাওয়া ভুল শিক্ষায় বেড়ে ওঠে এবং একটা সময় পর সে হয়ে ওঠে চরম এক অহংকারী ছেলে। সে সম্মান করে না কাউকে, সবসময় এটা চাই, সেটা চাই আর না দিলেই সে কি সাংঘাতিক জেদ। 

অন্ধ স্নেহ তাকে উপহার হিসাবে দেয় এক অবাধ্য ও বিশৃঙ্খল জীবনযাপন।  

মানতে থাকে না নিজের মা, বাবাকেও। রাতবিরেতে নেশা করে বাড়ি ফেরে, ক্লাবে কাটায় ঘন্টার পর ঘন্টা। তার স্টেটাস এ থাকা ছেলেমেয়েদের পিছনে টাকা ওড়ায়, কারণ মা যে বলেছে সেটাই করা উচিত। 

প্রতি সপ্তাহে বিশাল অঙ্কের শপিং তো চাই চাই। এছাড়াও ঘুরতে যাওয়া। বিদেশ ভ্রমণ না হলে তো সাহিল কারোর সাথে কথাই বলবে না কারণ তাদের স্টেটাস এ কি শুধু রাজ্য বা নিজের দেশ ঘোরা মানায়, বিদেশে না গেলে, কি করে হবে!

পড়ুনঃ- টুকরো প্রেমের গল্প 

ফলে পড়াশোনা থেকে বহু দূরে চলে যেতে থাকে সাহিল। তার মাথায় শুধু ভোগ, বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। সে আস্তে আস্তে খারাপ সঙ্গে চলে যেতে থাকে এর জন্য। 

তার অহংকার, সবার সাথে খারাপ ব্যবহার, কাউকে মানুষ মনে না করা, সবসময় অসম্মান করা ও ইত্যাদি খারাপ কাজ তাকে একসময় খুব আভিজাত্য ভাব প্রদান করলেও একটা সময় পর  আস্তে আস্তে অনেক একা করে দেয়। 

সে হঠাৎ করে খেয়াল করে তার পরিবারের অঢেল সম্পত্তির নিভু নিভু অবস্থা। আর তার ফলে আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকে তার স্টেটাসে থাকা সেইসব বন্ধুগুলো কারণ তারাও টের পেয়েছে যে সাহিলের অবস্থাও আস্তে আস্তে লোয়ার মিডিল ক্লাসদের মতো হতে চলেছে। তাই তারাও সাহিলকে ঘৃণা করা শুরু করে। সাহিলের গায়ে দামী পারফিউম এর গন্ধ আর পায় না তারা, পরিবর্তে পায় সেই অসহ্য ঘামের গন্ধ। 

পড়ুনঃ- আমাদের ব্যর্থতার কারণ কি? 

সাহিল এরপর জেদ ধরে যে তার টাকা চাই। কিন্তু মা বা বাবা দুজনেই তাকে ঠাস করে চড় মারে আর বলে, কোনো টাকা হবে না। তোমার এই অসভ্য আবদারের কারণেই আমরা আজ পথে বসতে চলেছি। তোমাকে এবার শাসনে রাখতে হবে বুঝেছ সাহিল! 

এই শাসন তোমাদের আমার ছোটবেলা থাকাকালীন মনে হয়নি করা উচিত? এখন মনে হচ্ছে যখন আমার আর শুধরানোর অবকাশ টুকু নেই। আমি কিচ্ছু জানি না, আমার টাকা চাই ব্যস্। 

ক্রুদ্ধ মা তাকে ঘরে আটকে রেখে দিয়ে বলে, এবার দেখি তোমার ঐ আবদার তুমি কীভাবে বাড়াও। থাকো তুমি ঘরে আটকা। তোমাকে এখন ছাড়া হবে না। 

-সাহিল দরজা ধাক্কা মেরে বলতে থাকে, দরজা খোলো, খোলো বলছি। নাহলে আমি কিন্তু আত্মহত্যা করব। 

-যা খুশি করো, তবুও দরজা খোলা হবে না। 

-মা, দরজা খোলো বলছি! আমার কিন্তু খুব রাগ হচ্ছে। 

-মা, বাবা চলে যায় নিজেদের কাজে। আর সাহিল চিৎকার করতে থাকে অবাধ্য, অসভ্য, জেদী ছেলেদের মতো।

মা আর বাবা দুজনে বাড়ির গেট থেকে বেরোতে যাবে ঠিক তখনই দেখে সামনে তার ছেলের বয়সী একটি মেয়ে, আর তার হাতে মেলা থেকে কেনা একটা পুরোনো পুতুল ।

-কে তুমি ? এখানে কি করছ? সাহিলের মা আর বাবা দুজনেই প্রশ্ন করে ওঠে। 

জেদি ছেলের গল্প
জেদি ছেলের গল্প
<

-আমাকে আপনারা চিনবেন না তবে আপনাদের ছেলেকে কেন তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছেন আপনারা? ছোট থেকেই তো ধ্বংস করছেন ওকে, এখন যখন আপনাদের ভুলের বোঝা, অন্যায়ের বোঝার ফলস্বরুপ আপনাদের ছেলের এই অবস্থা তখন তার আত্মহত্যা হুমকি শোনার পরেও বলছেন, যা খুশি করতে! আপনারা কি বাবা মা নাকি সন্তানের ঘাতক! 

-হাও ডেয়ার ইউ! তুমি আমাদের বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাদেরকেই অপমান করছ! 

-কারণ আপনারা অপমানেরই যোগ্য। তাও তো অনেক কম বললাম, আপনাদের চরম ও কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। 

মেয়েটা একটু থেমে বলে, প্লিজ আপনারা আপনাদের ছেলেকে বন্ধ ঘর থেকে বের করুন, বন্ধ দরজা খুলে দিন। আর আমি ওর মনের উপর পড়া আস্তরণের দরজা খুলব। 

-মানে? 

-আমি যেটা বলছি সেটা করুন। নাহলে সত্যি সত্যি জেদী ছেলেটি জেদের বশে ভুল কিছু করে ফেলবে। প্লিজ হাতজোড় করছি। 

-বেশ। 

অনেকবার বলার পর তারা সাহিলকে মুক্ত করে। সাহিল পাগলের মতো করতে থাকে। তার চোখ লাল হয়ে গেছে, হিংস্র দেখতে লাগছে তাকে। 

ও মেয়েটার হাতের পুতুল টা দেখে বিস্ফারিত চোখে কি যেন মনে করতে থাকে কিন্তু মনে পরে না। মাথা ধরে বসে পরে। 

-সাহিলের মা আর বাবা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে, কি হয়েছে সাহিল! 

পড়ুনঃ- দুর্বলদের সফলতার গল্প 

-ওই পুতুল টা কোথায় যেন দেখেছি! কোথায়, কোথায়! 

-আমি বলি কোথায় দেখেছিলে। বলে মেয়েটা। 

-হ্যাঁ বলো। আমি জানতে চাই। 

-এই পুতুল টাই আমাকে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে আর তাই আমি একজন মানুষ হয়ে, মানুষ হিসেবে তোমাকেও মানুষ করতে এসেছি। 

সাহিল কিছু বুঝতে পারে না, বোঝে না তার মা, বাবাও। 

মেয়েটা বলতে শুরু করে, এই পুতুলটা ছোটবেলায় আমার বাবা আমাকে মেলা থেকে কিনে দিয়েছিল। আর আমি সেই সময় তোমাকে দেখি তোমার মা অনেক কিছু কিনে দিয়েছে। আমি তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম এটা ভেবে যে আমার বাবা আমাকে একদম ভালোবাসে না তাই কিছু কিনে দিতে পারে না আর তোমাকে দেখে ভাবছিলাম তোমার মা তোমাকে কত ভালোবাসে তাই কত কি কিনে দিচ্ছে। 

কিন্তু আজ আমি বুঝতে পারি, যে আমার বাবা যদি আমাকে তোমার মায়ের মতো ভালোবাসত তাহলে হয়ত আজ আমার দশা তোমার মতো হতো। কারণ তোমার মায়ের ওটা ভালোবাসা নয়, অন্ধ স্নেহ ছিল। 

এই পুতুলটা পাওয়া তে আমি ছোটবেলায় যে আক্ষেপ পেয়েছিলাম বাবা আমাকে ভালোবাসে না বলে কিছু দেয়না এইটা ভেবে, আজ মনে হয় ভাগ্যিস ঐ আক্ষেপটা হয়েছিল। তাই জেনেছি অভাব কি, তাই শিখেছি মানুষ একা কখনোই বাঁচতে পারে না, মানুষের সাথে মিশতে হয় কীভাবে কারণ গোটা জীবন টা ওই স্টেটাস এর উপর ভর করে চলে না। 

তাই বুঝেছি জীবনে আনন্দ ফুর্তি, ভোগ বিলাসিতা টাই সব নয়, জীবনটা আসলে সংগ্ৰাম। পরিশ্রম ও কষ্ট করে যে আনন্দ পাওয়া যায় তা কখনোই ঘরে বসে হাতের কাছে সবকিছু পাওয়াতে লাভ করা যায় না। 

new bengali story
new bengali story

এরপর সাহিলের বাবা, মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ছেলের জীবন টা অনেক সুন্দর করে ধ্বংস করেছেন কিন্তু প্লিজ আজ থেকে আর নয়। ছোট থেকে যা চেয়েছে তাই দিয়ে গেছেন, বুঝতেই দেননি বাস্তবটা আসলে কেমন। আপনার সন্তানকে “অভাব” শেখাননি, বরং নিজেদের অঢেল সম্পদের মধ্যে তার শিশুসত্ত্বা কে পুঁতে দিয়েছিলেন।

আপনি বাবা- এটি এম মেশিন না; আপনি মা- ঘষা প্রদীপের দৈত্য না যেটা চাইবেন তাই হাজির করবেন ছেলের হাতে আপনারা যখন এই পৃথিবীতে থাকবেন না তখন এই কঠিন পথ তাকে একা থাকতে হবে, তাই সবসময় স্টেটাস দেখিয়ে মানুষের থেকে আলাদা করে দিয়ে কার ক্ষতি করেছেন বুঝতে পারছেন! আপনার সন্তানকে শেখান সব কিছু প্রয়োজন না। কষ্টের মাধ্যমে অর্জিত জিনিসের মূল্যায়ন করতে শেখাননি, তাকে উড়তে দিয়েছেন কিন্তু  দৌড়ানো শেখাননি ।

জীবনের প্রতিটা দিন একভাবে চলে না। বসে বসে খেলে একদিন কুবেরের ধনও শেষের দরজায় কড়া নাড়বে। যেকোন পরিস্থিতিতে জয়লাভ করতে শেখান। জীবন ফুলের বিছানা নয় বরং কাঁটার রাস্তা। আমি জানি একদিনে এতবছরের সাহিল কে বদলানো সম্ভব নয় কিন্তু তবুও আমি চেষ্টা করবো ওকে ঠিক করার আর সাথে আপনারাও।

এরপর মেয়েটি সত্যি সত্যি ভালো করে দিয়েছিল সাহিলকে। 

মেয়েটি আর কেউ নয়, ছিল সেই ছোট্ট মালতী! 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও  বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
পড়ুনঃ- 
একটি শিক্ষণীয় গল্প- মানবিকতা 

জীবনে সুখী হওয়ার উপায় 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

একটি জেদি ছেলের গল্প। নতুন বড় বাংলা গল্প। 1 new bengali story

Spread the love

Leave a Reply