আজ সুন্দর একটি ছোট গল্প নিয়ে আসা হয়েছে। এই গল্পটিতে প্রিয় পেয়ারা গাছ নিয়ে বর্তমানের তুলির টানে ছোটবেলার স্মৃতি, দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
সুন্দর একটি ছোট গল্পঃ- ‘পেয়ারা গাছ’
টানা প্রায় পাঁচ বছর পর আজকে বাড়ি ফিরেছি। মাঝে দু-মাস করোনার জন্য কোম্পানীতে আটকা পড়ে গেছিলাম। বাড়িতে আসতেই আমাকে পেয়ে মা বাবা দিদা দেখলাম বেজায় খুশি হয়েছে। বাড়ির ছেলে এতদিন পর ফিরল, স্বাভাবিক ব্যাপার খুশি তো হবারই কথা! তার থেকে বড়ো কথা হল বাড়ির মধ্যে আমি একাই ছেলে, সেই কারনে হয়তো ভালোবাসার ভাঁড়টা আমার জন্য সবসময় ভরাট থাকে।
যাক গে এসব কথা। এই পাঁচ বছরের মধ্যে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে, তার ভেতরে কয়েকটা জিনিস বলছি তোমাদের। বাড়ির সামনে একটা মাটির রাস্তা ছিল, বৃষ্টির সময় দারুণ নাজেহাল হতাম, এখন দেখচ্ছি ঢালাই হয়েছে, দেখে বেশ ভালো লাগল।
রাস্তা থেকে বাড়ি ঢোকার মুখে বেশ পুরোনো একটা গোয়াল ঘর ছিলো, কিন্তু তাতে কোন গরু ছিলো না, আমি বাইরে কাজ করতে যাওয়ার দুবছর আগে মা রেগে সব গরুকে চিরতরে বিদায় দিয়ে দেয়েছে। এখন দেখছি গোয়াল ঘরটা আর নেই, তার পরিবর্তে সেখানে কিছু শাকসবজির চারাগাছ লাগিয়েছে। টালির চালটা এখন অ্যাজবেষ্টর চালে পরিনত হয়েছে। ভালোই হয়েছে বৃষ্টির দিনে বাড়ির ভেতরে টিপিং টিপিং জল পড়া আটকাতে গিয়ে, পুরো রাতটা কেটে যেতো।
উঠানের ঠিক সামনে পশ্চিম দিকে একটা সরু লম্বাটে সুপুরি গাছ ছিলো, সেটাও উধাও। সুপুরি গাছের কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে গেল, আমার সেই প্রিয় পেয়ারা গাছটার কথা, কেমন আছে পেয়ারা গাছ টা?
ঘরের উত্তর-পূর্ব ইশান কোনায় কলা বাগানের পাশে মাঝারি আকৃতির পাছটা ছিল, উচ্চতা এই ধরো একটা ইলেকট্রিক খুঁটির বরাবর। পাতাগুলো ডালপালা গুলোকে এমন ভাবে আচ্ছাদিত করে রাখতো, দূর থেকে দেখলে অনেকটা ছাতার মতো দেখাতো। আমার শখের পেয়ারা গাছটা ছিলো বারোমাসি। পেয়েরা গুলো কাঁচা অবস্থায় বেশ মিষ্টি খেতে লাগে, সেইজন্য গ্রামের সকলের ললুপ দৃষ্টি গাছ টার দিকে সবসময় থাকতো।
পড়ুনঃ- একটি মর্মস্পর্শী গল্প- নিয়তি
বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে যেতেই দেখলাম, গাছটা তার জায়গায় নেই। বাবাকে জিজ্ঞাসা করাতে বলল, কালবৈশাখীর ঝড়ে গাছটা ভেঙে পড়ে গেছিলো, তাই বাধ্য হয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। এই কথা শুনে মনটা বিষন্নতায় ভরে গেলো। সত্যি বলতে কি এই পেয়ারা গাছটা আপনাদের কাছে একটা সামান্য গাছ বলে গন্য হলেও আমার কাছে ও ছিলো আমার ছোটবেলাকার বন্ধু।
কতো স্মৃতি জড়িয়ে ছিলো ওর আর আমার। দিদার মুখে শুনেছিলাম রথের মেলা থেকে পঞ্চাশ পয়সা দিয়ে গাছটা কে কিনে এনে দাদু লাগিয়ে ছিল, অবশ্য আমি তখনও এই পৃথিবীতে আসিনি। সকাল দুপুর বাঁদরের মতো গাছটার উপর ঝুলে ঝুলে কতোই না পেয়ারা খেয়েছি। এই পেয়েরা খাওয়া নিয়ে মায়ের কাছে কি ভাবে যে বকুনি খেতাম তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই।
একটা কথা এখনও মনে আছে, আমি তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়তাম, একদিন কি করে স্কুল কামাই করবো, সেইটা নিয়ে পেয়ারা গাছটার তলায় গালে হাত দিয়ে বসে ভাবছিলাম কি করা যায়! সঙ্গে সঙ্গে গাছটা থেকে একটা পেয়েরা এসে আমার কাছে পড়লো। তুলে খেলাম ঠিক তার আধাঘণ্টা পর পেটব্যথা শুরু হলো। ব্যাস ওই দিন আর স্কুল যাওয়া হলো না। তখন না বুঝতে পারলেও কেনো জানিনা এখন মনে হয় গাছটা কি সত্যি আমার অনুভূতি গুলোকে বুঝতে পারত!
আমি যখন খুশি হতাম তখন দেখতাম গাছটার ডালাপালা গুলোও যেনো নড়াচড়া করে উঠতো। যখন আমি দুঃখ পেতাম তখন ওর পাতা গুলো কেমন যেনো শুকিয়ে যেতো। যখন আমার বয়স বারো বছর তখন রবিবার বিকেল হলে দাদু নাতি গাছের বড়ো বড়ো পেয়ারা ভেঙে হাটে বিক্রি করতে নিয়ে যেতাম। সেখান থেকে যে টাকা আসতো তার অর্ধেক টাকায় দাদু আমায় কোনো কোনো দিন খেলনা আবার কোনো কোনো দিন জামা প্যান্ট কিনে দিত।
পড়ুনঃ- দিদিকে নিয়ে গল্প
আমি এতোটাই পেয়ারা ভক্ত ছিলাম যে সারাদিনে খাবারের মেনুতে পেয়ারা রাখতে হবে, তা না হলে খেতে বসতাম না। ছোটা ভিমের ক্ষেত্রে লাড্ডু যেমন তার প্রধান অস্ত্র, তা খেলে সে যেমন সর্বশক্তিমান হয়ে যেতো, ঠিক তেমনি পেয়ারাও হচ্ছে আমার প্রধান অস্ত্র।
মনে আছে একদিন এই পেয়ারা ভাগাভাগি নিয়ে টিউশানে পাঁচুর সঙ্গে সে কি মারপিট, উফফ… শেষপর্যন্ত জামা ছেঁড়াছেঁড়িও হয়ে গেছিলো ভাবা যায়, হা হা… ।
কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত একদিন হার্টের সমস্যার জন্য দাদু এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করল। কিন্তু তার লাগানো সেই পেয়ারা গাছটা রয়ে গেলো। দাদু মারা যাবার দু-তিন বছর পর কেনো জানি না পেয়ারা গাছটা ফল দেওয়া কমিয়ে দিয়েছিলো। যেগুলো হতো তার মধ্যে প্রায় সব ফল গুলোতে পোকা লেগে যেতো, অনেক বার ঔষুধ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মানুষের সঙ্গে সঙ্গে ওরও বয়স হয়ে গেছিলো তাই হয়তো ফল দেওয়া কম করে দিয়েছিল।
যাইহোক পুরোনো দিনে গাছটার সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর কথা মনের ভেতর ভেতরে বিচরণ করতে করতে কাটা পেয়েরা গাছটার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে একটা জিনিস আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল, গাছটার কাটা অংশের পাশাপাশি বেশ কয়েকটা ছোট ছোট পেয়ারা গাছ আবার নতুন করে জন্ম নিয়েছে।
একটা দুটো ছোট ছোট চারা গাছ, বাদুড় অথবা মানুষের দারা অর্ধেক খেয়ে ফেলে রেখে যাওয়া অংশ থেকে বেরিয়ে উঁকি মারছে। দেখে মনের ভেতর বিষণ্ণতার আচ্ছাদনটা কেটে গিয়ে খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেল। ওই ছোট ছোট পেয়ারা চারার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হয়েছিলো, বছরের পর বছর যুগের পর যুগ গাছও মানুষের মতো প্রতিনিয়ত নিজের অস্তিত্ব বোঝায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে, সে তার বীজ থেকেই হোক কিংবা কলমের মাধ্যমেই হোক।
গল্পের পূর্ণতা যার কলমে-
গল্প পাঠাতে পারেন- সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে অথবা আপনার সুন্দর লেখাটি টেক্সট ফরম্যাটে মেল করুন charpatrablog@gmail.com -এ
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- ব্যর্থদের সফলতার গল্প বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
সুন্দর একটি ছোট গল্প। ছোটবেলার স্মৃতি নিয়ে গল্প। গাছ নিয়ে গল্প
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।