Spread the love

স্কুল জীবনের দুষ্টুমি গুলি একজন ছাত্রের জীবনে থেকে যাওয়া এক আলাদাই অধ্যায়। এই স্কুল জীবনের মজার ঘটনা গুলির কিছু বিচ্ছিন্ন স্মৃতি গেঁথে রয়ে যায় মনে। স্কুল লাইফে প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই এইরকম দু একটা ঘটনা ঘটে। আমার জীবনেও হয়েছে এইরকম,  তাই আমি সেইটাই লিখতে বসলাম। অসম্ভব একটা দমফাটা হাসির মুহূর্ত। কথা না বাড়িয়ে শুরু করি এবার।

স্কুল জীবনের দুষ্টুমি (গন্ধ চক্রান্ত)ঃ-

প্রতিদিনের মত সেদিনও প্রথম ক্লাস বাংলা শুরু হলো। নাম ডাকা থেকে বই বের করা, পড়া শুরু সবকিছুই নিয়মমাফিক হচ্ছে। কিন্তু এই ছন্দবদ্ধতার মাঝে হঠাৎ বাধা পড়ে। প্রথমে স্টুডেন্টরা বুঝতে পেয়ে হাসিহাসি শুরু করে আর বলে, ম্যাম টের পেলেও কিছু বলবেন না! তবে যেই হারে বাড়ছে মনে হয় না আর ম্যাম চুপ করে থাকতে পারবেন বলে! 

পড়াতে পড়তে স্টুডেন্টদের অমনোযোগীতা দেখে ম্যাম বকাবকি করেন। কিন্তু তাঁর নাক যেন বারবার কুঁচকে যাচ্ছে, ভেবেই রেখেছেন ব্যাপারটা এড়িয়ে যাবেন, চেষ্টাও করছেন তাই, তবুও তাঁর নাক চাইছে কোনো রুমাল বা কাপড়, শাড়ির আঁচল টা হলেও মন্দ নয়! কিন্তু সব স্টুডেন্টদের মাঝে এটা করাও খুব অসম্মানজনক। কি করা যায়? 

কষ্ট করে কোনোরকমে নাক চেপে চেপে পড়াতে হচ্ছে। কিন্তু এভাবে কতক্ষণ, এভাবে তো আর পারা যাচ্ছে না। এদিকে স্টুডেন্টদের দেখো, দিব্যি হাসাহাসি করছে এতবার বকা খেয়েও। ম্যাম ভালো মতোই বুঝতে পারছেন তাদের হাসাহাসির কারণ, তবুও না বোঝার ভান করে পড়িয়ে যাচ্ছেন, বকা দিচ্ছেন, পড়া ধরছেন। 

না আর পারা যাচ্ছে না। ম্যাম প্রচন্ড রকমের রেগে গিয়ে ধমকে বলেই ফেললেন অবশেষে, তোমরা কি সবাই সকালে পেট পরিষ্কার করো না? এত বাজে গন্ধ কীসের? কে করেছ ক্লাসের মধ্যে এসব অসভ্যতা?  

দমফাটা হাসি পাচ্ছে সকলের কিন্তু ক্রুদ্ধ ম্যাম এর উপর হাসি চলে না। সবাই চুপ। 

– কি হলো আমি একটা প্রশ্ন করেছি, উত্তর দাও। কে এসব অসভ্যতা করছ ক্লাসে? তোমরা কি সবাই চাও আমি বেরিয়ে যাই ক্লাস থেকে, তাহলে বলো আমি বেরিয়ে যাচ্ছি!

স্কুল জীবনের মজার ঘটনা
স্কুল জীবনের মজার ঘটনা

-“না ম্যাম।” সকলে বলে ওঠে একসাথে বাইরে থেকে কিন্তু মনে মনে বলে এর ঠিক উল্টোটা।  

– চুপ করে থাকো সকলে। তাহলে ক্লাস চলাকালীন এসব কুকীর্তি কেন?

-কি করেছি ম্যাম আমরা? 

স্টুডেন্টদের বদমাশি দেখে আরো রেগে যান ম্যাম। বলেন, তোমরা ভালোমতোই জানো, আমি কিন্তু প্রত্যেককে ক্লাস থেকে বের করে দেবো বলে দিলাম। তোমাদের এই বাজে কাজের জন্য আমার কতটা টাইম নষ্ট হলো, পড়ানোই হলো না তোমাদের এইসব বাজে কাজের জন্য!

স্টুডেন্টরাও নাছোড়বান্দা। তারা ম্যাম এর মুখে শুনবেই শুনবে বাজে কাজটা কি! 

তারাও বলে বারবার, কি করেছি ম্যাম আমরা, কী বাজে কাজের কথা বলছেন? 

এদিকে ম্যাম রেগে আগুন। তিনি চলে যান ক্লাস শেষ হওয়ার আগেই। স্টুডেন্টরা হৈ হল্লা করতে থাকে আর জয়ধ্বনি দিতে থাকে গাঁদাল পাতার উদ্ভট আর বিচ্ছিরি গন্ধের। 

একটা ম্যাম কে ভাগানো গেছে, এবার দ্বিতীয় ক্লাস অঙ্ক। না, এই ক্লাসে স্টুডেন্টদের অপেক্ষা করতে হয়নি বেশিক্ষণ। ম্যাম বলেই ফেললেন, কে গ্যাস দিয়েছ? 

স্টুডেন্টদের হাসি দেখে কে! 

<

-হাসির কি আছে, বলো কে গ্যাস দিয়েছ?  

এসব কি অসভ্যের মতো কাজ, এসব ক্লাসে বসে কেউ করে? আমি তো ক্লাসে এত সাংঘাতিক গন্ধে টিকতেই পারছি না। ইস! ছিঃ ছিঃ, তোমরা এত…..! 

স্টুডেন্টরা এত মজায় হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। অঙ্ক ম্যাডাম বলেই দিলেন। তাহলে কি উনিও ওনার স্কুলে এইসব করতেন, না হলে জানলেন কি করে? পূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জন নিশ্চয়ই!

bengali funny story হাসির ঘটনা
bengali funny story হাসির ঘটনা

বকাঝকার মাঝে ক্লাস, বলা ভালো গোটা দিনটা শেষ হয়। স্টুডেন্টদেরও অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে এত সাংঘাতিক গন্ধে থাকতে তবুও ক্লাস থেকে স্যার ম্যাডামদের ভাগানোর জন্য তারা সব কিছু করতে পারে। 

পরদিন বাংলা টিচার থ্রি লেয়ার মাস্ক পরে আসেন যা দেখে স্টুডেন্টদের আরোই হাসি পেয়ে যায়। কিন্তু এ কি, আজ তো কেউ গাঁদাল পাতা আনেনি, তাহলে এই বাজে গন্ধ কোথা থেকে আসছে? ইস! কি সাংঘাতিক! যেন একমাস যায়নি কোষ্টসাফ করতে। ইস! মা গো! 

এটা নিশ্চয়ই কোনো স্টুডেন্ট এর কাজ! যে এই কাজ করেছে তাকে চিহ্নিত করা না গেলেও সকলে তাকে গালাগালি, শাপ শাপান্ত করতে থাকে। শয়তান, তুই বাথরুমে আসা যাওয়া করতে করতে মরবি, ওলাওtৎটা হবে তোর। জানোয়ার, ক্লাসে বসে বসে গ্যাস ছাড়া হচ্ছে। গতকাল গাঁদাল পাতাতে শান্তি হয়নি এখনো নিজের পেছন দিয়েও বার করার দরকার পড়েছে। শয়তান, জানোয়ার, ইতর! ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কথা বলে স্টুডেন্টরা গজগজ করতে করতে। 

পঁয়ত্রিশ মিনিট পর ক্লাস শেষ হয়ে যায়। সবাই ছেঁকে ধরে প্রতিটা বেঞ্চ। একে অপরকে ভালো করে জরিপ করে। কে করেছে সারা ক্লাস টাকে গন্ধ? শুরু হয় নানা ছড়া, নানা মন্ত্রে গোনাগুনি করে আততায়ীকে খুঁজে বের করা। 

স্টুডেন্টদের মধ্যে যে লিডার গোছের সে ঘোষণা করে, ভাইসব, সত্যি করে বল ভাই, কে গ্যাস দিয়েছিস? দেখ আজকেরটা কিন্তু অত্যন্ত সাংঘাতিক গন্ধের ছিল। গাঁদাল পাতাও লজ্জা পেয়ে মুখ ঢাকবে। বল ভাই কে করেছিস? 

সবাই চুপ। কারোর কি এত সৎ সাহস আছে যে এই প্রশ্নের উত্তর দেবে? শত পুরষ্কারের অফার থাকলেও কেউ দেবে না এর উত্তর!

কিছুক্ষণ শান্তি। ঐ বাজে মারণ গন্ধটা আপাতত নেই। উঁহু! আজ দিনটা খুব বিশ্রী যাচ্ছে। টিফিন টাইমে কেউ ঠিক করে টিফিন খেতেও পারছে না। কি মুশকিল! 

আবার ক্লাস শুরু হলো। সবাই খুব মন দিয়ে ক্লাসের পড়া শুনছে। হঠাৎ করে আস্তে আস্তে যেন একটা জিন ভূতের মতো গন্ধ ফিকে থেকে গাঢ় হতে শুরু করে। 

পড়ুনঃ- সেরা শিক্ষণীয় গল্প 

না আর নয়। স্যার উঠে পড়লেন স্কেল নিয়ে। আর ধমক দিয়ে বললেন, যদি ক্লাসে এসব অসভ্যতা করো, তাহলে আমি কিন্তু ধরে ধরে প্রত্যেককে এই স্কেল দিয়ে পেটাবো। বাঁদরামো করার জায়গা পাওনি তাই না!

সবাই আমতা আমতা করে বলে, স্যার আমরা কিচ্ছু জানি না, আমরা এর আগের ক্লাস গুলো তেও পেয়েছি। আবার এখনো আসছে। আমরা সত্যিই কিছু জানি না স্যার। 

সবাই চুপ করে থাকো একদম। অসভ্য বাঁদর ছেলেমেয়ে সব! ধমক দিয়ে বলেন স্যার। 

সবার মুখ কাঁচুমাচু । কি যে হচ্ছে কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। গতকাল পরিকল্পনা মাফিক কাজ হয়েছিল আর সেটা গোটা ক্লাসে সবাই জানত, কিন্তু আজকেরটা কি হচ্ছে এসব?

স্যারের ধমকে কারোর মন নেই, সবাই ভাবছে রহস্য সমাধান করতেই হবে। ক্লাস কোনোরকমে শেষ হতেই সবাই রেগে মেগে যে যার ব্যাগ সার্চ করে। কি ব্যাপার জানতেই হবে। 

কিন্তু অনেক খুঁজেও কেউ কারোর ব্যাগ থেকে কিছু পায় না। খুব রাগ হচ্ছে সবার। রাগটা গন্ধের জন্য নয়, গন্ধের উৎস জানতে না পারার জন্য। 

স্কুল জীবনের দুষ্টুমি
স্কুল জীবনের দুষ্টুমি হাসির ঘটনা
<

স্কুল লাইফের এইরকম দুই একটা ঘটনা থাকে প্রত্যেকের জীবনেই কেউ স্বীকার করে, কেউ বা লজ্জায় করে না। এইরকম সিরিয়াস সময়ে আবার টিচার বকা দিচ্ছেন, মুখে দমফাটা হাসি কিন্তু হাসতে পারছে না কেউ, ব্যাগ থেকে টুক্ করে মাস্ক বের করে হি হি, হু হু করে আস্তে আস্তে হাসি কিন্তু আজকের ব্যাপারে কেউই কিছু বুঝতে পারছে না। এটা রীতিমত চক্রান্ত।  

শেষ ক্লাসের ঘন্টা পর ছুটির কিছুক্ষণ আগে রহস্যের অদ্ভুত মীমাংসা হয়। যে সবচেয়ে বেশি ক্রুদ্ধ ছিল আজকের এই গন্ধ চক্রান্ত নিয়ে, সেইই হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেলে, কি রে, আজ কেমন হলো আমার করা গন্ধ চক্রান্তটা?

প্রেরিকা- সুস্মিতা গোস্বামী

এই হাসির গল্পটি পূর্ণতা পেয়েছে যার কলমে-

আপনার লেখা গল্প আমাদের পাঠান- charpatrablog@gmail.com এই মেইল অ্যাড্রেসে।

সুস্মিতার লেখা আরও কয়েকটি জনপ্রিয় লেখা- 

স্কুল লাইফের প্রেম- কষ্টের ভালোবাসার গল্প 

অবহেলা থেকে ভালোবাসা 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক গ্রুপ- গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- CharpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২) 

“স্কুল জীবনের দুষ্টুমি। স্কুল জীবনের মজার ঘটনা। হাসির ঘটনা। bengali funny story.”


Spread the love

Leave a Reply

অনুগ্রহ করে অ্যাড ব্লকার টি ডিসেবল করে আসুন।