সিঙ্গেল লাইফ বেস্ট লাইফ, না থাকে কাউকে হারানোর ভয়, না থাকে ঝুরি ঝুরি মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ভাবনা।
সিঙ্গেল লাইফ বেস্ট লাইফ গল্পঃ- ‘সিঙ্গেলত্বেই অমরত্ব’
পার্কে একটা দোলনায় বসে একা একা চিপস খাচ্ছিল ছটফটে মেয়ে কনক আর হা করে দেখছিল দূরে ছ’টা গাছের নীচে থাকা ছয় জোড়া couple দের।
মাথায় ঘুরছে একটা প্রশ্ন, এরা এসব, মানে প্রেম করে কি পায়!
যতদূর মনে পরছে, গতবছর ঠিক এই ছেলেগুলোর মধ্যে সব ছেলে গুলো কে দেখলেও আজ কেমন জানি কয়েকটার মুখ পাল্টে গেছে, মেয়েদের ক্ষেত্রেও তাই।
তার মানে গতবছরের ঐ বাবু বা সোনা বদলে গেছে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই!
“ওয়াও!” আপন মনে বলে ওঠে কনক।
কাপলদের মধ্যে ছেলেদের বক্তব্য শোনে কনক। “সোনা আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না গো, আমি তোমাকে নিজের থেকেও অনেক বেশী ভালোবাসি, তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে চলে যেও না গো।”
আর সোনাদের উত্তর, “না বাবু জান, আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে পারব না। আমি সাত জন্ম নয় পুরো সত্তর কি তার থেকেও বহু বহু কোটি জন্ম তোমার সাথে থাকব। ”
ফিক করে হেসে ওঠে কনক। মেয়েটার চোখ পরে কনকের হাসির উপর। মেয়েটা বলে ওঠে, “তুমি হাসছ কেন শুনি?”
-“না আপনাদের কথা শুনে।”
-“তুমি কি জানো অন্য কারোর কথা এভাবে শোনা কত বড় অসভ্যতা আর তুমি তার উপর আবার হাসছ!”
-“আমি তো অসভ্যই, আমি তো সিঙ্গেল, তোমাদের মতো কাপল নই ।”
-“তো যাও না গিয়ে প্রেম করো, এখানে কেন এসেছ!”
-“না তোমাদের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম তো তাই। আর প্রেম করতে বলছ, ও বাবা থাক, প্রেমে আমার বড় অ্যালার্জি আছে, কারণ প্রেম মানেই কোনো গ্যারান্টি নেই তার উপর আবার টক্সিন থাকলে তো হয়েই গেল। আর তাছাড়া এই প্রেমে আমি বছর বছর এত ঢপের চপ খাওয়াতে পারব না। তাই প্রেম টেমে আমি নেই, ভালোবাসার দলে আছি।”
-“হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ঢপের চপ ?” ছেলেটা এবার বলে ওঠে।
পড়ুনঃ- একটি শিক্ষণীয় ঘটনা
-“এই যে এইমাত্র আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে বললেন না যে উনি নাকি আপনার সাথে সাত জন্ম নয় পুরো সত্তর কি তার থেকেও বহু বহু কোটি জন্ম থাকবে, তো ঐ ডায়লগ টা আমি গতবছর এই দিদির মুখেই আরেকটি দাদাকে বলতে শুনেছিলাম তাই আর কি সিউর হতে এলাম ইনি সেই দিদির ভক্ত নাকি। তারপর দেখি ভক্ত নয়, স্বয়ং দিদিই হাজির। বলি এত ঝুরি ঝুরি মিথ্যে কথা পেটের মধ্যে রাখো কি করে!”
ছেলেটা মেয়েটার দিকে তাকাতেই মেয়েটা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে ওঠে, “আরে বাবু তুমি আমাকে ঐ ডেঁপো মেয়েটার জন্য সন্দেহ করছ। তুমি জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি। আর তাছাড়া সিঙ্গেলদের কাজ ই হলো কাপলদের মধ্যে আগুন লাগানো। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না বাবু।”
কনক নাচতে নাচতে চলে গেল পরের কাপলদের মধ্যে। সেখানে আবার একটু ইউনিক স্টাইল, সাজান স্টাইল!
প্রেমিক শায়রি শোনাচ্ছে, ওমা গো টুরু লাভ!
কনক মনে মনে ভাবে থাক ছেড়ে দিই এদের। করুক গে এসব প্রেম পিড়িতি। আপাতত আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে তাই কনক একলাই ঘুরছে। চতুর্দিকে শুধু জুটির মেলা। কনক ফোন করে ওর বান্ধবীদের।
-কীরে আজ আসবি তো আড্ডা দিতে?
-না রে আজ হবে না।
-কেন?
-আসলে আজ….
-কি?
-আরে, তুই জানিস না?
-ভণিতা না করে সোজাসুজি বল।
-আরে আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে।
-উফফ! রাখ তুই ফোন, রাখ, রাখ আসতে হবে না দূর হ।
-আরে কনক শোন।
-কোনো কথা আর শুনব না, যা তোরা।
ফোন টা রেখে মনে মনে কনক গজগজ করে, যতসব আদিখ্যেতা। বছর বছর ক্যালেন্ডার এর মতো জুটি বদলে যাচ্ছে যেখানে, সেখানে আবার ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন! যতসব লোক দেখানো আড়ম্বর। এই প্রেম পীড়িতির জন্য বন্ধুত্ব গুলোও মার খাচ্ছে। রোসো রোসো, প্রেমে ছ্যাঁকা খাও তারপর বুঝবে বন্ধুত্ব আসলে কি! দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না কেউ, দাঁত পড়ে গেলে তখন বোঝা যায়, তোদেরও হয়েছে সেই দশা !
কনক সাইকেল নিয়ে একাই বেরোয়। ওহ! চারিদিকে শুধু এই জুটি, সেই জুটি- কতদিনের গ্যারান্টি কে জানে!
প্রেমে বড় অ্যালার্জি আছে কনকের। বাপরে, সম্পর্ক শুরুর দিকে কত খোঁজ, কত কথা, যেন শেষই হচ্ছে না। দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে, রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে, খাওয়া নেই, দাওয়া নেই, ঘুম নেই কিচ্ছু নেই শুধু আছে ওই মিনিটে মিনিটে খবর নেওয়া, বাবু খাইসো, বাবু কি করসো, বাবু ঘুমাইসো, বাবু বাবু বাবু, জীবনটাই পুরো কাবু।
এখানেই শেষ নয়, আরো টুইস্ট আছে।
প্রতিমুহূর্তে ফোন চেক করা, মেসেজ দেওয়া, মেসেজ এর রিপ্লাই করা, মন খারাপ শোনা, একে অপরকে কোনো আগমার্ক বা আই এস আই ছাড়াই ঝুরি ঝুরি প্রতিশ্রুতি দেওয়া, ঘন্টার পর ঘন্টা ভ্যাজভ্যাজ করা , রাত জেগে কথা বলা।
পড়ুনঃ- চালাক শিয়ালের গপ্পো
সবসময় চিন্তা, চাপ মাথায় নেওয়া। ঝগড়া বা রাগ হলে মানিয়ে নেওয়া, একটু পজেসিভ বা জেলাস না হলে কি প্রেম হয়, তাই ওটা হতে গিয়ে শেষপর্যন্ত ঐ কারণেই প্রেম শেষ হয়ে যায়। আবার মেয়েদের তো আলাদাই ডিম্যান্ড , কিছু বলবে না কিন্তু বুঝে যেতে হবে সব, মানে প্রেমিককে রীতিমত একজন মাইন্ড রিডার নয়তো জ্যোতিষী কিছু একটা হতে হবেই হবে। মাইন্ড রিডার হলে মেয়েটার মন বুঝে গেলে রক্ষে আর যদি তা না হয় তাহলে নিজের কপালে ঠিক কতটা দুঃখ আছে তার জন্য জ্যোতিষী অবশ্যই হতে হবে।
টানা কয়েকমাস নাটুকে প্রেম চলার পর আসে প্রেমের নাটুকে বিদায় , যার নাম ব্রেকাপ, ছেলেরা মদ খায়, হাত কাটে আর মেয়েরা চোখ লাল করে ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। যে যত বেশি জড়ায় সম্পর্কে সে তত সুন্দর শৈল্পিক উপায়ে শেষ হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ দিব্যি নতুন প্রেম খুঁজে লাইফে বিন্দাস!
বুকটা ধড়াস করে ওঠে কনকের এত কিছু ভাবলে। উফ, সিঙ্গেল থাকাই ভালো বাবা, নো চাপ, নো টেনশন, জাস্ট চিল। আর সিঙ্গেলদের নিয়ে যেসব কাপলরা মজা করে তাদের প্রেম চটকে দেওয়ার বিজনেস তো চলছেই সমান ভাবে।
আই লাভ ইউ মাই কুইন, মাই ভ্যালেন্টাইন ইন মাই হোল লাইফ ! একটা ছেলে একটা মেয়েকে বলে গোলাপ এর তোড়া দিয়ে। আর কনক হচ্ছে দর্শক। কুইন তাও আবার সারাজীবন! ব্যাপার টা একটু বাড়াবাড়ি! মনে মনে হাসে কনক।
যদি সত্যি সত্যি রাণী করে থাকত তাহলে এভাবে ঘটা করে বলতে হতো না, যত্তসব ঢঙ!
কেউ একজন কনক কে বলেছিল, ” কিছু সময় একটা মানুষ ভালবাসিনা বলেও ভালোবেসে থেকে যাওয়ার বাহানা খোঁজে আর কেও ভালোবাসি বলেও অদ্ভুত ভাবে হারিয়ে যায়! ভালোবাসার আগেই ওরা ভালোবাসি বলাটাকেই গুরুত্ব দেয়, আসল ভালোবাসা বোঝার আগেই ওরা সেই ভালোবাসা থেকে মুখ ফিরিয়ে ও নেয়! আমি ৬০ বছরের দাম্পত্য জীবনেও ভালোবাসি না বলে থেকে যেতে দেখেছি ৬ মাসে love anniversary পালন করেও তাদের আলাদা হয়ে যেতে দেখেছি! চাইলে একটু মানিয়ে নিয়ে থেকে যাওয়াই যায়, শুধু একটু ভালোবাসা পেলে মানুষ আর কিই বা চায়!”
কিন্তু আজকের এই চাকচিক্যময় দুনিয়ায় শুধু প্রেমটাই আছে, ভালোবাসা নেই।
কনক শিখে গেছে সিঙ্গেলত্বেই অমরত্ব। নিজেকে ভালোবাসাতেই সবকিছু আছে। যদি ভালোবাসি বলতেই হয় তাহলে নিজেকেই বলবে আর যদি অপ্রকাশিত ভাবে ভালবাসতে হয় সেটাও সেই নিজেকেই বাসবে।
কারণ এখন একে অপরের হৃদয় বেঁধে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েও যদি নিজের ভালো দেখে তাহলে কি দরকার অমন ভাবে ভালোবাসার, তার চেয়ে নিজের মধ্যে থেকেই না হয় নিজের কথা ভাবা যাক।
ভালোবাসা এমন একটা সম্পদ যেখানে সত্যি সত্যি কোনো কষ্ট থাকা উচিত নয়, সত্যি সত্যি কান্না থাকা উচিত নয় কারণ ভালোবাসা মানে ভালো একটা বাসা বা বাড়ি। বাস্তবে কেউ যেখানে শারীরিক ভাবে ভালো বাড়িতে থাকলে কেউ কষ্টে থাকে না তাহলে সেই জায়গায় মানসিক ভাবে ভালো বাড়িতে থাকলে কষ্টে থাকা থাকে?
আসলে এখনকার সময়ে ভালোবাসার সংজ্ঞাটাই বিষাক্ত হয়ে গেছে। ভালোবাসা নিজেও লজ্জা পায় যারা ভালোবাসি বলে তাদের কাছে মুখ দেখাতে!
পড়ুনঃ- বাস্তব জীবনের কয়েকটি ছোট ছোট শিক্ষণীয় গল্প
যাই হোক বাবা, এত গূঢ় কথা ভেবে কাজ নেই। সিঙ্গেল থাকা নিয়ে যারা দুঃখ প্রকাশ করে তাদের মতো বোকা পৃথিবীতে আর কেউ হতেই পারে না।
আরে, কাউকে ভালোবাসলে তার আগে তো নিজেকে ভালোবাসতে, নিজেকে আগলে রাখা শিখতে হবে, শিখতে হবে নিজের যত্ন করা।
জোর করে হাত কেটে তাতে নাম লিখে ভালোবাসা হয় না, গ্লাস এর পর গ্লাস মদ খেয়ে ভালোবাসা হয় না, গোলাপ ফুল বা আংটি দিলেই বা মাসে মাসে উপহার দিলেই ভালোবাসা হয় না।
বরং পৃথিবীতে এত মানুষ থাকতেও হৃদয়ে মাত্র একজনের নামই, আপনা থেকে লেখা টাকেই বলে ভালোবাসা। ভালো থাকার নয়, ভালো রাখার যে আস্বাদন, সেটা অনুভব করাটাই ভালোবাসা। খুব দামী কোনো উপহার নয় বা এটা সেটা মনে রেখে, বিরাট ঘটা করে বিরাট দামী দামী উপহার না দিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই পাগলামী মিশ্রিত আইসক্রিম খাওয়ানো বা ফুচকা বা হয়ত একটা গোলাপ, যার দামটা হয়ত অনেক কম কিন্তু ভালবাসা টা পৃথিবীর কোনো দাম দিয়ে মাপাই সম্ভব নয়, সেটাই তো ভালোবাসা।
আর যাই হোক, ভালোবাসার প্রকৃত সংজ্ঞা কাপলদের চেয়ে সিঙ্গেলরা খুব বেশিই অনুভব করে ও সঠিক ভাবে অনুভব করে। কারণ সবার আগে যে নিজেকে ভালোবাসার মাধ্যমে শিখতে হয় কীভাবে সামনের ও পরে কাছের মানুষ টিকে ভালোবাসতে হয়।
আর তা জানলে তো কষ্ট পেতেই হবে।
নিজেকে ভালোবাসতে গিয়ে তো ঝুরি ঝুরি প্রতিশ্রুতি দিতে হয় না কিন্তু কি সুন্দর ঠিক আগলে রাখা যায়। হ্যাঁ এটা ঠিক সিঙ্গেলত্বে এমন অনেক বিশৃঙ্খলা থাকে যেগুলো কাপলত্বে থাকে না। তবে সিঙ্গেলত্বে পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে ছেড়ে চলে যাওয়া থাকে না, কারণ ভালোবাসা মানে তো ভালোবাসাই, সেখানে ছেড়ে চলে যাওয়া থাকবে কেন শুনি!!
তাই আগে শিখে ও অভ্যাস করে নাও নিজেকে ভালোবাসার মাধ্যমে তারপর না হয় অপরকে ভালোবেসো। তার কারণ এই টক্সিক রিলেশনশিপে এই পদ্ধতি অবলম্বন ছাড়া পা দিলে, দুইদিনের “বাবু খাইসো” টা “বাবু ব্লক করসো” তে গিয়ে দাঁড়াবে!
না না বাবা, এসব ভাবলেই মুশকিল। সিঙ্গেল থাকলে তো জিন্দা লাশ হতে হবে না, দিব্যি বিন্দাস লাইফ। যখন সময় হবে তখন মনমাফিক ঠিক মনপলাশ ফুটবে কিন্তু এখন একটাই মন্ত্র, “সিঙ্গেলত্বেই অমরত্ব! “
গল্পের রূপকাঠিতে –
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- স্কুল লাইফের প্রেম- দেখা আর হল কই! মেয়েদের জীবন নিয়ে গল্প- স্পর্শ !
ছাড়পত্র এর সাথী হয়ে উঠুন-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
সিঙ্গেল লাইফ বেস্ট লাইফ গল্প। নিজেকে ভালবাসার গল্প। 1 new bengali single life best life story
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।