একটি সেরা ভুতের গল্প থাকছে আজ। নদী পাড়ে ভেসে উঠেছে এক মাথা কাটা লাশ। আর তাই নিয়েই এই রহস্যময় ভুতের গল্পটি।

সেরা ভুতের গল্প- মাথা কাটা লাশঃ-

প্রতিদিনের মত গ্রামের কামারুল ভাই ফজরের নামাজ সেরে নদীর ঘাঁটে জলকেলি করতে যায়, সেখান থেকে এক বিকট চিৎকার উঠে আসে। হঠাৎ করেই নদীর জলে কিছু একটা শব্দ হয়। নদী ঘেঁষা এই গ্রামের মানুষ সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। কামারুল ভাইয়ের চেঁচামেচি শুনতেই সবাই সেই দিকে দৌড় দিল।

সেখানে গিয়ে দেখা গেল এক বীভৎস দৃশ্য। একটি বস্তা নদীর ধারের সিঁড়িতে লেগে আছে আর তা থেকে নির্গত হওয়া রক্তে নদীর পাড় পুরো টকটকে লাল হয়ে আছে। সকাল সকাল এই ধরণের দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না গ্রামবাসীরা। গুঞ্জন উঠে বস্তার ভেতরে কি আছে!

কেউ বলল বস্তায় হয়ত ভাগাড়ের কোনো মৃত প্রাণী আছে। আবার কোনো মুরুব্বী বলল কেউ হয়ত মজা করার জন্য বস্তায় তুলো ভড়ে দিয়ে তাতে আলতা মিশিয়ে দিয়েছে। এরই মাঝে উপস্থিত হয় অসীম বাবুর। পাড়ার সবাই তাকে চেনে। গরীবদের সাহায্য করাই তার নেশা।

সেরা ভুতের গল্প
সেরা ভুতের গল্প

অসীম বাবুর কথা মত, গ্রামের কয়েকজন ছোকরা সেই বস্তাটাকে টেনে পাড়ে তুলল। পুলিশে খবর দেওয়া হল। বস্তার মুখ খুলতেই এই বীভৎস পচা গন্ধে গোটা এলাকা ম ম করে উঠল। বস্তার ভেতরের দৃশ্য আরও ভয়ানক। একজন মানুষের দেহ রয়েছে তাতে। বেশ কয়েকটি টুকরো করে দেহটিকে বস্তায় বন্দী করে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন মহিলা সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পরে গেলেন।

কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ নয়। প্রশ্ন দাঁড়াল লাশটা কার সেটা নিয়ে। কারণ লাশটিকে শনাক্ত করনের মূল উপায় তার মুখ মণ্ডল সেটিই অনুপস্থিত। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন, মাথা কাঁটা লাশ। তবে শরীরের গঠন দেখে এটি নিশ্চিত যে, সেই লাশটি একজন মেয়ের। গোটা গ্রামে খবর রটিয়ে দেওয়া হল, কিন্তু না কারও বাড়ি থেকেও কেউ উধাও হয়নি।

পুলিশ দেহ টাকে নিয়ে বেশি টানাটানি করতে চাইল না, তারা গ্রামবাসীদের দেহটার যে কোনো একটা বিহিত করতে বলে চলে গেলেন। কিন্তু এখানেও সমস্যা। গ্রামের একদল মানুষ বলছে দেহটাকে কবর দেওয়া হোক। আবার আরেক দলের মতে সেটাকে নদীতে আবার ভাসিয়ে দিলেই হল।

অসীম বাবু ভোটাভোটির মাধ্যমে সিধান্ত নিলেন যে, দেহটাকে কবর দেওয়া হবে। সবার কথা মত দেহটাকে কবর দেওয়া হল।

কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়, আসল ঘটনা এখান থেকেই শুরু।

উক্ত ঘটনার পর কেটে গেছে দিন পনেরো, শোনা গেল রাতে নদীর পাড় দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন নাকি একটি মেয়েকে পাড়ে বসে কাঁদতে শুনেছে। আর অবাক করার মত ব্যাপার হল, সেই মেয়েটির মাথা অনুপস্থিত।

গ্রামে রটে গেল, সেই মেয়েটা ভূত হয়ে গেছে। রাতের বেলা তো দূরের কথা দিনের বেলাতেও কেউ আর সেই পাড়ে যেতে সাহস করে না। কিন্তু অসীম বাবুর মনটা কেমন যেন খটকা লাগছে! একটা মাথা কাঁটা লাশ এল কোথা থেকে। কিন্তু তিনি কিছুতেই এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পেলেন না।

গ্রাম বাসীদের দেখা নদীর পাড়ে সেই কাঁদতে থাকা মেয়েটার ঘটনা অসীম বাবুর কাছে কল্পনা মনে হতে লাগল। তিনি ঠিক করলেন, তিনি নিজের চোখে এই ঘটনা দেখবেন।

তিনি নদীর পাড়ের কাছেই একটি বাড়িতে আশ্রয় নিলেন। রাত তখন প্রায় ৩ টে। অর্থাৎ ডেভিল আওয়ার শুরু হয়ে গেছে। শোনা যায় যে, এই সময়টিতে নাকি ঘড়ের বাইরে বের হতে নেই। এই সময় নানা আত্মা, অদৃষ্ট শক্তিরা সক্রিয় হয়ে উঠে। এই সময় তারা নাকি ঘুরে বেড়ায়।

কাটা লাশ edited
মাথা কাটা লাশ

এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই অসীম বাবুর কানে ঝুমকার আওয়াজ ভেসে এল। এই ঝুমকার আওয়াজ তার চেনা চেনা ঠেকছে! কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অসীম বাবু শুনতে পেলেন পাড়ে কেউ যেন কাঁদছে। জানলাটা কিছুটা আড়াল করে দেখতেই, তার মাথার মধ্যে যেন একটা তরঙ্গ বয়ে গেল।

গ্রামবাসীদের কথাই ঠিক, সেই মাথা কাটা লাশটা কবর থেকে উঠে এসেছে, নদীর পাড়ের বসার জায়গাটায় সে বসে অবিরাম কেঁদেই যাচ্ছে। আশ্চর্য ‘মাথা নেই যার তার মাথাব্যথা!’ লাশটার তো মাথাটাই নেই তাহলে কান্নার শব্দ আসছে কেমন করে!

পড়ের দিন সকালে ভেসে এল আরেক দুঃসংবাদ। গ্রামের নিতাই মাতব্বরকে কে যেন নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে। গ্রামে চলছে টা কি, যেদিন থেকে সেই মাথা কাটা লাশ টা পাওয়া গেছে সেদিন থেকে গ্রামে একটা না একটা অঘটন ঘটেই চলছে।

নিতাই মাতব্বরের লাশটা আরও ভয়ানক। পেটের নাড়ী সব বেড়িয়ে আছে। কে বা কারা যেন, তার পেট চিড়ে সব নাড়ী ভুঁড়ি বেড় করে দিয়েছে। গোটা উঠান রক্ত ময়। কিন্তু পুলিশও এই রহস্যের সমাধান করতে পারল না।

সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই আবার শোনা গেল, বিষ্টু ডিলারকে ঠিক একই ভাবে কে যেন হত্যা করেছে।

অসীম বাবু বুঝলেন এই সবই সেই মাথা কাটা লাশটার কাজ হতে পারে। সেইদিনই রাত প্রায় ২.৩০ টার সময় তিনি নদীর পাড়ের বিশাল নিম গাছটায় গিয়ে বসলেন। এভাবেই কখন সময় গড়িয়েছে তার কিছুই মনে নেই।

তন্দ্রা কাটল কান্নার শব্দে। আবার সেই মরা কান্না কাঁদছে মূণ্ডূ হীন লাশটা। এবার অসীম বাবুর থেকে লাশটা বেশি দূরে নেই, সেই লাশটার গলা কাটা বীভৎস অংশটা খুব কাছে থেকে দেখতেই অসীম বাবু অজ্ঞান হয়ে গাছ থেকে পড়ে গেলেন। চোখ দুটি বন্ধ হয়ে আসার আগে তিনি দেখলেন সেই মাথা কাটা লাশটা তার দিকেই টলমল করে এগিয়ে আসছে।

এরপর যখন তার জ্ঞান ফিরল, তখন সে দেখল মাথা কাটা লাশটা তার পাশেই বসে আছে। ক্ষণিকের জন্য অসীম বাবুর মনে হয়েছিল সেই হয়ত আর আস্ত নেই। সে দেখল তার নাড়ী ভুঁড়ি সব ঠিক আছে। মাথা কাটা লাশটার গলাটার দিকে চোখ যেতেই সে আবার অজ্ঞান হয়ে যেতে লাগল, কিন্তু এবার সে নিজেকে সামলে নিল।

সে কিছু বলতে যাবে, এমন সময় মাথা কাটা লাশটা তার পাশ থেকে উঠে গিয়ে নদীর পাড় থেকে তার কাটা মুণ্ডুটা হাতে ধরে নিয়ে অসীম বাবুর পাশে এসে দাঁড়াল। অসীম বাবুর বারবার মূর্ছা যাবার জোগাড় হলেও তিনি নিজেকে সামলে নিয়েছেন। হাজার হলেও এই মাথা কাটা লাশের ভূতটা তার কোনো ক্ষতি করবে না।

পড়ুনঃ- ষ্টেশনের সেই ভূতুড়ে ট্যাক্সি 

অসীম কাঁপা গলায় বলে উঠল- তু তু তুমি কে…!

লাশটার হাতে ধরে রাখা কাটা মুণ্ডুটা বলতে শুরু করল- “দাদা আমি মণী। তুমি ভালো মানুষ বলেই তোমার কোনো ক্ষতি আমি করি নি। জানো দাদা, গত পূর্ণিমায় আমি গোয়াল পাড়ায় নাচ দেখাতে গিয়েছিলাম, ফেরার পথে নিতাই মাতব্বর আর বিষ্টু ডিলার আমার পথ আটকে ধরে।

আমার দল ততক্ষণে আমাকে ছেড়ে অনেক আগে বেড়িয়ে গেছে। আমি ওদের মতলব বুঝতে পেরে, ওদের শাসিয়ে দিই – “আমার সাথে কোনো কিছু খারাপ করার চেষ্টা করবেন না, আপনাদের কাছে হাত জোড় করছি।“ জানো দাদা আমি ওদের হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করতে থাকি। কিন্তু পিশাচ দুটি আমার কথা মানে নি।

আমাকে ধরে নিয়ে তারা ওই ব্রিজের নীচে যায়, তারপর আমার সাথে যা হওয়ার সেটাই হল। তাদের কাজ যখন শেষে হল, আমার অবস্থা তখন খুবই খারাপ উঠে বসার শক্তি টুকুও হারিয়েছি। কিন্তু পিশাচ দুটি এখানেই থামল না। আমি বেঁচে থাকলে মুখ খুলব, তাই আমার অবচেতন শরীরটাকে টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভড়ে এই নদীর জলে ভাসিয়ে দেয়।

সেই পিশাচ দুটিকে আমি শেষ করেছি, এবার আমার আত্মা শান্তি পাবে। তুমি ভালো মানুষ তাই তোমাকে সব কথা বলে গেলুম। এতে আমার জ্বলন্ত হৃদয় শান্ত হবে।“

অসীম এতক্ষণ সেই মাথা কাটা লাশটার সব কথা অত্যন্ত ভয় মিশ্রিত আশঙ্কায় শুনছিল। এতক্ষণে রাত প্রায় শেষ হতে চলেছে।

মণি, বাবা মা হারা এক যুবতী মেয়ে। সে একটি যাত্রা গানের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। 

রহস্যময় ভুতের গল্প
রহস্যময় ভুতের গল্প
<

কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই মাথা কাটা লাশটা কিভাবে গভীর কবর থেকে বেড়িয়ে এল, আর যেদিন লাশটা নদীর ধারে ভেসে উঠেছিল, সেই দিনই প্রচুর গন্ধ ছড়াচ্ছিল, অথচ সে প্রতিশোধ নেওয়া পর্যন্ত সে আশ্চর্যজনকভাবে ঠিক ছিল।

পড়ের দিন অসীম বাবু, সেই মাথা কাটা লাশটাকে সদ্গতির ব্যবস্থা করলেন। আর এরপর সেই গ্রামের মানুষের নজরে আর কখনো সেই মাথা কাটা লাশটা আসে নি। অসীম বাবু মণির সাথে ঘটে যাওয়া সেই ভয়ানক ঘটনাটি গ্রামের কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করেন নি।

তিনি বর্তমানে কিছু কাজে শহরে গেছেন, তার রুমে একটি ডায়রিতে এই ঘটনাটির বর্ণনা তিনি লিখে রেখেছেন। আর সেই ডায়রিটি থেকেই তোমাদের এই গোটা গল্পটি জানালাম। 

আপনার গল্প আমাদের মেল করুন- charpatrablog@gmail.com -এ 

গল্পের কপিরাইট charpatra.com এর অ্যাডমিন কর্তৃক সংরক্ষিত। গল্পটির রিমেক বা ভিডিও বানানো বা পুনরায় পাবলিশ করা নিয়ম বিরুদ্ধ।অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ছাড়পত্র উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে।

ছাড়পত্রের তরফ থেকে প্রস্তাবিত গল্পঃ- 

পোড়ো বাড়ির সেই রক্ত খেকো ভূতুড়ে আয়না 

ছোটদের ভুতের গল্প- দিদিমণি 
এক ক্লিকেই আপডেট পেতে যুক্ত হন- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২) 
বি.দ্র- WhatsApp Group টি শুধুমাত্র লেখক এবং পাঠকদের জন্য 
Spread the love

Leave a Reply