সত্যি ভূতের গল্প। ভূতের সত্য ঘটনাঃ-

আমার বন্ধু সুরজ শিলিগুড়িতে একটি ব্যাংকে কাজ করে। আমরা একই বয়সী হলেও, সে অনেক আগেই বিবাহ করে নিয়েছিল। আমার এখনও পড়াশোনা শেষ হয়নি, কিন্তু তার বিয়ের প্রায় চার বছর হতে চলল, তার একটি সুন্দর ফুটফুটে ছোট্ট বাচ্চাও আছে। বন্ধু আমার অনেক এগিয়ে গেছে তাই না বলেন!

যাই হোক আসল গল্পে আসি, আমার এই বন্ধু পূজা-অর্চনাতে খুব একটা বিশ্বাস করেনা। তবে রাস্তায় মন্দির বা মসজিদ দেখলে আর কয়েকটা মানুষের মত, সেও মাথা নত করে। সাধারণত সে, প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার ডিউটি করেই বাড়িতে ফেরে, তবে মাঝে মধ্যে যেদিন ব্যাংকে ভিড় বেশি থাকে, অথবা মিটিং থাকে, সেদিন তার বেজায় দেড়ি হয়ে যায়। কি আর করবে সে, অনেক কষ্টে ব্যাংকের চাকরিটা জোগাড় করেছে সে। তবুও বেসরকারি ব্যাংক তাই খাটুনিটাও একটু বেশি।

এদিকে সে আবার একজন ATM মেকানিকও, তার ব্যাংকের কোনো ATM খারাপ হলে, সেইই সেটি সারিয়ে তোলে, তবে এর জন্য অবশ্য তার মাইনের সাথে বাড়তি কিছু টাকাও যুক্ত হয়ে যায়।

এরকমই একদিন, ব্যাংকে সার্ভার সমস্যা থাকায় সে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছিল। প্রতিদিনের মত, খাওয়া-দাওয়া সেড়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে, তখন রাত প্রায় ১.০০ টা, হঠাৎ তার মোবাইলটা বেজে উঠে। মোবাইল হাঁতে নিয়েই সে দেখে তার অফিসের বসের ফোন। বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে, বৈশাখ মাস কালবৈশাখীর দাপটে গোটা এলাকা থমথমে। ঝড়ের প্রকোপ এত বেশি যে, ঘড়ে থাকা স্বত্যেও বসের কথাটাও ঠিক মত শুনতে পাড়ছে না সুরজ। শুধু এই টুকু শুনতে পাড়ল যে- “ব্যাংকের পড়ের গলিতে থাকা ATM টি কাজ করছে না, তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখে আসও।“

সত্যি ভূতের গল্প ভূতের সত্য ঘটনা
সত্যি ভূতের গল্প ভূতের সত্য ঘটনা

সুরজ কিছু বলার আগেই লাইনটা খট করে কেটে যায়। এই ঝড়-হাওয়া মাথায় নিয়েই তাকে যেতে হবে ATM ঠিক করতে, না হলে বস আবার রাগ করবেন। আবার বিশেষ করে, পড়ের সপ্তাহে তার প্রমোশনের ব্যাপারটা নিয়েও কথা হবে। তাই সে ঠিক করে, তাকে কালবৈশাখীর দাপট মাথায় নিয়েই সেখানে যেতে হবে। স্ত্রীর বারণ না শুনেই, সে বর্ষাতিটি গায়ে চাপিয়ে, রওনা দেয় সেখানে।

সেখানে সে গিয়ে দেখে, এত ঝড়ের মধ্যেও কে যেন ATM এর ভিতরে ঢুকে ATM ব্যবহার করার ব্যর্থ প্রয়াস চালাচ্ছে। বাইরে অবশ্য সিকিউরিটি গার্ড ছিল। সুরজ কাছে যেতেই সিকিউরিটি বলল- “স্যার বারংবার বাঁধা দেওয়া স্বত্যেও ওই মেয়েটি ATM বুথে গেছে, আমি তাকে ATM খারাপ আছে বলার পড়েও সে বাইরে ফিরছে না।“

এরপর, সুরজ ভিতরে গিয়ে দেখল, একটি মেয়ে ছন্নছাড়া চুল, ভেজা শরীর, এই ঝড়ে টাকার জন্য ছুটে এসেছে সে। মেয়েটিকে দেখতেই, সে যেন একটু ভড়কে গেল। এরকম বেশ সে আগে কখনো দেখেনি। চারিদিকে কারেন্ট না থাকলেও, ATM এর ভিতর আলো জ্বলছে, ব্যাংকের পাওয়ার সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে। সুরজ মেয়েটিকে বলল- “তুমি একটু বাইরে গিয়ে অপেক্ষা কর, আমি মেশিন ঠিক করে তোমায় ডাকব।“ মেয়েটি কিছু না বলে, রাগান্বিত দৃষ্টিতে সুরজের মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে বাইরে চলে গেল।

প্রায় আধা-ঘণ্টা পড়, যখন মেশিন ঠিক হয়ে গেল, তখন সে মেয়েটিকে ডাকার জন্য ঘুরতেই,পিছনের দৃশ্য দেখে, তার অজ্ঞান হবার ভঙ্গি হল, তার মাথা ঘুরতে লাগল, একি এ কি দৃশ্য দেখছে সে! মেয়েটি রাস্তার ঝড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, হাঁতে রয়েছে সিকিউরিটির ছিন্ন মস্তিষ্ক। আর সেই অর্ধ-কাঁটা গলা দিয়ে ফোটা ফোটা রক্ত, বৃষ্টির জলের সাথে মিশে যাচ্ছে। সে আরও অবাক হল এটা দেখে যে- সিকিউরিটির দেহ চেয়ারেই বসে রয়েছে। আর সেই মুণ্ডহীন দেহের গলা দিয়ে ফোয়ারার মত রক্ত, ছিটকে পড়ছে রাস্তার ড্রেনের মত বয়ে যাওয়া জলটাতে। মেয়েটার চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফুরকি বেড়িয়ে আসছে।

তার সামনে যে দৃশ্য সে দেখছে, তা দেখে সুরজের হার্টবিট বেড়ে যেতে লাগল। তার মনে হচ্ছে সে এখনই অজ্ঞান হয়ে যাবে। কিন্তু হঠাৎই ATM মেশিনের ডেস্কে রাখা তার ফোনটা বেজে উঠল। কাঁপা হাঁতে সে ফোনটা তুলল। তার বসের ফোন ছিল, সুরজ কাঁপা গলায় জবাব দিল- “কাজ হয়ে গেছে।“ এরপর বসের ফোন কাটতেই, যেই না সুরজ আবার পিছনে ঘুরে রাস্তায় হাঁতে সিকিউরিটির মাথা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকানোর চেষ্টা করল তার মাথা ঘোরা শুরু হয়ে গেল, কারণ এবার সব আগের মতই ছিল।     

মেয়টা ঠিক আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে। আর সিকিউরিটি তার চেয়ারেই বসে রয়েছে। তাহলে মাত্র কিছুক্ষণ আগে যে ভয়ানক দৃশ্য সে দেখল, সেটি কি?

সেটি কি তার মনের ভ্রম, নাকি অন্য কিছু! এবার সে ATM এর লকারটি ঠিক করে, বাইরে এসে মেয়েটিকে ভিতরে যাওয়ার জন্য বলে। তার কেমন যেন সবকিছু গোলমাল মনে হচ্ছে। এই মেয়েটার চুল যে ছড়ানো ছিল সেটা তার খুব মনে আছে, কিন্তু কিছু মুহূর্তেই তার চুল এমন বাঁধনো গোছানো হল কি করে, মেয়েটার কাছে তো কোনো ব্যাগও নেই, তার কাছে সবকিছুই ঘুমের ঘোর মনে হল।

ভয়ানক ভূতের কাহিনী vuter golpo
ভয়ানক ভূতের কাহিনী vuter golpo

এরপর সে বাড়ি ফিরার জন্য তার বাইকের কাছে গেল, বাইক স্টার্ট দিয়েই সে আরেকবার পিছন ফিরে মেয়েটির দিকে তাকালো, এবারে সে রীতিমত মাথা ঘুরে পড়েই যাচ্ছিল, কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপা হাত-পা নিয়ে সে বাইক সজোরে চালিয়ে দেয়। সে দেখেছিল আবার ঠিক আগের মত দৃশ্য। অর্থাৎ, মেয়েটি আবার হাঁতে সিকিউরিটির কাঁটা মুণ্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর এবার রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।

পড়ুনঃ- ভূতের বশে তনু- নতুন ভয়ানক ভুতের গল্প।

সে সজোরে বাইক চালিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। চেনা পথটাও কেমন যেন, অচেনা মনে হচ্ছে। আশেপাশের গাছ গুলিও কেমন যেন ভূতুড়ে মনে হচ্ছে। হঠাৎ তার খেয়াল হল, বাইকের পিছনে কেউ যেন বাইক টেনে রাখার চেষ্টা করছে। পিছনে ঘুরে দেখার মত সাহস সুরজের ছিল না। হঠাৎ একটা প্রকাণ্ড শেওড়া গাছের নীচে এসে তার বাইকের স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেল। অনেক চেষ্টা করেও সে স্টার্ট করতে পাড়ছে না। সুরজ কিছুই বুঝছিল না যে, আদতে তার সাথে এই সব কি হচ্ছে, আর কিই বা সে দেখছে!

ইতিমধ্যে সে দেখল, তার বাইকের ফিউয়েল শেষ, অন্তত স্পীডোমিটারের কাঁটা তাইই জানান দিচ্ছে। কিন্তু আজই তো সে পাঁচ লিটার ফিউয়েল ভরেছে, তিনদিনের ফিউয়েল মাত্র কয়েক ঘণ্টায় শেষ হল কিভাবে! স্পীডোমিটার থেকে চোখ সড়াতেই তার মনে হল, বাইক একটু ভাঁড়ি ভাঁড়ি লাগছে, যেন মনে হচ্ছে বাইকের পিছনে কেউ বসে আছে। সে আবার স্পীডোমিটারের দিকে দেখল। আশ্চর্য, এবারে একদম আগের মতই ফিউয়েল আছে!

‘না ব্যাপারটা কিছুতেই ভালো ঠেকছে না তার। হঠাৎ তার চোখ গেল, শ্যাওড়া গাছটার বিশাল মগ ডালের দিকে। সেখানে যেন, কারও পা ঝুলছে। সে একটু ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করল, সর্বনাশ এটাতো সেই মেয়েটা। এ এখানে কি ভাবে এল। মুহূর্তের মধ্যে মেয়েটা সড়সড়িয়ে গাছের নীচে এসে দাঁড়ালো। দুই হাঁতে দুইটি কাঁটা মাথা। ঝরঝর করে তাজা রক্ত তা থেকে পড়ে বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। মেয়েটার মুখে বিকট হাঁসি। 

দেখতে দেখতে সে মেয়েটা সুরজের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। সুরজের হার্ট রেট বাড়তে থাকে, চোখ অন্ধকার হয়ে আসতে থাকে, তার চারিদিকের সমস্ত গাছপালা গোল গোল ঘুরতে থাকে। ব্যাস এরপর সবকিছু অন্ধকার। এরপর আর কিচ্ছু মনে নেই সুরজের।

পরেরদিন যখন তার চোখ খুলল, তখন সে দেখল সে একটি হসপিটালের বেডে পড়ে রেয়ছে। তার চারপাশে অনেক মানুষের ভিড়। এরাই হয়ত তাকে সেখানে নিয়ে এসেছে। সবাই উৎসুক জানার জন্য সে ওখানে কিভাবে পড়ে ছিল। কিন্তু এই ভয়ানক ঘটনার বর্ণনা দিতে পারেনি সে। বারংবার জিভ আঁটকে যেতে থাকে।

সত্যি ভূতের গল্প ভূতের কাহিনী
সত্যি ভূতের গল্প ভূতের কাহিনী image
<

এরপর সে আর কোনো দিনও তার ব্যাংকের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। চাকরি ছেড়ে এই তল্লাট ছেড়ে চলে যাওয়াটাই তার কাছে শ্রেয় মনে হয়। এখন সে তার আসল বাড়ি জলপাইগুড়ি শহরে ফিরেছে। সেখানে বর্তমানে ছোট্ট একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক চালায় সে।

এই ঘটনাটি তার মুখেই কোনো এক ঝড়ের রাতে প্রসঙ্গ ক্রমে তার বাড়িতে থাকা-কালীন আমাকে বলেছিল সে।  

পড়ুনঃ-  হিম করা ভূতের গল্প- ভূতুড়ে গুদামঘড় 

“সত্যি ভূতের গল্প। ভূতের সত্য ঘটনা। ভয়ানক ভূতের কাহিনী। vuter golpo ভূতের কাহিনী”

প্রতিদিনের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ- গল্প আর গল্প তে অথবা আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপ CharpatraOFFICIAL যুক্ত হতে ভুলবেন না। 
Spread the love

Leave a Reply