একটি নতুন হাসির ভূতের গল্প নিয়ে আজ আবারও চলে আসা। আশা করছি এই ফানি গল্পটি আপনার খুবই ভালো লাগবে। ভূত নিয়ে লেখা সম্পূর্ণ নতুন ধরণের এই হাসির গল্পটি সম্পর্কিত আপনার মতামত আমাদের অবশ্যই জানাবেন।

হাসির ভূতের গল্পঃ- ভূত সমাজের প্রেম

বেশ কিছুদিন ধরে মামদো ভূত খেয়াল করছে তার প্রেমিকা বাঁশ গাছের পেত্নী বাসিনী খুব রেগে আছে তার উপর। কিছু জানতে চাইলেও খেঁকিয়ে ওঠে তার উপর। ব্যাপার টা কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না প্রেমিক মহাশয় মামদো ভূতের। 

কত সুন্দর খিলখিল করে হাসত বাসিনী লম্বা আর সরু সরু ঠ্যাঙ ঝুলিয়ে। আর এখন! সবসময় কেমন যেন খেঁক খেঁক করে খেঁকি পিসিমার মতো, ভালো লাগে না একদম মামদো ভূত এর নিজের প্রেমিকাকে এইরকম ভাবে দেখতে। কিন্তু কি করা যায়!  

বন্ধুদের আড্ডা তে ক’দিন যোগ দিতে পারে নি সে এই ঝামেলার জন্য। আজ ভাবল সেখানে যাবে আর জানাবে সবটা। 

যা ভাবা সেইমতো কাজ। সে সব জানালো বন্ধুদের। বন্ধু মেছোভূত বলে, আচ্ছা ভাই তুই কি বাসিনী কে শুধু পচা আর কাঁচা মাছই খাওয়াস ?

হাসির ভূতের গল্প
হাসির ভূতের গল্প

তা ছাড়া আর কি খাওয়াবো, আজব কথা বলিস তো! বলে ওঠে মামদো। 

উহু! তোর বুদ্ধিটা আগাগোড়াই কম জানিস তো মামদো, আমি বলছি তুই কি শুধু পচা আর কাঁচা মাছই খাওয়াস নাকি মাঝে মাঝে  কাঁচা অক্টোপাসও …

অক্টোপাস! চমকে উঠে মামদো। কি বলছিস কি তুই , মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর, জেনে শুনে আমি ঐ চিনা অখাদ্য খাওয়াবো আমার প্রিয়া কে, মেরে তোর ঠ্যাঙ খুলে নেবো বলে দিলাম। 

 ঠ্যাঙা নামের এক ভূত আছে বন্ধু মহলে। ঠ্যাঙা নামটা বন্ধু কতৃক ই। কিন্তু তার ঠ্যাঙ যে খোঁড়া করেছে সে আর কেউ না তার গার্লফ্রেন্ড। সে এগিয়ে এসে বলে, মামদো তুই তো নতুন নতুন প্রেম করছিস তাই তুই জানিস না এখনকার পেত্নীদের কি চাহিদা! তার উপর ওদের মাথাটা খাচ্ছে সোশাল মিডিয়া। আগেকার দিনের পেত্নীরা বাঁশ গাছে ঠ্যাঙ ঝুলিয়ে বাঁশ ফেলে মানুষকে ভয় দেখাতো আর এখন ঠ্যাঙ ঝুলিয়ে মানুষদের দেখাদেখি কি রিলস্ ভিডিও বানায়।

এখনকার পেত্নীরা কাঁচা মাছ খায় না ভাই, ফিশফ্রাই অর্থাৎ ভাজা মাছ খায়। এই দেখ না তোরা সবাই যার জন্য আমাকে ঠ্যাঙা বলে ডাকতে পারিস, সে একদিন আমাকে এক থাপ্পড় মেরে বলে, এতদিন ধরে প্রেম করছ কই একটাও তো গোলাপ ফুল দিয়ে প্রোপোজ ডে তে প্রোপোজ করলে না! কীরকম আন রোমান্টিক প্রেমিক তুমি! 

হাসির ফানি গল্প
ফানি গল্প

আমি তো তাজ্জব, গোলাপ, প্রোপোজ ডে বলে ভূত সমাজে কিছু আছে নাকি! আমি বলতে গেলাম আর আমার ঠ্যাঙ ভেঙে তার ফোনটা দেখালো আর চিৎকার করে বলল, এই দেখো আজ প্রোপোজ ডে, কত সুন্দর একটা দিন বানিয়েছে মানুষ , মানুষরা কত সুন্দর তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য গোলাপ আনে আর কথা দেয় কখনো ছেড়ে চলে যাবে না, আর এই ভূত সমাজে আছে টা কি, শুধু পচা মাছ, কাঁচা মাছ, ঠ্যাঙ ঝুলিয়ে নেত্য করা আর মানুষকে ভয় দেখানো! হুঁ মুখে আগুন এই ভূত সমাজের প্রেমকে! আমি আর কি বলবো ভেবেই পেলাম না, সেই যে আমার ঠ্যাঙ ভেঙে চলে গেল আর আসেনি শুধু মানুষদের দেখাদেখি আমাকে লিখেছে মেসেজে আই ওয়ান্ট ব্রেক আপ, গুড বাই! 

মামদো সব চুপচাপ শোনে। উফ! তাদের প্রেমিকাদের উপর মানবীদের ওই সোশাল মিডিয়ার প্রভাবটা কতটাই না পড়েছে। তাদের ভূত সমাজে সুন্দর ছন্দবদ্ধতার মাঝে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে মানুষদের মিথ্যের জগত সোশাল মিডিয়ার মেকি অভিনয়গুলো। যেই অভিনয়গুলো আদতে সত্য মনে হলেও আসলে চরম মিথ্যে। কিন্তু তাদের প্রেমিকা পেত্নীরা তা বুঝতে না পেরে উল্টে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে আর ভূত প্রেমিকদের সাথে সম্পর্কের ইতি টানছে।

পড়ুনঃ- দুই বোনের উধাও রহস্য 

যবে থেকে ভূত সমাজে ফোন ঢুকেছে তবে থেকেই পেত্নীরা পাল্টে গেছে। স্বাভাবিক কারণ খাবার জোগাড় করতে ভূতদের এদিক সেদিক যেতে হয় কিন্তু পেত্নীরা গাছেই থাকে অথবা নিজেদের নির্দিষ্ট বাসস্থানে আর সময় কাটাতে ভূতেরা তাদের ফোন দিয়েছে কোন এক ভাঙা পুরোনো মোবাইলের দোকান থেকে, ব্যস্ সেদিন থেকেই নিজের পায়ে নিজেরা কুড়ুল মেরেছে ভূতেরা! আপশোষ করছে সবাই এখন!      

মামদো বলে , না বন্ধু এখন আপসোস করার সময় নয়, ভেবে দেখতে হবে। ভূত সমাজের নিজস্ব অস্তিত্ব আছে আর সেই অস্তিত্ব আমাদের কেই বাঁচাতে হবে। মানুষদের কোনো ছোঁয়া ভূত সমাজে আনা চলবে না। আর পেত্নীদেরকেও একটু জব্দ করতে হবে। চুরি চামারি করে মনুষ্য সমাজের যাবতীয় জিনিস দেখব ভূতসমাজ কতদিন সহ্য করতে পারে। আজ থেকেই শুরু হোক আমাদের মিশন, কি সবাই রাজি তো? 

পড়ুনঃ- শিক্ষামূলক অজানা তথ্য 

সবাই তার স্বরে ‘একমত’ বলে ওঠে। কিন্তু পরিকল্পনা টা কি? 

মামদো সবাইকে বলে, তোদের কাছে আমি আমার সমস্যা বলে তোরা আমাকে নিজেদের সমস্যা গুলো বলে যেভাবে মোটিভেট করলি সত্যিই ভাবা যায় না, তাই সবার সমস্যার সমাধান আমিই করব। প্রেমিকা যা চায় তাই দিয়ে দে, তারপর দেখ ও কতটা সহ্য করতে পারে। বিষে বিষে বিষক্ষয় যেমন হয় , তেমন সোশাল মিডিয়া দিয়েই সোশাল মিডিয়ার বিষ ক্ষয় করতে হবে। পরে সবাই জানাস কি হলো। 

‘ওকে দোস্ত ।’ 

মামদো বাসিনীর কাছে গেল। বাসিনী তাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মামদো তার পাশে গিয়ে বসে নরম সূরে বলে, এই দেখো প্রিয়তমা, আমি তোমার জন্য কি এনেছি! 

বাসিনী ফিরে দেখে মামদোর হাতে চকলেট। সে খুব আনন্দ সহকারে বলে, তুমি আমার জন্য মানুষদের মতো চকলেট এনেছ! 

হ্যাঁ প্রিয়া। এই নাও খাও। 

বাসিনী আনন্দ করে হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে খেতে যাবে তখন মামদো দুঃখ করে  বলে ওঠে, জানো আজ কি হয়েছে? 

-কি হয়েছে গো? 

-আজ দেখলাম মানুষরা আমাদের নিয়ে খুব উল্টো পাল্টা, অদ্ভুত কথা ছড়িয়েছে। 

কি অদ্ভুত কথা ছড়িয়েছে !

new bengali funny story
new bengali funny story
<

-ঐ যে ছড়িয়েছে যে ভূতেরা নাকি মানুষদের থেকে চকলেট চুরি করে খায়! 

-কি! আমাদের এত বড় অপমান করেছে! 

-হ্যাঁ গো, তারপর নানারকম কার্টুন বের করে দেখাচ্ছে, মানুষের হাতে ভূত মার খাচ্ছে। ভূতের খাবার মানুষ খেয়ে নিচ্ছে কিন্তু ভূত কিছুই করতে পারছে না উল্টোদিকে মানুষের হাতে উত্তম মধ্যম প্রহার খাচ্ছে, দাসবৃত্তি করছে! 

-কি বলছ কি এসব! 

-হ্যাঁ গো ঠিকই বলছি। আবার এও বলেছে, মানুষদের থেকে নাকি ভূতেরা নিজেদের ক্ষমতা শালী মনে করে তা ভূতেরা নিজের বুদ্ধিতে আবিষ্কার না করে মানুষদের আবিষ্কার করা ফোন, বিভিন্ন অ্যাপস এর সুবিধা নির্লজ্জের মতো ব্যবহার করছে কেন? একেবারে অকালকুষ্মান্ডের জাত এই ভূত! কত অপমান জনক কথা বার্তা ওরা আমাদের নিয়ে লিখছে আর ছড়িয়ে দিচ্ছে মানুষের সমাজে। 

পড়ুনঃ- হতাশা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প 

বাসিনী রেগে গিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় চকলেট টা আর বলে, আমার দরকার নেই মানুষের দেখে এসব খাওয়ার। আমি বুঝতে পারছি আমি সবাইকে বারণ করব। তুমি ঠিকই বলেছো, সত্যিই আমি এটা ভেবে দেখিনি। দিয়ে আসো তুমি ঐ হতচ্ছাড়া ফোন টা কে, আমার দরকার নেই। 

-তা আমি না থাকলে তোমার সময় কাটবে কি করে? ঢং করে বলে মামদো। 

-কেন ফোন আসার আগে কি সময় কাটত না আমাদের, নাটক কোরো না বেশি, দূর করে দাও মানুষের জিনিস! 

আরো লঙ্কা দেওয়ার জন্য মামদো আরো বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে যায়, হুম, ওরা এটাও বলছিল যে ওদের কটা ভাঙা ফোন আমরা চুরি করেছি চিন্তা করে দেখো ন্যূনতম সম্মান নেই আমাদের। এত অহংকার, এত দাম্ভিক!

-তুমি চুপ করো আমার আর ভালো লাগছে না শুনতে। আমি সব বান্ধবীদের বলে আসি। 

hasir bhuter golpo
hasir bhuter golpo

তুড়ুক করে হাওয়ার মতো মিলিয়ে যায় বাসিনী। আর মামদো হাসে মনে মনে। 

এরপর বাসিনী সমস্ত পেত্নীদের সব ঘটনা খুলে বলে আর এও বলে, আমরা সত্যিই তো ওদের থেকে আলাদা তাহলে কেন ওদের জিনিস আমরা অনুসরণ করব? ওরা কি আমাদের মতো পচা মাছ খায় যে আমরা ওদের মতো চকলেট খাবো, ফিশফ্রাই খাবো? ওরা কি আমাদের মতো বাঁশ গাছে ঠ্যাঙ ঝুলিয়ে বসে থাকে যে আমরা ওদের দেখাদেখি রিলস্ করব? ওরা তো শেওড়া গাছ, ঘেঁটু ফুল কিচ্ছু চেনে না, তাহলে ওদের দেখাদেখি আমরা কেন গোলাপ ধরব? না না ওরা আলাদা, আমরা আলাদা। আমাদের আলাদা স্বাধীনতা, সত্ত্বা আছে। এ অপমান কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না, সবাই মানুষদের সমস্ত জিনিস দূর করে দাও। আমাদের ভূত সমাজই ভালো আর ভূত সমাজের প্রেমও। 

গোটা ভূত সমাজ থেকে মানুষদের সোশাল মিডিয়ার ছায়া সরে যায়। মামদো কে ওর বন্ধুরা কাঁধে তুলে নাচতে থাকে। তবে মামদো চুপিচুপি সবাইকে বলে, শোন, এটা সবাই গোপনীয় রাখিস কিন্তু, ওরা যেন কিছুতেই জানতে না পারে যে ভূত সমাজের প্রেম কে বাঁচাতে ভূত সমাজের প্রেমিকরা সেই ঘুরে ফিরে মানুষকে অনুসরণ করেই রীতিমত সোশাল মিডিয়ার হ্যাকার এর মতো কাজ করেছে!   

সুস্মিতা গোস্বামী

হাস্যরসের পরিবেশনায়-
সুস্মিতার লেখা আরও কয়েকটি অসাধারণ গল্প- 

রহস্যময় ভূতের গল্প- যূথিকা টেলারস 

সেরা মজার গল্প 

কয়েকটি বাছাই করা অনুগল্প 
সমস্ত আপডেট এক ক্লিকেই পেতে হতে আজই যুক্ত হন- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

“হাসির ভূতের গল্প। hasir bhuter golpo। ফানি গল্প। 1 new bengali funny story”

Spread the love

Leave a Reply